শরীয়তের বিধান অনুযায়ী পুরুষের জন্য সালাতে দাঁড়ানোর সময় দুই পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁকা রাখা জরুরী নয়।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى، قَالاَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الْقَطَّانُ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جَعْفَرٍ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِي حُمَيْدٍ السَّاعِدِيِّ، قَالَ سَمِعْتُهُ وَهُوَ، فِي عَشَرَةٍ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَحَدُهُمْ أَبُو قَتَادَةَ بْنُ رِبْعِيٍّ يَقُولُ أَنَا أَعْلَمُكُمْ بِصَلاَةِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم . قَالُوا مَا كُنْتَ أَقْدَمَنَا لَهُ صُحْبَةً وَلاَ أَكْثَرَنَا لَهُ إِتْيَانًا قَالَ بَلَى . قَالُوا فَاعْرِضْ . فَقَالَ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا قَامَ إِلَى الصَّلاَةِ اعْتَدَلَ قَائِمًا وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَرْكَعَ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ ثُمَّ قَالَ " اللَّهُ أَكْبَرُ " . وَرَكَعَ ثُمَّ اعْتَدَلَ فَلَمْ يُصَوِّبْ رَأْسَهُ وَلَمْ يُقْنِعْ وَوَضَعَ يَدَيْهِ عَلَى رُكْبَتَيْهِ ثُمَّ قَالَ " سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ " . وَرَفَعَ يَدَيْهِ وَاعْتَدَلَ حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ فِي مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلاً ثُمَّ أَهْوَى إِلَى الأَرْضِ سَاجِدًا ثُمَّ قَالَ " اللَّهُ أَكْبَرُ " . ثُمَّ جَافَى عَضُدَيْهِ عَنْ إِبْطَيْهِ وَفَتَخَ أَصَابِعَ رِجْلَيْهِ ثُمَّ ثَنَى رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ عَلَيْهَا ثُمَّ اعْتَدَلَ حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ فِي مَوْضِعِهِ مُعْتَدِلاً ثُمَّ أَهْوَى سَاجِدًا ثُمَّ قَالَ " اللَّهُ أَكْبَرُ " . ثُمَّ ثَنَى رِجْلَهُ وَقَعَدَ وَاعْتَدَلَ حَتَّى يَرْجِعَ كُلُّ عَظْمٍ فِي مَوْضِعِهِ ثُمَّ نَهَضَ ثُمَّ صَنَعَ فِي الرَّكْعَةِ الثَّانِيَةِ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّى إِذَا قَامَ مِنَ السَّجْدَتَيْنِ كَبَّرَ وَرَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى يُحَاذِيَ بِهِمَا مَنْكِبَيْهِ كَمَا صَنَعَ حِينَ افْتَتَحَ الصَّلاَةَ ثُمَّ صَنَعَ كَذَلِكَ حَتَّى كَانَتِ الرَّكْعَةُ الَّتِي تَنْقَضِي فِيهَا صَلاَتُهُ أَخَّرَ رِجْلَهُ الْيُسْرَى وَقَعَدَ عَلَى شِقِّهِ مُتَوَرِّكًا ثُمَّ سَلَّمَ
