উত্তর
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(১.২.৩)
অন্যায় ভাবে কাউকে হত্যা করা কবীরা গুনাহ।
কেহ যদি কোনো মুসলমানকে অন্যায় ভাবে হত্যা করে,তাহলে তার ব্যাপারে কুরআন হাদিসে অনেক কঠোর আযাবের কথা উল্লেখ আছে।
যেমন নিন্মের কিছু আয়াত ও হাদীসঃ
★মু’মিন ব্যক্তিকে হত্যা করা সম্পর্কে কঠোর সতর্কবাণী:
আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘’আল্লাহর নিকট পৃথিবী ধ্বংস হওয়াটা অধিকতর সহজ ব্যাপার একজন মুসলিম খুন হওয়ার পরিবর্তে’’ তিরমিযি ১৩৯৫; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৬২
★হত্যা সর্ববৃহৎ গুনাহসমূহের একটি:
আনাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’কবীরা গুনাহসমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় গুনাহ হচ্ছে, আল্লাহর সঙ্গে শরীক করা, প্রান হত্যা করা, পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়া আর মিথ্যা বলা, কিংবা বলেছেন, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া’’ বুখারী ৬৮৭১; মুসলিম ১৬১-(১৪৪/৮৮), ১৬২-(.../...)
আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’ধ্বংসকারী সাতটি কাজ হতে তোমরা বেঁচে থাকো। প্রশ করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! সেগুলো কী? রাসুল (সা.) বললেন, ‘’১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা, ২) যাদু করা, ৩) আল্লাহ যার হত্যা নিষেধ করেছেন, যথার্থ কারন ছাড়া তাকে হত্যা করা, ৪) ইয়াতীমের মাল অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করা, ৫) সুদ খাওয়া, ৬) যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করা, ৭) সতি-সাধ্বী ঈমানদার নারীর প্রতি অপবাদ দেয়া’’ বুখারী ২৭৬৬, ৬৮৫৭; মুসলিম ১৬৩-(১৪৫/৮৯); আবু দাউদ ২৮৭৪
★হত্যা করা কুফুরীর অন্তর্ভুক্ত:
আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘’মুসলিমকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফুরী’’ বুখারী ৬০৪৪
জাবির বিন আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) জারীর (রা.)-কে বিদায় হজ্জে বললেন: ‘’লোকদেরকে চুপ থাকতে বল। তারপর তিনি বললেন, আমার পরে তোমরা একে অপরের গর্দান কাটাকাটি করে কুফরীতে ফিরে যেয়ো না’’ বুখারী ১২১, ৪৪০৫, ৬৮৬৯, ৭০৮০; মুসলিম ১২৬-(১১৮/৬৫); ইবন মাযাহ ৩৯৪২
আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’তোমাদের জন্য আফসোস! তোমরা আমার পরে একে অন্যের গর্দান উড়িয়ে দিয়ে কুফরীতে ফিরে যেয়ো না’’ বুখারী ১৭৪২, ৪৪০৩, ৬১৬৬, ৬৭৮৫, ৬৮৬৮, ৭০৭৭; মুসলিম ১২৮-(১২০/...); আবু দাউদ ৪৬৮৬; ইবন মাযাহ ৩৯৪৩
★মহান আল্লাহ তায়ালা হত্যাকারীকে চির জাহান্নামী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এবং তিনি তার উপর অত্যন্ত অসন্তুষ্ট। তেমনিভাবে তার উপর অভিশাপ ও আখেরাতে তার জন্য রয়েছে দ্বিগুন শাস্তি:
‘’আর যে ব্যক্তি স্বেচ্ছায় কোন মুমিনকে হত্যা করে তার শাস্তি জাহান্নাম। যাতে সে স্থায়ীভাবে থাকবে, তার উপর আল্লাহর ক্রোধ ও অভিসম্পাত। আল্লাহ তার জন্য মহাশাস্তি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন’’ নিসা ৪/৯৩
★অনর্থক হত্যাকাণ্ড ঘটানোকে করাকে মহান আল্লাহ তায়ালা পৃথিবী ধ্বংস করার চাইতেও কঠিন হিসাবে গন্য করেছেন:
আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘’আল্লাহর নিকট পৃথিবী ধ্বংস হওয়াটা অধিকতর সহজ ব্যাপার একজন মুসলিম খুন হওয়ার পরিবর্তে’’ তিরমিযি ১৩৯৫; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৬২
আল-বারা বিন আযিব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’একজন ঈমানদার ব্যক্তির অন্যায়ভাবে নিহত হওয়ার চেয়ে গোটা পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাওয়া আল্লাহর নিকট অধিক সহজ ও সাধারন ব্যাপার’’ ইবন মাযাহ ২৬১৯; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৬৩
★হত্যা ভয়ানক এক অপরাধ। হত্যার ভয়াবহতার কারনে আল্লাহ তায়ালা শুধুমাত্র এক ব্যক্তির হত্যাকারীকে সকল মানুষের হত্যাকারী হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন:
‘’এ কারনেই আমি বানী ইসরাইলের জন্য বিধান দিয়েছিলাম, যে ব্যক্তি মানুষ হত্যা কিংবা যমিনে সন্ত্রাস সৃষ্টির কারন ব্যতীত কাউকে হত্যা করবে সে যেন সমগ্র মানুষকেই হত্যা করল; আর যে কোন মানুষের প্রান বাঁচালো, সে যেন সকল মানুষকেই বাঁচালো। তাদের কাছে আমার রাসুলগন সুস্পষ্ট প্রমান নিয়ে এসেছিল, এরপরও তাদের অধিকাংশই পৃথিবীতে বাড়াবাড়ি করেছিল’’ মায়িদাহ ৫/৩২
ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: ‘’যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত কারন ছাড়া প্রান হত্যা নিষিদ্ধ মনে করে, তার থেকে গোটা মানব জাতির প্রান রক্ষা পেল’’ বুখারী ৮৭/২ (রক্তপন অধ্যায়)।
★সংখ্যায় যত অধিকই হোক না কেন, হত্যায় অংশ গ্রহনকারী সকলেই সমান অপরাধী। শুধুমাত্র একজনকে হত্যায় যদি সমগ্র পৃথিবীবাসী অংশগ্রহন করে থাকে তাহলেও মহান আল্লাহ তায়ালা সকলকেই জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন:
আবুল হাকাম আল-বাজালী (রহ.) বলেন, আমি আবু সাইদ খুদরী ও আবু হুরায়রাহ (রা.) উভয়কে বর্ণনা করতে শুনেছি, রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘’আসমান-যমিনের মধ্যে বসবাসকারী সকলে একত্রে মিলিত হয়েও যদি একজন মুমিনকে হত্যা করার কাজে শরীক হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ তায়ালা তাদের সকলকে উপুর করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন’’ তিরমিযি ১৩৯৮; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৬৪
★হত্যাকাণ্ডে যত অধিক সংখ্যক লোকই অংশগ্রহন করুক না কেন কাউকেই ছাড় দেয়া হবে না। সবাই শাস্তির হকদার। অবৈধ ভাবে শুধুমাত্র একজনকে হত্যার অপরাধে উমার (রঃ) সমগ্র সান’আবাসীকে হত্যা করতে চেয়েছিলেন:
ইমাম বুখারী (রহ.) বলেন, আমাকে ইবন বাশশার (রহ.) ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণনা করেছেন যে: ‘’একটি বালককে গোপনে হত্যা করা হয়। তখন উমার (রা.) বললেন: ‘’যদি গোটা সান’আবাসী (তৎকালীন সময়ে ইয়েমেনের রাজধানী) এতে অংশ নিত তাহলে আমি তাদেরকে হত্যা করতাম’’ বুখারী ৬৮৯৬; বুলুগুল মারাম ১১৭৪
