আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
344 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (48 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম উস্তাদ।

প্রিয় উস্তাদের নিকট আমার প্রশ্ন ঃ

খতম তারাবী পড়ানোর জন্য দেশে প্রচলিত যে ব্যবস্থায় টাকা হাদিয়া দেয়া হয় তা হানাফি ফিকহ অনুযায়ী জায়েজ আছে কি??  বিস্তারিত আলোচনা করবেন ইনশাআল্লাহ

1 Answer

0 votes
by (696,520 points)
ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়ার বিধান
 লুৎফুর রহমান ফরায়েজী
اجرة على الطاعة (ইবাদাতের বিনিময়) জায়েজ কি জায়েজ নয় এ ব্যাপারে দু’টি মত আছে।
(১) শাফেয়ী মালেক ও আহমাদ (রঃ) এর মতে জায়েজ।
(২) মুতাকাদ্দিমীন আহনাফ তথা আবু হানীফা ও সাহাবাইনসহ সবার মতে জায়েজ নয়।
তবে মুতা’আখখীরীনরা জায়েজ কয়েকটি ক্ষেত্রে বলেছেন।

ফুকাহারা اجرة নেয়া জায়েজ বলেছেন কেবল ঐ সকল ইবাদতের ক্ষেত্রে, যেগুলো ضروريات دين তথা দ্বীনের আবশ্যকীয় বিষয়ের অন্তর্ভূক্ত। যেমন-দ্বীন শিখানো, ইমামতি, মুয়াজ্জিনী, ওয়াজ করা। এছাড়া আর কোন ইবাদতের বিনিময়ে   اجرة নেয়া বৈধ নয়।

قال فى الدر: ( و ) لا لأجل الطاعات مثل ( الأذان والحج والإمامة وتعليم القرآن والفقه ) ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن والفقه والإمامة والأذان .
و قال ابن عابدين : ( قوله ويفتى اليوم بصحتها لتعليم القرآن إلخ ) قال في الهداية : وبعض مشايخنا – رحمهم الله تعالى – استحسنوا الاستئجار على تعليم القرآن اليوم لظهور التواني في الأمور الدينية ، ففي الامتناع تضييع حفظ القرآن وعليه الفتوى ا هـ ، وقد اقتصر على استثناء تعليم القرآن أيضا في متن الكنز ومتن مواهب الرحمن وكثير من الكتب ، وزاد في مختصر الوقاية ومتن الإصلاح تعليم الفقه ، وزاد في متن المجمع الإمامة ، ومثله في متن الملتقى ودرر البحار .
وزاد بعضهم الأذان والإقامة والوعظ ، وذكر المصنف معظمها ، ولكن الذي في أكثر الكتب الاقتصار على ما في الهداية ، فهذا مجموع ما أفتى به المتأخرون من مشايخنا وهم البلخيون على خلاف في بعضه مخالفين ما ذهب إليه الإمام وصاحباه ، وقد اتفقت كلمتهم جميعا في الشروح والفتاوى على التعليل بالضرورة وهي خشية ضياع القرآن كما في الهداية ،
وقد نقلت لك ما في مشاهير متون المذهب الموضوعة للفتوى فلا حاجة إلى نقل ما في الشروح والفتاوى ، وقد اتفقت كلمتهم جميعا على التصريح بأصل المذهب من عدم الجواز ، ثم استثنوا بعده ما علمته ، فهذا دليل قاطع وبرهان ساطع على أن المفتى به ليس هو جواز الاستئجار على كل طاعة بل على ما ذكروه فقط مما فيه ضرورة ظاهرة تبيح الخروج عن أصل المذهب من طرو المنع ، فإن مفاهيم الكتب حجة ولو مفهوم لقب على ما صرح به الأصوليون بل هو منطوق ، فإن الاستثناء من أدوات العموم كما صرحوا به أيضا . (الدر المختار مع رد المحتار : 9/76 كتاب الاجارة )

 
এছাড়া আর কোন ইবাদতের اجرة নেয়া বৈধ নয় । যেমন কুরআন পড়ে, ঈসালে সওয়াব করে, তারাবীহ পড়িয়ে, কেননা এসব দ্বারা কুরআন এর আয়াতকে বিক্রি করা হচ্ছে যা জায়েজ নেই। আর এগুলো ضروريات دين এর অন্তর্ভূক্তও নয়, যে এগুলো না হলে দ্বীনের মস্ত বড় কোন ক্ষতি হয়ে যাবে।

