بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
https://ifatwa.info/18069/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ
করা হয়েছে যে, প্রানীকে খাসি বানানো (বন্ধাত্বকরণ করানো) গোশত
আর চর্বির দিক লক্ষ্য করে পছন্দনীয়। এটা তার (প্রানীর) জন্য দোষ নয়,বরং এটি তার মূল্যের আধিক্যতার মাধ্যম। (কিতাবুন নাওয়াজেল
১৪/৬৩৪)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، حَدَّثَنَا عَبْدُ
الرَّزَّاقِ، أَنْبَأَنَا سُفْيَانُ الثَّوْرِيُّ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ
مُحَمَّدِ بْنِ عَقِيلٍ، عَنْ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، وَعَنْ أَبِي
هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ كَانَ إِذَا أَرَادَ
أَنْ يُضَحِّيَ اشْتَرَى كَبْشَيْنِ عَظِيمَيْنِ سَمِينَيْنِ أَقْرَنَيْنِ
أَمْلَحَيْنِ مَوْجُوءَيْنِ فَذَبَحَ أَحَدَهُمَا عَنْ أُمَّتِهِ لِمَنْ شَهِدَ
لِلَّهِ بِالتَّوْحِيدِ وَشَهِدَ لَهُ بِالْبَلاَغِ وَذَبَحَ الآخَرَ عَنْ
مُحَمَّدٍ وَعَنْ آلِ مُحَمَّدٍ ـ صلى الله عليه وسلم ـ.
আয়েশা (রাঃ) ও আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবানীর ইচ্ছা করলে দু’টি মোটাতাজা, মাংসল, শিংযুক্ত,
ধুসর বর্ণের ও ছিন্নমুষ্ক মেষ ক্রয় করতেন। অতঃপর এর একটি নিজ উম্মাতের
যারা আল্লাহর একত্বের সাক্ষ্য দেয় এবং তাঁর নবুয়াতের সাক্ষ্য দেয় তাদের পক্ষ থেকে এবং
অপরটি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর পরিবারবর্গের পক্ষ থেকে কোরবানী
করতেন। (ইবনে মাজাহ ৩১২২.আহমাদ ২৫৩১৫, ২৫৩৫৮,
ইরওয়া ১১৩৮। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ)
উক্ত হাদিসে موجوءين শব্দটি الوجاء শব্দ থেকে উৎকলিত। খাত্তাবী
প্রমুখ এর অর্থ বলেছেন, খাসি করা।
ইমাম আবু হানীফা., মালিক, আহমদ বিন হাম্বল.
সহ বড় বড় ইমামগণ এর বৈধতার পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন।
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রাহ. বলেন, “খাসি করাতে যদি উপকার থাকে তাহলে তা জায়েয।
তবে শর্ত হল, এমন প্রক্রিয়ায় তা সম্পন্ন করতে হবে যেন এতে প্রাণী
কষ্ট না পায়।” (লিকা আল বাবুল মাফতুহ, ১৫/৩৭)
★★প্রয়োজনের স্বার্থে গরু, ছাগল, ভেড়া, উট, দুম্বা ইত্যাদি পুরুষ প্রাণীর অণ্ডকোষ কেটে খাসি
করায় কোন দোষ নেই। কেননা, খাসি করা হলে তাতে প্রাণী মোটাতাজা
করা সহজ হয় এবং সেগুলোর গোস্তও সুস্বাদু হয়।
*পশু-পাখি ও জীব-জন্তু আল্লাহ তায়ালার অনন্য দান।
আল্লাহ তায়ালা মানুষের খেদমতের জন্য এগুলো তৈরি করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي
الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَى
كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلاً
অর্থাৎ `নিশ্চয় আমি আদম সন্তানকে মর্যাদা দান করেছি, আমি তাদেরকে
স্থলে ও জলে চলাচলের বাহন দান করেছি; তাদেরকে উত্তম জীবনোপকরণ
প্রদান করেছি এবং তাদেরকে অনেক সৃষ্ট বস্তুর উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছি।` (সূরা বনি-ইসরাইল : আয়াত ৭০)
শুধু মানুষ নয়,