সাইদ ইবনু মুসাইয়াব (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার ইবন খাত্তাব (রা.) এক ব্যক্তির পরিবর্তে পাঁচ অথবা সাত ব্যক্তির এক দলকে (কিসাস স্বরূপ) হত্যা করেছিলেন। তারা সম্মিলিতভাবে ধোঁকা দিয়ে জনৈক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিল। অতঃপর তিনি বললেন, যদি এ ব্যক্তির হত্যাকাণ্ডে সমস্ত সান'আবাসীও (ইয়েমেনের রাজধানী) শরীক হতো, তবে আমি সকলকেই হত্যা করতাম'' মুয়াত্তা মালিক ১৬২৩; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৮১
আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’যে কোন ব্যক্তিকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়, তার পাপের ভাগ আদম (আ.)-এর প্রথম (হত্যাকারী) পুত্রের উপরও বর্তাবে। কারন সে-ই প্রথমে হত্যার রীতি চালু করে’’ বুখারী ৩৩৩৫, ৬৮৬৭, ৭৩২১; মুসলিম ৪২৭১-(২৭/১৬৭৭); তিরমিযি ২৬৭৩; ইবন মাযাহ ২৬১৬, ২৬১৭; মিশকাতুল মাসাবীহ ২১১
★এমনকি হত্যা অথবা যেকোনো পাপের কাজে সরাসরি অংশগ্রহণ না করেও শুধুমাত্র সমর্থন প্রদানকারী ব্যক্তিও সমান অপরাধী:
আল-উরস ইবন আমীরাহ আল-কিনদী (রা.) সুত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ''কোনো স্থানে যখন অন্যায় সংঘটিত হয়, তখন সেখানে উপস্থিত ব্যাক্তি তাতে অসন্তুষ্ট হলে, সে অনুপস্থিতদের মতোই গণ্য হবে (অর্থাৎ তাঁর কোনো গুনাহ হবে না)। আর যে ব্যাক্তি অন্যায় কাজের স্থান হতে অনুপস্থিত থেকেও তাতে সন্তুষ্ট হয়, তাহলে সে অন্যায়ে উপস্থিতদের অন্তর্ভুক্ত'' আবু দাউদ ৪৩৪৫; মিশকাতুল মাসাবীহ ৫১৪১
★একজনের অপরাধে অপরকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না ও তাকে কোন শাস্তি দেয়া যাবে না:
আমর ইবন আহওয়াস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বিদায় হজ্জের দিন বলতে শুনেছি: ‘’সাবধান! অপরাধী তার অপরাধের দ্বারা নিজেকেই দায়বদ্ধ করে। পিতার অপরাধে পুত্রকে এবং পুত্রের অপরাধে পিতাকে দায়বদ্ধ করা যাবে না’’ ইবন মাযাহ ২৬৬৯; তিরমিযি ২১৫৯, ৩০৮৭; সাহীহাহ ১৯৭৪; ইরওয়া ৭/৩৩৩-৩৩৪
তারিক আল-মুহারিবী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে তাঁর হস্তদ্বয় এতো উপরে তুলে বলতে শুনেছি যে, তাঁর বগলের শুভ্রতা আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে। তিনি বলেছেন: ‘’সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না। সাবধান! সন্তানের অপরাধে মাকে অভিযুক্ত করা যাবে না’’ ইবন মাযাহ ২৬৭০; নাসায়ী ৪৮৩৯; ইরওয়া ৭/৩৩৫
আল-খাশখাশ আল-আম্বারী (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আমার এক পুত্রসহ নাবী (সা.)-এর কাছে এলাম। তিনি বললেন: ‘’তোমার অপরাধের প্রতিশোধ তাঁর কাছ থেকে নেয়া যাবে না এবং তার প্রতিশোধ তোমার কাছ থেকে নেয়া যাবে না’’ ইবন মাযাহ ২৬৭১; আহমাদ ২০২৪৫
উসামাহ বিন শারীক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘’একজনের অপরাধের জন্য অপরজনকে দায়বদ্ধ করা যাবে না’’ ইবন মাযাহ ২৬৭২; সাহীহাহ ৯৮৮
★হত্যাকাণ্ডে আনন্দিত হওয়া বা উল্লাস প্রকাশকারী হত্যাকারী ব্যক্তির কোনো ইবাদত কবুল করা হবে না। তবে অনুতপ্ত বা লজ্জিত হয়ে আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা প্রার্থনা করলে ভিন্ন কথা:
খালিদ ইবন দিহকান (রহ.) সুত্রে বর্ণিত। উবাদা ইবন সামিত (রা.) বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন্, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’যে ব্যক্তি কোনো ঈমানদারকে হত্যা করলো এবং এতে আনন্দিত হল, আল্লাহ তার কোনো ফরজ বা নফল ইবাদত কবুল করবেন না’’ আবু দাউদ ৪২৭০
