بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
ঈমানের পর নামাজের প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া
হয়েছে। আর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে মধ্যে এশা ও ফজরের জামাতের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি।
এশা ও ফজরের— এ দুই সময়ে মানুষ সাধারণত পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম
করে। ফলে জামাতদুটিতে যথেষ্ট অবহেলা ও গাফিলতি হয়ে থাকে। এজন্য হাদিসে এর প্রতি বিশেষভাবে
উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে ‘ফজর’ নামে একটি সূরাও
রয়েছে। ওই সূরার শুরুতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘শপথ ফজরের। ’ (সূরা: ফজর,
আয়াত : ১)
হাদিসে ফজরের নামাজের বিশেষ তাগিদ
রয়েছে। জুনদুব ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন,
‘যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ
পড়বে, সে আল্লাহর জিম্মায় থাকবে। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৭)
উবাই ইবনে কাব (রা.) থেকে বর্ণিত,
‘একবার মহানবী (সা.) আমাদের
ফজরের নামাজ পড়িয়েছেন। সালাম ফিরিয়ে জিজ্ঞেস করেছেন, অমুক কি আছে? লোকেরা বলল, নেই। তারপর আরেকজনের নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করেন,
অমুক কি আছে?
লোকেরা বলল,
নেই। তিনি বললেন,
এ দুই নামাজ (এশা ও ফজর) মুনাফিকদের জন্য সবচেয়ে কঠিন। তোমরা যদি জানতে যে
এই দুই নামাজে কী পরিমাণ সওয়াব নিহিত রয়েছে, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তাতে আসতে।’ (আবু দাউদ,
হাদিস : ৫৫৪)
ফজর-এশা জামাতে পড়ার গুরুত্ব
ও সওয়াব
রাতের এ দুই নামাজের সময় মানুষ সাধারণত
ব্যস্ত থাকে। পরিবারের সঙ্গে সময় কাটায় ও বিশ্রাম করে। ফলে জামাত দুটিতে যথেষ্ট অবহেলা
হয়। গাফিলতি ও প্রকাশ পেয়ে থাকে। এ জন্য হাদিসে এর প্রতি বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে।
এক হাদিসে এসেছে,
‘যে ব্যক্তি এশা ও ফজর
জামাতের সঙ্গে পড়ল, সে যেন সারা রাত দাঁড়িয়ে নামাজ পড়ল।’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৬)
কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয় হলো,
শত শত মুসলমান অলসতা-অবহেলায় সময় কাটায়।
সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নামাজ আদায় করে না। আর যারা নামাজি— তাদের মধ্যে অনেকে ফজরের নামাজ নিয়মিত পড়তে পারেন না। যারা
নিয়মিত পড়েন, তাঁদের মধ্যেও অনেকে ফজরের জামাতে শরিক হতে পারেন না।
* শরীয়তের বিধান অনুযায়ী তাহাজ্জুদের সময়সীমা ইশার নামাযের পর থেকে ফজরের ওয়াক্ত
শুরু হওয়ার আগ পর্যন্ত।
সুতরাং কাহারো যদি শেষ রাত্রিতে জাগ্রত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকার
দরুন ইশার নামাজের পড়েই তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ে নেয়,তবে সেও ছওয়াব পাবে,ইনশাআল্লাহ।
তবে এর মূল ওয়াক্ত হল,
রাতের শেষ প্রহর। শেষ প্রহর বলতে রাতের
শেষ তৃতীয়াংশ থেকে ফজর নামাযের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার আগ পর্যন্তকে বোঝানো হয়েছে। হ্যাঁ,
ঘুম থেকে না জাগার সম্ভাবনা থাকলে
ইশার নামাযের পর দু রাকআত সুন্নত ও বিতরের আগে তাহাজ্জুদ পড়ে নেয়া জায়েয আছে। তবে
পরিপূর্ণ তাহাজ্জুদের মর্যাদা পেতে হলে রাতের শেষ প্রহরে উঠে এই নামায আদায় করতে হবে।
জাবির রাযি. থেকে বর্ণিত,
রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَنْ خَافَ أَنْ لَا يَقُومَ مِنْ آخِرِ
اللَّيْلِ فَلْيُوتِرْ أَوَّلَهُ ، وَمَنْ طَمِعَ أَنْ يَقُومَ آخِرَهُ
فَلْيُوتِرْ آخِرَ اللَّيْلِ ، فَإِنَّ صَلَاةَ آخِرِ اللَّيْلِ مَشْهُودَةٌ ،
وَذَلِكَ أَفْضَلُ
যে ব্যক্তি শেষ রাতে উঠতে না পারার
আশংকা করবে, সে যেন শুরু রাতেই বিতির পড়ে নেয়। আর যে ব্যক্তি রাতের শেষ ভাগে উঠে (ইবাদত) করার
লালসা রাখে, সে যেন রাতের শেষ ভাগেই বিতির সমাধা করে। কারণ, রাতের শেষ ভাগের নামাযে ফেরেশতারা হাজির হন এবং এটিই
উত্তম আমল। (মুসলিম ৭৫৫)
আরো জানুনঃ https://ifatwa.info/4722/
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
উপরের আলোচনা থেকে সুস্পষ্ট হয়ে যায়
যে, ফজরের নামাজ জামাতের সাথে আদায় করার গুরুত্ব কি পরিমাণ?
এমনকি নবীজির নিকট সারা রাত জেগে নফল
নামাজ পড়ার চেয়ে ফজরের নামাজ জামাতের সাথে পড়াই উত্তম ছিল।
তবে অবশ্যই তাহাজ্জুদের নামাজ আদায়ের
ব্যাপারেও আমাদেরকে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে সুবহে সাদিকের অনেক পূর্বে জাগ্রত
হওয়া শর্ত নয় । বরং ফজরের ওয়াক্ত শুরু হওয়ার কিছু
সময় পূর্বে জাগ্রত হয়ে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করলেই হয়ে যাবে। আর সেক্ষেত্রে
তাহাজ্জুদ ও ফজরের মাঝে খুব বেশী ব্যাবধান থাকবে বলে মনে হয় না। আশা করা যায় যে,
উক্ত নিয়ম মেনে চললে ফজরের সালাত জামাতে
আদায়ের ক্ষেত্রে কোন ত্রুটি হবে না এবং তাহাজ্জুদ সালাতও যথা সময়ে আদায় করা সম্ভব হবে
ইনশাআল্লাহ।