আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
422 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (40 points)
আসসালামআলাইকুম, গ্রুপ লাইফ ইন্স্যুরেন্স এর টাকা কি হালাল হবে ।
আমার পিতার কোম্পানি তে একটা গ্রুপ লাইফ ইন্স্যুরেন্স আছে । আমার পিতার মৃত্যুর পর তার ঐ ইন্সুরন্স থেকে আমাদের টাকা দেন । ওই টাকাটা হালাল হবে ?
by (25 points)
গ্রুপ ইন্স্যুরেন্সের সাথে নরমাল বীমার পার্থক্য কী?

1 Answer

0 votes
by (62,840 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ

জীবন বীমা না জায়েজ হওয়ার কারণসমূহ ও দলীলাদী

 

১. জীবন বীমা কোম্পানিগুলোতে শরিয়তের নিষিদ্ধ ربوا  ( সুদ )- এর উপস্থিতি৷ বলা বাহুল্য যেজীবন বীমার সব কোম্পানিগুলোই সুদী লেনদেনের সাথে জড়িত৷ আর আমরা জানি যেসুদী লেনদেনের সাথে জড়িত হওয়া হারাম৷

বীমা কোম্পানিগুলোতে সুদকে মুনাফা নামে অভিহিত করা হয়৷ বাস্তব কথা হলোসুদকে  মুনাফা নামে অভিহিত  করলেও  সুদ কখনো বৈধ হয় না। বীমা কোম্পানির দেয়া অতিরিক্ত অর্থ যে সুদ তা আমরা  দলিল ভিত্তিক আলোচনা করবো। এ ব্যাপারে মুফতিয়ে আযম পাকিস্তান আল্লামা শফী রাহিমাহুল্লাহ বলেন-

ظاہر ہے کہ محض نام بدل دینے سے کسی معاملہ کی حقیقت نہیں بدلتی. بیمہ کمپنی کے منافع بلاشبہ سود و ربا کی تعریف میں داخل ہیں. 

"এ কথা স্পষ্ট যেশুধুমাত্র নাম পরিবর্তন করার দ্বারা কোন লেনদেনের বাস্তবতা পরিবর্তন হয় না। বীমা কোম্পানি থেকে যে লাভ প্রদান করা হয় তা নিঃসন্দেহে সুদের অন্তর্ভুক্ত।"

(জাওয়াহিরুল ফিকহ : ২/১৮১)

 

সুদ হারাম হওয়ার ব্যাপারে মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন -

واحل الله البيع و حرم الربوا.

" আল্লাহ ক্রয়-বিক্রয়কে হালাল ও সুদকে হারাম করেছেন৷" (সূরা বাকারাআয়াত:২৭৫)

 

সুদ কতখানি জঘন্য তা হাদীস শরীফে এসেছে-

عن أبي هريرة، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : "الربا سبعون حوبا،أيسرها أن ينكح الرجل أمه."

حكم الحديث: صحيح

"হযরত আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত৷ তিনি বলেনরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- "সুদের ৭০ টি স্তর রয়েছে৷ সবচেয়ে নিম্নটি হল নিজ মায়ের সাথে ব্যভিচার করা৷" (ইবনে মাজাহ: অধ্যায়: ব্যবসা-সুদ:২২৭৪)

 

 

২. শরিয়তের নিষিদ্ধ ميسر (জুয়া)-এর উপস্থিতি৷ জুয়া বলা হয় এমন লেনদেনকে যাতে এক পক্ষের ক্ষতির উপর অপরপক্ষের লাভবান হওয়া নির্ভর করে ৷ জীবন বীমা ঠিক এমনই ৷ কেননা জীবন বীমাতে কোনো গ্রাহক নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে মারা গেলেই তার বাম্পার ফলন অর্থাৎ গ্রাহক পক্ষ তখন এক কালীন ১০ লাখ টাকা পাবে ৷ অথচ কোম্পানি পক্ষকে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়৷ সুতরাং এটা জুয়ার অন্তর্ভুক্ত যা নিষিদ্ধ ৷


৩. শরিয়তের নিষিদ্ধ جهالة ( অজ্ঞতা )- এর উপস্থিতি৷ জীবন বীমা মূলত সম্পদ বিনিময়ের এমন এক ধরনের চুক্তি যাতে মারাত্মক ধরনের جهالة (অজ্ঞতা) রয়েছে৷ কেননা গ্রাহক জীবন বীমা করে সম্ভাব্য এমন একটি দুর্ঘটনার উপর ভিত্তি করে যা ঘটতে পারেআবার নাও পারে৷ ফলে গ্রাহকের পাওনার পরিমাণটা অজ্ঞাত থেকে যায়৷ আর লেনদেনের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ان تكون العاقبة معلومة অর্থাৎ পরিণামটা জ্ঞাত হওয়া৷ আর যে লেনদেনে অজ্ঞতা রয়েছে তা শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ৷ 


৪. শরীয়তের নিষিদ্ধ غرر (গারার)- এর উপস্থিতি৷

হাদীস শরীফে এসেছে- نهي عن بيع الغرر অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকল লেনদেনে সব ধরনের غرر কে নিষিদ্ধ করেছেন৷( সহীহ মুসলিম:২/২)


 

৫. শরিয়তের নিষিদ্ধ غش (প্রতারণা)- এর উপস্থিতি৷

স্বতঃসিদ্ধ কথা হল যেএসব কোম্পানিগুলোতে প্রতারণায় বেশি হয়ে থাকে৷ তারা গ্রাহকদের থেকে কিস্তি আদায়ের পর উক্ত টাকা পরিশোধ করতে গড়িমসি করে৷ কোন গ্রাহক নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে মৃত্যুবরণ করলেও তার নির্ধারিত এককালিন টাকা দিতে বিভিন্ন টালবাহানা করে থাকে৷ এছাড়াও আরও অনেক প্রতারণার শিকার হতে হয় গ্রাহকদেরকে৷

 

আর হাদীস শরীফে এসেছে-

من غشنا فليس من.

