আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

+3 votes
11,953 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (42 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম
.
আমার এক বন্ধুর বিয়ের সময় হুজুর উপস্থিত ছিল না। আমিসহ আরো কয়েকজন ছেলেকে সাক্ষী রেখে সে মোহর নির্ধারন করে, মেয়েকে বলেছিল, "আমি এতোজন সাক্ষীর সামনে এতো মোহরে তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মেনে নিলাম, তুমি কি রাজি?" মেয়েটি বলেছিল, "কবুল।"
.
আমার প্রশ্ন হলো, বিয়েটা কি হয়েছে? ইউটিউবে দেখলাম প্রায় সকল হুজুর বলেন যে অভিভাবক ছাড়া বিয়ে হবেনা, আপনাদের দৃষ্টিকোন কি? এই বিয়ে যদি হয়ে থাকে, তাহলে তার দলীল দিবেন প্লিজ। না হলে সেটাও বলবেন। বিয়ের সময় কারো অভিভাবক ছিলোনা, ছেলেমেয়ে প্রাপ্তবয়স্ক ছিল। দয়া করে একটু বিস্তারিত ভাব্র সব মাযহাবের আলোকে বিষয়টা বুঝিয়ে দিবেন। প্লিজ....
.
পাশাপাশি এই হাদিসগুলোও একটু বুঝিয়ে বলবেন,

 আইশা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোন মহিলা বিয়ে করলে তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। কিন্তু তার সাথে তার স্বামী সহবাস করলে তবে সে তার লজ্জাস্থান হালাল মনে করে সংগত হওয়ার কারণে তার নিকট মোহরের অধিকারী হবে। যদি অভিভাবকগণ বিবাদ করে তাহলে যে ব্যক্তির কোন অভিভাবক নেই তার ওয়ালী হবে দেশের শাসক। জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১১০২ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

.
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন মহিলা অপর কোন মহিলাকে বিবাহ দিবে না এবং কোন মহিলা নিজেকেও বিবাহ দিবে না। কেননা যে নারী স্বউদ্যোগে বিবাহ করে সে যেনাকারিণী।
সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ১৮৮২ হাদিসের মান: সহিহ হাদিস

.
আমাকে একটু বিস্তারিত বলবেন প্লিজ, অনেক খোঁজাখুঁজি করেও মিলাতে পারিনি কিছু। একটু বিস্তারিত বলবেন।
by
reshown by
দুই নৌকায় পা দিতে গিয়ে এক নৌকাতেও পা থাকছে না। অর্থাৎ কোনো হদিসের উপরই আমল হচ্ছেনা।

1 Answer

0 votes
by (589,680 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

আলহামদুলিল্লাহ!


চার মাযহাব সম্বলীত সর্ব বৃহৎ ফেক্বাহী গ্রন্থ " আল-মাওসু'আতুল ফেক্বহিয়্যায় " এ বিবাহের ওলী সম্পর্কে বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে।আমি নিম্নে সেই কিতাবের কিছু আলোচনা অর্থসহ উল্লেখ করছি- ওলীর প্রকারবেধ সম্পর্কে বলা হয়-
 ذهب الفقهاء إلى أن الولاية في النكاح بحسب المولى عليه نوعان: ولاية إجبار: وهي تنفيذ القول بالإنكاح على الغير، أي أن يباشر الولي العقد فينفذ على المولى عليه شاء أو أبى. وولاية اختيار: أو ولاية ندب واستحباب، أو ولاية شركة، على اختلاف بين الفقهاء في تسميتها. وليس في هذه الولاية تنفيذ القول على الغير أو إجباره، ومقتضاها أن نكاح المولى عليه يصح بعد أخذ إذنه أو اختياره 
বিবাহের ওলী দুই প্রকার যথাঃ- (ক) ওলায়তে ইজবার তথা ওলী কর্তৃক তার নিয়ন্ত্রনাধীন কাউকে বিয়ে দেয়া,চায় ঐ নিয়ন্তনাধীন ব্যক্তির এ ব্যাপারে ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক। (খ) ওলায়তে এখতিয়ার- এর ব্যখ্যা হচ্ছে, কাউকে অনুমতি ব্যতীত ওলী বিয়ে দিতে পারবে না। (আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ-৪১/২৫৯)

