আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+15 votes
2,119 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
reopened by
ছেলে তার অসুস্থ মায়ের সেবা করছিলো ও পা টিপে দিচ্ছিলো, তখন তার মায়ের কাপড় অসতর্কতা বসত উপরে উঠে যায়। যেহেতু তার মা অসুস্থ তাই এই বিষয়ে তিনি সচেতন ছিলেন না। এমতবস্থায় ছেলেটি তার মায়ের গোপনাঙ্গ স্পষ্ট দেখে ফেলে কিন্তু সে অন্যদিকে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে কাপড় ঠিক করে দেয়। আবার আরেকদিন দুর্ঘটনাবশত ছেলেটি তার মাকে পিতার সাথে সহবাস করা অবস্থায় সম্পূর্ণ উলঙ্গ দেখে ফেলে। তৎক্ষণাৎ সে চোখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয় এবং ঐ স্থান ত্যাগ করে। এছাড়াও তার মা ঘুমন্ত অবস্থায়, কাপড় পরিবর্তনসহ বিভিন্ন পরিস্থিতে তার শরীরের পিঠ, উরু, স্তন ইত্যাদি স্থানে অপ্রত্যাশিতভাবে দৃষ্টিপাত হয়। এই দৃশ্যপট গুলো তাকে অনেক মানুষিক পীড়া দিতে থাকে। সে রাতে স্বপ্নে উদ্ভট জিনিস দেখতে থাকে। এমনকি স্বপ্নে তার মার সাথে নিজেকে সহবাস করা অবস্থায় দেখে এবং  স্বপ্নদোষ হয়, যেটা তার মানুষিক পীড়াকে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। মাঝে মাঝেই এরকম স্বপ্ন দেখতে থাকে, এরকম সপ্ন দেখতে দেখতে সে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এরপর সে এই মানুষিক চাপ থেকে মুক্তির জন্য একদিন হস্তমৈথুন করার সময় তার দেখা ওই দৃশ্যগুলোকে কল্পনা করে হস্তমৈথুন করে। যদিও এই দৃশ্যগুলো সে ইচ্ছাকৃতভাবে দেখেনি, বরঞ্চ এরকম বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়ার সাথে সাথে নজর অন্যদিকে ফিরিয়ে নিয়েছিলো। সে কখনো তার মায়ের শরীরে কামভাব নিয়ে স্পর্শ করেনি। তার মা পর্দাশীল ও ধাৰ্মিক হলেও ঘরে তিনি খোলামেলাভাবে চলাফেরা করেন যে কারণে ছেলেকে প্রায় সময়ই উদ্ভট পরিস্থিতে পড়তে হয়। যেহেতু ছেলেটি বয়সে কিছুটা অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলো এবং তার এইসব বিষয়ে শরীয়ত সম্পর্কিত কোনো ধারণাই ছিলো না তাই কৌতূহলবসত এইসব চিন্তা করে ফেলে। পরবর্তীতে সে হুরমতে মুসাহারাত সম্পর্কে জানতে পারে এবং অনেক অনুতপ্ত হয়। সে এখন নিয়মিত নামাজ আদায় করে কিন্তু তার অতীতের স্মৃতি তাকে খুব মানুষিক অশান্তিতে রাখছে।

১. মাহরাম পুরুষদের সামনে পর্দার বিষয়টা তার মাকে কিভাবে বোঝাতে হবে?

২. এক্ষেত্রে যে ছেলেটি তার মায়ের নগ্ন চিত্র কল্পনা করে হস্তমৈথুন করেছে, এটা কি শুধু হস্তমৈথুনের পাপ হিসেবে গণ্য হবে নাকি এটা জিনা ও হুরমতে মুসাহারাত হিসেবেও গণ্য হবে? যদিও ছেলেটি সামনা সামনি ওরকম পরিস্থিতিতে এসব চিন্তা কখনোই করেনি কিন্তু পরবর্তীতে মনে মনে বারবার ওই দৃশ্যগুলো মনে পড়তো এবং নিজের মনকে নিয়ন্ত্রন করতে না পারায় ওসব ভেবে হস্তমৈথুন করতো।

৩. হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য কি নারীকে স্পর্শ করা বা গোপনাঙ্গে দৃষ্টির মাধ্যমে কামভাব জাগ্রত হওয়া আবশ্যক? নাকি কল্পনার মাধ্যমেও হুরমত হতে পারে? যদি কল্পনার মাধ্যমে হুরমত সাব্যস্ত হয় তাহলে যাদের মাহরাম নিয়ে স্বপ্নদোষ হয় তাদের ক্ষেত্রেও তো এই বিধান প্রযোজ্য হওয়ার কথা।

৪. তার মাতা-পিতার বৈবাহিক সম্পর্ক কি ইতোমধ্যেই হারাম হয়ে গেছে? এখন কি তারা জিনার ভাগিদার হচ্ছেন? এই মুহূর্তে কি করা উচিত? তাদেরকে কি এই বিষয়টি জানানো উচিত? আর মা-ছেলের সম্পর্কও কি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে?

