بسم
الله الرحمن الرحيم
জাবাব, ভোর রাতে সেহরি খাওয়ার পর আমরা যদি ভালোভাবে কুলি না করি; সে ক্ষেত্রে দাঁতের ফাঁকে খাদ্যাংশ আটকে থাকতে পারে; পরবর্তীতে এই খাবার যদি মুখের ভিতর থেকেই পেটে চলে যায় তবে কোনো ক্ষতি নেই; কিন্তু দাঁতের ফাঁক থেকে বের করে তা আবার মুখে দিয়ে খেয়ে ফেললে রোজা ভেঙ্গে যাবে।
বাস্তব বিষয় হচ্ছে- সেহরির পরপরই আমরা ভালোভাবে কুলি, গড়গড়া করে মুখের ভিতরের অংশ এবং মেসওয়াকের মাধ্যমে দাঁত পরিষ্কার করবো। যাতে করে
মুখের ভিতর কোনো খাদ্যাংশ জমা না থাকে। যার দ্বারা রোজার ক্ষতি হতে পারে।
দাঁতের ফাকে আটকে থাকা খাদ্য বস্তু একটি ছোলার সমপরিমাণ বা তদপেক্ষা বেশি হলে তা
খাওয়ার দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হবে, কাফফারা নয়। আর বস্তুটি ছোলার সমপরিমাণ থেকে যদি কম হয় তাহলে তা খাওয়ার দ্বারা
রোযা ভঙ্গ হবে না। তবে যদি সেই কম পরিমাণটা মুখ থেকে বের করার পর আবার মুখে দিয়ে খেয়ে
ফেলে তাহলে রোযা ভেঙ্গে যাবে এবং ঐ রোযার কাযা ওয়াজিব হবে, কাফ্ফারা নয়। (ফাতওয়ায়ে আলমগীরী : ১ম খন্ড,
২০২পৃ:)
*** যদি প্রবল ধারণা হয় যে, সুবহে সাদেক হওয়ার পর মসজিদে আজান দেয়া হচ্ছে তাহলে যারা আজান পর্যন্ত খেয়েছে তাদের
রোজা হবে না। (আজান সাধারণত সুবহে সাদিক হওয়ার পরই দেয়া হয়। কারণ সুবহে সাদিকের আগে
আজানের ওয়াক্ত আসে না। তবে কোথাও ভুলে হলে ভিন্ন কথা। তাই আজান পর্যন্ত যারা খায় সাধারণত
তাদের রোজা হয় না)। সুবহে সাদিক হওয়া এবং সেহরির ওয়াক্ত বাকি থাকার ব্যাপারে সংশয়যুক্ত
সময়ে পানাহার করা মাকরূহ (আমাদের দেশের ক্যালেন্ডারগুলোতে আজান ও সেহরির মাঝে কয়েক
মিনিট বিরতি দেয়া হয়। সংশয়যুক্ত সময় বলতে ওই সময়টাকে ধরা যায়)। তবে এ সময়ে খাওয়া দ্বারা
রোজা সহিহ হয়ে যাবে। (আহসানুল ফতোয়া, খণ্ড-৪, পৃষ্ঠা-৪৩২. আল ফিকহুল হানাফি ফি ছাওবিহিল জাদিদ, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৪৩৩)।
সুবহে সাদিক হয়নি ভেবে সেহরি খাওয়ার পর সুবহে সাদিক হয়েছিলো প্রমাণিত হলে করণীয়
: রাত আছে মনে করে যদি কেউ সেহরি খায়। অতঃপর জানা যায় যে, তখন সেহরির সময় শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাহলে সে রোজার শুধু কাযা আদায় করতে হবে। কাফফারা
আদায় করতে হবে না। (রদ্দুল মুহতার, খণ্ড-৩য়, পৃষ্ঠা-৪৩৬)।
*** অতি বার্ধক্যজনিত কারণে রোযা রাখতে না
পারলে বা এমন মারাত্নক ও দীর্ঘমেয়াদী রোগ যাতে সুস্থ হওয়ার আশা না থাকে এবং রোযা রাখলে
ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে ইত্যাদি কারণে যদি নিজের যিম্মায় ওয়াজিব হওয়া কাযা-কাফ্ফারা
কিংবা উপস্থিত রমযানের রোযা রাখার উপর একেবারে অসমর্থ হয়ে পড়ে তাহলে এমতাবস্থায় সে
ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া বা ক্ষতিপূরণ দেয়া আবশ্যক। প্রতিটা রোযার পরিবর্তে সদকায়ে ফিতর
পরিমান পণ্য বা তার মূল্য যাকাত খেতে পারে এমন গরীব-মিসকীনকে দান করাই হল এক রোযার