বিবাহের জন্য অভিভাবক শর্ত কি না? 
এ সম্পর্কে চার মাযহাবের ফুকাহায়ে কেরামদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে,
 اختلف الفقهاء في كون الولي ركنا من أركان النكاح أو شرطا في صحته أو شرطا في جوازه ونفاذه.فقال المالكية والشافعية: الولي ركن من أركان عقد النكاح، فلا يصح النكاح بدون ولي بشروطه،............. وقال الحنفية:................... والولاية في النكاح نوعان:الأول: ولاية ندب واستحباب، وهو الولاية على البالغة العاقلة بكرا كانت أو ثيبا. والثاني: ولاية إجبار، وهو الولاية على الصغيرة بكرا كانت أو ثيبا، وكذا الكبيرة المعتوهة والمرقوقة. وللحنفية في الولاية على البالغة العاقلة أقوال لخصها الكمال فقال: وحاصل ما عند علمائنا في ذلك سبع روايات:وَقَال الْحَنَابِلَةُ: الْوَلِيُّ شَرْطٌ فِي صِحَّةِ النِّكَاحِ، فَلاَ يَصِحُّ نِكَاحٌ إِلاَّ بِوَلِيٍّ، 
 ভাবার্থ সংক্ষেপে....... 
মালিকী এবং শাফেয়ী মাযহাব মতে অভিভাবক ব্যতীত বিয়ে শুদ্ধ হবে না।হানাফি মাযহাব মতে, ওলায়ত দুই প্রকার,যথাঃ-(১)মুস্তাহাব ওলায়ত-জ্ঞান সম্পন্ন বালেগা মহিলা চায় বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক (২)ওলায়তে ইজবার নাবালেগা মহিলা,চায় বিবাহিত হোক বা অবিবাহিত হোক।ঠিক তেমনি বালেগা পাগল মহিলার বিধান।জ্ঞান সম্পন্ন বালেগা মহিলার অভিভাবকত্ব নিয়ে সর্বমোট সাতটি মতামত রয়েছে।হাম্বলী মাযহাব মতেও অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত বিয়ে হবে না। (আল-মাওসুআতুল ফেকহিয়্যাহ-৪১/২৪৭-৪৯) 

 হানাফি মাযহাব মতে অভিভাবক নাবালক-নাবালিকার বিয়ে তাদের সম্মতি ব্যতীতও দিতে পারবে।তবে ঐ নাবালক-নাবালিকা অভিভাবকের অনুমতি ব্যতীত কোথাও বিয়ে বসতে পারবে না।এবং বিয়ে করলেও সেটা বাতিল বলে গণ্য হবে।কেননা নাবালক থাকার ধরুণ শরীয়ত তাদের কাজকে সমর্থন দিবে না। অভিভাবক ব্যতীতও বিয়ে বিশুদ্ধ হয়। 

হাদীস 
 (এক)
 عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَبَّاسٍ؛ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم، قَالَ: «الْأَيِّمُ أَحَقُّ بِنَفْسِهَا مِنْ وَلِيِّهَا. 
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, মেয়ে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে অভিভাবকের চেয়ে অধিক হকদার। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৮৮৮, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১৪২১)
 