৫. কোনো ছেলে তার মায়ের হুরমতে মুসাহারাহ হয়ে গেলে তার বাবা-মায়ের বিবাহ কেনো বিচ্ছিন্ন হবে? এখানে তো ছেলেটি অপরাধ করেছে, তার অপরাধের শাস্তি তাকেই পাওয়া উচিত।

৬. আর এই অপরাধের পরিমান কতটুকু? এটা কি শির্কের সমতুল্য অপরাধ যা অমার্জনীয়?

1 Answer

+1 vote
by (675,600 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


হাদীস শরীফে এসেছে 

أخبرنا إسماعیل بن عیاض، حدثنا سعید بن أبی عروبة، من قیس بن سعید، عن مجاهد في الرجل یفجر بالمرأة قال: إذا نظر إلی فرجها فلا یحله له أمها ولا بنتها، أخرجه محمد في الحجج أیضًا ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۲

যার সারমর্ম হলো যদি কেহ কোনো মহিলার লজ্জাস্থানের দিকে দৃষ্টিপাত করে,তাহলে সেই মহিলার মেয়ে বা তার মাকে সে কোনোদিন বিবাহ করতে পারবেনা।

ই'লাউস সুনান ১১/১৩১

أخبرنا أبوحنیفة، عن حماد، عن إبراهیم، قال: إذا قبل الرجل أم أمرأته أو لمسها من شهوةٍ حرمت علیه امرأته، أخرجه محمد في الحجج ورجاله ثقات (إعلاء السنن: ۱۱/۱۳۱)

যার সারমর্ম হলো কেহ যদি তার শাশুড়িকে চুম্বন করে,অথবা উত্তেজনার সাথে স্পর্শ করে,তাহলে স্ত্রী তার উপর চিরজীবনের জন্য হারাম হয়ে যাবে।      

★★হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবার জন্য কয়েকটি শর্ত রয়েছে।

শর্তগুলো হল,
১–

সরাসরি খালি গায়ে বা এমন কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়। যদি এমন মোটা কাপড় পরিধান করে থাকে যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভূত না হয়, তাহলে নিষিদ্ধতা সাব্যস্ত হবে না।

فى الدر المختار- أو لمس ) ولو بحائل لا يمنع الحرارة
وقال ابن عبدين– ( قوله : بحائل لا يمنع الحرارة ) أي ولو بحائل إلخ ، فلو كان مانعا لا تثبت الحرمة ، كذا في أكثر الكتب (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-3/107-108)

যার সারমর্ম হলো যদি কাপড় পরিধান অবস্থায় হয় তাহলে যদি এমন কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করে, যা এতটাই পাতলা যে, শরীরের উষ্ণতা অনুভব হয়। 
তাহলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হবে।   

( যদি এমন কাপড়ের উপর দিয়ে স্পর্শ করে,যেটা শরীরের গরমি ভাব অনুভব হয়,তাহলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমানীত হবে। ) 

অন্যথায় হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হবেনা।     

২–

স্পর্শ করলে পুরুষ মহিলা যেকোন একজনের উত্তেজনা অনুভুত হওয়া।

পুরুষের উত্তেজনা অনুভূত হওয়ার লক্ষণ হল গোপনাঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।

وفى رد المحتار- قوله (بشهوة) اي ولو من احدهما،
وفى الدر المختار- وحدها فيهما تحرك آلته أو زيادته به يفتى
وفي امرأة ونحو شيخ كبير تحرك قلبه أو زيادته (الفتاوى الشامية، كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/107-109)  
সারমর্মঃ
উত্তেজিত হওয়ার সীমা হলো লিঙ্গ দাঁড়িয়ে যাওয়া, আর পূর্ব থেকে দাঁড়িয়ে থাকলে স্পর্শ করার পর উত্তেজনা বৃদ্ধি পাওয়া।
মহিলাদের ক্ষেত্রে কলব তথা অন্তর কেঁপে উঠা, আগে থেকেই কেঁপে উঠে থাকলে স্পর্শ করার পর কাঁপা বেড়ে যাওয়া। 

