ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
কাউকে গালি দেওয়া, কটুবাক্য বলা, কিংবা হেয় প্রতিপন্ন করে কোন উক্তি করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য গর্হিত, কুরুচিপূর্ণ ও নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কুরআনে একে স্পষ্ট গুনাহ, জঘন্য কাজ ও যুলুম নামে অবিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:
وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا–
‘যারা মুমিন নারী ও পূরুষদের এমন কথা বলে কষ্ট দেয় যা সে করেনি, সে তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিল এবং স্পষ্ট গুনাহে লিপ্ত হল’ (সুরা আহযাব, আয়াত ৫৮)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:
وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُون-
‘তোমরা পরষ্পর কটুবাক্য প্রয়োগ করো না। একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর এ গুনাহসমূহ কতই না জঘন্য! যারা এ সকল পাপ থেকে তাওবা করে না, তারা যালিম’ (সুরা আল-হুজরাত, আয়াত ১১)। যারা গলিগালাজ করে ও মানুষকে কষ্ট দেয়, পবিত্র কুরআনে তাদেরকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে: وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ– ‘অভিশাপ তাদের প্রতি, যারা কটুবাক্য প্রয়োগ করে ও পরনিন্দা করে’ (সুরা হুমাযা, আয়াত ১)।
হাদিস শরীফে গালিগালাজ করাকে কখনো ‘ফিস্ক’, কখনো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য আবার কখনো কবিরা গুনাহ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন:
سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْر- ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকী বা গুনাহের কাজ। আর মুসলমানদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করা কুফুরী কাজ’ (সহিহ আল-বুখারী, হাদিস নং )। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন:
أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَر-
‘যার মধ্যে এ চারটি গুন আছে, সে পরিপূর্ণ মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর একটি গুন আছে, উহা পরিহার করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি গুন বিদ্যমান থাকে। (ক) যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, খেয়ানত করে। (খ) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে। (গ) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে। (ঘ) যখন বিবাদে লিপ্ত হয়, গাল-মন্দ করে’ (সহিহ আল-বুখারী, হাদিস নং ৩৪)। গাল-মন্দ করা এতটাই জঘন্য যে এর উপলক্ষ্য হওয়াটাও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন:
إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّه-
‘সব চেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হল পিতামাতাকে অভিশাপ দেওয়া। প্রশ্ন করা হল: হে আল্লাহর রাসুল, কিভাবে মানুষ পিতামাতাকে অভিশাপ দেয়?! উত্তরে তিনি বললেন: সে অন্যের পিতামাতাকে গালি দেয়। তখন অন্যরাও তার পিতামাতাকে গালি দেয় (সহিহ আল-বুখারী, হাদিস নং ৫৫১৬)। রাসুল (সা.) আরো বলেছেন:
الْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَهَاتَرَانِ وَيَتَكَاذَبَان-
‘পরষ্পর গাল-মন্দকারী ব্যক্তিদয় দুটি শয়তান। তারা পরষ্পরের নিন্দা করে এবং মিথ্যা কথা বলে’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ১৬৮৩৬)।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা প্রমানিত যে, গাল-মন্দ করা একটি জঘন্য খারাপ কাজ। এটি ব্যক্তির নীচুতা ও কুরুচির পরিচায়ক এবং মুমিনের চরিত্রের পরিপন্থী। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الْفَاحِشِ وَلاَ الْبَذِىء- ‘মুমিন ব্যক্তি কারো সন্মানে আঘাত করে না। কাউকে অভিশাপ দেয় না। অশ্লীল কাজ করে না। মন্দ কথা বলে না’ (সুনান আল-তিরমিজি, হাদিস নং ২১০৫)। তিনি আরো বলেছেন:
لاَ تَسُبَّنَّ أَحَداً وَلاَ تَزْهَدَنَّ فِى الْمَعْرُوفِ وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ وَأَنْتَ مُنْبَسِطٌ إِلَيْهِ وَجْهُك-
‘কাউকে গালি দিবে না এবং ভাল কাজে কার্পণ্য করবে না- যদিও তা কারো সাথে হাসিমূখে সাক্ষাতের বিষয় হয়’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ২১১৭৮)। কারো গালির প্রতিত্তোরে গালি দিতেও রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন:
وَإِنْ امْرُؤٌ شَتَمَكَ وَعَيَّرَكَ بِأَمْرٍ يَعْلَمُهُ فِيكَ فَلَا تُعَيِّرْهُ بِأَمْرٍ تَعْلَمُهُ فِيهِ فَيَكُونَ لَكَ أَجْرُهُ وَعَلَيْهِ إِثْمُهُ وَلَا تَشْتُمَنَّ أَحَدًا-
‘যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় এবং এমন দোষে অপমানিত করে যা তোমার মধ্যে আছে, তাহলে তাকে তুমি তাকে এমন দোষে অপমানিত করো না যা তার মধ্যে আছে। তাহলে তার সাওয়াব তুমি পাবে এবং তার গুনাহ তারই থাকবে। কখনো কাউকে গালি দিবে না’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ২০৬৩২)।
আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর প্রতি ঈমান পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসুলকে (সা.) গালি দেওয়া, কিংবা তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে কোন উক্তি করা সাধারণ মানুষকে গালি দেওয়ার চেয়ে আরো জঘন্য কাজ। এটি সরাসরি কুফুরী এবং রিদ্দাহ বা ধর্মত্যাগ হিসাবে পরিগণিত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:
وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ، لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُم-
‘যদি আপনি তাদেরকে (উপহাসের বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবে: আমরা তো কথার পিঠে কথা বলছিলাম এবং হাসি-তামাশা করতেছিলাম। আপনি তাদেরকে বলুন: আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও রাসুলকে নিয়ে হাসি-তামাশা করছিলে?! আর কোন ওযর-আপত্তি করো না। ঈমান গ্রহণের পর তোমরা কাফির হয়ে গেছ’ (সুরা তাওবা, আয়াত ৬৫-৬৬)। যারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে গালি দেয়, তারা মূলত তাদেরকে কষ্ট দেয়। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا-
‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া আখেরাতে অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য লাঞ্ছনাকর আযাব তৈরি করে রেখেছেন’ (সুরা আহযাব, আয়াত ৫৭)। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালি দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের গালির উপলক্ষ্য ও কারণ হতেও পবিত্র কুরআনে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:
وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْم-
‘যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদত করে, তোমরা তাদেরকে গালি দিও না। নতুবা তারা অজ্ঞতাবশতঃ শত্রুতা করে আল্লাহকে গালি দিবে’ (সুরা আনআম, আয়াত ১০৮)।
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
শয়তান বা দাজ্জালকে গালি দেওয়া যাবে । তবে না দেওয়ােই উত্তম। তবে কোনো মুনাফিক বা কাফিরকে গালি দেওয়া যাবে না।