আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
32 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (30 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লহি ওয়া বারকাতুহ। অফলাইনে ফতোয়া নেওয়ার অপশন আমার নেই। অনুগ্রহ করে আমার এবং আমার স্বামীর উদ্দেশ্যে শরয়ী দৃষ্টিকোণসহ বিস্তারিত পরামর্শ/ সমাধান দিতে পারবেন ওস্তাদগণ? এই প্রশ্নে আমি পাঁচটি প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে পাঁচটি প্রশ্ন করেছি। অনুগ্রহ করে আমাকে এবং আমার স্বামীকে শরীয়তের মানদণ্ডে বিস্তারিত পরামর্শ, সমাধান দিন।

*** ওস্তাদ, আমার স্বামীর আমিসহ দুইজন স্ত্রী। আমার সাথে বিয়ের নয়মাস পর তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। আমি জানতাম না, তারা ঢাকায় ১৫ দিনের বেশি অবস্থান করেন। সাধারণত এমতাবস্থায় তারা মুকিম ছিলো। কিন্তু আমার স্বামী আমাকে বুঝিয়েছে যে ওটা সফর ছিলো, সফরে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে রাত কাটালে তা প্রথম স্ত্রী পাবে না। কিন্তু কথা হচ্ছে,

১. আমার স্বামী ঢাকাতে মুকিম ছিলো সাতমাস ধরে। তিনি নিজে মুকিম হলে তার স্ত্রী মুসাফির হবে কিভাবে? এবং আমার স্বামীর কক্ষেই তারা রাতযাপন করেছে।

২. তার স্ত্রীও ১৫ দিনের বেশি ঢাকায় অবস্থান করেন। তিনি বলছে কোনো কোনো মতে ১৫ দিন কেন একমাস অবস্থান করলেও সে মুসাফির থাকে। কিন্তু একজন নারীর মুসাফির হওয়ার শর্ত তার মাহরামের নিয়তের উপর নির্ভর করে। আমার স্বামী মুকিম হলে তা সফর কিভাবে হবে?

আমার স্বামী মূলত এখানে আমাকে পালি দিবে না বলে সালাফীদের মত, হানাফীদের মত সবকিছু উপেক্ষা করে কোনো কোনো মত গ্রহণ করেছেন।

১. প্রশ্ন: সালাফদের মতে সফরের ফতোয়া কি এমনই?
*** আমার পালি নিয়ে আমার স্বামীর অনাচার আরও আছে।
একেতো আমার নিজের বিয়েরই বছর ঘুরেনি, সংসার করে উঠতে পারিনি মনমতো তিনি দূরে চাকরী করায়, তার উপর আমার পালিতে এসে রাতে তিনি ঘন্টার পর ঘন্টা দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে কথা বলতেন। এশার নামাজ থেকে ফিরতে অনেক দেরি করতেন। আমি অনেক কষ্ট পেতাম, এটা নিয়ে মন খারাপ করলে বা কিছু বললেও তিনি আমার সাথে খারাপ আচরণ করতেন বা কথা বলা বন্ধ করে দিতেন। এতে আমি আরও বেশি মানসিক কষ্ট পেতাম।

২. প্রশ্ন: তিনি কি আমার পালির রাতে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা কথা বলা, মেসেজিং করা ইত্যাদির দ্বারা আমার হক নষ্ট করেননি? অথচ দ্বিতীয় স্ত্রীর পালিতে থাকার সময় তাকে আমি খুব কমই পেতাম। যদিও আমি আশা করতাম না আরেক স্ত্রীর সময় থেকে আমাকে দিক, কিন্তু সে আমার সময়টুকু আরেক স্ত্রীকে দিয়ে দিতো অনলাইনে মাত্রাতিরিক্ত।

*** দ্বিতীয় বিয়ের একমাস পর থেকে আমার স্বামী ১৫ দিন করে করে পালি করার কথা ছিলো। তিনি প্রথম পালি তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ১৫ দিন করে আসে। আমার মিসক্যারেজের জন্য আমার সাথে ১৫ দিন + আরও ৬ দিন অবস্থান করেন দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে কথা বলে। সে অনুযায়ী তার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে ২১ দিন থাকার কথা ছিল। ঈদ পরতো আমার পালিতে। কিন্তু তিনি দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে ২১ দিন অবস্থান না করে আরও এক্সট্রা অবস্থান করে, ঈদটা সে আমার পালিতে না করে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে করে। অথচ ঈদ আমার পালিতে ছিলো। এভাবে এখানে আমার অনুমতি ছাড়া তার ইচ্ছেমতো পালি করে মূলত।