সাইদ ইবন জুবাইর (রা.) হতে বর্ণিত। ইবন আব্বাস (রা.) বলেন: ‘’যে কেউ ইসলামী শরীয়তের পরিচয় পাওয়ার পর কোনো ঈমানদারকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার পরিনাম জাহান্নাম, তার তাওবাহ কবুল করা হবে না। এ কথা মুজাহহিদের নিকট বর্ণনা করায়, তিনি বললেন, যে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হয়ে তাওবা করবে, তার তাওবা গ্রহন করা হবে’’ আবু দাউদ ৪২৭৩
★হত্যাকারী যাবতীয় নেক কর্ম সম্পাদন করা হতে বঞ্চিত হয়:
আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’কোনো মুমিন বান্দা যতক্ষন পর্যন্ত অনৈতিকভাবে কোনো লোককে হত্যা না করে, ততক্ষন পর্যন্ত সে নেক কাজে অগ্রগামী থাকে। কিন্তু যখনই সে অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করে, তখনই তার (কল্যাণকর) অগ্রগামী রোধ হয়ে যাবে’’ আবু দাউদ ৪২৭০; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৬৭
★কিয়ামতের দিন মানবাধিকার সম্পর্কিত বিষয়ে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে:
আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’(কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সর্বপ্রথম হত্যার বিচার করা হবে’’ বুখারী ৬৫৩৩, ৬৮৬৪; মুসলিম ৪২৭৩-(২৮/১৬৭৮); তিরমিযি ১৩৯৬, ১৩৯৭; ইবন মাযাহ ২৬১৫; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৪৮
★হত্যাকারী ও হত্যাকাণ্ড ঘটাতে ইচ্ছুক নিহত ব্যক্তি- উভয়েই জাহান্নামী:
আবু বাকরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন: ‘’যখন দু’জন মুসলিম তরবারি নিয়ে পরস্পর সম্মুখীন হয়, তখন হত্যাকারী ও নিহত ব্যক্তি উভয়েই জাহান্নামী। রাসুল (সা.)-কে জিজ্ঞেস করা হল, হে আল্লাহর রাসুল! হত্যাকারীর ব্যাপারটি তো বুঝলাম, তবে নিহত ব্যক্তির কী দোষ যার কারনে সে জাহান্নামে যাবে? রাসুল (সা.) বললেন, কারন সেও তার সঙ্গীকে হত্যার জন্য উদ্যত হয়েছিল’’ বুখারী ৩১, ৬৮৭৫, ৭০৮৩
★পরকালে হত্যাকারী ভয়ানক অবস্থার সম্মুখিন হবে। নিহত ব্যক্তি হত্যাকারীকে সঙ্গে নিয়ে আল্লাহর দরবারে অভিযোগ পেশ করবে:
ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি: ‘’কিয়ামতের দিন হত্যাকারী তার মাথার সাথে নিহত ব্যক্তির মাথা লটকানো অবস্থায় উপস্থিত হবে। নিহত ব্যক্তি বলবে, হে প্রভু! তাকে জিজ্ঞেস করুন, সে কেন আমাকে হত্যা করেছে?’’ ইবন মাযাহ ২৬২১
ইবন আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’কিয়ামতের দিন নিহত ব্যক্তি তার স্বীয় হাত দিয়ে হত্যাকারীর কপাল ও মাথার কেশগুচ্ছ ধরে এরুপ অবস্থায় উপনীত হবে যে, তার রগসমূহ থেকে রক্তক্ষরণ হতে থাকবে। সে বলবে, হে আমার রব! এই ব্যক্তিই আমাকে হত্যা করেছে। একথা বলতে বলতে সে আরশের নিকটবর্তী হয়ে যাবে’’ তিরমিযি ৩০২৯; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৬৫
