ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-
(০১)
বিবাহের ইজাব ও কবুলটি বলতে হয় দুইজন প্রাপ্ত বয়স্ক মসলিম পুরুষ বা একজন পুরুষ ও দুইজন মহিলার সামনে।
وَ اسۡتَشۡہِدُوۡا شَہِیۡدَیۡنِ مِنۡ رِّجَالِکُمۡ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُوۡنَا رَجُلَیۡنِ فَرَجُلٌ وَّ امۡرَاَتٰنِ مِمَّنۡ تَرۡضَوۡنَ مِنَ الشُّہَدَآءِ اَنۡ تَضِلَّ اِحۡدٰىہُمَا فَتُذَکِّرَ اِحۡدٰىہُمَا الۡاُخۡرٰی
আর তোমরা তোমাদের পুরুষদের মধ্য হতে দু’জন সাক্ষী রাখ, অতঃপর যদি দু’জন পুরুষ না হয় তবে একজন পুরুষ ও দু’জন স্ত্রীলোক যাদেরকে তোমরা সাক্ষী হিসেবে পছন্দ কর, যাতে স্ত্রীলোকদের মধ্যে একজন ভুলে গেলে তাদের একজন অপরজনকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
(সুরা বাকারা ২৮২)
হাদিস শরিফে এসেছে, রাসূল (সা.) বলেছেন,
لَا يَجُوزُ نِكَاحٌ، وَلَا طَلَاقٌ، وَلَا ارْتِجَاعٌ إِلَّا بِشَاهِدَيْنِ
‘রাসূল (সা.) বলেছেন, দুইজন সাক্ষী ছাড়া বিবাহ, তালাক ও ফিরিয়ে আনা বৈধ হবে না।’ [মুসান্নাফে আব্দুর রাযযাক, হাদিস: ১০২৫৪]
قوله صلى الله عليه وسلم : ( لا نكاح إلا بولي وشاهدي عدل ) رواه البيهقي من حديث عمران وعائشة ، وصححه الألباني في صحيح الجامع (7557)
বিয়ের আকদের সময় সাক্ষী রাখতে হবে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “অভিভাবক ও দুইজন সাক্ষী ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” [তাবারানী কর্তৃক সংকলিত, সহীহ জামে (৭৫৫৮)]।
فى الدر المختار- ( و ) شرط ( حضور ) شاهدين ( حرين ) أو حر وحرتين ( مكلفين سامعين قولهما معا ) (الدر المختار ، كتاب النكاح،-3/9)
অনুবাদ-বিবাহ সহীহ হওয়ার শর্ত হল শরীয়তের মুকাল্লাফ [যাদের উপর শরীয়তের বিধান আরোপিত হয়] এমন দুইজন আযাদ পুরুষ সাক্ষি বা একজন আযাদ পুরুষ ও দুইজন মহিলা সাক্ষি হতে হবে, যারা প্রস্তাবনা ও কবুল বলার উভয় বক্তব্য স্বকর্ণে উপস্থিত থেকে শুনতে পায়। {আদ দুররুল মুখতার-৩/৯, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/২৬৮}
★বিবাহের ক্ষেত্রে পাত্রও যেমন বিবাহের প্রস্তাব পেশ করতে পারে,পাত্রীও প্রস্তাব পেশ করতে পারে।
সাবিত আল বুনানী (রহ.) হতে বর্ণিত।
عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللهِ حَدَّثَنَا مَرْحُومُ بْنُ عَبْدِ الْعَزِيزِ بْنِ مِهْرَانَ قَالَ سَمِعْتُ ثَابِتًا الْبُنَانِيَّ قَالَ كُنْتُ عِنْدَ أَنَسٍ وَعِنْدَه“ ابْنَةٌ لَه“ قَالَ أَنَسٌ جَاءَتْ امْرَأَةٌ إِلٰى رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم تَعْرِضُ عَلَيْهِ نَفْسَهَا قَالَتْ يَا رَسُوْلَ اللهِ أَلَكَ بِي حَاجَةٌ فَقَالَتْ بِنْتُ أَنَسٍ مَا أَقَلَّ حَيَاءَهَا وَا سَوْأَتَاهْ وَا سَوْأَتَاهْ قَالَ هِيَ خَيْرٌ مِنْكِ رَغِبَتْ فِي النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَعَرَضَتْ عَلَيْهِ نَفْسَهَا.
তিনি বলেন, আমি আনাস (রাঃ)-এর কাছে ছিলাম। তখন তাঁর কাছে তাঁর কন্যাও ছিলেন। আনাস (রাঃ) বললেন, একজন মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে নিজেকে সমর্পণ করতে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার কি আমার প্রয়োজন আছে? এ কথা শুনে আনাস (রাঃ)-এর কন্যা বললেন, সেই মহিলা কতই না নির্লজ্জ, ছিঃ লজ্জার কথা। আনাস (রাঃ) বললেন, সে মহিলা তোমার চেয়ে উত্তম, সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহচর্য পেতে অনুরাগী হয়েছিল। এ কারণেই সে নিজেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে পেশ করেছে। ( সহীহ বুখারী-৫১২০)
قال في "كشاف القناع" (5/ 37) : "ولا ينعقد النكاح إلا بالإيجاب والقبول ، والإيجاب هو اللفظ الصادر من قِبَل الولي أو من يقوم مقامه كوكيل.
