আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
472 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (2 points)
আসসালামু আলাইকুম,
সম্মানিত মুফতি সাহেব,
একাটা বিষয় কয়েকদিন ধরে আমার মনের মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে।অনেকটা পেরেশানিতে আছি।তাই সঠিক সমাধানের জন্য আপনাদের দারস্থ হয়েছি।দয়া করে সঠিক সমাধান দিয়ে উপকৃত করবেন।
###
আমার বউয়ের কিছু ভুল আচরনের কারনে, আমার বউয়ের উপর রাগ করে একদিন আমার বউকে মোবাইল ফোনে শ্বাসন করি,গালমন্দ করি।
আমার স্ত্রী লাউডস্পিকারে কথা বলতেছিলো, আমার শ্বশুর আমার আর আমার স্ত্রীর কথাগুলো শুনতে পায়।
এমতাবস্থায় আমার শ্বশুর শুনতে পেলে,আমার সাথে তৎক্ষনাৎ ফোনে কথা বলে।
আমার শ্বশুর শুনতে চায়,উনার মেয়ে কি দোষ করেছে।আমি সব দোষ খুলে বলি। হয়তো আমার ভুলেই হোক,কিংবা আমার শ্বশুর রেগে থাকার কারনেই হোক আমাকে বলে-
___আপনি কি আরো বিয়ে করতে চাচ্ছেন?
___বিয়ে করতে চাইলে বিয়ে করেন।
___আর ফোন দিয়েন না।
শ্বশুর মুরুব্বী মানুষ,আমি উনার এই কথাগুলোতে কোনো জবাব দেইনি।

### ওইদিনেই প্রায় আধা ঘন্টার মধ্যে আবার আমি আমার স্ত্রীকে ফোন দিয়ে বলি, কথাগুলো ছিলো এরকম-
____আমার কাছে তোমার কি কোনো দাবী আছে? দাবী থাকলে বলো।
____দাবীর মধ্যে তুমি আমার কাছে মোহরানার টাকা পাও,শোধ করতে না পারলে মাফ করে দিও।
মানে মোহরানার টাকা মাফ চাই।
___আর বলি,তোমার বাবা মা আমাকে মাঝে মাঝে টাকাপয়সা দিছে,পারলে শোধ করার চেষ্টা করবো।

এছাড়াও আরো বলি-
১. আমি বিয়ে করলে তোমার কি কোনো আপত্তি আছে?
___সে বলে আপত্তি আছে। (কি আপত্তি আছে সেটা বলেনি।)
হয়তো স্বামীকে আর বিয়ে করতে দিবেনা এটাই তার আপত্তি।
২. আমি বলি,আর হয়তো তোমার সাথে কথা হবেনা বা যোগাযোগ হবেনা।ভালো থেকো।
৩. রাগ করে,মন খারাপ করে বলি-আমার জন্য কাঁদবা মেয়ে।

###উপরিক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আমার প্রশ্ন হলো-
1.উপরিউক্ত ঘটনায় আমার শ্বশুর আমাকে বিয়ে করতে বলায়, সেটা কোনো তালাকের মজলিশ বলে গন্য হবে?
যদি তালাকের মজলিশ বলে গন্য হ,য় তাহলে আমার স্ত্রীকে উপরের বর্ণনায় যে বিষয়গুলো বলেছি সেগুলার কারনে বিবাহে কোনো সমস্যা হবে কিনা?
যদি সমস্যা হয় তাহলে দয়া করে জানাবেন।আর যদি বিবাহে কোনো সমস্যা না হয় তাহলে -আলহামদুলিল্লাহ।কারণ বিবাহে বিচ্ছেদ ঘটুক তা আমি চাইনা।
(রাগের মাথায় নিয়ত কেমন ছিলো তা আমার মন সঠিক স্বাক্ষ্য দিতে পারতেছেনা।মনে হচ্ছে সব ছিলো মন খারাপ,অভিমান,রাগ,আর জেদ।মুলত স্ত্রীর মনের অবস্থা জানার চেষ্টা করাও একটা কারন।)
2.আমার স্ত্রীকে যে কথাগুলো বলছি সেগুলা কি কেনায়াসূচক তালাকের পরিভাষা? যদি সেগুলা কেনায়াসূচক তালাকের পরিভাষা হয় তাহলে কি তালাক হবে?
3.আমি সরাসরি বলিনি-তালাক দিলাম বা ছেড়ে দিলাম।শুধু বলেছি আর হয়তো যোগাযোগ হবেনা।
(আমার স্ত্রী তারপরের দিন আমাকে কল দেয়, মেসেজ দেয়,আমরা ভালোমত কথা বলি। এখন পর্যন্ত আমরা ভালো ভাবে কথা বলি।)
4.উক্ত স্ত্রীর সাথে ঘর সংসার করা বৈধ কিনা? বৈধ না হইলে করনীয় কী?

