আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
557 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (20 points)

আসসালামু 'আলাইকুম,

"সুনানে আবু দাউদ

১২বিবাহ

অনুচ্ছেদ-২০ ওয়ালী সম্পর্কে -২০৮৩

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا سُفْيَانُ، أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ مُوسَى، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عُرْوَةَ، عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ أَيُّمَا امْرَأَةٍ نَكَحَتْ بِغَيْرِ إِذْنِ مَوَالِيهَا فَنِكَاحُهَا بَاطِلٌ ‏"‏ ‏.‏ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ ‏"‏ فَإِنْ دَخَلَ بِهَا فَالْمَهْرُ لَهَا بِمَا أَصَابَ مِنْهَا فَإِنْ تَشَاجَرُوا فَالسُّلْطَانُ وَلِيُّ مَنْ لاَ وَلِيَّ لَهُ ‏"‏ ‏.‏

‘আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ কোন নারী তার অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করলে তার সে বিয়ে বাতিল। তিনি একথাটি তিনবার বলেছেন। আর সে যদি তার সাথে সহবাস করে, তাহলে এজন্য তাকে মোহর দিবে। যদি উভয় পক্ষের (অভিভাবকদের) মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়, তাহলে শাসক হবেন তার অভিভাবক। কারণ যাদের অভিভাবক নাই তার অভিভাবক শাসক।"

 

এই হাদিসের প্রথম অংশে বলা হয়েছে ওয়ালী ছাড়া বিয়ে বাতিল হয়ে যাবে।আবার পরের অংশে বলা হয়েছে,তারা মিলিত হলে মোহর দিতে হবে মেয়েকে।আমার প্রশ্ন হচ্ছে,মোহর দিয়ে দিলে কি তাদের বিচ্ছেদ বা তালাক হয়ে যাবে নাকি বিয়ে বহাল থাকবে?আর যদি তাদের মধ্যে সহবাস না হয় কিন্তু মোহর পরিশোধিত থাকে তাহলে কি এই হাদিস অনুযায়ী বিয়েটি বাতিল হয়ে যাবে? 

1 Answer

+1 vote
by (589,140 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। 
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-

https://www.ifatwa.info/1525 নং ফাতাওয়ায় আমরা উক্ত হাদিস নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে আমরা বলেছিলাম, 
ইমাম বুখারী রহঃ বলেন, হাদীসটি মুনকার। {আলইলালুল কাবীর-২৫৭}
ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন, হাদীসটি ফাসিদ। {শরহু মাআনিল আসার-৩/৭}

এই হাদীস বাহ্যিক দৃষ্টিতে হানাফি ফিকহের বিরোধী মনে হতে পারে, তবে এই হাদীসের জবাব হল, 
জবাব নং ১
সনদ হিসেবে এর চেয়েও শক্তিশালী বিপরীত অর্থবোধক হাদীস পাওয়া যায়। কেননা হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ থেকে বর্ণিত উক্ত হাদীস সম্পর্কে ইমাম বুখারী রহঃ বলেন,মুনকার এবং ইমাম তাহাবী রহঃ বলেন, ফাসিদ ।
সুতরাং এই হাদীসের চেয়ে শক্তিশালী হাদীসের উপর আমল করাই যুক্তিযুক্ত।কেননা এর বিপরীত  বর্ণনাটি ( ১ম হাদীস) সহীহ মুসলিম ও মুয়াত্তা মালিকে সহীহ সনদে এসেছে।

জবাব নং-২

এ হাদীস দ্বারাই বুঝা যাচ্ছে যে, এখানে বিবাহ বাতিল হয়ে যাওয়া উদ্দেশ্য নয়। কারণ হাদীসের শেষাংশে বলা হচ্ছে, স্ত্রী মহরের অধিকারী হবে। যদি বিবাহ শুদ্ধই না হতো, তাহলে মোহর আবশ্যক হওয়ার কথা আসছে কেন? মোহরতো বিবাহের মাধ্যমে আবশ্যক হয়। বিবাহ ছাড়া আর্থিক জরিমানার জন্য ব্যবহৃত হয় আরবী عقراশব্দ ব্যবহৃত হয়। অথচ এখানে ব্যবহৃত করা হয়েছে। মোহর শব্দ। যা বিবাহের সাথে খাস। সুতরাং বুঝা যাচ্ছে এখানে আসলেই বিবাহ বাতিল হয়ে যায়, এটি উদ্দেশ্য নয়। বরং ধমকী দেয়া উদ্দেশ্য। যেন অভিভাবকদের না জানিয়ে মেয়েরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ না হয়।

জবাব নং ৩

أَنَّ عَائِشَةَ، زَوْجَ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم، زَوَّجَتْ حَفْصَةَ بِنْتَ عَبْدِ الرَّحْمنِ، الْمُنْذِرَ بْنَ الزُّبَيْرِ. وَعَبْدُ الرَّحْمنِ غَائِبٌ بِالشَّأْمِ.

