আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
602 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (25 points)
আসসালামুয়ালায়কুম
১। দাজ্জাল এবং শয়তান কে সমাজে যে বাজে গালি প্রচলিত আছে সে ভাষায় গালি দিলে কি গোনাহ হবে ?

২। কোন মুনাফিক, ফাসেক , আল্লাহ্‌  ও রাসুলের বিধান নিয়ে মজা করে তাকে বাজে ভাষায় গালি এবং অভিশাপ দিলে কি গোনাহ হবে?
ধন্যবাদ।

1 Answer

0 votes
by (598,650 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

জবাবঃ-

কাউকে গালি দেওয়া, কটুবাক্য বলা, কিংবা হেয় প্রতিপন্ন করে কোন উক্তি করা ইসলামের দৃষ্টিতে একটি জঘন্য গর্হিত, কুরুচিপূর্ণ ও নিন্দনীয় কাজ। পবিত্র কুরআনে একে স্পষ্ট গুনাহ, জঘন্য কাজ ও যুলুম নামে অবিহিত করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:

 وَالَّذِينَ يُؤْذُونَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِ بِغَيْرِ مَا اكْتَسَبُوا فَقَدِ احْتَمَلُوا بُهْتَانًا وَإِثْمًا مُبِينًا

‘যারা মুমিন নারী ও পূরুষদের এমন কথা বলে কষ্ট দেয় যা সে করেনি, সে তার প্রতি মিথ্যা অপবাদ দিল এবং স্পষ্ট গুনাহে লিপ্ত হল’ (সুরা আহযাব, আয়াত ৫৮)। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে:

وَلَا تَلْمِزُوا أَنْفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ وَمَنْ لَمْ يَتُبْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُون-

 ‘তোমরা পরষ্পর কটুবাক্য প্রয়োগ করো না। একে অপরকে মন্দ উপাধিতে ডেকো না। ঈমান গ্রহণের পর এ গুনাহসমূহ কতই না জঘন্য! যারা এ সকল পাপ থেকে তাওবা করে না, তারা যালিম’ (সুরা আল-হুজরাত, আয়াত ১১) যারা গলিগালাজ করে ও মানুষকে কষ্ট দেয়, পবিত্র কুরআনে তাদেরকে অভিশাপ দেওয়া হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে: وَيْلٌ لِكُلِّ هُمَزَةٍ لُمَزَةٍ– ‘অভিশাপ তাদের প্রতি, যারা কটুবাক্য প্রয়োগ করে ও পরনিন্দা করে’ (সুরা হুমাযা, আয়াত ১)

হাদিস শরীফে গালিগালাজ করাকে কখনো ‘ফিস্ক’, কখনো মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য আবার কখনো কবিরা গুনাহ হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন:

 سِبَابُ الْمُسْلِمِ فُسُوقٌ وَقِتَالُهُ كُفْر- ‘মুসলমানকে গালি দেওয়া ফাসেকী বা গুনাহের কাজ। আর মুসলমানদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করা কুফুরী কাজ’ (সহিহ আল-বুখারী, হাদিস নং )। অন্য হাদিসে রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন:

 أَرْبَعٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ كَانَ مُنَافِقًا خَالِصًا وَمَنْ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْهُنَّ كَانَتْ فِيهِ خَصْلَةٌ مِنْ النِّفَاقِ حَتَّى يَدَعَهَا إِذَا اؤْتُمِنَ خَانَ وَإِذَا حَدَّثَ كَذَبَ وَإِذَا عَاهَدَ غَدَرَ وَإِذَا خَاصَمَ فَجَر-

‘যার মধ্যে এ চারটি গুন আছে, সে পরিপূর্ণ মুনাফিক। আর যার মধ্যে এর একটি গুন আছে, উহা পরিহার করা পর্যন্ত তার মধ্যে মুনাফিকের একটি গুন বিদ্যমান থাকে। (ক) যখন তার কাছে আমানত রাখা হয়, খেয়ানত করে। (খ) যখন কথা বলে, মিথ্যা বলে। (গ) যখন ওয়াদা করে, ভঙ্গ করে। (ঘ) যখন বিবাদে লিপ্ত হয়, গাল-মন্দ করে’ (সহিহ আল-বুখারী, হাদিস নং ৩৪) গাল-মন্দ করা এতটাই জঘন্য যে এর উপলক্ষ্য হওয়াটাও কবিরা গুনাহের অন্তর্ভূক্ত। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন:

إِنَّ مِنْ أَكْبَرِ الْكَبَائِرِ أَنْ يَلْعَنَ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ وَكَيْفَ يَلْعَنُ الرَّجُلُ وَالِدَيْهِ قَالَ يَسُبُّ الرَّجُلُ أَبَا الرَّجُلِ فَيَسُبُّ أَبَاهُ وَيَسُبُّ أُمَّه-

‘সব চেয়ে বড় কবিরা গুনাহ হল পিতামাতাকে অভিশাপ দেওয়া। প্রশ্ন করা হল: হে আল্লাহর রাসুল, কিভাবে মানুষ পিতামাতাকে অভিশাপ দেয়?! উত্তরে তিনি বললেন: সে অন্যের পিতামাতাকে গালি দেয়। তখন অন্যরাও তার পিতামাতাকে গালি দেয় (সহিহ আল-বুখারী, হাদিস নং ৫৫১৬) রাসুল (সা.) আরো বলেছেন:

