আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
192 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
closed by
আসসালামু আলাইকুম।
আজ দীর্ঘদিন যাবত আমি অত্যন্ত দ্বিধাগ্রস্ত এবং হতাশ জীবন যাপন করছি। তাই অনুগ্রহ করে আমার সম্পূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমাকে একটি শরঈ সমাধান দিবেন, ইনশা আল্লাহ। এখানে গোপনীয় কিছু বেপার থাকায় আমি নিজের পরিচয়টাও গোপন রাখছি।

আমি টিনেজ বয়সে একটি মেয়েকে অন্ধভাবে ভালোবাসতাম। সব ধ্যানে-খেয়ালে তাকে পাওয়ার ফিকির করতাম। তাই শয়তানের ধোকায় পড়ে তার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই। শুরুতে পবিত্র থাকতে চাইলেও আস্তে আস্তে তা অপবিত্রতার দিকে ঝুঁকে যায়, এবং এতে আমার গুনাহ হচ্ছে এই অনুভুতিটাও কখনো বোধ হতো না। হলেও বিয়ের পর তাওবা করে নিবো, এই নিয়ত ছিল। অপরপক্ষে, আমি যার সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে যাই, সে মুসলিম হলেও, শরিয়তের প্রতি মূল্যবোধ রাখেনা। আমি বারবার গুনাহের ভয়ে (ছাত্র অবস্থায়) বিয়ের জন্য অনুরোধ করলেও, সে তাতে রাজি হয়নি। কারন সাধারণভাবে বিয়ে করার মতো সস্তা মানুষ সে না। এক পর্যায়ে আমি চাকুরী পাই এবং তাকে বিয়ের জন্য বারবার অনুরোধ করতে থাকি। কারন আমার প্রতিনিয়ত গুনাহ হয়েই যাচ্ছিল এবং বিয়ে ছাড়া তা থেকে বাঁচা সম্ভব ছিলো না।

এক সময় আমি হাজারবার বারণ করা সত্ত্বেও, সে কোনো এক সশস্ত্র বাহিনীর চাকুরীতে যোগ দেয়। সে প্রশিক্ষণে যাওয়ার আগে আমাকে বিয়ে করতে চায় (কাজীর মাধ্যমে গোপনে তার অভিভাবকের অবগতি ও সম্মতি ছাড়া। শুরুতে শরিয়ত মোতাবেক এই বিয়ের বৈধতা নিয়ে খুব সঙ্কায় ছিলাম। পরে জানতে পারি হানাফি মাজহাব অনুসারে এইভাবে বিয়ে গ্রহণযোগ্য।) যেহেতু আমি তাকে যেকোনো উপায়ে বিয়ে করতে চাইতাম, তাই নারী হিসেবে চাকুরীটা ইসলাম সম্মত না, জেনেও আমি তাকে উক্ত উপায়ে বিয়ে করে ফেলি। যদিও বিবাহের পর আমার তেমন প্রাপ্য অধিকার আমি পাইনি।