فالحاصل أن ما شاع في زماننا من قراءة الأجزاء بالأجرة لا يجوز ؛ لأن فيه الأمر بالقراءة وإعطاء الثواب للآمر والقراءة لأجل المال ؛ فإذا لم يكن للقارئ ثواب لعدم النية الصحيحة فأين يصل الثواب إلى المستأجر ولولا الأجرة ما قرأ أحد لأحد في هذا الزمان بل جعلوا القرآن العظيم مكسبا ووسيلة إلى جمع الدنيا – إنا لله وإنا إليه راجعون – ا هـ .
وقد رده الشيخ خير الدين الرملي في حاشية البحر في كتاب الوقف حيث قال : أقول المفتى به جواز الأخذ استحسانا على تعليم القرآن لا على القراءة المجردة كما صرح به في التتارخانية حيث قال : لا معنى لهذه الوصية ولصلة القارئ بقراءته ؛ لأن هذا بمنزلة الأجرة والإجارة في ذلك باطلة وهي بدعة ولم يفعلها أحد من الخلفاء ،
… وممن صرح بذلك أيضا الإمام البركوي قدس سره في آخر الطريقة المحمدية فقال : الفصل الثالث في أمور مبتدعة باطلة أكب الناس عليها على ظن أنها قرب مقصودة إلى أن قال : ومنها الوصية من الميت باتخاذ الطعام والضيافة يوم موته أو بعده وبإعطاء دراهم لمن يتلو القرآن لروحه أو يسبح أو يهلل له وكلها بدع منكرات باطلة ، والمأخوذ منها حرام للآخذ ، وهو عاص بالتلاوة والذكر لأجل الدنيا (الدر المختار مع رد المحتار : 9/78 كتاب الاجارة )

উল্লিখিত ইবারত দ্বারা এ কথা সুস্পষ্ঠভাবে বলা যায় যে, শুধু খতমে তারাবীহ পড়ানোর জন্য টাকা নেয়া বা ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরআন পড়ে টাকা নেয়া সম্পূর্ন হারাম। টাকা দাতা ও গ্রহিতা সমান গোনাহগার। আর টাকা দিয়ে কুরআন পড়ালে এর পুণ্যও পাওয়া যাবে কিনা যথেষ্ঠ সন্দেহ আছে।কারণ পাঠক ইখলাসের সাথে পাঠ করে না বরং টাকার জন্য পড়ে। সুতরাং পাঠকের নিয়ত ঠিক নেই, তাই তার পড়ার সওয়াব হচ্ছে কি? কারণ সওয়াব এর জন্য নিয়ত শর্ত। সুতরাং ফাসেক পাঠকের পূণ্য আদেশদাতার দিকে ফিরার তো  প্রশ্নই উঠেনা।আল্লাহ তা’য়ালা আমাদের সওয়াব অর্জন করতে গিয়ে গোনাহে লিপ্ত হওয়ার সকল পন্থা থেকে হিফাজত করুন, আমিন।

খতমে তারাবীহ এর জন্য একটি হিলা
যেহেতু খতমে তারাবীহ পড়ে হাফেজ কে টাকা না দিলে পরের বছর আর হাফেজ পাওয়া যাবে না, অপর দিকে হাফেজকে টাকা দেয়াও জায়েজ নেই তাই এক্ষেত্রে আল্লামা আব্দুর রহীম লাজপুরী (রঃ) একটি পন্থা বাতলে দিয়েছেন তা হলো-
রমজানে হাফেজকে নিয়োগ দেয়ার সময় এক মাসের জন্য সহকারী ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিবে এবং হাফেজকে প্রতিদিন মসজিদে তারাবীহ ছাড়াও এক দুই ওয়াক্তের ইমামতির দায়িত্ব দিবে এবং ইমামতির উপর ভিত্তি করে তাকে হাদিয়া দেয়া হবে। যেহেতু ইমামতি করিয়ে টাকা দেয়া জায়েজ।
মুফতী কেফায়াতুল্লাহ (রঃ) ও মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রঃ)ও এ কৌশলটিকে জায়েজ বলেছেন। (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া-৬/২৩৫/২৪৬)

সুরা তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়ার বিধান
শুধু সুরা তারাবীহ এর ইন্তেজাম করে ইমামকে টাকা দেয়াও জায়েজ নেই। যেহেতু মসজিদের ইমামের উপর অন্যান্য নামাজের মতো তারাবীহ এর নামাজ পড়ানোও দায়িত্ব। আর তারাবীহ এর নামাজ ‘সুন্নতে মুয়াক্কাদা কেফায়া’। তাই এলাকার জামে মসজিদে তারাবীহ এর জামাত হওয়ার দ্বারা কেফায়া ছেড়ে দেয়ার গোনাহ থেকে এলাকাবাসী মুক্ত হয়ে যাবে। বাকি থাকবে সবার উপর انفرادا তারাবীহ এর সালাত সুন্নতে মুয়াক্কাদা হিসেবে।

الحنفية قالو – الجماعة فيه سنة كفاية لاهل الحى – فلو قام بعضهم سقط الطلب عن الباقين –  (الفقه على المذاهب الاربعة لعبد الرحمن الجزائرى – 1/278 صلاة التراويح و حكمها و وقتها – و فى مراقى الفلاح : 412)
আর সুন্নতে মুয়াক্কাদার জামাত এমন কোন বিষয় নয় যাকে ضروريات دين এর অন্তর্ভূক্ত করে اجرة على الطاعات কে বৈধ করা আবশ্যক।
وقد اتفقت كلمتهم جميعا على التصريح بأصل المذهب من عدم الجواز ، ثم استثنوا بعده ما علمته ، فهذا دليل قاطع وبرهان ساطع على أن المفتى به ليس هو جواز الاستئجار على كل طاعة بل على ما ذكروه فقط مما فيه ضرورة ظاهرة تبيح الخروج عن أصل المذهب من طرو المنع (الدر المختار مع رد المحتار : 9/76 كتاب الاجارة


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...