আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
439 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (17 points)
edited by
হাদিসে আছে বদনজর সত্য। এই সম্পর্কে আমার দুটি প্রশ্ন:

১। আল্লাহ কেন বদনজর সৃষ্টি করলেন? প্রত্যেকটা সৃষ্টি, তা ভালো হোক বা খারাপ হোক, সৃষ্টির পেছনে কোনো না কোনো হেকমত থাকে। এবং জ্ঞানীরা চিন্তা করে সেই হেকমতগুলো ধরতে পারেন এবং আমাদেরকে জানান। কিন্তু এখন পর্যন্ত বদনজর এর পেছনের কোনো হেকমত কেউ বলেছেন বলে আমার জানা নেই। আপনার কি জানা আছে বদনজরের কোনো ইতিবাচক দিক? অর্থাৎ, যে জিনিস মন না চাইলেও অন্যের উপর পড়ে, এমনকি নিজের বদনজর নিজের প্রতিও পড়তে পারে, হিংসা করলেও পড়ে, প্রশংসা করলেও পড়ে, এমনকি এটা উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার মত ভয়াবহ জিনিস। এটা সৃষ্টি করার পেছনে হেকমত কী? বদনজর থেকে বেঁচে থাকার আমল করা তো ফরজ নয়, অথচ আল্লাহর ইচ্ছায় কেউ জীবনে দ্বীনি বা দুনিয়াবি লাইনে অনেক বড় পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে, তদের সবাইকে তো বদনজর লাগেও না। কিন্তু কাউকে কাউকে লেগে যায়। ফলে মানুষ এটা থেকে বেঁচে থাকার আমল কমই করে, অথচ যাকে বদনজর লেগে যায় তার জীবনের সব শেষ হয়ে যায়, সে ওই পর্যায়ে না পৌঁছলেই হয়ত এরচেয়ে ভাল থাকত। তাহলে এই জিনিসটা, যেটা ইচ্ছায় -অনিচ্ছায়, জেনে, না জেনে মানুষের উপর পড়ে যায় সেটা আল্লাহ সৃষ্টি করলেন কেন?

২। এটি প্রথম প্রশ্নের সম্পূরক প্রশ্ন। বদনজর ধার্মিকদের বেশি লাগে কেন? কত বড় বড় মুসলিম/অমুসলিম খেলোয়াড়, গায়ক, অভিনেতা, রাষ্ট্রনেতা, লেখক, শিল্পী ইত্যাদি সেলিব্রেটি জন্মাচ্ছে। সেলিব্রেটি হয়ে জন্মে সেলিব্রেটি হয়ে মরছে তাদের বদনজর লাগে না, অথচ মুসলিম, বিশেষত দ্বীনদার মুসলিমরা সামান্য একটু শো অফ করলেই (যেমন ধরুন নবজাতক সন্তানের ছবি একটু লোককে দেখানোর শখ হয়েছে তাই ফেসবুকে দিয়েছে) বদনজর লেগে যায় কেন? যারা শিশু শিল্পী, তাদের কত প্রশংসা করে মানুষ, এই মানুষদের মধ্যে ভালো-মন্দ সব রকম লোকই থাকে, তাতেওএসব শিশুদের উপর কারো বদনজর পড়তে দেখি না, বরং তারা সফলভাবে ক্যারিয়ার পার করে দিচ্ছে! আবার ধরুন ফুটবলার মেসি, নেইমারের কথা। কত সাফল্য, কত খ্যাতি, যশ, অর্থ, বিত্ত, প্রতিদিন কোটি কোটি লোক তাদের স্তুতি করছে, তাদের মতো হতে চাচ্ছে, তাদের জীবন দেখে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে তাতে তাদের কিছুই হচ্ছে না অথচ মুসলমানদের ফেসবুকে একটা গুড নিউজ শেয়ার করলে বদনজর লেগে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো, যারা বদনজরে বিশ্বাস করে না, এটাকে কুসংস্কার মনে করে তাদের চেয়ে যারা বদনজর বিশ্বাস করে তাদেরই বেশি ক্ষতি হয়ে যায় কেন? সবাইকে মাশাআল্লাহ বলানো কি সম্ভব? আবার চাইলেও কি সব ভালো কিছু চেপে রাখা সম্ভব? মুসলিমরা কি জ্ঞানে বিজ্ঞানে, প্রতিভা-দক্ষতায় পৃথিবী ছাপিয়ে যাওয়ার মত হতে পারবে না? আমি কি ইবনে সিনার মত ডাক্তার, কিংবা আল্লামা রুমির মত কবি হতে চাইতে পারি না? সেক্ষেত্রে আমার প্রতিভা বা দক্ষতা দেখে হিন্দু বা খ্রিস্টানরা কি মাশাআল্লাহ বলবে? নিশ্চয় বলবে না, সারা পৃথিবীর মানুষকে আমি জনে জনে মাশাআল্লাহ বলাতে পারি না, আবার বদনজরের আমলটাও নিয়মিত চালিয়ে নাও যেতে পারি (কারণ, বদনজর যে পড়বেই এমন গ্যারান্টি নেই, কাজেই সব মানুষের পক্ষে  রুকিয়ার মত একটা নফল আমল সারাজীবন নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন)। এইটূকুর কারণে আমি বদনজরের শিকার হয়ে যাব আর যারা একে কুসংস্কার ভাবত তারা একের পর এক সাফল্যের শিখরে আরোহণ করতে থাকবে কোনো বাধা ছাড়াই? এর পেছনের হেকমত আমার বুঝে আসে না, দয়া করে বুঝিয়ে দেবেন।

