জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
শরীয়তের বিধান অনুযায়ী কয়েক প্রকার তাবিজ জায়েজ নয়। যথা-
১-কুরআন হাদীস দ্বারা ঝাড়ফুক দেয়া ছাড়া শুধু তামা, পিতল বা লোহা দ্বারা তাবিজ বানিয়ে লটকিয়ে রাখা। অর্থাৎ শুধু এগুলো লটকানো দ্বারাই রোগমুক্ত হওয়া যাবে বিশ্বাস করে তা লটকানো নাজায়িজ।
২-এমন তাবিজ যাতে আল্লাহর নাম, কুরআনের আয়াত, দুআয়ে মাসূরা ব্যতিত শিরকী কথা লিপিবদ্ধ থাকে।
৩-তাবীজকে মুয়াসসার বিজজাত তথা তাবীজ নিজেই আরোগ্য করার ক্ষমতার অধিকারী মনে করে তাবিজ লটকানো। এ বিশ্বাস জাহেলী যুগে ছিল, বর্তমানেও ইসলাম সম্পর্কে কিছু অজ্ঞ ব্যক্তিরা তা মনে করে থাকে।
৪-যে কালামের অর্থ জানা যায় না এমন শব্দ দ্বারা তাবিজ লেখা।
৫-আরবী ছাড়া অন্য কোন ভাষায় তাবিজ লেখা।
এ সকল সুরতে সর্বসম্মত মতানুসারে নাজায়িজ ও হারাম এবং শিরক। এতে কোন সন্দেহ নেই।
কিন্তু তাবিজে কুরআনের আয়াত, আল্লাহর নাম, দুআয়ে মাসুরা বা শিরকমুক্ত অর্থবোধক থাকলে তা জায়িজ। কেননা এসব তাবিজের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত তথা আরোগ্যের ক্ষমতা আল্লাহ তাআলাকেই মনে করা হয়। যেমন ডাক্তার প্রদত্ত ঔষদের ক্ষেত্রে মুয়াসসার বিজজাত আল্লাহকে মনে করার কারণে তা নাজায়িজ নয়।
.
عَنْ عَمْرِو بْنِ شُعَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَدِّهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُعَلِّمُهُمْ مِنَ الْفَزَعِ كَلِمَاتٍ: «أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ» وَكَانَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ يُعَلِّمُهُنَّ مَنْ عَقَلَ مِنْ بَنِيهِ، وَمَنْ لَمْ يَعْقِلْ كَتَبَهُ فَأَعْلَقَهُ عَلَيْهِ
আমর ইবনে শুআইব তাঁর পিতা ও তিনি তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন যে,রাসূল (সঃ) ইরশাদ করেন,তোমাদের কেউ যখন ঘুম অবস্থায় ঘাবড়িয়ে উঠে,সে যেন أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ غَضَبِهِ وَشَرِّ عِبَادِهِ، وَمِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ وَأَنْ يَحْضُرُونِ দো’আটি পাঠ করে। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর তাঁর উপযুক্ত সন্তানদের তা শিক্ষা দিতেন এবং ছোটদের গলায় তা লিখে লটকিয়ে দিতেন।{সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৮৯৫}
আরো জানুনঃ
★আল্লাহ সবকিছুর খালিক ও মালিক,জগতের সব কিছু উনার হুকুমেই সংগঠিত হয়,তাবিজ বা ঔষধের অদ্য কোনো ক্ষমতা নেই।এমন আক্বিদা পোষণ করে জায়েয ও বৈধ কালামের মাধ্যমে চিকিৎসা হিসেবে ঝাড়-ফুক ও তাবিজ ব্যবহার বৈধ আছে।
সুতরাং আকীদা বিশুদ্ধ রেখে তাবিজ ঝুলানো,বহন সবই জায়েজ আছে।
তবে কিছু ইসলামী স্কলারদেরমতে এটি কোনোভাবেই জায়েজ নেই,তাই তাদের মতানুসারীগন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন।
,
(০২)
ইসলাম সম্মত পন্থায় ফুঁক,পানি পড়িয়ে দেওয়া,তাবিজ ইত্যাদি বিভিন্ন ভাবে রুকইয়াহ করা হয়।
