بسم الله
الرحمن الرحيم
জবাব,
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ يَقُولُونَ
رَبَّنَا هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا
لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا٧٤ ﴾ [الفرقان: ٧٤]
“আর যারা বলে, ‘হে আমাদের
রব, আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের
চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’।
(সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪)
আয়াত দ্বারা বুঝা যায় স্ত্রী সন্তানরা মানুষের
চোখের শীতলতা। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা
জানিয়ে দেন যে, বিবাহের দ্বারা চোখের শীতলতা লাভ হয়। এ আয়াতে
আল্লাহ তা‘আলা যুবকদের বিবাহ করার প্রতি উৎসাহ দেন এবং বিবাহ করার জন্য সাহস দেন। আল্লাহ
রাব্বুল আলামীন আরও বলেন,
﴿هَبۡ لَنَا مِنۡ أَزۡوَٰجِنَا
وَذُرِّيَّٰتِنَا قُرَّةَ أَعۡيُنٖ وَٱجۡعَلۡنَا لِلۡمُتَّقِينَ إِمَامًا ٧٤﴾
[الفرقان: ٧٤]
“আপনি আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদের চক্ষু শীতল করবে। আর
আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন’। (সূরা আল-ফুরকান, আয়াত: ৭৪)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ٱلۡمَالُ وَٱلۡبَنُونَ زِينَةُ
ٱلۡحَيَوٰةِ ٱلدُّنۡيَاۖ وَٱلۡبَٰقِيَٰتُ ٱلصَّٰلِحَٰتُ خَيۡرٌ عِندَ رَبِّكَ
ثَوَابٗا وَخَيۡرٌ أَمَلٗا ٤٦﴾ [الكهف: ٤٦]
“সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের শোভা। আর স্থায়ী সৎকাজ তোমার রবের নিকট প্রতিদানে
উত্তম এবং প্রত্যাশাতেও উত্তম” (সূরা কাহাফ, আয়াত: ৪৬)
সন্তান-সন্ততি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আয়াত
দ্বারা প্রতীয়মান হয়, সন্তান দুনিয়ার
জীবনের সৌন্দর্য। আর মানুষ দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্যের প্রেমিক। একজন মানুষ যেভাবে ধন-সম্পদ
তালাশ করে অনুরূপভাবে সে সন্তান-সন্ততিও তালাশ করে। কারণ, মাল
যেমন দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য এমনিভাবে সন্তানও দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য। আর আখিরাতে
নেক সন্তানের নেক আমলের সাওয়াব মাতা-পিতার উপরও বর্তাবে। যেমন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ الإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثٍ: صَدَقَةٌ
جَارِيَةٌ، وَعِلْمٌ يُنْتَفَعُ بِهِ، وَوَلَدٌ صَالِحٌ يَدْعُو لَهُ »
“যখন আদম সন্তান মারা যায় তখন তার তিনটি আমল ছাড়া সব আমলের সাওয়াব বন্ধ হয়ে যায়।
উপকারী ইলম যা দ্বারা মানুষ উপকার লাভ করতে থাকে, সদকায়ে জারিয়া এবং নেক সন্তান যারা তাদের জন্য
দু’আ করতে থাকে”। (তিরমিযি, হাদিস: ১৩৭৬,
নাসায়ী হাদিস: ৩৬৫১)
সুতরাং সন্তান-সন্ততির মধ্যে দুনিয়ার জীবন
ও আখিরাতের জীবন উভয় জাহানের কল্যাণ নিহিত রয়েছে। অনুরূপভাবে যৌবনের শুরুতে বিবাহ করা
দ্বারা যখন অধিক সন্তান লাভ হবে, তখন উম্মতে মুসলিমার সংখ্যা ও মুসলিম সমাজের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। আর মানুষ
ইসলামী সমাজ গঠনের বিষয়ে অবশ্যই দায়িত্বশীল। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেন,
«تَزَوَّجُوا الْوَدُودَ الْوَلُودَ فَإِنِّي مُكَاثِرٌ بِكُمُ الْأُمَمَ»
“তোমরা বিবাহ কর এমন স্ত্রীদের যারা অধিক মহব্বত করে এবং অধিক সন্তান জন্ম দেওয়ার