 (দুই)
 عَنْ أَبِي سَلَمَةَ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: ” جَاءَتِ امْرَأَةٌ إِلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ أَبِي وَنِعْمَ الْأَبُ هُوَ، خَطَبَنِي إِلَيْهِ عَمُّ وَلَدِي فَرَدَّهُ، وَأَنْكَحَنِي رَجُلًا وَأَنَا كَارِهَةٌ. فَبَعَثَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى أَبِيهَا، فَسَأَلَهُ عَنْ قَوْلِهَا، فَقَالَ: صَدَقَتْ، أَنْكَحْتُهَا وَلَمْ آلُهَا خَيْرًا. فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا نِكَاحَ لَكِ، اذْهَبِي فَانْكِحِي مَنْ شِئْتِ 
হযরত সালামা বিনতে আব্দুর রহমান রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা এক মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এল। এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতা! কতইনা উত্তম পিতা! আমার চাচাত ভাই আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দিল আর তিনি তাকে ফিরিয়ে দিলেন। আর এমন এক ছেলের সাথে বিয়ে দিতে চাইছেন যাকে আমি অপছন্দ করি। এ ব্যাপারে রাসূল সাঃ তার পিতাকে জিজ্ঞাসা করলে পিতা বলে, মেয়েটি সত্যই বলেছে। আমি তাকে এমন পাত্রের সাথে বিয়ে দিচ্ছি যার পরিবার ভাল নয়। তখন রাসূল সাঃ মেয়েটিকে বললেন, “এ বিয়ে হবে না, তুমি যাও, যাকে ইচ্ছে বিয়ে করে নাও”। {মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১০৩০৪, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৩} 

 (তিন)
 حَدَّثَنَا حُسَيْنٌ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ أَيُّوبَ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: ” أَنَّ جَارِيَةً بِكْرًا أَتَتِ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَذَكَرَتْ أَنَّ أَبَاهَا زَوَّجَهَا وَهِيَ كَارِهَةٌ فَخَيَّرَهَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” 
হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ থেকে বর্ণিত। কুমারী মেয়ে রাসূল সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমার অপছন্দ সত্বেও বিয়ে দিয়েছে, তখন রাসূল সাঃ সে মেয়েকে অধিকার দিলেন, [যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারে বা এ বিয়ে রাখতেও পারে]। {মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৪৬৯, সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৫} 
 
(চার)
 عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: جَاءَتْ فَتَاةٌ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ: ” إِنَّ أَبِي زَوَّجَنِي ابْنَ أَخِيهِ، لِيَرْفَعَ بِي خَسِيسَتَهُ، قَالَ: فَجَعَلَ الْأَمْرَ إِلَيْهَا، فَقَالَتْ: قَدْ أَجَزْتُ مَا صَنَعَ أَبِي، وَلَكِنْ أَرَدْتُ أَنْ تَعْلَمَ النِّسَاءُ أَنْ لَيْسَ إِلَى الْآبَاءِ مِنَ الْأَمْرِ شَيْءٌ “ 
হযরত বুরাইদা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক মহিলা নবীজী সাঃ এর কাছে এসে বলল, আমার পিতা আমাকে তার ভাতিজার কাছে বিয়ে দিয়েছে, যাতে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। রাবী বলেন, তখন রাসূল সাঃ বিষয়টি মেয়ের ইখতিয়ারের উপর ন্যস্ত করেন, [অর্থাৎ ইচ্ছে করলে বিয়ে রাখতেও পারবে, ইচ্ছে করলে ভেঙ্গেও দিতে পারবে] তখন মহিলাটি বললেন, আমার পিতা যা করেছেন, তা আমি মেনে নিলাম। আমার উদ্দেশ্য ছিল, মেয়েরা যেন জেনে নেয় যে, বিয়ের ব্যাপারে পিতাদের [চূড়ান্ত] মতের অধিকার নেই্ {সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৮৭৪} অভিভাবক ব্যতীত বিয়ে বিশুদ্ধ হবে না। 