মুহাম্মাদ ইবনু বাশশার এবং মুহাম্মাদ ইবনুল মূসান্না (রহঃ) ..... মুহাম্মাদ ইবনু আমর ইবনু আতা (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ আবূ কাতাদা ইবনু রিবঈও ছিলেন যাঁদের মধ্যে উপস্থিত, সেই ধরনের দশজন সাহাবীর এক সমাবেশে আমি আবূ হুমায়দ আস-সায়িদীকে বলতে শুনেছিঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সালাত সম্পর্কে তোমাদের মধ্যে আমি অধিক অবহিত। উপস্থিত সাহাবীরা বললেনঃ আপনি তো আমাদের তুলনায় প্রবীণ নন এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকটে আমাদের চেয়ে বেশি আসা-যাওয়া করেননি। আবূ হুমায়দ (রহঃ) বললেনঃ হ্যাঁ, আমি অধিক পরিজ্ঞত। সাহাবীরা বললেনঃ আচ্ছা, এই কথা উপেক্ষা করুন।
আবূ হুমায়দ রাদিয়াল্লাহু আনহু বললেনঃ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন এবং কাঁধ বরাবর দুই হাত তুলতেন। পরে যখন রুকূতে যেতে চাইতেন তখন কাঁধ বরাবর তাঁর দুই হাত তুলতেন এবং ‘‘আল্লাহু আকবার’’ বলে রুকূ করতেন। পিঠ স্থির ও সোজা করে রাখতেন, মাথা নিচে ঝুঁকিয়ে রাখতেন না এবং উপরে তুলেও রাখতেন না। রুকূতে দুই হাত রাখতেন দুই হাঁটুর উপর।
পরে ‘‘সামিআল্লাহু লিমান হামিদা’’ বলে দুই হাত তুলতেন এবং এমনভাবে স্থির হয়ে দাঁড়াতেন যে, প্রতিটি অঙ্গ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসত। এরপর সিজদার উদ্দেশ্যে ভূমিতে অবনত হতেন এবং বলতেন, ‘‘আল্লাহু আকবার’’। তাঁর দুই বাহু বগল থেকে সরিয়ে রাখতেন। পায়ের আঙ্গুলি (সামনের দিকে) ভাঁজ করে রাখতেন। পরে বাম পা ঘুরিয়ে তার উপর এমনভাবে স্থির হয়ে বসতেন যে, প্রতিটি অঙ্গ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসত। পরে আবার সিজদার জন্য ঝুঁকতেন এবং ‘‘আল্লাহু আকবার’’ বলতেন। এরপর পা ঘুরিয়ে তার উপর এমনভাবে স্থির হয়ে বসতেন যে, প্রতিটি অঙ্গ স্ব স্ব স্থানে ফিরে আসত। এরপর উঠে দাঁড়াতেন।
পরে দ্বিতীয় রাকআতেও অনুরূপ আমল করতেন। দুই রাকআত শেষ করে যখন দাঁড়াতেন তখনও কাঁধ বরাবর দুই হাত তুলতেন সালাতের শুরুতে যেমন কাঁধ বরাবর দুই হাত তুলতেন। সব রাকআতে এভাবেই আমল করতেন। পরে যে রাকআতে সালাত শেষ হতো তাতে বাম পাটি বের করে নিতম্বের উপর বসতেন। এরপর সালাম ফিরাতেন। - ইবনু মাজাহ ১০৬১, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ৩০৪ [আল মাদানী প্রকাশনী]
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
উল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে যে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন সালাতের উদ্দেশ্যে দাঁড়াতেন তখন সোজা হয়ে দাঁড়াতেন,
এখানে শুধু সোজা হওয়ার কথা এসেছে,পা মিলেয়ে দাড়ানো বা ফাকা হয়ে দাড়ানোর কথা স্পষ্ট নেই।
অন্য হাদীসে এসেছেঃ
أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ عَلِيٍّ، قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ سُفْيَانَ بْنِ سَعِيدٍ الثَّوْرِيِّ، عَنْ مَيْسَرَةَ، عَنِ الْمِنْهَالِ بْنِ عَمْرٍو، عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ، أَنَّ عَبْدَ اللَّهِ، رَأَى رَجُلاً يُصَلِّي قَدْ صَفَّ بَيْنَ قَدَمَيْهِ فَقَالَ خَالَفَ السُّنَّةَ وَلَوْ رَاوَحَ بَيْنَهُمَا كَانَ أَفْضَلَ .