ক্ষমতা রাখে। কারণ কিয়ামতের দিন আমি তোমাদের আধিক্যকে নিয়ে গর্ব করব”। (আবু দাউদ, হাদিস:২০৫০, আহমদ: ১৩৫৬৯)
ইসলাম মানুষকে অধিক সন্তানলাভের প্রতি উৎসাহ
দিয়েছে এবং যে সব নারীরা অধিক সন্তানের প্রসবনী হয়ে থাকে, তাদের বিবাহ করতে নির্দেশ
দিয়েছে।
রাসূলুল্লাহ
(সাঃ) বলেন,
تزوجوا
الودود الولود ، فإني مكاثر بكم الأمم يوم القيامة
“তোমরা অধিক সন্তানের প্রসবনী ও স্বামীদের অধিক ভালোবাসে এ ধরনের মেয়েদের বিবাহ
কর, কারণ,
কিয়ামতের দিন আমি আমার উম্মত বেশি হওয়ার কারণে আল্লাহর দরবারে গর্ব করব।”(আবু
দাউদ, নাসায়ী। হায়াতুল মুসলিমিন, পৃষ্ঠা-১৮৯)
★★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নেল্লিখিত ছুরতে শুধুমাত্র চাকুরীর অজুহাতে
বাচ্চা না নেওয়াকে ইসলাম সমর্থন করে না । বরং সন্তান নেওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম উৎসাহ প্রদাণ
করে। এছাড়াও নারীদের চাকুরী করাকে ইসলামে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। বিধায় চাকুরীর অজুহাতে
বাচ্চা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত আদৌ সঠিক বলে বিবেচিত হবে না । তবে কেউ সাময়িকভাবে জন্ম
নিয়ন্ত্রন করতে চাইলে নিম্নক্ত পদ্ধত্বি অনুসরণ করতে পারেঃ
সাধারণত দুটি পদ্ধতিতে সাধারণত জন্ম নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
এক.স্থায়ী পদ্ধতি–যার দ্বারা নারী বা পুরুষ
প্রজনন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে।
এই পদ্ধতিটি সম্পূর্ণ অবৈধ।
আল্লামা বদরুদ্দিন আইনী (র.) বুখারী শরীফের
ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেন: و هو محرم
بالاتفاق
অথাৎ স্থায়ী জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি
অবলম্বন সর্বসম্মতক্রমে হারাম।(উমদাতুল ক্বারীঃ ১৪/১৪ পৃঃ)
দুই.অস্থায়ী পদ্ধতি– যার ফলে স্বামী-স্ত্রীর
কেউ প্রজনন ক্ষমতাহীন হয়ে যায় না। যেমন : আযল করা (সহবাসের চরম পুলকের মুহুর্তে স্ত্রীর
যোনীর বাহিরে বীর্যপাত ঘটানো),
Condom Jelly, Cream, Foam, Douche ইত্যাদি ব্যবহার করা, পিল (Pill) খাওয়া,জরায়ুর মুখ সাময়িকভাবে
বন্ধ করে দেয়া, ইঞ্জেকশন নেয়া ইত্যাদি।
দ্বিতীয় প্রকার শরীয়ত সম্মত প্রয়োজন ব্যতীত
মাকরুহে তানযিহি।তবে শরীয়ত সম্মত নিম্নোক্ত প্রয়োজনে বৈধ রয়েছে।
(ক)মহিলা এত দুর্বল যে,
গর্ভধারণের বর্তমানে যোগ্যতা নেই।
(খ)মহিলা নিজ বাসস্থান থেকে
এত দূর সফরে যেখানে স্থায়ীভাবে বসবাসের আপতত কোনো মনোবাসনা নেই।আবার নিজ বাসস্থানে
আসতেও কয়েক মাস লেগে যাবে বা কয়েক মাসের প্রয়োজন।
(গ)স্বামী-স্ত্রীর পারস্পারিক
সম্পর্ক চূড়ান্ত নিম্ন পর্যায়ের,এমনকি উভয়ের অন্তরে বিচ্ছেদের
চিন্তাভাবনা চলছে।
(ঘ)পূর্বের বাচ্চার সু-সাস্থ্যর
ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে।
(ঙ)স্থান-কালের ফাসাদ অর্থাৎ
দ্বীনী পরিবেশের চূড়ান্ত পর্যায়ের অবনতির ধরুন বাচ্চা বদ-আখলাক বা অসচ্চরিত্র এবং মাতাপিতার
বে-ইজ্জতির কারণ হবে বলে আশঙ্কা করলে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عن جابر
قال كنا نعزل على عهد النبي صلى الله عليه و سلم ـ صحيح البخاري – (2 / 784)، باب
العزل
হযরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত,তিনি বলেন আমরা রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে আযল(যা জন্ম নিয়ন্ত্রণের একটা পুরনো ও অস্থায়ী
পদ্ধতি) করতাম। (বুখারী ২/৭৮৪)