হাদিসে আছে বদনজর সত্য। এই সম্পর্কে আমার দুটি প্রশ্ন:
১। আল্লাহ কেন বদনজর সৃষ্টি করলেন? প্রত্যেকটা সৃষ্টি, তা ভালো হোক বা খারাপ হোক, সৃষ্টির পেছনে কোনো না কোনো হেকমত থাকে। এবং জ্ঞানীরা চিন্তা করে সেই হেকমতগুলো ধরতে পারেন এবং আমাদেরকে জানান। কিন্তু এখন পর্যন্ত বদনজর এর পেছনের কোনো হেকমত কেউ বলেছেন বলে আমার জানা নেই। আপনার কি জানা আছে বদনজরের কোনো ইতিবাচক দিক? অর্থাৎ, যে জিনিস মন না চাইলেও অন্যের উপর পড়ে, এমনকি নিজের বদনজর নিজের প্রতিও পড়তে পারে, হিংসা করলেও পড়ে, প্রশংসা করলেও পড়ে, এমনকি এটা উটকে রান্নার পাতিল পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার মত ভয়াবহ জিনিস। এটা সৃষ্টি করার পেছনে হেকমত কী? বদনজর থেকে বেঁচে থাকার আমল করা তো ফরজ নয়, অথচ আল্লাহর ইচ্ছায় কেউ জীবনে দ্বীনি বা দুনিয়াবি লাইনে অনেক বড় পর্যায়ে পৌঁছে যেতে পারে, তদের সবাইকে তো বদনজর লাগেও না। কিন্তু কাউকে কাউকে লেগে যায়। ফলে মানুষ এটা থেকে বেঁচে থাকার আমল কমই করে, অথচ যাকে বদনজর লেগে যায় তার জীবনের সব শেষ হয়ে যায়, সে ওই পর্যায়ে না পৌঁছলেই হয়ত এরচেয়ে ভাল থাকত। তাহলে এই জিনিসটা, যেটা ইচ্ছায় -অনিচ্ছায়, জেনে, না জেনে মানুষের উপর পড়ে যায় সেটা আল্লাহ সৃষ্টি করলেন কেন?
২। এটি প্রথম প্রশ্নের সম্পূরক প্রশ্ন। বদনজর ধার্মিকদের বেশি লাগে কেন? কত বড় বড় মুসলিম/অমুসলিম খেলোয়াড়, গায়ক, অভিনেতা, রাষ্ট্রনেতা, লেখক, শিল্পী ইত্যাদি সেলিব্রেটি জন্মাচ্ছে। সেলিব্রেটি হয়ে জন্মে সেলিব্রেটি হয়ে মরছে তাদের বদনজর লাগে না, অথচ মুসলিম, বিশেষত দ্বীনদার মুসলিমরা সামান্য একটু শো অফ করলেই (যেমন ধরুন নবজাতক সন্তানের ছবি একটু লোককে দেখানোর শখ হয়েছে তাই ফেসবুকে দিয়েছে) বদনজর লেগে যায় কেন? যারা শিশু শিল্পী, তাদের কত প্রশংসা করে মানুষ, এই মানুষদের মধ্যে ভালো-মন্দ সব রকম লোকই থাকে, তাতেওএসব শিশুদের উপর কারো বদনজর পড়তে দেখি না, বরং তারা সফলভাবে ক্যারিয়ার পার করে দিচ্ছে! আবার ধরুন ফুটবলার মেসি, নেইমারের কথা। কত সাফল্য, কত খ্যাতি, যশ, অর্থ, বিত্ত, প্রতিদিন কোটি কোটি লোক তাদের স্তুতি করছে, তাদের মতো হতে চাচ্ছে, তাদের জীবন দেখে ঈর্ষান্বিত হচ্ছে তাতে তাদের কিছুই হচ্ছে না অথচ মুসলমানদের ফেসবুকে একটা গুড নিউজ শেয়ার করলে বদনজর লেগে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন হলো, যারা বদনজরে বিশ্বাস করে না, এটাকে কুসংস্কার মনে করে তাদের চেয়ে যারা বদনজর বিশ্বাস করে তাদেরই বেশি ক্ষতি হয়ে যায় কেন? সবাইকে মাশাআল্লাহ বলানো কি সম্ভব? আবার চাইলেও কি সব ভালো কিছু চেপে রাখা সম্ভব? মুসলিমরা কি জ্ঞানে বিজ্ঞানে, প্রতিভা-দক্ষতায় পৃথিবী ছাপিয়ে যাওয়ার মত হতে পারবে না? আমি কি ইবনে সিনার মত ডাক্তার, কিংবা আল্লামা রুমির মত কবি হতে চাইতে পারি না? সেক্ষেত্রে আমার প্রতিভা বা দক্ষতা দেখে হিন্দু বা খ্রিস্টানরা কি মাশাআল্লাহ বলবে? নিশ্চয় বলবে না, সারা পৃথিবীর মানুষকে আমি জনে জনে মাশাআল্লাহ বলাতে পারি না, আবার বদনজরের আমলটাও নিয়মিত চালিয়ে নাও যেতে পারি (কারণ, বদনজর যে পড়বেই এমন গ্যারান্টি নেই, কাজেই সব মানুষের পক্ষে রুকিয়ার মত একটা নফল আমল সারাজীবন নিয়মিত চালিয়ে যাওয়া খুব কঠিন)। এইটূকুর কারণে আমি বদনজরের শিকার হয়ে যাব আর যারা একে কুসংস্কার ভাবত তারা একের পর এক সাফল্যের শিখরে আরোহণ করতে থাকবে কোনো বাধা ছাড়াই? এর পেছনের হেকমত আমার বুঝে আসে না, দয়া করে বুঝিয়ে দেবেন।