সারমর্মঃ
ইজাব কবুল ব্যাতিত বিবাহ হবেনা।
ইজাব হলো যে শব্দটি অভিভাবক অথবা তার স্থলাভিষিক্ত এর থেকে বের হয়,যেমন উকিল।
এমন সব শব্দে বিবাহ সংঘটিত হবে। যেমন বলা, (زوجت أو نكحت) আমি বিবাহ করলাম বা বিয়ে দিলাম। অথবা বলা, (قبلت هذا النكاح) আমি এ বিয়ে কবুল করলাম। অথবা (تزوجتها) আমি তাকে বিয়ে করলাম, বা (تزوجت) আমি বিয়ে করলাম, অথবা (رضيت) এ বিয়ে আমি রাজি আছি।
প্রস্তাব (الإيجاب): অলী তথা অভিভাবক অথবা যিনি তার স্থলাভিষিক্ত হবেন তার পক্ষ থেকে বিয়ে করার বা বিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া।
★ কবুল (القبول): স্বামী বা তার স্থলাভিষিক্ত থেকে বিয়ে কবুল করার শব্দ। যেমন বলা, (قبلت) আমি বিয়ে কবুল করলাম বা (رضيت هذا النكاح) এ বিয়ে আমি রাজি আছি বা শুধু কবুল করেছি বলা।
আরো জানুনঃ
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে তাদের ইজাব কবুল হবেনা।
সুতরাং তাদের এই ভাবে বিবাহ শুদ্ধ হবেনা।
বাহরুর রায়েক গ্রন্থে আছেঃ-
وَتَمَامُهُ فِي الْفَصْلِ السَّابِعَ عَشَرَ فِي النِّكَاحِ بِالْكِتَابَةِ مِنْ الْخُلَاصَةِ، وَقَيَّدَ بِالْإِيجَابِ وَالْقَبُولِ؛ لِأَنَّهُ لَا يَنْعَقِدُ بِالْإِقْرَارِ فَلَوْ قَالَ بِحَضْرَةِ الشُّهُودِ: هِيَ امْرَأَتِي، وَأَنَا زَوْجُهَا، وَقَالَتْ: هُوَ زَوْجِي، وَأَنَا امْرَأَتُهُ لَمْ يَنْعَقِدْ النِّكَاحُ؛ لِأَنَّ الْإِقْرَارَ إظْهَارٌ لِمَا هُوَ ثَابِتٌ، وَلَيْسَ بِإِنْشَاءٍ
সারমর্মঃ
ইজাব কবুলের সাথে বিবাহকে মুকায়্যাদ করা হয়েছে।কেননা ইজাব কবুল ব্যাতিত বিবাহ শুদ্ধ হয়না।
সুতরাং কেহ যদি সাক্ষীদের সামনে বলে যে সে আমার স্ত্রী আর আমি তার স্বামী,আর মহিলাটিও বলে যে সে আমার স্বামী আর আমি তার স্ত্রী,তাহলে বিবাহ শুদ্ধ হবেনা।
কেননা স্বীকারোক্তি বলা হয় যাহা আগে থেকে প্রমানিত, সেটি প্রকাশ করা,নতুন ভাবে কোনো কিছু হওয়া নয়।
(বাহরুর রায়েক-৩/৯০)
وَإِنْ أَقَرَّ الرَّجُلُ أَنَّهُ زَوْجُهَا وَهِيَ أَنَّهَا زَوْجَتُهُ يَكُونُ إنْكَاحًا وَيَتَضَمَّنُ إقْرَارُهُمَا الْإِنْشَاءَ بِخِلَافِ إقْرَارِهِمَا بِمَاضٍ لِأَنَّهُ كَذِبٌ، وَهُوَ كَمَا قَالَ أَبُو حَنِيفَةَ
যদি কোনো পুরুষ স্বীকারোক্তি দেয় যে, সে এই মহিলার স্বামী,এই অবস্থায় যে এই মহিলা তারই স্ত্রী।তাহলে এটা দ্বারা নতুন বিয়ে বুঝা যাবে। তবে কেউ যদি বলে একে আমি অতীতে বিয়ে করেছি, তাহলে উক্ত বাক্য মিথ্যা বলে প্রমাণিত হবে।যদ্দরুণ বিয়ে হবে না।
(ফাতাওয়ায়ে শামী-৩/১৩)
হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ
النكاح ينعقد بالإيجاب والقبول بلفظين يعبر بهما عن الماضي لأن الصيغة وإن كانت للإخبار وضعا فقد جعلت للإنشاء شرعا دفعا للحاجة وينعقد بلفظين يعبر بأحدهما عن الماضي وبالآخر عن المستقبل مثل أن يقول زوجني فيقول زوجتك لأن هذا توكيل بالنكاح والواحد يتولى طرفي النكاح الھدایۃ، ج:1، ص:185، ط:دار احياء التراث العربي - بيروت - لبنان
সারমর্মঃ
বিবাহ ইজাব কবুল দ্বারা সম্পন্ন হয়,দুটির একটি অতিতকাকাল সূচক বাক্য হবে,আরেকটি বর্তমান কাল বুঝায় এমন বাক্য হতে হবে।
হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ
وینعقد بلفظ النکاح والتزویج والہبة والتملیک والصدقة )
সারমর্মঃ
বিবাহ,তাযয়িজ,হিবা,তামলিক,সদকাহ এই জাতীয় বাক্য গুলি দ্বারা বিবাহ সম্পন্ন হয়।
لما في الفتاوي الهندية ج ١- ص:٢٧٠
ينعقد بالإيجاب والقبول وضعا للمضي أو وضع أحدهما للمضي والآخر لغيره مستقبلا كان كالأمر أو حالا كالمضارع، كذا في النهر الفائق فإذا قال لها أتزوجك بكذا فقالت قد قبلت يتم النكاح وإن لم يقل الزوج قبلت، كذا في الذخيرة ولو قال: تزوجيني نفسك فقبلت؛ انعقد إن لم يقصد به الاستقبال هكذا في النهر الفائق. وكما ينعقد بالعبارة ينعقد بالإشارة من الأخرس إن كانت إشارته معلومة، كذا في البدائع. ولا ينعقد بالتعاطي، كذا في النهاية ولا ينعقد بالكتابة من الحاضرين فلو كتب تزوجتك فكتبت قبلت؛ لم ينعقد هكذا في النهر الفائق.
অনুবাদঃ- এটি (বিবাহ) প্রস্তাব (ইজাব) এবং গ্রহণের (কবুলের) দ্বারা সমাপ্ত (সংগঠিত) হয়,উভয় বাক্য অতীতকালের জন্য গঠিত হোক, অথবা এর একটি অতীত কাল এবং অন্যটিকে অন্য কালের জন্য হোক,চাই তাহা ভবিষ্যত কালের জন্য গঠিত হোক, যেমন আমরের সীগাহ, অথবা বর্তমান কালের জন্য গঠিত হোক,যেমন মুযারে' এর সীগাহ। যেমনটি নাহরুল ফায়েক গ্রন্থে এসেছে।
যদি সে তাকে (পাত্রীকে) বলে, "আমি তোমাকে এতো টাকা/দিরহামের বিনিময়ে বিয়ে করব," এবং সে (পাত্রি) বলল, "আমি মেনে নিচ্ছি," বিবাহটি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
যদিও স্বামী না বলে যে, "আমি কবুল করলাম {মেনে নিলাম},"
এমনটি যাখিরাহ গ্রন্থে এসেছে।
যদি সে বলে, "আমার সাথে নিজেকে বিয়ে করো" এবং সে মেনে নিল (কবুল বললো);
এক্ষেত্রেও বিবাহটি সম্পূর্ণ হয়ে যাবে।
যদি এর দ্বারা ভবিষ্যত কালের ইচ্ছা না করে।
এমনটিই নাহরুল ফায়েক গ্রন্থে এসেছে।
বিবাহের চুক্তি যেমন বাক্য দিয়ে সম্পন্ন (শেষ) করা হয়, তেমনি একজন নিঃশব্দ (বোবা) ব্যক্তির ইশারা (ইঙ্গিত) দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন (শেষ) করা হয়। যদি তার ইশারা (সংকেত) জানা যায়।
এমনটি বাদাই' গ্রন্থে আছে।
শুধুমাত্র তায়াতী' তথা ইজাব কবুল ছাড়া এমনিতেই গ্রহনের দ্বারা বিবাহ সংগঠিত হবেনা।
এমনটি নিহায়াহ গ্রন্থে এসেছে।
এবং এটি উপস্থিতদের থেকে লেখার দ্বারা বিবাহ সংগঠিত হবেনা।
যদি তিনি (পাত্র) লিখেন, "আমি তোমাকে বিয়ে করব," এবং পাত্রী লেখে, আমি গ্রহণ করলাম। তাহবে বিবাহ সংগঠিত হবেনা।
(ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়াহ ১/২৭০)
(০২)
তাদের ইজাব কবুল হবেনা।
আরো জানুনঃ
(০৩)
এগুলোতে কিছু যায় আসেনা।
উল্লেখিত ছুরতে ইজাব কবুল না হওয়ায় বিবাহই হবেনা।
(০৪)
যেহেতু ইজাব কবুল হয়নি,তাই এই ছুরতে অন্য কাউকে বিবাহ করলে পাপী হবেনা।
(০৫)
এতে মহিলা সেই স্বামী থেকে তালাক না নিয়ে অন্যত্রে বিবাহ বসলে গুনাহগার হবে।
(০৬)
উক্ত ফতোয়ার লিংক দিলে ভালো হতো।
(০৭)
তাদের বৈবাহিক সম্পর্কে কোন সমস্যা হবেনা।
এতে যিহার হবেনা।
কাফফারা আদায় করতে হবেনা।
তাদের সহবাস হালাল হবে।