 (পাঁচ) 
 আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত এক হাদীসের মধ্যে রাসূল (সাঃ) বলেছেন :
( ﺃَﻳُّﻤَﺎ ﺍﻣْﺮَﺃَﺓٍ ﻧَﻜَﺤَﺖْ ﺑِﻐَﻴْﺮِ ﺇِﺫْﻥِ ﻭَﻟِﻴِّﻬَﺎ، ﻓَﻨِﻜَﺎﺣُﻬَﺎ ﺑَﺎﻃِﻞٌ، ﻓَﻨِﻜَﺎﺣُﻬَﺎ ﺑَﺎﻃِﻞٌ، ﻓَﻨِﻜَﺎﺣُﻬَﺎ ﺑَﺎﻃِﻞٌ، ﻓَﺈِﻥْ ﺩَﺧَﻞَ ﺑِﻬَﺎ ﻓَﻠَﻬَﺎ ﺍﻟْﻤَﻬْﺮُ ﺑِﻤَﺎ ﺍﺳْﺘَﺤَﻞَّ ﻣِﻦْ ﻓَﺮْﺟِﻬَﺎ، ﻓَﺈِﻥْ ﺍﺷْﺘَﺠَﺮُﻭﺍ ﻓَﺎﻟﺴُّﻠْﻄَﺎﻥُ ﻭَﻟِﻲُ ﻣَﻦْ ﻟَﺎ ﻭَﻟِﻲَّ ﻟَﻪُ )
যে কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়াই বিয়ে করবে তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল, তার বিয়ে বাতিল। (এরূপ বিয়ে ঘটে গেলে আর বাতিল বিয়ের) স্বামী যদি তার সাথে মিলিত হয়ে যায় তাহলে সে তার (নারীর) গুপ্তাঙ্গ থেকে যা ভোগ করেছে এর বিনিময়ে মহিলা মাহ্র পাবে। তারা (অভিভাবকরা) যদি এ ব্যাপারে ঝগড়ায় লিপ্ত হয় তাহলে সুলতানই (শাসকই) তার অভিভাবক গণ্য হবে যার কোন অভিভাবক নেই।'' [হাদীসটি আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্ তে বর্ণিত রয়েছে। 

 (ছয়) 
 এ হাদীসটি আব্দুল্লাহ্ ইবনু আব্বাস (রাঃ), আয়েশা (রাঃ), আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ), ইমরান ইবনু হুসায়েন (রাঃ) ও আনাস (রাঃ)ও বর্ণনা করেছেন।
 ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ ﻗَﺎﻝَ ﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻟَﺎ ﺗُﺰَﻭِّﺝُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓَ ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺰَﻭِّﺝُ ﺍﻟْﻤَﺮْﺃَﺓُ ﻧَﻔْﺴَﻬَﺎ ﻓَﺈِﻥَّ ﺍﻟﺰَّﺍﻧِﻴَﺔَ ﻫِﻲَ ﺍﻟَّﺘِﻲ ﺗُﺰَﻭِّﺝُ ﻧَﻔْﺴَﻬَﺎ . 
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে তিনি বলেন : রসূল (সাঃ) বলেছেন : ''কোন নারী কোন নারীর বিয়ে দিবে না এবং নারী নিজে নিজের বিয়ে দিবে না। কারণ, ব্যভিচারী নারী নিজেই নিজের বিয়ে দেয়।'' [হাদীসটি ইবনু মাজাহ্ (১৮৮২) ও দারাকুতনী বর্ণনা করেছেন। 

(সাত) 
 আবূ মূসা আশ'আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে,
 ﻋَﻦْ ﺃﺑﻲ ﻣﻮﺳﻰ ﺍﻟْﺄَﺷْﻌَﺮِﻱِّ ﺃﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻗﺎﻝ :ﻟَﺎ ﻧِﻜَﺎﺡَ ﺇِﻟَّﺎ ﺑِﻮَﻟِﻲٍّ 
 রসূল (সাঃ) বলেছেন : ''অভিভাবক ছাড়া কোন বিয়েই হবে না''। [হাদীসটি আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ্, আহমাদ (১৯০২৪, ১৯২৪৭) বর্ণনা করেছেন। 

বিপরীতমুখী হাদীসের জবাব কি? 
যেই সব হাদীসের প্রকাশ্য অর্থ দ্বারা বুঝা যায় যে, অভিভাবক ছাড়া বিয়ে হয় না, সেই সব হাদীসের সাথে এ বিষয়ের অন্যান্য হাদীসকে মিলিয়ে সামঞ্জস্যতা সৃষ্টি করে মুহাদ্দিসীনে কেরাম অনেক সুন্দর সমাধান দিয়েছেন। প্রশ্নে উল্লেখিত প্রথম হাদীসটি সম্পর্কে মুহাদ্দিসগণের মন্তব্য ইমাম বুখারী রহঃ বলেন, হাদীসটি মুনকার। {আলইলালুল কাবীর-২৫৭} ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন, হাদীসটি ফাসিদ। {শরহু মাআনিল আসার-৩/৭} 