যেমন প্রশ্নে উল্লেখিত অভিভাবক ছাড়া মহিলা কর্তৃক বিয়ে সম্পন্ন না হওয়ার হাদীসটি হযরত আয়শা সিদ্দিকা রাঃ এর। অথচ খোদ আয়শা রাঃ তার ভাই আব্দুর রহমানের মেয়ে হাফসাকে তার অভিভাবক আব্দুর রহমানকে ছাড়াই নিজে বিয়ে দিয়েছিলেন মুনজির বিন যুবায়েরের সাথে। {মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-২০৪০, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-৪২৫৫, সুনানুস সাগীর লিলবায়হাকী, হাদীস নং-২৩৭৪, মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-১৩৫২২, সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৩৬৫৩, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৫৯৫৫}

সুতরাং বুঝা গেল যে, উক্ত হাদীস দ্বারা খোদ বর্ণনাকারী হযরত আয়শা রাঃ নিজেই বিবাহ শুদ্ধ হয় না একথা বুঝেন নি। বরং এর দ্বারা উদ্দেশ্য হল, বিয়ে অসম্পূর্ণ হয় অভিভাবক ছাড়া।

কারণ, যে অভিভাবক মেয়েকে লালন পালন করল, তাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটাতো অসম্পূর্ণই। তাই বলা হয়েছে তা বাতিল। বাতিল মানে অসম্পূর্ণ।

যেমন আরেক হাদীসে এসেছে-

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَيُّمَا مَمْلُوكٍ تَزَوَّجَ بِغَيْرِ إِذْنِ سَيِّدِهِ، فَهُوَ عَاهِرٌ»

অনুবাদ- হযরত জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, যে গোলাম মনীবের অনুমতি ছাড়া বিয়ে করে তাহলে সে জিনাকারী। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-২০৭৮, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-১৪২১২, সুনানে দারামী, হাদীস নং-২২৭৯, সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১১১১, তাহাবী শরীফ, হাদীস নং-২৭০৫}

আসলে কি গোলাম জিনাকারী হবে? একথাতো কেউ বলেন না। এখানে যেমন সবাই বলেন যে, এর দ্বারা ধমকী দেয়া উদ্দেশ্য। ঠিক তেমনি যেন কোন মেয়ে তার অভিভাবক ছাড়া বিয়ে না করে, কারণ মেয়ে মানুষ হওয়ার কারণে সে পাত্র নির্ণিত করতে ভুল করতে পারে, তাই সতর্ক করে বলা হয়েছে তার বিবাহ বাতিল হওয়ার সমতূল্য। যেমন গোলামের বিবাহ জিনার সমতূল্য। আসলে যিনা নয়।

জবাব নং ৪

আসলে বাতিল বলে হাদীস দ্বারা উদ্দেশ্য নেয়া হয়েছে, যদি মেয়ে গায়রে কুফুতে বিয়ে করে, তাহলে তার বিয়ে অভিভাবক এসে বাতিল করে দিতে পারে। সে হিসেবে তার বিয়েকে বাতিল বলা হয়েছে।

জবাব নং-৫

বাতিল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, যদি নাবালেগ বা পাগল মেয়ে বিয়ে করে, তাহলে তার বিবাহ বাতিল।

এভাবে আমরা উভয় হাদীসের উপর আমল করতে পারি।

বিস্তারিত জানতে পড়ুন-

১- ইলাউস সুনান-১১/৬৫-৭০, মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ।

২- মিরকাতুল মাফাতীহ-৬/২৬৫-২৭৪, মাকাতাবা আশরাফিয়া দেওবন্দ।

৩- তুহফাতুল আলমায়ী-৩/৫১৫-৫১৮, মাকতাবা হেযাজ দেওবন্দ।


সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!
অভিভাবক ব্যতীত প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষ বিয়ে করতে পারবে। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী ইমদাদুল হক
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (20 points)
আল্লাহ উত্তম বিনিময় দান করুক। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...