 الْمُسْتَبَّانِ شَيْطَانَانِ يَتَهَاتَرَانِ وَيَتَكَاذَبَان-

‘পরষ্পর গাল-মন্দকারী ব্যক্তিদয় দুটি শয়তান। তারা পরষ্পরের নিন্দা করে এবং মিথ্যা কথা বলে’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ১৬৮৩৬)

উপরোক্ত আলোচনা থেকে এটা প্রমানিত যে, গাল-মন্দ করা একটি জঘন্য খারাপ কাজ। এটি ব্যক্তির নীচুতা ও কুরুচির পরিচায়ক এবং মুমিনের চরিত্রের পরিপন্থী। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন: لَيْسَ الْمُؤْمِنُ بِالطَّعَّانِ وَلاَ اللَّعَّانِ وَلاَ الْفَاحِشِ وَلاَ الْبَذِىء- ‘মুমিন ব্যক্তি কারো সন্মানে আঘাত করে না। কাউকে অভিশাপ দেয় না। অশ্লীল কাজ করে না। মন্দ কথা বলে না’ (সুনান আল-তিরমিজি, হাদিস নং ২১০৫) তিনি আরো বলেছেন:

لاَ تَسُبَّنَّ أَحَداً وَلاَ تَزْهَدَنَّ فِى الْمَعْرُوفِ وَلَوْ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ وَأَنْتَ مُنْبَسِطٌ إِلَيْهِ وَجْهُك-

‘কাউকে গালি দিবে না এবং ভাল কাজে কার্পণ্য করবে না- যদিও তা কারো সাথে হাসিমূখে সাক্ষাতের বিষয় হয়’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ২১১৭৮) কারো গালির প্রতিত্তোরে গালি দিতেও রাসূল (সা.) নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন:

وَإِنْ امْرُؤٌ شَتَمَكَ وَعَيَّرَكَ بِأَمْرٍ يَعْلَمُهُ فِيكَ فَلَا تُعَيِّرْهُ بِأَمْرٍ تَعْلَمُهُ فِيهِ فَيَكُونَ لَكَ أَجْرُهُ وَعَلَيْهِ إِثْمُهُ وَلَا تَشْتُمَنَّ أَحَدًا-

‘যদি তোমাকে কেউ গালি দেয় এবং এমন দোষে অপমানিত করে যা তোমার মধ্যে আছে, তাহলে তাকে তুমি তাকে এমন দোষে অপমানিত করো না যা তার মধ্যে আছে। তাহলে তার সাওয়াব তুমি পাবে এবং তার গুনাহ তারই থাকবে। কখনো কাউকে গালি দিবে না’ (মুসনাদু আহমদ, হাদিস নং ২০৬৩২)

আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) এর প্রতি ঈমান পরম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার উপর প্রতিষ্ঠিত। তাই আল্লাহ কিংবা তাঁর রাসুলকে (সা.) গালি দেওয়া, কিংবা তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করে কোন উক্তি করা সাধারণ মানুষকে গালি দেওয়ার চেয়ে আরো জঘন্য কাজ। এটি সরাসরি কুফুরী এবং রিদ্দাহ বা ধর্মত্যাগ হিসাবে পরিগণিত। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে:

 وَلَئِنْ سَأَلْتَهُمْ لَيَقُولُنَّ إِنَّمَا كُنَّا نَخُوضُ وَنَلْعَبُ قُلْ أَبِاللَّهِ وَآيَاتِهِ وَرَسُولِهِ كُنْتُمْ تَسْتَهْزِئُونَ، لَا تَعْتَذِرُوا قَدْ كَفَرْتُمْ بَعْدَ إِيمَانِكُم-

‘যদি আপনি তাদেরকে (উপহাসের বিষয়ে) জিজ্ঞাসা করেন, তারা বলবে: আমরা তো কথার পিঠে কথা বলছিলাম এবং হাসি-তামাশা করতেছিলাম। আপনি তাদেরকে বলুন: আল্লাহ, তাঁর আয়াত ও রাসুলকে নিয়ে হাসি-তামাশা করছিলে?! আর কোন ওযর-আপত্তি করো না। ঈমান গ্রহণের পর তোমরা কাফির হয়ে গেছ’ (সুরা তাওবা, আয়াত ৬৫-৬৬)। যারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে গালি দেয়, তারা মূলত তাদেরকে কষ্ট দেয়। এদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন:

 إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا-

‘যারা আল্লাহ ও তার রাসুলকে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাদেরকে দুনিয়া আখেরাতে অভিশপ্ত করেছেন এবং তাদের জন্য লাঞ্ছনাকর আযাব তৈরি করে রেখেছেন’ (সুরা আহযাব, আয়াত ৫৭)। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে গালি দেওয়া তো দূরের কথা, তাদের গালির উপলক্ষ্য ও কারণ হতেও পবিত্র কুরআনে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হচ্ছে:

وَلَا تَسُبُّوا الَّذِينَ يَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ فَيَسُبُّوا اللَّهَ عَدْوًا بِغَيْرِ عِلْم-

‘যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর ইবাদত করে, তোমরা তাদেরকে গালি দিও না। নতুবা তারা অজ্ঞতাবশতঃ শত্রুতা করে আল্লাহকে গালি দিবে’ (সুরা আনআম, আয়াত ১০৮)।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

শয়তান বা দাজ্জালকে গালি দেওয়া যাবে । তবে না দেওয়ােই উত্তম। তবে কোনো মুনাফিক বা কাফিরকে গালি দেওয়া যাবে না। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
শয়তানের মা বাপ তুলে গালি দিলে গুনাহ হবে

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...