 জবাব নং ১ 
 সনদ হিসেবে এর চেয়েও শক্তিশালী বিপরীত অর্থবোধক হাদীস পাওয়া যায়। কেননা হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীস সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহঃ বলেন,মুনকার এবং ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন, ফাসিদ । সুতরাং এই হাদীসের চেয়ে শক্তিশালী হাদীসের উপর আমল করাই যুক্তিযুক্ত।কেননা এর বিপরীত বর্ণনাটি ( ১ম হাদীস) সহীহ মুসলিম ও মুয়াত্তা মালিকে সহীহ সনদে এসেছে। 

জবাব নং-২ 
 এ হাদীস দ্বারাই বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে বিবাহ বাতিল হয়ে যাওয়া উদ্দেশ্য নয়। কারণ হাদীসের শেষাংশে বলা হচ্ছে, স্ত্রী মহরের অধিকারী হবে। যদি বিবাহ শুদ্ধই না হতো, তাহলে মোহর আবশ্যক হওয়ার কথা আসছে কেন? মোহরতো বিবাহের মাধ্যমে আবশ্যক হয়। বিবাহ ছাড়া আর্থিক জরিমানার জন্য ব্যবহৃত হয় আরবী عقراশব্দ ব্যবহৃত হয়। অথচ এখানে ব্যবহৃত করা হয়েছে। মোহর শব্দ। যা বিবাহের সাথে খাস। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এখানে আসলেই বিবাহ বাতিল হয়ে যায়, এটি উদ্দেশ্য নয়। বরং ধমকী দেয়া উদ্দেশ্য। যেন অভিভাবকদের না জানিয়ে মেয়েরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়। 

জবাব নং ৩
 أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، زَوَّجَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمنِ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. وَعَبْدُ الرَّحْمنِ غَائِبٌ بِالشَّأْمِ. 
যেমন প্রশ্নে উল্লেখিত অভিভাবক ছাড়া মহিলা কর্তৃক বিয়ে সম্পন্ন না হওয়ার হাদীসটি হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ এর। অথচ খোদ আয়শা রাঃ তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫, সুনানুস সাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৩৭৪, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৩৫২২, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৬৫৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৫} সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত হাদীস দ্বারা খোদ বর্ণনাকারী হযরত আয়শা রাঃ নিজেই বিবাহ শুদ্ধ হয় না একথা বুঝেন নি। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বিয়ে অসম্পূর্ণ হয় অভিভাবক ছাড়া। কারণ, যে অভিভাবক মেয়েকে লালন পালন করল, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটাতো অসম্পূর্ণই। তাই বলা হয়েছে তা বাতিল। বাতিল মানে অসম্পূর্ণ। 
 যেমন আরেক হাদীসে এসেছে-
 عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مَمْلُوكٍ تَزَوَّجَ بِغَيْرِ إِذْنِ سَيِّدِهِ، فَهُوَ عَاهِرٌ» 
অনুবাদ- হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে গোলাম মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে তাহলে সে জিনাকারী। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪২১২, সুনানে দারামী, হাদীস নং-২২৭৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১১১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৭০৫} 

