আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
268 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (32 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ। আমি iom এর একজন তালিবুল ইলম তাই একটু বিস্তারিত উত্তরের আশা করতেছি।


১. আমি অনেক যাবৎ একটা বিষয়ে চিন্তায় আছি তবে তার কোনো সুরাহা করতে পারতেছিনা এবং সে ক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিৎ তাও বুঝতেছিনা। ধরুন, আমি এক বছর আগে কাওকে ১,০০,০০০৳ করজে হাসানাহ দিলাম। এখন এক বছর পর যদি সে আমাকে ১,০০,০০০৳ ফেরত দিলে আপাত দৃষ্টিতে তা ঠিক দেখালেও যেহেতু এই টাকার নিজস্ব কোনো কারেন্সি বা মূল্য নেই তাই বাজারদর হিসেবে তার মান অনেক কমে যাবে। যেমনঃ গতবছর ১$=৮০৳ ছিলো। এখন ১$=৮৯৳ তাহলে এক বছরে আমার ১১,২৫০৳ লস হলো। অর্থাৎ সেই ব্যক্তিটা আমাকে এতো টাকা ঠকালো!

আবার যদি আমি এই হিসেবটা করে রাখি এবং এক বছর পর তার থেকে ১,১১,২৫০৳ নেই তাহলে টাকা দিয়ে টাকা বেশি নেবার জন্য তো এটা সুদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেলো। সে ক্ষেত্রে আমি কি করতে পারি????এ ক্ষেত্রে আমাদের কি করা উচিৎ যেনো কেউ না ঠকে এবং জায়েজও হয়???

২. আমি যদি কাওকে বিকাশে ১০০০৳ পাঠায়। তাহলে তার ক্যাশ আউট করতে জেনারেলী খরচ হিসেবে বিশ টাকার কাছাকাছি কাটে। মানে সে ৯৮০৳ হাতে পেলো। এখন সে যদি আমাকে ১০২০৳ পাঠায়,তাহলে আমি ১০০০৳ হাতে পেলাম।তাহলে এই করজে হাসানাহ কি সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে???যদি আমি ১০০০৳ বিকাশে ফেরত নেয় তবুও তো তা বের করতে আমার ২০ টাকা লস হচ্ছে! (এতোদিন আমি যাদের করজে হাসানাহ দিতাম তাদের থেকে একই মাধ্যমে একই টাকা ফেরত নিতাম।তবে এতেও আমার লস হয়ছে এবং অনেকসময়ই একই মাধ্যমে নেয়াটা সম্ভব হয়না)

৩. আমি কাওকে "রকেট" এর মাধ্যমে টাকা সেন্ড মানি করলাম। এ ক্ষেত্রে জেনারেলী টাকা কাটেনা এমনকি অনেকসময়ই টাকা বুথ থেকে ক্যাশ আউট করলে টাকা কাটেনা। এখন যদি সে আমাকে বিকাশে খরচসহ ধারের টাকা পরিশোধ করতে চাই তা কি জায়েজ হবে?

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)
edited by

 

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

তা'আলা বলেন-

ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻳَﺄْﻛُﻠُﻮﻥَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻻَ ﻳَﻘُﻮﻣُﻮﻥَ ﺇِﻻَّ ﻛَﻤَﺎ ﻳَﻘُﻮﻡُ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳَﺘَﺨَﺒَّﻄُﻪُ ﺍﻟﺸَّﻴْﻄَﺎﻥُ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤَﺲِّ ﺫَﻟِﻚَ ﺑِﺄَﻧَّﻬُﻢْ ﻗَﺎﻟُﻮﺍْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊُ ﻣِﺜْﻞُ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻭَﺃَﺣَﻞَّ ﺍﻟﻠّﻪُ ﺍﻟْﺒَﻴْﻊَ ﻭَﺣَﺮَّﻡَ ﺍﻟﺮِّﺑَﺎ ﻓَﻤَﻦ ﺟَﺎﺀﻩُ ﻣَﻮْﻋِﻈَﺔٌ ﻣِّﻦ ﺭَّﺑِّﻪِ ﻓَﺎﻧﺘَﻬَﻰَ ﻓَﻠَﻪُ ﻣَﺎ ﺳَﻠَﻒَ ﻭَﺃَﻣْﺮُﻩُ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠّﻪِ ﻭَﻣَﻦْ ﻋَﺎﺩَ ﻓَﺄُﻭْﻟَـﺌِﻚَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﻫُﻢْ ﻓِﻴﻬَﺎ ﺧَﺎﻟِﺪُﻭﻥَ

যারা সুদ খায়, তারা কিয়ামতে দন্ডায়মান হবে, যেভাবে দন্ডায়মান হয় ঐ ব্যক্তি, যাকে শয়তান আসর করে মোহাবিষ্ট করে দেয়।তাদের এ অবস্থার কারণ এই যে, তারা বলেছেঃ ক্রয়-বিক্রয় ও তো সুদ নেয়ারই মত!অথচ আল্লা’হ তা’আলা ক্রয়-বিক্রয় বৈধ করেছেন এবং সুদ হারাম করেছেন। অতঃপর যার কাছে তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে উপদেশ এসেছে এবং সে বিরত হয়েছে, পূর্বে যা হয়ে গেছে, তা তার। তার ব্যাপার আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আর যারা পুনরায় সুদ নেয়, তারাই দোযখে যাবে। তারা সেখানে চিরকাল অবস্থান করবে।(রা বাকারা-২৭৫)

রিবা বা সূদ কাকে বলে?