1 Answer

+1 vote
by (590,550 points)
edited by

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হযরত অায়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,
عن عائشة رضي الله عنها قالت : " كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يأمرني أن أسترقي من العين "
রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে চোখলাগা হতে (মুক্ত হওয়ার জন্য) ঝাড়ফুঁক করার আদেশ করতেন।(সহীহ মুসলিম-২১৯৫)

عن ابن عباس رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال : " العين حق ولو كان شيء سابق القدر لسبقته العين ، وإذا استغسلتم فاغسلوا "
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ ভাগ্যকে কোন জিনিস অতিক্রম করতে সমর্থ হলে কু-দৃষ্টিই তা অতিক্রম করতে পারত। যদি এ প্রসঙ্গে কেউ তোমাদেরকে গোসল করাতে চায় তাহলে তোমরা তাতে সম্মত হও।(মুসলিম-২১৮৮)

আসমা (রাঃ) বললেন,
قالت أسماء يا رسول الله إن بني جعفرتصيبهم العين، فأسترقي لهم قال: «نعم، فلو كان شيء سابق القدر، سبقته العين
 হে আল্লাহর রাসূল! জাফরের সন্তানদের বদনজর লেগেছে, আপনি তাদের ঝাড়ফুঁক করুন। তিনি বলেনঃ আচ্ছা। যদি কোন কিছু তাকদীরকে পরাভূত করতে পারতো, তবে বদনজরই তাকে পরাভূত করতো।(সুনানু ইবনু মা'জা-৩৫১০)

বদ নজরের হেকমতঃ-
আল্লাহ তা’আলা বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার নিমিত্তে বদ নজর সৃষ্টি করেছেন। 
 وَجَعَلْنَا بَعْضَكُمْ لِبَعْضٍ فِتْنَةً أَتَصْبِرُونَ ۗ وَكَانَ رَبُّكَ بَصِيرًا
আমি তোমাদের এককে অপরের জন্যে পরীক্ষাস্বরূপ করেছি। দেখি, তোমরা সবর কর কিনা। আপনার পালনকর্তা সব কিছু দেখেন। (সূরা ফুরকান-২০)

উক্ত আয়াতের আলোকে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, বান্দাদেরকে পরীক্ষা করার নিমিত্তেই মূলত আল্লাহ তাআলা বদ নজর সৃষ্টি করেছেন। 

(২)
وَلَنَبْلُوَنَّكُم بِشَيْءٍ مِّنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِّنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنفُسِ وَالثَّمَرَاتِ ۗ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ
এবং অবশ্যই আমি তোমাদিগকে পরীক্ষা করব কিছুটা ভয়, ক্ষুধা, মাল ও জানের ক্ষতি ও ফল-ফসল বিনষ্টের মাধ্যমে। তবে সুসংবাদ দাও সবরকারীদের।( সূরা বাকারা-১৫৫)

যেহেতু বদ নজর একটা পরীক্ষা, আর আল্লাহ মু’মিন বান্দাদেরকেই দুনিয়াতে পরীক্ষায় ফেলে অতঃপর তাদেরকে আখেরাতে অশেষ সওয়াব প্রদানের অঙ্গিকার করেছেন, সেই জন্যই মূলত মু’মিন বান্দাদের বদনজর বেশী লাগে। তাছাড়া বদনজর হিংসা থেকে হয়, এবং মু’মিনদের প্রতি কাফিররাই বেশী হিংসা করে, এবং কাফিরদের হিংসার কারণেই মূলত মু’মিনদের বেশী ক্ষতি হয়। আর মু’মিনরা কাফিরদের প্রতি হিংসা না করে, বরং তাদেরকে হেদায়তে নিয়ে আসার চিন্তা করে থাকে, যদ্দরুণ কাফিরদের বদনজর কম লাগে। হ্যা, তাদের পরস্পর হিংসার কারণে অবশ্যই বদনজর লাগে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (590,550 points)
সংযোজন ও সংশোধন করা হয়েছে। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 190 views
0 votes
1 answer 140 views
...