ফিদিয়া। আর কাফ্ফারা বাবত বিরতিহীনভাবে ৬০ দিন রোযা রাখার সামর্থ্য না থাকা ব্যক্তির
জন্য ৬০ জন গরীব-মিসকীনকে বা একজনকে ৬০ দিন পরিতৃপ্তির সাথে দু-বেলা খানা খাওয়াতে হবে
বা ৬০ দিনের প্রত্যেকটা রোযার পরিবর্তে একেক মিসকীনকে সদকায়ে ফিতর পরিমান পণ্য বা তার
মূল্য দিতে হবে। এক্ষেত্রে শুধু একজনকে ৬০ দিনেরটা একদিনেই দিয়ে দিলে কাফ্ফারা আদায়
হবে না বরং তাতে মাত্র একদিনের কাফ্ফারা আদায় হবে।এই ফিদিয়া স্বয়ং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির
উপর আবশ্যক।সে মৃত্যু বরণ করলে তার ওয়ারিসগণ তার ফিদিয়া আদায় করে দিবে।
মোটকথা, আল্লাহ তায়ালার অকাট্য বিধান পবিত্র রমযান
মাসের রোযা রাখা প্রত্যেক আকেল, বালেগ, সুস্থ মস্তিষ্ক মুসলমানের জন্যে আবশ্যক ও অত্যাবশ্যকীয়। তা না রাখলে বা উল্লেখিত বিভিন্ন কারণে ভেঙ্গে গেলে অবস্থা ভেদে
শরীয়তের হুকুম বিচারে কোথাও রোযার বিকল্প আরেকটি রোযা কাযা হিসেবে আদায় করতে হবে আবার
কোথাও বিকল্প রোযার সাথে সাথে কাফ্ফারা হিসেবে আরো ৬০টি রোযা একাধারে বিরতিহীন রাখতে
হবে।মারাত্নক অসুস্থ, অতি বার্ধক্য কারণে জীবদ্দশায় নিজের যিম্মায়
আবশ্যক হওয়া আল্লাহর ফরয বিধান রোযা রাখতে না পারলে ক্ষতিপূরণ স্বরুপ রোযার ফিদিয়া
দিলে বা দেওয়ার ওসিয়ত করে গেলে কিংবা অন্য কেউ তার পক্ষ থেকে দিয়ে দিলে করুণাময় আল্লাহর
ক্ষমা পাওয়ার আশা করা যায়। (রদ্দুল মুহতার ৩/৩৪৬-৩৯০ , ফতোয়া আলমগিরী ১/২০১-২০৭, ফতোয়া মাহমুদিয়া ১৫/১৬৭-২১৮,আহকামে , যিন্দেগী ২৫০-২৫৫,ফতোয়া রহীমিয়া ,৭/২৬৪-২৭২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/ বোন!
১. দাঁতের ফাকে আটকে থাকা খাদ্য বস্তু একটি ছোলার সমপরিমাণ বা তদপেক্ষা বেশি
হলে তা খাওয়ার দ্বারা রোযা ভেঙ্গে যাবে। এবং শুধু কাযা ওয়াজিব হবে, কাফফারা নয়। আর বস্তুটি ছোলার সমপরিমাণ থেকে যদি কম হয় তাহলে তা খাওয়ার দ্বারা
রোযা ভঙ্গ হবে না।
২. সেহেরীর
ওয়াক্ত শেষ হওয়ার যদি কেউ খানা বা পানাহার করে তাহলে তার রোজা হবে না বরং পরবর্তীতে
পুণরায় সেই রোজা ক্বাযা করতে হবে। সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে সময় শেষ হওয়ার পর ঔষুধ
সেবন করার কারনে রোজা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। পুণরায় সেই রোজা ক্বাযা করতে হবে।
৩. আপনার
খালা অতি বার্ধক্যজনিত কারণে রোযা রাখতে না পারলে বা এমন মারাত্নক ও
দীর্ঘমেয়াদী রোগ যাতে সুস্থ হওয়ার আশা না থাকে এবং রোযা রাখলে ক্ষতি হওয়ার আশংকা থাকে
ইত্যাদি কারণে যদি নিজের যিম্মায় ওয়াজিব হওয়া কাযা-কাফ্ফারা কিংবা উপস্থিত রমযানের
রোযা রাখার উপর একেবারে অসমর্থ হয়ে পড়ে তাহলে এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির জন্য ফিদিয়া বা
ক্ষতিপূরণ দেয়া আবশ্যক। প্রতিটা রোযার পরিবর্তে সদকায়ে ফিতর পরিমান পণ্য বা তার মূল্য
যাকাত খেতে পারে এমন গরীব-মিসকীনকে দান করাই হল এক রোযার ফিদিয়া।