আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
247 views
in যাকাত ও সদকাহ (Zakat and Charity) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ উস্তাজ।উস্তাজ আমি একটা সংগঠন চিনি যেটা কিনা রাস্তায় বেড়ে উঠা বা বস্তিতে থাকা ছোট ছোট বাচ্চাদের পড়ালেখা, শীত ও ঈদের কাপড় দেয়া,পরিবারের কারো আয়-ইনকামের সুযোগ করে দেয়া ইত্যাদি কাজ করে থাকেন।এমন কাজের জন্য তারা মানুষ থেকে আর্থিক সাহায্য নিয়ে থাকেন।তো এই আর্থিক অনুদান নেয়ার ক্ষেত্রে আমি যদি আমার যাকাতের টাকা তাদের দি সেক্ষেত্রে কি যাকাত আদায় হবে??

1 Answer

0 votes
by (63,280 points)

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

আল্লাহ তায়ালা বলেন-

مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ

যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন সম্পদ ব্যয় করেতাদের উদাহরণ একটি বীজের মতযা থেকে সাতটি শীষ জন্মায়। প্রত্যেকটি শীষে একশ করে দানা থাকে। আল্লাহ অতি দানশীলসর্বজ্ঞ। (সূরা বাকারাআয়াত নং-২৬১)

 

হাদীস শরীফে এসেছে-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلاَّ مِنْ ثَلاَثَةٍ إِلاَّ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ " .

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত যেরসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যখন মানুষ মৃত্যুবরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায় তিন প্রকার আমল ছাড়া। ১. সদাকাহ জারিয়াহ্ অথবা ২. এমন ইলম যার দ্বারা উপকার হয় অথবা ৩. পুণ্যবান সন্তান যে তার জন্যে দু'আ করতে থাকে। (সহীহ মুসলিম ৪১১৫ )

 

আল্লাহ তাআলা বলেন-

إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاء وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ فَرِيضَةً مِّنَ اللّهِ وَاللّهُ عَلِيمٌ حَكِيمٌ

যাকাত হল কেবল ফকিরমিসকীনযাকাত আদায়কারী ও যাদের চিত্ত আকর্ষণ প্রয়োজন তাদের হক এবং তা দাস-মুক্তির জন্যঋণ গ্রস্তদের জন্যআল্লাহর পথে জিহাদকারীদের জন্যে এবং মুসাফিরদের জন্যেএই হল আল্লাহর নির্ধারিত বিধান আল্লাহ সর্বজ্ঞপ্রজ্ঞাময় -সরা তাওবাহআয়াত-৬০

 

কুরআনুল কারীমে যাকাত প্রদানের আটটি প্রকার বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু হযরত উমর রাযিআল্লাহু তা'আলা আনহু তাঁর খেলাফতকালে চিত্তাকর্ষণের জন্য যাদেরকে যাকাত প্রদান করা হতোতাদেরকে যাকাত দিতে নিষেধ করেছেন। কারণতখন ইসলাম অনেক শক্তিশালী হয়ে গিয়েছিল। এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের কেউ তাঁর সাথে মতানৈক্য করিনি। সুতরাং সাহাবায়ে কেরামের ইজমার ভিত্তিতে এই প্রকারটি যাকাতের হকদারের তালিকা থেকে বাদ হয়ে গিয়েছে। ফলে যাকাত আদায়ের জন্য সাতটি শ্রেণী অবশিষ্ট রয়েছে। সাত শ্রেণীর বিস্তারিত বিবরণ নিম্নে দেওয়া হল:-

 

১. দরিদ্র। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়। যে ব্যক্তি নেসাবের চেয়ে কম সম্পদের মালিক তাকে যাকাত দেওয়া জায়েজ হবেযদিও সে সুস্থ ও উপার্জনশীল হয়।

২. নিঃস্ব অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার অর্থ সম্পদ কোন কিছুই নেই।

৩. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের জন্য শরীয়ত নির্দিষ্ট যাকাত আদায়কারী আমেল। এটা ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান দ্বারা নিযুক্ত হতে হবে। নিজে নিজে মনে করে নিলে হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-৬/৬৯}

৪. ক্রীতদাসের মুক্তির জন্য। আর তা হলো চুক্তিবদ্ধ ক্রীতদাস। অর্থাৎ যে ক্রীতদাসের মুনীবের সঙ্গে নির্দিষ্ট অর্থ প্রদানের শর্তে আযাদ করে দেওয়ার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে এই শ্রেণি বর্তমানে নেই। তবে যদি কখনো পাওয়া যায়তাহলে তাদেরকে যাকাত দেওয়া যাবে।

