ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
সু-প্রিয় পাঠকবর্গ!
এখন আমরা কাযা নামায পড়া সম্পর্কে যুগশ্রেষ্ট ফুকাহায়ে কেরামদের অভিমত জানবো।যথাঃ-
(ক)হানাফি মাযহাবের সুপ্রসিদ্ধ আলেম আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ লিখেন-
فالاصل فيه ان كل صلاة فاتت عن الوقت بعد ثبوت وجودها فيه ،فإنه يلزم قضاؤها،سواء ترك عمدا أو سهوا أو بسبب نوم،وسواء كانت الفوائت قليلة أو كثيرة ،
'এক্ষেত্রে মূলনীতি হল,প্রত্যেক ওই নামায ওয়াজিব হওয়ার পর যা ইচ্ছায় অনিচ্ছায়,ভুলক্রমে কিংবা নিদ্রায় যাওয়ার কারণে ছুটে গেছে এবং যথাসময়ে যা আদায় করা সম্ভবপর হয় নাই, তা কাযা করা অপরিহার্য।ছুটে যাওয়া নামায সংখ্যায় কম হোক বা বেশী। (আল-বাহরুর রায়েক-২/১৪১)
(খ)ইমাম মালেক রাহ বলেন,
حتي يأتي على جميع ما نسى أو ترك
যে ব্যক্তির অনেক নামায কাযা হয়েছে,সে তার সকল কাযা নামায পড়বে।এমনকি সে তার ভুলক্রমে বা স্বেচ্ছায় ছেড়ে দেওয়া সকল নামাযেরই কাযা করবে।(আল-মুদাউওয়ানাতুল কুবরা-১/২১৫)
(গ)ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ এর একান্ত বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী অাল্লামা মুরদাবী রাহ কাযা নামায সম্পর্কে হাম্বলী মাযহাবের ভাষ্যকে এভাবে লিখেন-
و من فاتته صلوات لزمه قضاؤها على الفور
যার অনেক নামায ছুটে গেছে তার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে এসব নামায কাযা করা ওয়াজিব।(আল-ইনসাফ-১/৪৪২)
(ঘ)ইমাম শাফেয়ী এর মাযহাব হল-
(من فاتته) مكتوبة فأكثر (قضى) ما فاته بعذر أو غيره
যে ব্যক্তির এক বা একাধিক ফরয নামায ছুটে গেছে,তার জন্য তার ছুটে যাওয়া নামাযগুলোর কাযা করে নেয়া জরুরী।কোনো ওজরের কারণে ছুটে থাকুক বা বিনা ওজরে ছুটুক।(ফাতহুল জাওওয়াদ-১/২২৩)
(ঙ)
স্বয়ং ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ থেকেও উমুরী কাযার বর্ণনা পাওয়া যায়-
ومن عليه فائتة فعليه ان يبادر إلى قضاءها على الفور سواء فائته عمدا أو سهوا عند جمهور العلماء،كمالك وأحمد و أبي حنيفة و غيرهم،
' যে ব্যক্তির দায়িত্বে কোনো কাযা নামায রয়েছে,তার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ওই কাযা নামায আদায় করে নেয়া ওয়াজিব।সে ওই নামায ইচ্ছাকৃতভাবে কাযা করে থাকুক কিংবা ভুলক্রমে।এটিই জুমহুর ফুকাহা, ইমাম মালিক (রহ), ইমাম আহমদ (রহ), ইমাম আবু হানিফা (রহ) এর অভিমত (ফাতাওয়া শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৩/২৫৯)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
(১) শুধুমাত্র তাওবাহ করা যথেষ্ট নয়। বরং কাযাও পড়তে হবে। এজন্য যে, যাতে করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে কোনো কমতি না থাকে, এ বিধান মূলত রোযার উপর কিয়াস করেই প্রদত্ত হয়েছে।
(২) রোযার উপর কিয়াস করে উলামায়ে কেরাম তাওবাহর সাথে সাথে কাযা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
(৩) এখানে মূলত বিষয় হল, কারো নিকট পাওনা থাকলে সেই পাওনা পরিশোধ করতে যদি দেড়ী হয়, তাহলে উলামায়ে কেরাম বলেন, প্রথমে পাওনা পরিশোধ করতে তার দেড়ী হওয়ার জন্য তার নিকট উযর পেশ করতে, ঠিক এভাবে নামাযের বিষয়টাও। প্রথমে কাযা করতে হবে, তারপর পাওনা আদায় করতে হবে।
নামাযে হাত রাখার বিধান
জুমুহুর ফুকাহায়ে কেরাম, হানাফি, শাফেয়ী, হাম্বলী সবাই বলেন,নামাযের সুন্নাহ হল,এক হাতকে অন্য হাতের উপর বাধা।এ ব্যাপারে মালিকিরা ভিন্ন মত পোষন করে বলেন,নামাযে হাত ছেড়ে দেয়াই মুস্তাহব।এমনকি ফরয নামাযে হাতকে বাধা মাকরুহ।তবে নফল নামাযে অনুমোদন রয়েছে।
নামাযে বুকের উপর হাত বাধা হবে।এটা শাফেয়ী এবং মালিকি মাযহাবের সিদ্ধান্ত।এবং সাঈদ ইবনে জুবাইর রাহ এর মত ও এটি।কেননা ওয়াঈল ইবনে হাজার রাযি থেকে বর্ণিত রয়েছে,আমি রাসূলুল্লাহ সাঃ এর সাথে নামায পড়েছি।রাসূলুল্লাহ সাঃ এক হাতের উপর আরেকটি হাতকে বুকের উপর রেখেছেন।(ইবনে খুযাইমাহ-১/২৪৩)
হানাফি মাযহাব এবং এক বর্ণনা অনুযায়ী হাম্বলী মাযহাব মতে নাভীর নীচে হাত বাধা হবে।কেননা আবু হুরায়রা সহ অনেক সাহাবী থেকে এ বব্যাপরে বর্ণিত রয়েছে।হযরত আলী রাযি বলেন,সুন্নাহ হলো,এক হাতের উপর অন্য হাতকে নাভীর নীচে বাধা।(সুনানু আবি-দাউদ-১/৪৮০) (আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ-৩৮/৩৬৯)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
নামাযে নাভীর নীচে এক হাতের কব্জির উপর অপর হাতকে রাখতে হবে। বৃদ্ধাঙ্গুলি এবং কনিষ্টাঙ্গুলি দ্বারা জড়িয়ে ধরতে হবে।