আসলে কি গোলাম জিনাকারী হবে? একথা তো কেউ বলেন না। এখানে যেমন সবাই বলেন যে, এর দ্বারা ধমকী দেয়া উদ্দেশ্য। ঠিক তেমনি যেন কোন মেয়ে তার অভিভাবক ছাড়া বিয়ে না করে, কারণ মেয়ে মানুষ হওয়ার কারণে সে পাত্র নির্ণিত করতে ভুল করতে পারে, তাই সতর্ক করে বলা হয়েছে তার বিবাহ বাতিল হওয়ার সমতূল্য। যেমন গোলামের বিবাহ জিনার সমতূল্য। আসলে যিনা নয়। জবাব নং ৪ আসলে বাতিল বলে হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যদি মেয়ে গায়রে কুফুতে বিয়ে করে, তাহলে তার বিয়ে অভিভাবক এসে বাতিল করে দিতে পারে। সে হিসেবে তার বিয়েকে বাতিল বলা হয়েছে। 
জবাব নং-৫ বাতিল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যদি নাবালেগ বা পাগল মেয়ে বিয়ে করে, তাহলে তার বিবাহ বাতিল। এভাবে আমরা উভয় হাদীসের উপর আমল করতে পারি। বিস্তারিত জানতে পড়ুন- ১- ইলাউস সুনান-১১/৬৫-৭০, মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ। ২- মিরকাতুল মাফাতীহ-৬/২৬৫-২৭৪, মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ। ৩- তুহফাতুল আলমায়ী-৩/৫১৫-৫১৮, মাকতাবা হেযাজ দেওবন্দ। ( বিপরীত মুখী হাদীসের জবাব সংগ্রহ কৃত)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
হুজুর আমি বন্ধু পালিয়ে বিয়ে করে অভিভাবকের অনুপস্থিতিতে।  তাদের পরিবার এখনো বিয়ে সম্পর্কে জানেনা। আমার বন্ধু ছোট থেকে আহলে হাদিস। কিন্তু বিয়ের দিন সে যেহেতু হানাফীরা লুকিয়ে বিয়ে করতে পারে সে মত গ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের পর ও সে আহলে হাদিস ই মানে। আর তার বউ এর মাজহাব সম্পর্কে জ্ঞান ছিলোনা কিন্তু তাদের পরিবার হানাফী।  হুজুর আমার বন্ধু তার স্ত্রী কে তিন তালাক দেয়। আলাদা আলাদা ভাবেই। হুজুর আমরা একটা হাদিস জেনেছি অভিভাবক ছাড়া বিয়ে বাতিল। হুজুর এই মত গ্রহণ করে তারা তাদের বিয়ে বাতিল ধরে আবার অভিভাবকের উপস্থিতিতে বিয়ে করতে পারবে কি? দয়া করে জানাবেন হুজুর।
তারা একসাথে থাকতে চায় হুজুর। আগে ভুল হয়েছে। এখন বিয়ে বাতিল ধরে যদি আবার বিয়ে করে তবে হবে?
by
একই প্রশ্ন আমারও,এটার উত্তর কি দেওয়া হয়েছে?
by
আসসালামু আলাইকুম হুজুর,একটু বিস্তারিত উত্তর দিয়ে সাহায্য করুন।

আমার এক বোন বাবা মা কে না জানিয়ে বিয়ে করেছিল,তাদের মাঝে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কও ছিলো,এখনও বাবা মা জানেনা,এরই মাঝে তাদের মাঝে মনোমালিন্য হয়ে স্বামী প্রথমবার একসাথে তিন তালাক বলেছিল[1],
তারপর অনেক মাস পর একসময় একবার তালাক বলেছিল[2], এরপর আরও কয়েক মাস পর একই পবিত্রকালে আলাদা আলাদভাবে দুইবার তালাক বলেছিল[3],আর সম্প্রতি আরও একবার বলেছে[4],তারা এসকল ব্যাপারে খুব বেশী অবগত ছিলোনা,এখন দুইজনই খুব চিন্তিত,হুজুর দয়া করে একটু বলবেন ওদের এখন করণীয় কি?তাদের বিয়ে কি হয়েছিল?আর বিয়ে হয়ে থাকলে কি তালাকও হয়ে গেছে?তারা আর একসাথে থাকতে পারবেনা?
(এর মাঝে আবার তালাক দেওয়ার দুইবার বোনটি হায়েয অবস্থায় ছিলো বলে তার ধারণা, সঠিকভাবে মনে করতে পারছেনা)
by (0 points)
বিয়ে হয়ছিল এবং এর পরে তালাক দেওয়া দরুন তালাকও হয়ে গেছে। এখন তারা আর একসাথে থাকতে পারবেনা। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...