আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
199 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (10 points)
edited by

আসসালামু আলাইকুম। মুহতারাম, জানতে চাচ্ছিঃ
আমি বিবাহিত। খুব বেশি দিন হয়নি, দ্বীনের পথে আল্লাহ রেখেছেন আলহামদুলিল্লাহ। আমি একটি কর্পোরেট অফিসে ৩ মাসের জন্য ইন্টার্নশিপ সম্পন্ন করার জন্য জয়েন করেছি। প্রতি মাসে হাজার খানেক টাকা স্যালারী হিসেবে দিবে এবং দুপুরের লাঞ্চ ফ্রি। সেখানে একটি কক্ষে আমরা মোট ৩ জন অফিসের কাজ করি। কক্ষটি খোলামেলা এবং লোকজনের আসা-যাওয়া থাকে। কিন্তু ৩ জনের মধ্যে একজন মেয়ে (বয়স আনুমানিক ২৩-২৬)। ৩ জন ই প্রায় সমবয়সী বলা যায়। একই টেবিলে বসে ৩ জনকে কাজ করতে হয়। তবে দূরত্ব থাকে। মেয়েটি একটু বাকপটু স্বভাবের এবং বেপর্দা। ছোট এই অফিসে হাতে গোনা ৩/৫ জন মেয়ে এবং পুরো অফিসেই ছেলে মেয়ে একসাথে কাজ করে। ছেলের সংখ্যা ই বেশি। অফিসের ধরণটা ই এমন। অর্থাৎ Combined।
প্রশ্নঃ
১.  উক্ত পরিবেশে একটি কক্ষে একজন বেগানা-বেপর্দা নারীর সাথে বসে অফিসের কাজ করা কি জায়েজ? (যদিও সেই কক্ষে আরো একজন ছেলে কাজ করেন)

২. এরূপ পরিবেশে কাজ করতে হলে আমার কি কি করণীয়? দেখা যায়, অফিসে কাজের জন্য অনেক সময় বেপর্দা কোন মেয়ে এসে আলা্প করতে চাচ্ছে। তখন কি করণীয়?

৩. একটি মেয়ের সাথে একত্রে বসে অফিসের কাজ করছি - এই জাতীয় ব্যাপারগুলো কি আমার স্ত্রী জানার হক্বদার? জানানো কি উচিত যদি সেখানে আমার স্ত্রীর সন্দেহ করার মত অবকাশ থাকে?

৪. কম্পানিতে আমার কাজটি হচ্ছেঃ আমার দায়িত্বে যেসব কর্মীরা মাঠ পর্যায়ে আছেন তাদেরকে কাজের জন্য প্রতিনিয়ত ফোনে চাপে রাখা, কাজে অবনতি হলে একটু উচ্চ স্বরে কিংবা কিছু কটু কথা বলা, যেন তারা চাপে থাকে এবং ঠিকমত কাজ করে। এমনটি করতে অফিস থেকেই বলা হয়। কিন্তু অনেক সময় মনে হয় যে তারা একটু কষ্ট ও পাচ্ছে হয়ত। এখন, সেই নিম্নবিত্ত কর্মচারীদের সাথে "কাজের জন্য" এরূপ আচরণ করা কি জায়েজ?

৫. অফিসে নির্দিষ্ট ডিউটি টাইম থেকে ২০/৩০ মিনিট অনিচ্ছাকৃত দেরি করে উপস্থিত হলে এবং কোন কারণে মাসে ১ দিন অফিসে অনুপস্থিত থাকলে, তারপরেও কি সেই মাসের শেষে সেই কম্পানি থেকে পরিপূর্ণ বেতন নেয়া কি জায়েজ?

৬. অফিসের ওয়াইফাই/ইন্টারনেট নিজস্ব কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে কি? (অফিসের অনুমতি আছে)

৭. উক্ত কম্পানিটি যদি কোন প্রকার হারামের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে, তাহলে সেই কম্পানিতে ইন্টার্নশিপ করা এবং সেই কম্পানি থেকে বেতন গ্রহণ করা কি জায়েজ?