আমর ইবনু আলী (রহঃ) ... আবূ উবায়দা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রাঃ) এক ব্যক্তিকে উভয় পা মিলিয়ে দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতে দেখলেন। তিনি বললেন, এ ব্যক্তি সুন্নতের বিরোধিতা করল। যদি এ ব্যক্তি পদদূয়ের মাঝখানে ব্যবধান বা ফাঁক রেখে দাঁড়াতো তাহলে তা উত্তম হতো।
(নাসায়ী শরীফ ৮৯৫.৮৯৬)
,
এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে যে দুই পায়ের মাঝে ফাকা হয়ে দাড়ানো সুন্নাত।
এখন কতটুকু ফাকা রাখতে হবে সেই সংক্রান্ত ফুকাহায়ে আহনাফ গন বলেনঃ
কোন প্রকারের ওজর বা অসুবিধা না হলে নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় দু’পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা মুস্তাহাব এবং দু-পাকে সোজা রেখে পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কিবলামুখী রাখা সুন্নাত।
ওজর বা অসুবিধা হলে ভিন্ন বিষয়। তখন সুযোগমত নামাযে দাঁড়াবে।
বিখ্যাত ফতোয়া গ্রন্থ ‘রাদ্দুল মুহতার’’-এ উল্লেখ রয়েছে-
وسبغنى أنْ بكونَ بينهما مقدارُ أربعِ اصابع اليد لِانّهُ اَقْرَبُ اِلَى الخشوع هكذا روى عن اِبِى نَصْرِ الدبوسئ أنّه كانَ يَفْعَلَهُ- ( ص- ৩৭৪- ج- ৩)
অর্থাৎ নামাযে দাঁড়ানো অবস্থায় দুই পায়ের মাঝখানে হাতের চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা উচিত। কেননা নামাযের মধ্যে খুশু বা একাগ্রতার জন্য এটি অতি নিকটবর্তী। হযরত আবু নসর দাবুসী রাহিমাতুল্লাহি আলায়হি থেকেও এমন বর্ণনা পাওয়া যায়- তিনি নিজেও এ রকম আমল করতেন।
[রাদ্দুল মুহতার: ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৮৪, কৃত আল্লামা আলাউদ্দীন খাচকফি হানাফী রাহ.]
উপরোক্ত বর্ণনা হতে বুঝা যায়, নামাযে দাড়াঁনো অবস্থায় দু’পায়ের মাঝখানে চার আঙ্গুল পরিমাণ ফাঁক রাখা উত্তম ও সুন্দর পন্থা।
(০২)
নামাজে কাতার মিলিয়ে দাড়ানো,মাঝে ফাকা না রাখা সুন্নাত।
ফাকা হয়ে দাড়ানো মাকরুহ।
,
সুতরাং উভয়ের কাধ আর পা সমান ভাবে যেনো কাছাকাছি থাকে, এইভাবেই দাড়ানো সুন্নাত।
শুধু পা আর পা মিলিয়ে দাড়ালে উভয়ের কাধ এর মাঝে জায়গা ফাকা হয়ে যায়।
আবার একই সাথে দুই পার্শের ব্যাক্তির সাথে শুধু কাধে কাধ মিলানো সম্ভব নয়।
,
তাই এমন ভাবে কাছাকাছি দাড়ানো সুন্নাত যে দুই পার্শের ব্যাক্তির সাথে কাধে কাধ এবং পায়ে পা কাছাকাছি থাকে।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
وَ عَنْ اِبْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللهُ عَنهُمَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم قَالَ أَقِيمُوا الصُّفُوفَ وَحَاذُوا بَيْنَ المَنَاكِبِ وَسُدُّوا الخَلَلَ وَلِينُوا بِأَيْدِي إِخْوانِكُمْ ولاَ تَذَرُوا فُرُجَاتٍ لِلشَّيْطَانِ وَمَنْ وَصَلَ صَفّاً وَصَلَهُ اللهُ وَمَنْ قَطَعَ صَفّاً قَطَعَهُ اللهُ رواه أبُو دَاوُدَ بإسناد صحيح
আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ
আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “তোমরা কাতারগুলি সোজা ক’রে নাও। পরস্পর বাহুমূলে বাহুমূল মিলিয়ে নাও। (কাতারের) ফাঁক বন্ধ ক’রে নাও। তোমাদের ভাইদের জন্য হাতের বাজু নরম ক’রে দাও। আর শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ো না। (মনে রাখবে,) যে ব্যক্তি কাতার মিলাবে, আল্লাহ তার সাথে মিল রাখবেন, আর যে ব্যক্তি কাতার ছিন্ন করবে (মানে কাতারে ফাঁক রাখবে), আল্লাহও তার সাথে (সম্পর্ক) ছিন্ন করবেন।” (আবূ দাঊদ ৬৬৬নং, বিশুদ্ধ সূত্রে)
আরো জানুনঃ