সে প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর থেকে আমার চোখের রঙিন চশমা খুলতে শুরু করে। আমি জানতে পারি, স্ত্রীর পর্দা নিশ্চিত করতে না পারলে স্বামী দাইয়ূস হবে ফলে তার জন্য জান্নাত হারাম হয়ে যাবে এবং পুরুষের বেশ ধারণকারী নারীর জন্য জান্নাত হারাম হবে। অর্থাৎ আমাদের দুইজনের জন্যেই জান্নাত হারাম হয়ে যাবে। ফলে আমি তাকে বারবার বোঝাতে চেষ্টা করি যেন সে এই চাকুরীটা ছেড়ে দিয়ে শরিয়তে গ্রহণযোগ্য কোনো চাকুরী করার চেষ্টা করে (যদিও স্ত্রীর চাকুরী করার বেপারে আমি উতসাহী নই)। কিন্তু, চাকুরী ছাড়লে সমাজ কি বলবে, পরিবারে মুখ দেখাতে পারবে না, সম্মান-স্যালুট পাবেনা এইসব দুনিয়াবী কারণ দেখিয়ে সে জানায় ৫ বছরের আগে চাকুরী কোনোভাবেই ছাড়তে পারবেনা। তাছাড়া এখন চাকুরী ছাড়তেও কয়েক লক্ষ টাকার জরিমানা গুণতে হবে। আমি সমস্ত জরিমানার ভার বহন করতেও রাজি আছি এবং তাকে ৬ মাস ধরে বোঝাচ্ছি যেন সে চাকুরী ছেড়ে দেয়। চাকুরী ছাড়লে তাকে স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর প্রতিশ্রুতিও দিয়েছি। বিভিন্ন ইসলামিক ল্যাকচার শুনিয়েছি, বই দিয়েছি যেন তার ভিতর এই বুঝটা কাজ করে। কিন্তু সে দুনিয়াবী কারণ গুলোকেই বড়ো করে দেখছে এবং আখিরাতকে নিঃসংকোচে বেঁচে দিচ্ছে। তাছাড়া, সে চাকুরী ছাড়তে রাজি হলেও, তার সশস্ত্র বাহিনী অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া তাকে প্রশিক্ষণ ছাড়তে দিবেনা। তার পরিবারও শরিয়তের বুঝ না থাকায় প্রশিক্ষণ ছাড়ার অনুমতি দিবেনা। যদিও আমার আইনী ক্ষমতা আছে, তাকে চাকুরীচ্যুত করার, তবে নৈতিক কারণে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে আমি তা করতে চাইনা।
ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আমি একদিকে শরিয়ত ধরে রাখা, একাকিত্বে ডুবে থাকা, অন্যদিকে তার চাকুরী করা নিয়ে যুদ্ধ করতে করতে মানসিক ভাবে অত্যন্ত হতাশাগ্রস্থ এবং ক্লান্ত। ফলে আমি সিদ্ধান্ত নেই, তাকে তালাক দিয়ে অন্য কোথাও বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার। তবে তাকে প্রতিশ্রুত দেনমোহর এখনই পরিশোধ করার সামর্থ না থাকায় এখনই তাকে দেনমোহর পরিশোধ করতে পারছিনা। ফলে ৩ বছর সময় চেয়ে নিই। সে শুরুতে জানায়, দুনিয়ার জীবনে দেনমোহর কোনোভাবেই নিবে না, এবং আমাকে এরজন্য মাফও করবেনা। হাশরের দিন তা আদায় করবে। কারণ আমি তার চাকুরীর বেপারটা জেনেও তাকে বিয়ে করেছিলাম। (যদিও সশস্ত্রবাহিনীতে চাকুরী করার বেপারটা শুরু থেকেই অনুমতি না দিয়ে আমি কঠোরভাবে বিরোধিতা করে আসছি) পরবর্তিতে সে আমাকে জানায়, মোহরের টাকা সম্পূর্ণভাবে আমাকে মাফ করে দিয়েছে। অর্থাৎ, দুনিয়া আখিরাত কোথাও সে আমাকে এরজন্য পাকড়াও করবেনা। আমি তাকে এরজন্য অনুরোধ ব্যাতিরেকে কোনো চাপ প্রয়োগ করিনি।

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমানে আমি খালেস দিলে তাওবা করে হালাল-হারাম কঠোরভাবে মানার চেষ্টা করছি, ৫ ওয়াক্ত নামাজ জামাতে পড়ার চেষ্টা করছি, এবং সমস্ত প্রকার গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছি। আমার জীবিকা শতভাগ হালাল বলেই আমি বিশ্বাস করি। তাই আমি চাইনা আমার জীবনে কোনো হারামের স্থান হোক। ফলে আমি কিছু বিষয়ে অত্যন্ত দ্বিধাগ্রস্থ। যেমন,
১। তার সাথে যোগাযোগ রাখলে গুনাহ হবে, নাকি তার সাথে যোগাযোগ না রাখলে গুনাহ হবে তা নিয়ে আমি দ্বিধাগ্রস্থ। তাই, আমি যদি তাকে তালাক দেই, সেটা কি অমানবিক হবে? এক্ষেত্রে দেনমোহরের বেপারটা কিভাবে নিস্পত্তি করতে পারি? যদিও সে আমাকে মাফ করে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে কোনো প্রকার চাপ প্রয়োগ ছাড়াই।