বিঃদ্রঃ বিষয়গুলো মনের ওয়াসওয়াসা, দয়া করে একটা সঠিক পরামর্শ ও সমাধান দিয়েন হুজুর।
আমি খুব উপকৃত হব।

1 Answer

0 votes
by (574,080 points)
জবাব
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 


তালাক খুবই জঘন্য একটি শব্দ। নিকৃষ্ট হালাল বলা হয়েছে হাদীসে। 

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 

حَدَّثَنَا كَثِيرُ بْنُ عُبَيْدٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ خَالِدٍ، عَنْ مُعَرِّفِ بْنِ وَاصِلٍ، عَنْ مُحَارِبِ بْنِ دِثَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ " أَبْغَضُ الْحَلاَلِ إِلَى اللَّهِ تَعَالَى الطَّلاَقُ " .

কাসীর  ইবন  উবায়দ .......... ইবন  উমার  (রাঃ)  নবী  করীম  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম  হতে  বর্ণনা  করেছেন যে,  আল্লাহ্  তা‘আলার  নিকট  নিকৃষ্টতম  হালাল বস্তু  হল  তালাক।

(আবূ দাউদ ২১৭৮, ইরওয়া ২০৪০, যইফ আবু দাউদ ৩৭৩-৩৭৪, আর-রাদ্দু আলাল বালীক ১১৩।) 

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই    
তালাক স্পষ্ট বাক্য দ্বারাও হতে পারে,আবার কেনায়া শব্দ,ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারাও হতে পারে।
কেনায়া তালাক বলা হয় স্পষ্ট তালাক শব্দ না বলে বরং তালাকের ইঙ্গিতসূচক শব্দ বলে তালাক দেওয়া। 

★শরিয়তের পরিভাষায় তালাকের ইঙ্গিতসূচক জাতীয় শব্দে তালাক দেয়াটাকে বলা হয় ‘কেনায়া তালাক’ বা ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা তালাক। আর কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয় ৷

সুতরাং যদি কেউ স্ত্রীকে এরূপ কথা বলে এবং তালাকের নিয়ত করে, তবে স্ত্রী তালাক হয়ে যাবে। আর যদি তালাকের নিয়ত না করে তাহলে তালাক হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া, ১/৩৭৫)