সমগ্র সৃষ্টিজগতের প্রতি রাসূলের ভালোবাসা ছিল সীমাহীন। কারণ তিনি হলেনÑ রহমাতুল্লিল আ’লামীন। পশু-পাখি প্রকৃতির অন্যতম
উপাদান এদের প্রতি ভালোবাসা রাখা এবং অধিকার রক্ষা করা নবীজীর শিক্ষা। মহানবী মানুষকে
ভালোবাসতেন। ভালোবাসতেন পশুপাখি। ভালোবাসতেন তরুলতা ও প্রকৃতি। কেবল মানবজাতি নয়,
জীবজন্তুর অধিকার রক্ষায়ও তিনি ছিলেন সোচ্চার।
জাহেলিয়াতের যুগে পশুপাখির সাথে নিষ্ঠুর আচরণ করা হতো। তারা
জীবজন্তুদের নিশানা বানিয়ে হত্যা করত। ঠিকমতো খাবার দিত না। সুস্থতার প্রতি ভ্রক্ষেপ করত না। জন্তুর ওপর অতিমাত্রায় বোঝা চাপিয়ে দিত। পর্যাপ্ত
পরিমাণ বিশ্রামের সুযোগ দেয়া হতো না। সারা দিন নির্দয়ভাবে খাটাত। নির্মমভাবে শাস্তি
দিত এবং যেভাবে ইচ্ছা যত্রতত্র ব্যবহার করত। রাসূল সা: এসব জঘন্যতম প্রথা দূর করেন।
তিনি জীবজন্তু ও পশুপাখির দুঃখে ব্যথিত হতেন। তাদের কষ্টে বিচলিত হতেন।
এক দিনের ঘটনা। রাসূলুল্লাহ সা: এক আনসারির খেজুর বাগানে প্রবেশ
করলে হঠাৎ একটি উট দৃষ্টিগোচর হয়। উটটি নবী সা:-কে দেখে কাঁদতে লাগল। নবীজী অনেক ব্যথিত
হলেন। উটটির কাছে গিয়ে তার মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করলেন। এতে উটটির কান্না বন্ধ হয়ে
গেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, এ উটের মালিক
কে? এক আনসারি যুবক এসে বলল, হে আল্লাহর
রাসূল! আমার। নবীজী সা: বললেন, ‘আল্লাহ যে তোমাকে এই নিরীহ প্রাণীটির
মালিক বানালেন, এর ব্যাপারে তুমি কি আল্লাহকে ভয় করো না?
উটটি আমার কাছে অভিযোগ করেছে, তুমি একে ক্ষুধার্ত
রাখো এবং কষ্ট দাও (সুনানে আবু দাউদ : ২৫৪৯)।
একবার রাসূলুল্লাহ সা: একটি উটের কাছ দিয়ে যাচ্ছিলেন, প্রচুর ক্ষুধার তাড়নায় যার পিঠ পেটের সাথে লেগে
গেছে। অনাহারে অপুষ্টিতে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এ দৃশ্য দেখে রহমতের নবীর ভীষণ মায়া হলো।
সাহাবিদের ডেকে বললেন : ‘এসব বাকশক্তিহীন প্রাণীর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো। সুস্থ
অবস্থায় এগুলোতে আরোহণ করো, সুস্থ অবস্থায় আহার করো’ (আবু দাউদ
: ২৫৪৮)।
প্রাণীদেরকে অযথা কষ্ট দেয়া পাপ
পশু-পাখির প্রতি নম্রতা প্রদর্শন ইবাদতের পর্যায়ভুক্ত। পশু-পাখিকে
কষ্ট দেয়া গুনাহের কাজ। রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন : ‘‘আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক বিষয়ে তোমাদের
ওপর ‘ইহসান’ অত্যাবশ্যক করেছেন। অতএব তোমরা যখন হত্যা করবে, দয়ার্দ্রতার সাথে হত্যা করবে; আর যখন জবেহ করবে তখন দয়ার সাথে জবেহ করবে। তোমাদের সবাই যেন ছুরি ধারালো করে
নেয় এবং তার জবেহকৃত জন্তুকে কষ্টে না ফেলে” (সহিহ মুসলিম : ১৯৫৫)।
পশু-পাখির সাথে যথাসম্ভব দয়াশীল আচরণ করতে হবে। এদের সঙ্গে যথেচ্ছ
ব্যবহার করা যাবে না। পশু-পাখির অঙ্গহানি করা নিষিদ্ধ।
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা: থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সা: ওই ব্যক্তিকে অভিশাপ দিয়েছেন,
যে প্রাণীদের অঙ্গচ্ছেদ করে’ (বুখারি, হাদিস নং
: ৫৫১৫)।
আবু হোরায়রা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সা: প্রাণীর মুখে আঘাত করতে এবং