জুনদুব (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাকে কতক লোক বললেন যে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’নিহত ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে (আল্লাহ তায়ালার নিকট) তার হত্যাকারীকে ধরে নিয়ে এসে বলবে, এ লোকটিকে জিজ্ঞেস করুন, সে কেন আমাকে হত্যা করেছে? তখন হত্যাকারী বলবে, আমি অমুক লোকের ক্ষমতার বলে বলীয়ান হয়ে তাকে হত্যা করেছি। এরপর রাবী জুনদুব (রা.) বলেন, সুতরাং তোমরা এজাতীয় হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করা হতে বেঁচে থাকো’’ নাসায়ী ৩৯৯৮; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৮৩
★পরকালে হত্যাকারীর ক্ষমা পাওয়ার আশা খুবই ক্ষীণ:
আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: ‘’যেসব বিষয়ে কেউ নিজেকে জড়িয়ে ফেলার পরে তার ধ্বংস থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায় থাকে না, সেগুলোর একটি হচ্ছে, হালাল ছাড়া হারাম রক্ত প্রবাহিত করা (অর্থাৎ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা) বুখারী ৬৮৬৩
ইবন উমার (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’একজন মু’মিন তার দ্বীনে পরিপূর্ণভাবে নিরাপদে থাকে, যতক্ষন পর্যন্ত সে অনৈতিক হত্যায় লিপ্ত না হয়’’ মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৪৪৭; সহীহুল জামে ৭৬৯১; সহীহ আত তারগীব ওয়াত তারহীব ২৪৩৭
মুয়াবিয়া (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন: ‘’প্রতিটি গুনাহ আশা করা যায় আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করে দিবেন। তবে দুটি গুনাহ যা আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করবেন না। আর তা হচ্ছে, কোন মানুষ কাফির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করলে অথবা ইচ্ছাকৃত ভাবে কোন মুমিনকে হত্যা করলে’’ নাসায়ী ৩৯৮৪; আহমাদ; হাকিম ৪/৩৫১
আবু দারদা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: ‘’আশা করা যায় যে, আল্লাহ তায়ালা সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। কিন্তু ঐ ব্যক্তিকে ক্ষমা করবেন না, যে ব্যক্তি মুশরিক অবস্থায় মারা যায়, অথবা স্বেচ্ছায় কোনো মু’মিনকে হত্যা করে’’ আবু দাউদ ৪২৭০; মিশকাতুল মাসাবীহ ৩৬৪৮
আবু মিজলায (রহ.) সুত্রে বর্ণিত। তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার বানী ‘যে ব্যক্তি কোনো ঈমানদারকে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করবে, তার শাস্তি চিরস্থায়ী জাহান্নাম’ (নিসা ৪/৯৩) এই আয়াতের ব্যাপারে বলেন: ‘’এটা হলো তার পরিনাম, তবে আল্লাহ তায়ালা ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতে পারেন’’ আবু দাউদ ৪২৭৬
,
★★★উল্লেখ্য যে "মৃত ব্যক্তির সকল গুনাহ যে তাকে হত্যা করছে তার ঘাড়ে যাবে" মর্মে কোনো হাদীস খুজে পাইনি।
তবে একটি হাদিস পেয়েছি,সেখানে বলা হয়েছে,,,,
★ আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী (সা.) বলেছেন: ‘’যে কোন ব্যক্তিকে অন্যায় ভাবে হত্যা করা হয়, তার পাপের ভাগ আদম (আ.)-এর প্রথম (হত্যাকারী) পুত্র (কাবিল) এর উপরও বর্তাবে। কারন সে-ই প্রথমে হত্যার রীতি চালু করে’’ বুখারী ৩৩৩৫, ৬৮৬৭, ৭৩২১; মুসলিম ৪২৭১-(২৭/১৬৭৭); তিরমিযি ২৬৭৩; ইবন মাযাহ ২৬১৬, ২৬১৭; মিশকাতুল মাসাবীহ ২১১
এটা যেহেতু কাবিল এই দুনিয়াতে ১ম হত্যা করেছে,সেই জন্য সে অটোমেটিকলী গুনাহ পেতেই থাকবে।।
এটার দ্বারা কোনো ভাবেই প্রমানিত হয়না যে "মৃত ব্যক্তির সকল গুনাহ যে তাকে হত্যা করছে তার ঘাড়ে যাবে"