হেদায়া গ্রন্থে আছেঃ 

وَالضَّرْبُ الثَّانِي: الْکِنَايَاتُ، وَلاَيَقَعُ بهَا الطلاَقُ إلاَّبِنِيَةٍ، اَوْ دَلالَةٍ حَالٍ. وَهِيَ عَلَی ضَرْبَيْنِ: مَنْها ثَلاَثَةُ اَلْفَاظٍ يَقَعُ بهَا الطّلاقُ الرَّجْعِيُّ،وَلاَيَقَعُ بهَا إِلا وَاحَدَةٌ، وَهِيَ قَوْلُهُ: اعْتَدِّي، وَاسْتَبْرِئِي رَحِمَکِ، وَاَنْتِ وَاحِدَةٌ، وَبَقِيَةُ الْکِنَايَاتِ إِذا نَوَی بهَا الطلاَقَ کَانَتْ وَاحِدَةً بَائِنَةً، وَإِنْ نَوَی بِهَا ثَلاَثاً کَانَتْ ثَلاَثاً، وَإِنْ نَوَی اثْنَتَيْنِ کَانَتْ وَاحِدَةً، وَهَذَا مِثْلُ قَوْلِهِ: اَنْتِ بَائِنٌ، وَبَتَّةٌ، وَبَتْلَةٌ، وَحَرَامٌ، وَحَبْلُکِ عَلَی غَارِبِکِ، وَالْحَقی بِاَهْلِک، وَخَلِيَةٌ، وَبَرِيّةٌ، وَوَهَبْتُکِ لاهْلِکِ، وَسَرَّحْتُکِ، وَاخْتَارِيْ، وَفارَقْتُکِ، وَاَنْتِ حُرَّةٌ، وَتَقَنَّعِي، وَتَخَمَّرِي، وَاسْتَتِرِيْ، وَاغْرُبِيْ، وَابْتَغِي الاَزْوَاجَ، فَإِنْ لَمْ يَکُنْ لَهُ نِيَةٌ لَمْ يَقَعْ بِهٰذِهِ الاَلْفَاظِ طَلاَقٌ؛ إِلا اَنْ يَکُوْنَا فِيْ مُذَاکَرَةِ الطّلاَقِ؛ فَيَقَعُ بِهَا الطّلاَقُ فِيْ الْقَضَاءِ، وَلاَيَقَعُ فِيْمَابَيْنَةُ وَبَيْنَ اﷲِ تَعَالَی إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَهُ، وَإِنْ لَمْ يَکُوْنَا فِيْ مَذَاکَرَةِ الطّلاَقِ، وَکَانافِيْ غَضَبٍ اَوْ خُصُوْمَةٍ، وَقَعَ الطّلاَقُ بِکُلِّ لَفْظٍ لاَ يُقْصَدُ بِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ، وَلَمْ يَقَعْ بِمَا يُقْصَدُبِهِ السَّبُّ وَالشَّتِيْمَةُ إِلاَّ اَنْ يَنْوِيَةُ.

احمد بن محمد البغدادي المعروف بالقدوري، مختصر القدوري: 363. 364، موسسة الريان للطباعة والنشر والتوزيع، بيروت
برهان الدين علي المرغيناني، الهداية شرح البداية، 1: 241، المکتبة الاسلامية

সারমর্মঃ  
কেহ যদি তার স্ত্রীকে বলে যে তোমাকে আমি ছেড়ে  দিলাম, যা খুশি তাই করো,তুমি মুক্ত, তুমি স্বাধীন, তুমি স্বামী খুজো,বা স্বামী তালাশ করো,তাহলে এটিও কেনায়া তালাক।
কেনায়া তালাক হলো ইঙ্গিতসূচক শব্দ দ্বারা যেটা হয়।
কেনায়া তালাকের ক্ষেত্রে নিয়ত তথা তালাকের ইচ্ছা থাকা অত্যাবশ্যক। আর কেনায়া তালাক দ্বারা এক তালাকে বায়েন পতিত হয়।

আরো জানুনঃ 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি কোনো কেনায়া তালাকের শব্দ ব্যবহার করেননি।
তাই প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে কোনোভাবেই তালাক পতিত হবেনা।

আপনারা আগের মতোই স্বামী স্ত্রী হিসেবেই আছেন।
    
প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
স্ত্রী,ঘর সংসার সবই মহান আল্লাহর নিয়ামত।
তাই এই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা চাই।
ভবিষ্যতে এমন কোনো কথা কাজ থেকে বিরত থাকা চাই।    


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...