৫. ঋণগ্রস্ত। অর্থাৎ এমন ব্যক্তি যার কাছে মানুষ এই পরিমাণ ঋণ পায়যেই পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করার পর সে পূর্ণ নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকে না।

৬. ফী সাবিলিল্লাহ। তথা আল্লাহর রাস্তায় থাকা ব্যক্তিদের জন্য। এখন প্রশ্ন হল আল্লাহর রাস্তায় কারা আছেফুক্বাহায়ে কেরাম বলেন এতে রয়েছেন-

জিহাদরত মুজাহিদরা। তাদের জিহাদের অস্ত্র ও পাথেয় ক্রয় করার জন্য যাকাতের টাকা গ্রহণ করবে। হজ্বের সফরে থাকা দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। ইলমে দ্বীন অর্জনকারী দারিদ্র ব্যক্তির জন্য। {আদ দুররুল মুখতার-৩৪৩হিদায়া-১/১৮৫রূহুল মাআনী-৬/৩১৩}

৭.মুসাফির অর্থাৎ এমন প্রবাসী, যার দেশে প্রচুর অর্থ সম্পদ রয়েছে কিন্তু প্রবাসে তার টাকা পয়সা শেষ হয়ে গেছে।

উপরোক্ত ক্যাটাগরিতে যাকাত আদায় করলেই কেবল যাকাত আদায় হবে। অন্য কাউকে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। ফুক্বাহায়ে কেরাম যাকাত আদায়ের জন্য একটি শর্তারোপ করেছেন এই যেযাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দিতে হবে দানকৃত ব্যক্তিকে। যদি মালিক বানিয়ে দেয়া না হয়তাহলে যাকাত আদায় হবে না।

 

যেমন কাউকে কোন বস্তু ভোগ দখলের অধিকার দিয়ে নিয়ত করল যাকাতেরতাহলে এর দ্বারা যাকাত আদায় হবে না। সেই হিসেবে কোন প্রতিষ্ঠানমাদরাসামসজিদে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েজ নয়যদিও তাতে গরীব মানুষ থাকেনামায পড়েপড়াশোনা করে। তবে প্রতিষ্ঠানের গরীবদেরমাদরাসা গরীব ছাত্রদেরমসজিদের গরীব মুসল্লিদের যাকাত দিলে তাতে মালিক বানিয়ে দেয়ার বিষয়টি থাকায় তা জায়েজ হবে। {ইনায়া আলা ফাতহিল কাদীর-২/২৬৭-২৬৮আল হিদায়া-১/২০৫তাবয়ীনুল হাকায়েক-১/২৯৯}

 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

কোনো সংগঠনকে যাকাত দেওয়া যাবে না। কারণ যাকাত আদায়ের জন্য শর্ত হলো কোনো নির্দিষ্ট যাকাতের হকদার ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেওয়া। আর তা কোনো সংগঠনের ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তবে যদি উক্ত সংগঠনের ক্ষেত্রে এই নিশ্চয়তা থাকে যে, তাদেরকে যাকাত দিলে তারা যাকাতের হকদারের কাছে পুরো টাকা পৌঁছে দেয়। চাই তা ঈদের পোশাক দেওয়ার মাধ্যমে হোক অথবা অন্য কোনো মাধ্যমে হোক। তাহলে তাদের কাছে যাকাতের টাকা দেওয়া যাবে এবং এতে যাকাতও আদায় হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (3 points)
উস্তাজ তাদের কে ঈদ এবং শীতে কাপড় বা কম্বল দেয়া হয়।এতে কি তারা পূর্ন মালিক হয়ে যায়?পাশাপাশি কিছু কিছু বাচ্চার স্কুলের দায়িত্বও নেয়া হয়।
by (63,280 points)
১, ঈদ এবং শীতে কাপড় বা কম্বল দিলে তাদেরকে একেবারে মালিক বানিয়ে দিতে হবে৷ 
২, বাচ্চাদের স্কুলের দায়িত্বের বিষয়ে পূর্ণ মালিকানা পাওয়া যায় না৷ তাই এই ক্ষেত্রে এভাবে করা যেতে পারে যে, তাদেরকে প্রথমে মালিক বানিয়ে  টাকা দিয়ে স্কুলের খরচ বাবদ নিয়ে নেওয়া৷

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...