بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
১. যেই পন্থায় কোন আমল করার শরীয়তে প্রমাণ পাওয়া যায় না তা পরিত্যাগ
করাই হলো ইসলামের নির্দেশ। সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে দোয়া ইউনুস না পড়াই শ্রেয়।
২. দোয়ার কিছু আদব রয়েছে যেমন,
★পবিত্রতা অর্জন: পবিত্রতা অর্জনের পর দোয়া করলে আল্লাহতায়ালা
সেই দোয়া কবুল করবেন।
★বিনয়ের সঙ্গে দোয়া করা: বিনয়ের সঙ্গে দু’হাত তুলে দোয়া
করা।
★মিনতিভরা কন্ঠে দোয়া করা: মিনতি ও নম্রতার সঙ্গে দোয়া
করলে তা ইবাদত হিসেবে গন্য হয়।
★দু’হাত তুলে দোয়া করা: বিনয়, নম্রতা ও দাসত্ব প্রকাশ করার জন্য দোয়ার সময়
দু’হাতের তালু আসমানের দিকে রাখতে হবে।
★আল্লাহর প্রশংসা ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা : আল্লাহর প্রশংসা
ও দরুদ শরীফসহ দোয়া করা। আল্লাহর প্রশংসা যেমন,
‘আলহামদু লিল্লাহি রব্বিল আলামিন’ দোয়ার শুরুতে বলা। এছাড়া ইসমে আজমের
সহিত দোয়া করা উত্তম।
সুতরাং কুরআন ও সুন্নাহ বহির্ভূত পদ্ধতিতে যদি কোন আলেম দোয়া
করার কথা বলেন, তবে তা মান্য
করা আবশ্যক নয়। তবে দোয়ার যেই সুন্নাত ও আদব রয়েছে সেগুলি খেয়াল রেখে দোয়া করা উচিত
৩. https://ifatwa.info/6029/ নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করেছি যে,
ফজর ও আসরের ফরযের পরে, মাগরিবের পর,এবং ফজরের সুন্নাত এর পরে কিন্তু ফরযের
আগে উক্ত সময় তাহিয়্যাতুল অযু , তাহিয়্যাতুল মসজিদ (দুখুলুল মাসজিদ) এর নামাজ পড়া মাকরুহ । (নাজমুল ফাতওয়া ২/১৮)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن حماد بن أبي سلیمان أنہ سأل إبراہیم النخعي عن الصلاۃ
قبل المغرب، قال: فنہاہ عنہا، وقال: إن رسول اللّٰہ صلی اللّٰہ علیہ وسلم وأبا بکر
رضي اللّٰہ عنہ وعمر رضي اللّٰہ عنہ لم یکونوا یصلونہا۔ (رواہ محمد في کتاب
الآثار، نصب الرایۃ للزیلعي ۱؍۲۸۷، بحوالہ: إعلاء السنن ۲؍۶۳-۶۴
رقم: ۵۲۰
دار الکتب العلمیۃ بیروت)
রাসুলুল্লাহ সাঃ,
আবু বকর সিদ্দিক রাঃ,এবং ওমর রাঃ মাগরীব নামাজের
পূর্বে কোনো নফল ইত্যাদি আদায় করেননি।
শরীয়তের বিধান হলো
যদি অযু করার পর ততক্ষনাৎ মাগরিব নামাজ পড়ে,তাহলে তাহিয়্যাতুল অযু এর নামাজেরও ছওয়াব পাওয়া যাবে। (কিতাবুন
নাওয়াজেল ৪/৩৫৭)
যদি মসজিদে ঢুকেই সুন্নাত নামাজ পড়ে,তাহলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ এর নামাজও আদায় হয়ে
যাবে।
(নাজমুল ফাতওয়া ২/২৫৫)
قال في الحلیۃ: لو اشتغل داخل المسجد بالفریضۃ غیر ناو للتحیۃ
قامت تلک الفریضۃ مقام تحیۃ المسجد لحصول تعظیم المسجد، کما في البدائع وغیرہ۔
(شامي ۲؍۴۵۹
زکریا)
যার সারমর্ম হলো কেহ যদি মসজিদের প্রবেশ করেই ফরজ নামাজ শুরু
করে দেয়,তাহিয়্যাতুল মসজিদের নিয়ত
নাও করে,তাহলেও এই নামাজ
তার তাহিয়্যাতুল মসজিদের জন্য যথেষ্ট হবে।
সুতরাং মাগরিবের আযানের আগে বা পরপরই দুখুলুল মসজিদ নামাজ পড়া
যাবেনা। তবে রমজান মাসে যেহেতু আযানের পর প্রায় ১৫ মিনিট সময় দেওয়া হয়,তাই সে সময় দুখুলুল মসজিদ পড়তে কোনো সমস্যা নেই।
৪. https://ifatwa.info/8466/
নং ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, শরীয়তের বিধান
অনুযায়ী ফরজ ছাড়া সকল প্রকার সুন্নত, নফল ইত্যাদি বাড়িতে পড়া
উত্তম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلاَةِ فِىْ بُيُوْتِكُمْ فَإِنَّ