" যে মুসলমানদেরকে ধোঁকা দিল সে আমাদের দলভুক্ত নয়৷" (সহীহ মুসলিম:১/৭০হাদীস নং:১৬৪)

 

৬. জীবন বীমাতে একজনের  দায়ভার অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়া হয়৷কেননা জীবন বীমাতে কোন গ্রাহক নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে মৃত্যুবরণ করলেই এর ক্ষতি পূরণ হিসেবে দায়ভার চাপানো হয় বীমা কোম্পানির উপর৷ অথচ বীমা কোম্পানি উক্ত দুর্ঘটনা ঘটায় না বা ঘটানোর কারণও হয় না৷ সুতরাং গ্রাহকের দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণের দায়ভার বীমা কোম্পানির উপরে চাপিয়ে দেওয়া জুলুমের অন্তর্ভুক্ত যা শরীয়তে হারাম৷ তবে হ্যাঁকেউ যদি স্বেচ্ছায় কারোর কোনো দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ দেয় এটা ভিন্ন কথা৷

 

৭. জীবন বীমা এমন একটি চুক্তি যাতে গ্রাহক পক্ষ কখনো কখনো শুধুমাত্র শর্তের কারণে লাভবান হয়ে থাকে৷ কেননা গ্রাহক  নির্দিষ্ট মেয়াদের পূর্বে মৃত্যুবরণ করলেই গ্রাহক পক্ষ তখন ক্ষতিপূরণ হিসেবে একটা মোটা অংকের টাকা পায়৷ আর লেনদেনের মূল হচ্ছে مبادلة المال بالمال بالتراضي অর্থাৎ সন্তুষ্টচিত্তে সম্পদের বিনিময়ে সম্পদ গ্রহণ করা৷ তাই এই ক্ষতিপূরণ নেওয়াটা أكل الاموال بالباطل এর অন্তর্ভুক্ত হবে৷

 


জীবন বীমা না জায়েজ হওয়ার ব্যাপারে কিছু ফাতাওয়া উল্লেখ করছি...

 

 

১. বুহুস ফী ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছারাতে উল্লেখ আছে-

 

اما بعد! فقد اتفق معظم العلماء المعاصرين والمجامع والندوات الفقهية علي حرمة التأمين التجاري التقليدي لما يشمل عليه من الغرر والقمار والربا.

 

"হামদ ও সালাতের পরে...বর্তমান যুগেরফিকহী বোর্ড ও নদওয়ায়ে ফিকহিয়্যার আলেমদের বড় একটি অংশ কমার্শিয়াল বীমা হারাম হওয়ার উপর একমত পোষণ করেছেন। কারণ এ জাতীয় বীমাতে  ধোঁকাজুয়া ও সুদের উপস্থিতি আছে।

(বুহুস ফী ক্বাযায়া ফিকহিয়্যাহ মুআছার: ২/১৮৭)

 

 

২. ইমদাদুল ফাতাওয়াতে উল্লেখ রয়েছে-

اسی طرح جان کا بیمہ وہ صورة رشوت  ہے لأن المال فيه عوض من غير متقوم و هو النفس اور حقیقۃً سود ہے.

"এমনিভাবে জীবন বীমা করা (হারাম)৷ কারণ বাহ্যিকভাবে তা ঘুষ...আর বাস্তবে তা সুদ।"

     (ইমদাদুল ফাতাওয়া : ৩/১৬১)

 

 

৩. কিফায়াতুল মুফতী গ্রন্থে উল্লেখ আছে-

سوال: زندگی کا بیمہ کرانا کیسا ہے؟

جواب: زندگی کا بیمہ کرانا جائز نہیں ہے؟

 

"প্রশ্ন : জীবন বীমা করার বিধান কি?

উত্তর : জীবন বীমা করা জায়েয নেই৷

  (কিফায়াতুল মুফতি : ৮ / ৮২)

 

৪. ফাতাওয়ায়ে উসমানীর ইবারত এমন-

انشورنش کے جو طریقے اس وقت تک مروج ہیں وہ سب سود اور قمار پر مشتمل ہیں اور حرام ہیں.

"বর্তমান সময়ে প্রচলিত ইন্স্যুরেন্স (বীমার) যত প্রকার রয়েছে সবগুলো সুদ ও জুয়ার অন্তর্ভূক্ত৷ বিধায় তা হারাম।" (ফাতাওয়ায়ে উসমানী : ৩/৩২৮)

                 

 সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

 

আপনার পিতার জন্য লাইফ ইন্স্যুরেন্স করা জায়েজ হয়নি। সুতরাং আপনার পিতার মৃত্যুর পর তার ঐ ইন্সুরন্স থেকে শুধু আপনার পিতার মূল জমাকৃত টাকা ফেরত নিতে পারবেন। তার জমাকৃত টাকার থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া জায়েজ হবে না। নিলে তা সুদ বলে গণ্য হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী আব্দুল ওয়াহিদ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (40 points)
insurance ta amara korini ammar abbu korce . oni koto taka insurance korce ta jani na . 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 62 views
0 votes
1 answer 68 views
0 votes
1 answer 399 views
...