এর জন্য কোনো বিজ্ঞ অভিজ্ঞ রুকইয়াহ কারীর সাহায্য নিতে পারেন।
,
(০৩)
হ্যাঁ জায়েজ আছে।
হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাযিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أن رهطا من أصحاب رسول الله صلى الله عليه وسلم انطلقوا في سفرة سافروها، حتى نزلوا بحي من أحياء العرب، فاستضافوهم فأبوا أن يضيفوهم، فلدغ سيد ذلك الحي، فسعوا له بكل شيء، لا ينفعه شيء، فقال بعضهم لو أتيتم هؤلاء الرهط الذين قد نزلوا بكم، لعله أن يكون عند بعضهم شيء، فأتوهم فقالوا: يا أيها الرهط إن سيدنا لدغ فسعينا له بكل شيء لا ينفعه شيء ،فهل عند أحد منكم شيء؟ فقال بعضهم: نعم والله إني لراق، ولكن والله لقد استضفناكم فلم تضيفونا، فما أنا براق لكم حتى تجعلوا لنا جعلا فصالحوهم على قطيع من الغنم، فانطلق فجعل يتفل ويقرأ الحمد لله رب العالمين حتى لكأنما نشط من عقال، فانطلق يمشي ما به قلبة، قال: فأوفوهم جعلهم الذي صالحوهم عليه، فقال بعضهم: اقسموا فقال الذي رقى: لا تفعلوا حتى نأتي رسول الله صلى الله عليه وسلم، فنذكر له الذي كان، فننظر ما يأمرنا، فقدموا على رسول الله صلى الله عليه وسلم فذكروا له، فقال وما يدريك أنها رقية؟ أصبتم، اقسموا واضربوا لي معكم بسهم.
সাহাবীদের এক কাফেলা একবার সফরে বের হন। পথিমধ্যে তারা আরবের একটি গোত্রের এলাকায় পৌঁছেন এবং তাদের মেহমান হতে আবেদন করেন, কিন্তু গোত্রবাসী তাদের মেহমানদারী করতে অসম্মতি জানায় । এ সময় গোত্রপ্রধানকে সাপ বা বিচ্ছু দংশন করে এবং গোত্রবাসী বিষ নামানোর জন্য সর্বপ্রকার চেষ্টা করে। কিন্তু কোনো কাজ হয় না। অবশেষে তারা সাহাবীদের কাছে এসে বলল, আমাদের গোত্রপ্রধান দংশিত হয়েছেন, আমরা সব ধরনের চেষ্টা করেছি, কিন্তু ফল হচ্ছে না; তোমাদের কাছে কি কিছু আছে? এক সাহাবী বললেন, হাঁ, আমি ঝাড়ফুঁক জানি, কিন্তু আমরা তোমাদের কাছে মেহমানদারীর আবেদন করেছি তোমরা তা প্রত্যাখ্যান করেছ। তাই আল্লাহর শপথ তোমরা বিনিময় নির্ধারণ করার আগ পর্যন্ত আমি কোনো প্রকার ঝাড়ফুঁক করব না। অবশেষে তারা এক পাল ছাগল দিতে সম্মত হল। সে সাহাবী সূরা ফাতিহা পড়ে ঐ ব্যক্তির গায়ে ফুঁ দিতে লাগলেন। ধীরে ধীরে সে এমন সুস্থ হয়ে গেল, যেন সে এইমাত্র বাঁধনমুক্ত হল এবং এমনভাবে হাঁটতে লাগল যেন তার কোনো কষ্টই নেই। অতপর তারা তাদের ওয়াদাকৃত বিনিময় দিল। তখন একজন সাহাবী বললেন, এগুলো আমরা ভাগ করে নিই। তখন যে সাহাবী ঝাড়ফুঁক করেছেন তিনি বললেন, না, নবীজীকে জিজ্ঞেস করা ছাড়া তা হবে না। তিনি যা বলেন তাই করব। তারা নবীজীর কাছে আসার পর পুরো ঘটনা বলেন। তখন নবীজী বলেন, তোমাদের কে বলল, এটি জাহেলী ঝাড়ফুঁক! তোমরা যা করেছ ঠিকই করেছ। যাও, এগুলো তোমাদের মাঝে বণ্টন করে নাও আর আমাকেও এক অংশ দিয়ো। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৫৭৪৯
,
(০৪)
এমনটি হওয়া অসম্ভব নয়।
তবে প্রশ্নে উল্লেখিত ঘটনার সত্যতা সম্পর্কে মহান আল্লাহই ভালো জানেন।