خَيْرَ صَلاَةِ الْمَرْءِ فِىْ بَيْتِهِ إِلاَّ الصَّلاَةَ الْمَكْتُوْبَةَ
“বাড়িতে সালাত আদায়
করাকে তোমরা নিয়ম বানিয়ে নাও। কেননা পুরুষের জন্য ফরয সালাত ব্যতীত ঘরে সালাত আদায়
করা উত্তম।” [বুখারী হা/৭৩১; মুসলিম হা/৭৮০]
তিনি আরও বলেন:
إِذَا قَضَى أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ فَلْيَجْعَلْ لِبَيْتِهِ
مِنْهَا نَصِيبًا فَإِنَّ اللهَ جَاعِلٌ فِىْ بَيْتِهِ مِنْ صَلاَتِهِ خَيْرًا
“তোমাদের কেউ যখন
সালাত আদায় করে, তখন সে যেন
ঘরের জন্য সালাতের কিয়দাংশ রেখে দেয়। কেননা ঘরে সালাত আদায়ের ফলে আল্লাহ তাতে কল্যাণ
দান করেন।” [ইবনে মাজাহ হা/১৩৭৬; সিলসিলা সহীহাহ হা/১৩৯২।]
আব্দুল্লাহ ইবনে সা‘দ রা. হ’তে বর্ণিত তিনি বলেন,
سَأَلْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَيُّمَا
أَفْضَلُ الصَّلاَةُ فِى بَيْتِى أَوِ الصَّلاَةُ فِى الْمَسْجِدِ قَالَ أَلاَ
تَرَى إِلَى بَيْتِى مَا أَقْرَبَهُ مِنَ الْمَسْجِدِ فَلأَنْ أُصَلِّىَ فِى
بَيْتِى أَحَبُّ إِلَىَّ مِنْ أَنْ أُصَلِّىَ فِى الْمَسْجِدِ إِلاَّ أَنْ تَكُونَ
صَلاَةً مَكْتُوبَةً.
“আমি রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম:
কোনটি উত্তম,
আমার ঘরে সালাত আদায় করা না কি মসজিদে?
তিনি বললেন: তুমি কি দেখ না আমার ঘর মসজিদের কত নিকটে? তা সত্ত্বেও মসজিদে সালাত আদায় করার চেয়ে ঘরে
সালাত আদায় করা আমার নিকটে অধিক প্রিয়; ফরয সালাত ব্যতীত’। [ইবনে
মাজাহ হা/১৩৭৮; সহীহ আত-তারগীব হা/৪৩৯।]
তিনি আরও বলেন,
اجْعَلُوْا فِىْ بُيُوْتِكُمْ مِنْ صَلاَتِكُمْ، وَلاَ
تَتَّخِذُوْهَا قُبُوْرًا
“তোমাদের ঘরেও কিছু
সালাত আদায় করবে এবং ঘরকে তোমরা কবর বানিয়ে নিও না’। [বুখারী হা/৪৩২, ১১৮৭; আবু দাউদ হা/১০৪৩,
১৪৪৮; তিরমিযী হা/৪১৫; ইবনে
মাজাহ হা/১১৪১; মিশকাত হা/৭১৪।]
উপরোক্ত হাদিস সমূহ থেকে ফরয সালাত ছাড়া অন্যান্য সাধারণ নফল-সুন্নত
ইত্যাদি সালাত বাড়িতে পড়ার গুরুত্ব ও ফযিলত সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়।
وفی الشامیۃ(۲۲/۲): (قولہ والافضل
فی النفل الخ) شمل ما بعد الفریضۃ وما قبلھا، لحدیث الصحیحین ’’علیکم الصلاۃ فی بیوتکم
فان خیر صلاۃ المرء فی بیتہ الا المکتوبۃ‘‘ واخرج ابو داؤد ’’صلاۃ المرء فی بیتہ
افضل من صلاتہ فی مسجدی ھذا الا المکتوبۃ‘‘ وتمامہ فی شرح المنیۃ وحیث کان ھذا
افضل یراعی مالم یلزم منہ خوف شغل عنھا لوذھب لبیتہ، او کان فی بیتہ ما یشغل بالہ
ویقلل خشوعہ فیصلیھا حینئذ فی المسجد لان اعتبار الخشوع ارجح
বাড়িতেই সুন্নাত নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। হ্যাঁ যদি বাড়িতে
গিয়ে কোনো কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,বা খুশু খুজুতে সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে,তাহলে মসজিদেই
পড়া উচিত। (ফাতাওয়ায়ে শামী ২/২২ নাজমুল ফাতওয়া ২/২৬১)
৫. যদি কোন মাসআলায় দুজন আলেমের মতামত ভিন্ন হয় তাহলে যিনি অধিক
নির্ভরযোগ্য তার কথা গ্রহণ করাই শ্রেয়। যদি উভয়েই নির্ভরযোগ্য হয় তাহলে যেই আলেমের
কথা অন্যান্য অধিক সংখ্যক আলেম সমর্থন করেন তার কথা মানাই শ্রেয়।
৬. বর্তমানে সেন্ট,
বডি স্প্রে, পারফিউম অ্যালকোহল ছাড়া প্রস্তুত করা
দুষ্কর। আর এ বিষয়ে ইসলামের বিধান হলো, যেসব অ্যালকোহল আঙুর,
খেজুর অথবা কিশমিশ থেকে তৈরি, সেসব অ্যালকোহল সম্পূর্ণ