মুখে সেঁক লাগাতে বারণ করেছেন’ (সহিহ মুসলিম : ২১১৬)।
প্রাণীকে কষ্ট দেয়ার পরিণতি
যে কোনো প্রাণীকে ভালোবাসতে হবে। অযথা কষ্ট দিলে অবশ্যই এর শাস্তি
ভোগ করতে হবে। রাসূল সা: বলেন : ‘যে ব্যক্তি কোনো চড়ুইকে অযথা হত্যা করল, তা কিয়ামতের দিন আল্লাহ তায়ালার নিকট উঁচু স্বরে
ফরিয়াদ করে বলবে : ইয়া আল্লাহ! অমুক ব্যক্তি আমাকে হত্যা অযথা করেছিল, সে কোনো লাভের জন্য আমাকে হত্যা করেনি’ (নাসায়ি : ৪৪৪৬)।
বিড়ালকে কষ্ট দেয়ার কারণে এক মহিলাকে জাহান্নামে যেতে হয়েছিল।
রাসূল সা: বলেন : ‘এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে
রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে
খানাপিনা কিছুই করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি যাতে সে জমিনের পোকা-মাকড় খেয়ে বেঁচে থাকত’
(সহিহ বুখারি : ৩৪৮২)।
প্রাণীর প্রতি মমতার পুরস্কার
রাসূল সা: প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে এক মহিলার জাহান্নামে যাওয়ার কথা
যেমন বর্ণনা করেছেন, তেমনিভাবে
এদের প্রতি সহনশীলতা ও মমতা প্রদর্শন করে একজন ব্যক্তির জান্নাতে যাওয়ার ঘটনাও বর্ণনা
করেছেন এভাবে , ‘রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে এক ব্যক্তির ভীষণ পিপাসা
লাগে। সে কূপে নেমে পানি পান করল। এরপর সে বের হয়ে দেখতে পেল যে, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে এবং পিপাসায় কাতর হয়ে মাটি চাটছে। সে ভাবল, কুকুরটারও আমার মতো পিপাসা লেগেছে। সে কূপের মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা ভরে
পানি নিয়ে মুখ দিয়ে সেটি ধরে উপরে উঠে এসে কুকুরটিকে পানি পান করাল। আল্লাহ তায়ালা
তার আমল কবুল করেন এবং তার গোনাহ মাফ করে দেন। সাহাবিরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! চতুষ্পদ জন্তুর উপকার করলেও কি আমাদের সওয়াব হবে?
তিনি বললেন, প্রত্যেক প্রাণীর উপকার করাতেও পুণ্য
রয়েছে (সহিহ বুখারি : ২৩৬৩)।
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই!
১.আপনার বর্ণনানুপাতে আপনার ঐ প্রতিবেশী বিড়ালের সাথে এমন আচরণ
করার কারণে গুনাহগার হবে, যা উপরে বিস্তারিত বর্ণনা করা হয়েছে। সুতরাং আপনার জন্য করণীয়
হলো উপরে উল্লেখিত কুরআন ও হাদীসের দৃষ্টিতে তাকে বুঝানোর চেষ্টা করা। আপনি নিজে বিড়ালটিকে
ছেড়ে দিলে আপনার সাথে ঝগড়া বা মনোমালিন্যতা হতে পারে। নিজে না পারলে কারো মাধ্যমে তাকে
বুঝানোর চেষ্টা করতে হবে।
২.যেহেতু বিড়ালের গোশত খাওয়া জায়েজ নেই,তাই তাকে খাসি বানানো (বন্ধাত্বকরণ করানো) এর ক্ষেত্রে গোস্ত সুস্বাদুর বিষয়টি
নেই,তাই এতে তাকে খাসি বানানোর প্রয়োজনীয়তা নেই। প্রয়োজনীয়তা
না থাকার কারনে অনুমোদনও নেই। কেননা মুসনাদে
আহমদে ইবনে উমরা রা. থেকে বর্ণিত ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করার নিষেধাজ্ঞা প্রসঙ্গে
একটি হাদিস এসেছে।
نهى رسول الله صلى الله عليه وسلم عن إخصاء الخيل والبهائم
“রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোড়া ও চতুষ্পদ প্রাণীকে খাসি করতে নিষেধ করেছেন।”(মাজমাউয যাওয়ায়েদ-৫/২৬৮)