এ ব্যপারে উলামায়ে কেরামগণ একমত যে, প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ হিসেবে পরিগণিত হবে।যেমন

ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺃَﺑُﻮ ﺑَﻜْﺮٍ ﻗَﺎﻝَ : ﺣَﺪَّﺛَﻨَﺎ ﺣَﻔْﺺٌ، ﻋَﻦْ ﺃَﺷْﻌَﺚَ، ﻋَﻦِ ﺍﻟْﺤَﻜَﻢِ، ﻋَﻦْ ﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴﻢَ، ﻗَﺎﻝَ : « ﻛُﻞُّ ﻗَﺮْﺽٍ ﺟَﺮَّ ﻣَﻨْﻔَﻌَﺔً، ﻓَﻬُﻮَ ﺭِﺑًﺎ  ﻣﺼﻨﻒ ﺍﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺷﻴﺒﺔ

তরজমাঃ-প্রত্যেক ঐ ঋণ যা মুনাফাকে টেনে নিয়ে আসবে তাই রিবা বা সুদ। (মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বাহ-২০৬৯০)

কোরআন ও হাদিসে ঋণ বলতে ‘কর্জে হাসানা’ বোঝানো হয়েছে। আর কর্জে হাসানা প্রদানে বিশেষ পুণ্যের কথা বর্ণিত হয়েছে : কাউকে নেকির আশায় বা সহযোগিতার জন্য কর্জে হাসানা প্রদান করা আল্লাহর পথে দান-সদকা করার সমতুল্য। এমনকি ঋণ দানকে দান-সদকার চেয়েও বেশি মর্যাদাপূর্ণ বলা হয়েছে।

আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করে তার দরজায় একটি লেখা দেখতে পেল যে সদকার নেকি ১০ গুণ বৃদ্ধি করা হয় এবং ঋণ দানের নেকি ১৮ গুণ বৃদ্ধি করা হয়।’ (সিলসিলা সহিহাহ, হাদিস : ৩৪০৭)

ঋণপরিশোধের সময় ঋণগ্রহীতা ইচ্ছা করলে ঋণদাতার অনুগ্রহের বদলাস্বরূপ তাকে কিছু টাকা বাড়িয়েও দিতে পারে কিংবা যে  মানের সম্পদ ঋণ নিয়েছিল তাকে এর চেয়ে উৎকৃষ্ট মানের জিনিস ফেরত দিতে পারে। বাড়িয়ে দেয়ার যদি স্পষ্ট কিংবা অস্পষ্ট কোনো পূর্ব কথা না থাকে, তাহলে এটা নিষিদ্ধ সুদের অন্তর্ভুক্তও হবে না। অনুগ্রহের বিনিময় তো অনুগ্রহ দিয়েই হতে পারে। প্রিয় নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনালেখ্য থেকেও আমরা এ অনুগ্রহের শিক্ষা পাই।

সাহাবি হজরত জাবের (রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) আমার কাছ থেকে একবার ঋণ নিয়েছিলেন। পরে যখন তিনি তা আমাকে পরিশোধ করলেন, তখন আমার পাওনার চেয়েও বাড়িয়ে দিলেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৩৪৯)

পাওনা পরিশোধকালে পাওনাদারের কৃতজ্ঞতা জানানো এবং তার জন্যে কল্যাণের দোয়া করা ইসলামের এক অনন্য শিক্ষা।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার সাহাবি হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি রবিয়া (রা.)-এর থেকে চার হাজার দিরহাম ঋণ করেছিলেন। যখন তা পরিশোধ করলেন, তখন তিনি তার জন্য এ দোয়া করলেন, আল্লাহতায়ালা তোমার পরিবার-পরিজন ও ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। (সুনানে নাসায়ি: ৪৬৮৩)

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

১.কাউকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা ধার দিয়ে পরবর্তিতে অধিক টাকা আদায় করা সুদের অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে যদি কোন ঋণগ্রহিতা পূর্ব শর্ত ছাড়াই স্বেচ্ছায় কিছু অতিরিক্ত দেন তাহলে তা গ্রহণ করা জায়েয আছে।

২,৩.কাউকে ১ হাজার টাকা নগদ ধার দিলে, সে যদি বিকাশে ১০২০ টাকা দেয়,তাহলে সেটা সুদ হবে না। কেননা এই অতিরিক্ত ২০ টাকা ক্যাশআউট চার্জ হিসেবে বিবেচ্য হবে। অনুরূপভাবে যদি কেউ অন্যজনকে ১০২০ টাকা বিকাশে ধার দেয় তাহলে ঋণগ্রহিতা ঋণ ফেরৎ দেয়ার সময়, ১০২০টাকা ফেরৎ দিবে।কিন্তু সে যদি পরিশোধ করার সময় ১০০০ টাকা বিকাশে পাঠায়,তাহলে ঋণদাতা  ২০ টাকা পাঠাতে বলতে পারবে। কিন্তু বিকাশে ১০০০টাকা ঋণ দিয়ে ১০২০ টাকা ফেরৎ নেয়া কখনো জায়েয হবে না,বরং সেটা সুদ হয়ে যাবে। নগদ বা রকেটের ক্ষেত্রেও একই হুকুম।

 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (32 points)
জাজাকুমুল্লাহু খাইরান উস্তাদ
by (59,040 points)
ওয়া ইয়্যাকুম

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...