৩-
স্পর্শ,দৃষ্টিপাত করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। 
আগে বা পরে উত্তেজিত হলে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হবেনা।      

وفى الدر المختار- والعبرة للشهوة عند المس والنظر لا بعدهما
وفى رد المحتار- ( قوله : والعبرة إلخ ) قال في الفتح : وقوله : بشهوة في موضع الحال ، فيفيد اشتراط الشهوة حال المس ، فلو مس بغير شهوة ، ثم اشتهى عن ذلك المس لا تحرم عليه (رد المحتار-كتاب النكاح، فصل فى المحرمات-4/108)

যার সারমর্ম হলো স্পর্শ,দৃষ্টিপাত করার সময় উত্তেজিত হতে হবে। যদি স্পর্শ করার সময় কেউ উত্তেজিত না হয়, তাহলেও নিষিদ্ধতা প্রমাণিত হবে না। 

বিস্তারিত জানুনঃ  

★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
দৃষ্টিপাতের মাধ্যমে হুরমত প্রমাণিত হওয়ার জন্য  অন্যতম একটি শর্ত হলোঃ
দৃষ্টিটি নিবদ্ধ হতে হবে মহিলার লজ্জাস্থানের খানিকটা ভিতরাংশে। শুধু উপরের অংশ দেখার দ্বারা হুরমতে মুসাহারাত সাব্যস্ত হবে না। আর পুরুষের ক্ষেত্রে শুধু লজ্জাস্থান দেখার দ্বারাই হুরমত সাবেত হবে।

ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছে   

(لا) تحرم (المنظور إلى فرجها الداخل) إذا رآه (من مرآة أو ماء) لأن المرئي مثاله (بالانعكاس) لا هو (هذا إذا كانت حية مشتهاة) ولو ماضيا (أما غيرها) يعني الميتة وصغيرة لم تشته (فلا) تثبت الحرمة بها أصلا كوطء دبر مطلقا وكما لو أفضاها لعدم تيقن كونه في الفرج ما لم تحبل منه بلا فرق بين زنا ونكاح.(رد المحتار-4/108-109

যার সারমর্ম হলো আয়না বা পানির মধ্যে কাহারো লজ্জাস্থান দেখলে হুরকমে মুসাহারাত প্রমানীত হয়না।  
লজ্জাস্থানের খানিকটা ভিতরের অংশের দিকে দৃষ্টিপাত সম্পর্কে বিস্তারিত জানুনঃ      


(০১)
বিষয়টি সম্পর্কে আপনার অভিভাবক বা যাকে তিনি মানেন,তার মাধ্যমে বুঝাতে পারেন।
বা এ সংক্রান্ত কিতাবাদী তাকে পড়তে দিতে পারেন।     
আপনার বোন/খালা ইত্যাদি আত্মীয়দের মাধ্যমেও বুঝাতে পারেন।
ইনশাআল্লাহ কামিয়াব হবেন।

(০২)
এতে হস্তমৈথুনের গুনাহ হবে,সেই অশ্লীল দৃশ্যগুলো নিয়ে ভাবার গুনাহ হবে।
হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হবেনা। 

(০৩)
কল্পনার মাধ্যমে হুরমত হতে পারেনা।
যাদের মাহরাম নিয়ে স্বপ্নদোষ হয়,তাতে হুরমতে মুসাহারাত প্রমাণিত হওয়া সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হবেনা। 

(০৪)
উল্লেখিত হুরমত সাব্যস্ত হওয়ার শর্তাবলী পাওয়া গেলেই কেবল হুরমত সাব্যস্ত হবে।
নতুবা নয়।

হুরমত সাব্যস্ত হয়ে গেলে পিতা মাতার বিবাহ বিচ্ছেদ হবে।
সন্তান ও তার মাতা পিতার সম্পর্কে কোনো সমস্যা হবেনা।

(০৬)
এটি ক্ষমা যোগ্য অপরাধ ।
শিরকের ন্যায় নয়।
সেই পথ থেকে ফিরে এসে খালেছ দিলে তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা মাফ করবেন।

তবে হুরমত সাব্যস্ত হয়ে গেলে পিতা মাতার বিবাহ পুরোপুরি বিচ্ছেদ হবে।
তাদের নতুন করে বিবাহ করালেও এটির কোনো সমাধান হবেনা।
এর কোনো সমাধান নেই।
তাদের আলাদা থাকতেই হবে।

জেনে শুনে তারা একত্রে সংসার করতে পারবেনা।
এতে জেনে শুনে এ সংসার চালিয়ে গেলে এতে  পিতা মাতার যেনার গুনাহ হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...