২। আমি কি তাকে তালাক না দিয়ে ৪-৫ বছর তার চাকুরীটা মেনে নিবো, পরবর্তিতে সে সত্যিই তাওবা করে ছেড়ে দিবে এই বিশ্বাস রেখে? পরবর্তিতেও সে চাকুরী না ছাড়লে আমার লিগ্যাল আশ্রয় নিতে হতে পারে, যা আমি নৈতিকভাবে অপছন্দ করি। তার চাকুরীতে সমস্ত পোষাক ছেলেদের অনুরুপ, এবং আমি তা মানতে পারছিনা। ফলে আমি তার সাথে যোগাযোগ রাখলে ইবাদাতের শান্তি পাচ্ছিনা। যদিও, সে আমার সাথে সাপ্তাহিক ছোট একটা সময়ের জন্য কথা বলার সুযোগ পায়।

৩। তার পরিবার আমাকে পেশাগত কারণে (সরকারী চাকুরি না থাকায়) তার অযোগ্য মনে করে। তবে শরিয়ত সম্মত কুফু নিয়ে কোনো বিরোধ নেই। গোপন বিয়ের বেপারটা জানাজানি হলে তার চাকুরী থেকে অব্যাহতি নিতে হবে বিধায় আমি বেপারটা গোপন রাখবো ইনশা আল্লাহ। কারণ আমি নৈতিকভাবে মনে করি, সে স্বেচ্ছায় চাকুরি ছাড়তে না চাইলে আমি তাকে আইনী ভাবে বাধ্য করা ঠিক হবে না। ফলে তার সাথে সহবাস করলে, সামাজিক ভাবে তা ব্যভিচার হিসেবেই গণ্য হবে। তাই, আমি যদি তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখি, তাতে কি তার হক নষ্ট করা হবে?

আমি স্বীকার করছি, আমি এই সম্পূর্ণ ঘটনায় শরিয়তের দিক থেকে অনেক গুলো ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি। কিন্তু এখন আমি ঘুড়ে দাঁড়াতে চাই। তবে, সে যেহেতু শরিয়তের প্রতি মূল্যবোধ রাখেনা, তাই তার বিবেচনায় তার কোনো ভুল নেই। এক্ষেত্রে আমার কি করা উচিত?
closed

1 Answer

+1 vote
by (677,600 points)
selected by
 
Best answer
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " الْمَرْأَةُ عَوْرَةٌ فَإِذَا خَرَجَتِ اسْتَشْرَفَهَا الشَّيْطَانُ "

ইবনু মাস্‘ঊদ (রাঃ)] হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ রমণী মাত্রই আবরণীয় (বিষয়), যখন সে বের হয় তখন শায়ত্বন তাকে সুশোভিত করে তোলে (বা শায়ত্বন হাত আড় করে তার প্রতি তাকায়।)

সহীহ : তিরমিযী ১১৭৩, ইরওয়া ২৭৩, সহীহ আল জামি‘ ৬৬৯০।

নারীরা প্রয়োজনে বের হ’লে পূর্ণ নিরাপত্তা ও পর্দা সহ বের হবে। অর্থাৎ শর্তসাপেক্ষে বাইরে যেতে পারবে এবং চাকুরীও করতে পারবে। 

বাধ্যগত অবস্থায় মহিলাদের চাকুরীর ক্ষেত্রে যেসব শর্ত প্রযোজ্য হয়, প্রশ্নে উল্লেখিত নিরাপত্তা বাহিনীগুলিতে চাকুরীর ক্ষেত্রে তা পূরণ করা জানা মতে নারীদের জন্য কোনভাবেই সম্ভব নয়। সুতরাং তাদের জন্য এসব চাকুরী অবৈধ। আর অন্যায় কাজের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদও অবৈধ।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
(০১)
আপনি যদি আপনার আদেশ না মানার কারনে প্রশ্নে উল্লেখিত কারনে তাকে হেদায়েতের পথে আনার নিয়তে এভাবে হাজারো বুঝানোর পরেও কাজ না হওয়ায় তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ রাখেন,তাহলে এতে আপনার গুনাহ হবেনা।
এতে তার হক নষ্ট হওয়ার গুনাহ হবেনা।

★আপনি যদি তাকে তালাক দেন, প্রশ্নের বিবরণ মতে সেটা অমানবিক হবেনা।
মোহরানা যেহেতু সে মাফ করে দিয়েছে,তাই সেটি আদায়ের প্রয়োজনীয়তা নেই।

(০২)
আপনি তার এহেন চাকুরী মেনে নিতে পারবেননা।
মেনে নিলে এতে আপনারও গুনাহ হবে।

(০৩)
এক নং জবাব দ্রষ্টব্য।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (3 points)
জাযাকাল্লাহু খাইরান

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...