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
edited by
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাবঃ-


(১.২)
শরীয়তের বিধান হলো গায়রে মাহরাম বালেগাহ মহিলার দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে  দৃষ্টিপাত করা নাজায়েজ। 
অনিচ্ছায় একবার দৃষ্টি চলে গেলে সাথে সাথেই চোখ ফিরিয়ে নিতে হবে,২য় বার আর  দৃষ্টিপাত করা যাবেনা।
কারন এতে ইচ্ছাকৃতভাবেই হয়ে যায়।
সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু বেগানা-বেপর্দা নারীর সাথে বসে অফিসের কাজ করা হয়,তাই এই চাকুরী  করলে যেহেতু বালেগাহ মহিলার দিকে দৃষ্টিপাত করতেই হয়, তাতে পর্দার বিধান লঙ্ঘনের গুনাহ হবে।
তাই তাকওয়ার খাতিরে এই চাকুরী না করাই উত্তম।
কারন পর্দা ফরজ।
তাদের দিকেও দৃষ্টিপাত নাজায়েজ।      

হাদীস শরীফে এসেছেঃ
  
عَنْ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَا تُتْبِعِ النَّظْرَةَ النَّظْرَةَ؛ فَإِنَّمَا  لَكَ الْأُولَى وَلَيْسَتْ لَكَ الْآخِرَةُ “

হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ  হযরত আলী রাঃ কে বলেন, হে আলী! [সহসা] একবার দেখার পর পুনরায় [কোন বেগানা নারীকে] দেখো না। কারণ, তোমার জন্য প্রথমবারে অনুমতি রয়েছে [যখন তা অনিচ্ছায় হয়ে যাবে], কিন্তু দ্বিতীয়বারের অনুমতি নেই।
 {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২৯৭৪, সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২৭৫১, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২১৪৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৭৭৭}

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ” مَا مِنْ مُسْلِمٍ يَنْظُرُ إِلَى مَحَاسِنِ امْرَأَةٍ أَوَّلَ مَرَّةٍ، ثُمَّ يَغُضُّ بَصَرَهُ إِلَّا أَحْدَثَ اللهُ لَهُ عِبَادَةً يَجِدُ حَلَاوَتَهَا “

হযরত আবু উমামা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে কোন মুসলমান কোন নারীর সৌন্দর্যের প্রতি হঠাৎ দৃষ্টি পড়ে যায়, অতঃপর সে নিজ চক্ষু নিচু করে নেয়, তবে আল্লাহ তাআলা তার জন্য এক ইবাদতের সুযোগ সৃষ্টি করেন, যাতে সে তার স্বাদ পায়। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২২২৭৮}

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।

فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ، وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ

রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল, [খারাপ উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-৮৯৩২}

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে যদিও সেই চাকুরী না করাই আপনার জন্য উত্তম হবে,তবে চাকুরী করতে হলে অবশ্যই চক্ষু নিচে রাখতে হবে।
অপ্রয়োজনীয় কথা বলা যাবেনা।
,      
আর যদি কক্ষে কোনো সময় সেই ছেলে না থাকে,শুধু সেই মেয়ে আর আপনি,তাহলে তো দৃষ্টি না দিলেও গুনাহ হবে।
কেননা কোনো মহিলার সাথে নির্জনে বা কোনো কক্ষে একাকিত্ব গুনাহ। 

আপনি তাকে হাত পা,চেহারা সহ পরিপূর্ণ পর্দা করার আদেশ করবেন, প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি প্রতিষ্ঠানের  নিয়ম আকারে বানিয়ে নিতে পারেন।   
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ خَطَبَنَا عُمَرُ بِالْجَابِيَةِ فَقَالَ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي قُمْتُ فِيكُمْ كَمَقَامِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِينَا فَقَالَ " أُوصِيكُمْ بِأَصْحَابِي ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ ثُمَّ يَفْشُو الْكَذِبُ حَتَّى يَحْلِفَ الرَّجُلُ وَلاَ يُسْتَحْلَفُ وَيَشْهَدَ الشَّاهِدُ وَلاَ يُسْتَشْهَدُ أَلاَ لاَ يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلاَّ كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ عَلَيْكُمْ بِالْجَمَاعَةِ وَإِيَّاكُمْ وَالْفُرْقَةَ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ مَعَ الْوَاحِدِ وَهُوَ مِنَ الاِثْنَيْنِ أَبْعَدُ مَنْ أَرَادَ بُحْبُوحَةَ الْجَنَّةِ فَلْيَلْزَمِ الْجَمَاعَةَ مَنْ سَرَّتْهُ حَسَنَتُهُ وَسَاءَتْهُ سَيِّئَتُهُ فَذَلِكَ الْمُؤْمِنُ "

ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু আমাদেরকে জাবিয়া নামক স্থানে ভাষণ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, হে লোকেরা, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেমন আমাদের মাঝে দাঁড়াতেন তেমনি আমি আজ তোমাদের মাঝে দাঁড়িয়েছি। তিনি বলেছেন, আমি তোমাদেরকে আমার সাহাবীগণ সম্পর্কে ওয়াসীয়ত করে যাচ্ছি। এরপর যারা তাদের পরে আসবে, এরপর হল তারা যারা তাদেরও পরে আসবে। এরপর মিথ্যার বিস্তৃতি ঘটবে। এমনকি একজন কসম করে বসবে অথচ তাকে কসম করতে বলা হয়নি। কোন সাক্ষী দিয়ে বসবে অথচ তাকে সাক্ষ্য দিতে বলা হয়নি। শুনে রাখ, কোন পুরুষ যেন কোন মহিলার সঙ্গে নিভৃতে একত্রিত না হয় অন্যথায় শয়তান অবশ্যই তৃতীয় জন হিসাবে হাযির থাকে। তোমরা অবশ্যই মুসলিম জামাআতকে আকড়ে ধরে থাকবে। বিচ্ছিন্নতা থেকে বেঁচে থাকবে। শয়তান একাকী জনের সাথে থাকে। আর দুই জন থেকে সে আরো দূরে থাকে। যে ব্যক্তি জান্নাতের সর্বোত্তম স্থান কামনা করে সে যেন জামাআতকে আকড়ে ধরে থাকে। নেক আমল যাকে আনন্দিত করে এবং মন্দ আমল যাকে দুঃখিত করে সেই হল মু’মিন। সহীহ, ইবনু মাজাহ ২৩৬৩, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ২১৬৫ [আল মাদানী প্রকাশনী]

★★এখানে বেতন সংক্রান্ত মাসয়ালা হলোঃ
কাজের বিনিময়ে বেতন দেওয়া হয়, তাই আপনি নিয়ম অনুসারে কোনো প্রকার অবহেলা-অলসতা না করে ঠিকমত কাজ করেন,তাহলে যে বেতন পাবেন সেটা অবশ্য আপনার জন্য হালাল হবে।

তবে শরয়ী পর্দা না থাকায় সর্বদা পর্দা লঙ্গনের গোনাহে লিপ্ত থাকবেন।

আরো জানুনঃ 

(০৩)
যদি আপনার স্ত্রী প্রশ্ন করে,তাহলে জানাতে হবে।
তিনি এটি জানার হক রাখেন।
,
(০৪)
কাজের প্রতি অবহেলা হলে এমন চাপে রাখা যাবে।
তবে এমনিতেই কিছু বলা যাবেনা।
গালি গালাজ করা কোনোভাবেই যাবেনা।
এটি জায়েজ নয়।

স্বাভাবিক ভাবে কষ্ট পাবেনা,এমন কথা বলার চেষ্টা করবেন। । 

(০৫)
যদি সেই দিন গুলোর বেতন নেওয়ারও নিয়ম থাকে,বা বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়,বা তারা সেটি মেনে নেয়,তাহলে জায়েজ।
অন্যথায় বৈধ হবেনা। 

(০৬)
যেহেতু অনুমতি আছে,তাই নিজের বৈধ যেকোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে।
,
(০৭)
এক্ষেত্রে আপনার কাজটি হারাম সংশ্লিষ্ট কিনা? 
সেটি দেখতে হবে।

আপনার কাজটি হারাম সংশ্লিষ্ট বা হারামের সহায়তাকারী না হলে সেই কোম্পানি থেকে বেতন গ্রহন করা যাবে।
,
তবে সেই কোম্পানির মূল কাজই যদি হারাম সংশ্লিষ্ট হয়,বা বেশিরভাগ কাজই যদি তাদের হারাম সংশ্লিষ্ট হয়,তাহলে সেই চাকুরী ছেড়ে দিবেন।        


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...