হারাম। এ ধরনের অ্যালকোহল মেশানো সুগন্ধি ব্যবহার করা যাবে না। কেননা, রাসূল ﷺ বলেছেন,
كُلُّ مُسْكِرٍ حَرَامٌ
নেশা সৃষ্টিকারী প্রতিটি বস্তুই হারাম। (বুখারী ৪৩৪৩)
এই তিন বস্তু ছাড়া অন্য উপাদান থেকে যেসব অ্যালকোহল তৈরি করা
হয়, যেমন—এখনকার সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সাধারণত আঙুর, খেজুর বা কিশমিশ থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল
থাকে না; বরং বিভিন্ন শস্যদানা, গাছপালার
ছাল, মধু, শস্য, যব,
আনারসের রস, গন্ধক ও সালফেট, অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান ইত্যাদি থেকে প্রস্তুতকৃত অ্যালকোহল মেশানো হয়।
(এনসাইক্লোপিডিয়া অব ব্রিটানিকা খণ্ড ১,
পৃষ্ঠা ৫৪৪, প্রকাশকাল ১৯৫০ খ্রি.) তাই এগুলো নাপাক
নয় বিধায় নামাজ আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক নয়। আর এগুলো নেশার উদ্রেক না হওয়া পরিমাণ
ব্যবহার করা যায়। (তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম
১/৩৪৮, ৩/৩৩৭; ফিকহুল বুয়ু ১/২৯৮)
সুতরাং যেহেতু সেন্ট বা বডি স্প্রেগুলোতে সামান্য পরিমাণ পরিশোধিত
অ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় এবং তা শরীরের অভ্যন্তরে কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না, তাই এগুলো ব্যবহারে আপত্তি নেই। তবে এরূপ সেন্ট
পরিত্যাগ করে আতর ব্যবহার করাই উত্তম। (জাদিদ ফিকহি মাসাইল ১/৩৮)
বর্তমানে বডি স্প্রে বা পারফিউমে এ্যালকোহল ব্যবহার করা হয় মর্মে
শুনা যায়। এক্ষেত্রে মাসআলা হল,
যে সমস্ত এলকোহল খেজুর বা আঙ্গুর দ্বারা বানানো হয়নি, তেমন বস্তু নেশা না আসা পর্যন্তের জন্য ব্যবহার
জায়েজ ইমাম আবু হানীফা রহঃ এবং ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ এর মতানুসারে। {ফাতহুল কাদীর-৮/১৬০, ফাতওয়ায়ে আলমগীরী-৫/৪১২,
আল বাহরুর রায়েক-৮/২১৭-২১৮, ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া-২৭/২১৯}
বিভিন্ন সূত্রে আমরা জানতে পেরেছি যে, বর্তমানে এলকোহল খেজুর বা আঙ্গুর থেকে বানানো
হয় না। তাই এটি ব্যবহার করা জায়েজ হবে। তবে যদি জানা যায় যে, এসব আঙ্গুর বা খেজুর থেকে বানানো হয়, তাহলে তা ব্যবহার
করা জায়েজ নয়।
আর হারাম কোন বস্তু যেমন শুকর ইত্যাদির যদি এমনভাবে রিফাইন করা
হয় যে, এসবের কোন মৌলিকত্ব বাকি
না থাকে, তাহলেও উক্ত বস্তু ব্যবহার করা জায়েজ আছে। আর যদি সেসব
হারাম বস্তুর মৌলিকত্ব বাকি থাকে, তাহলে উক্ত বস্তু যাতে মিশ্রিত
করা হবে, তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না। {নিহায়াতুল মুহতাজ লির রামালি-৮/১২}
উক্ত মূলনীতির উপর ভিত্তি করে বুঝে নিন বিদেশী পণ্য ও বডি স্প্রে, পারফিউম, শেম্পু ইত্যাদি
ব্যবহার করার বিধান। যদি ওসব বস্তুুতে খেজুর বা আঙ্গুরের তৈরী এ্যালকোহল ব্যবহার করা
হয়, তাহলে তা ব্যবহার জায়েজ নয়। নতুবা তা নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ার
সম্ভাবনা থাকলে জায়েজ নয়। সম্ভাবনা না হলে জায়েজ।
আর যদি অন্য কোন হারাম বস্তু মিশ্রিত হয়, আর মিশ্রিত করার আগে তাকে এমনভাবে প্রসেসিং
করে যে, হারাম বস্তুটির মৌলিকত্ব বাকি থাকে না, তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে, আর যদি মৌলিকত্ব বাকি
থাকে তাহলে তা ব্যবহার করা জায়েজ হবে না।
যদি হারাম বস্তু মিশ্রিত করা হল কি না? জানা নেই। তাহলেও উক্ত পারফিউম, বডি স্প্রে ব্যবহারে কোন সমস্যা নেই।