এরপর দুইমাসমতো ঠিকঠাক পালি করে। পরবর্তীতে কুরবানীর ঈদ আসে। কুরবানীর ঈদ দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে পরে যায়। আমি মন খারাপ করায় তিনি ওখানে কিছুদিন এক্সট্রা থেকে এখানে এসে ঈদ করতে ইচ্ছে পোষণ করেন। ১৫ দিন + ১ সপ্তাহ দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে অবস্থান করে এসে তিনি আমার আসেন। কিন্তু একদিন রাত থেকেই তিনি আবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে চলে যান। আমার থেকে তিনি অনুমতিও নেননি, জাস্ট জানিয়েছেন। আমার অনেক কষ্ট লাগছিলো। দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাসায় ঝামেলার জন্য তিনি সেখানে যান দুদিনের কথা বলে। কিন্তু তিনি ফিরছিলেন না। এভাবে ১৫ দিন আবারও দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে অবস্থান করে। দ্বিতীয় স্ত্রীর বাবার বাসার লোকজন নাকি দ্বিতীয় স্ত্রীকে অত্যাচার করতেছিল। (তার দ্বিতীয় স্ত্রীর ভাষ্যমতে, ওখানে থাকা নিয়ে সমস্যা হচ্ছিল। তার স্ত্রী বলেছিলো আপনি প্রথম স্ত্রীর কাছে গিয়ে থাকুন, সমাধান হয়ে যাবে, কিন্তু তিনি সেখানেই তার স্ত্রীর সাথে থেকে যান। এবং আমার পালি বিলম্ব করেন)  কিন্তু একটানা অনেকদিন স্বামীকে কাছে না পেয়ে আমিও অনেক বেশি অসুস্থ হই, আমার সাথে যোগাযোগটাও ঠক ছিল না তার। (আমি আগে থেকেই প্রচন্ড অসুস্থ ছিলাম। আমার ওষুধ চলছিলো) কিন্তু আমার স্বামী তাতে গ্রাহ্য করেননি, তাকে মিস করতে করতে কান্নাকাটি করলে তার মন গলাতো দূর, আমার কথায় শুনতে পারতেন না মাঝেমাঝে।

এরপর বাসায় আসেন জুনের চার তারিখে। কিন্তু তিনি আমাকে দেখতে পারছিলেন না, বিরক্ত হচ্ছিলেন। তার গায়ে আঘাত করা অভ্যাস আছে দেখে আমি তার থেকে দূরে দূরে থাকছিলাম, আর সেও এড়িয়ে চলছিল। কিন্তু রাতে আর সহ্য করতে না পেরে তাকে প্রশ্ন করলে রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলেন। আমি সারাদিন রুমের বাইরে ছিলাম। এইরাতে আবার বাইরে যেতে না চাইলে চুল ধরে আমাকে বের করে দেওয়া হয়। আমি আবার রুমে আসলে ইটের উপর দুই তিনটি আছার দেওয়া হয় আমাকে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার গায়ে আচর দিয়ে ফেললে তার কিছু পরে আমাকে তালাক দেন।

তালাকের কয়েকদিন পর আমি অনুরোধ করে তাকে ফিরিয়ে নিতে বললে, ফিরিয়ে নেয়। দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছ থেকে এতদিন থেকে আসার পর সবকিছু মিলিয়ে সে আমার সাথে ১০ দিন ছিলো। ১০ দিন পর আমার পালি শোধ না করেই তিনি দুইদিনের ব্যবসার কথা বলে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে এক সপ্তাহ কাটিয়ে আসেন।

ফিরে এসে আমার সাথে পালি করতে থাকেন। আমার পালিতে আমি  ৩০+ দিন পেতাম। কিন্তু সে ২০ দিন আমার সাথে পালি করে আবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে চলে যান।

ফিরে এসে আমার পর্দার সুবিধার জন্য দুই স্ত্রীকে একসাথে রাখেন, ঢাকা নিয়ে যান। ঢাকা যাওয়ার পর ২৬ দিন পালি পেতাম। দুঃখজনকভাবে আমার স্বামী দ্বিতীয় স্ত্রীর পালি সম্পূর্ণ দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে কাটালেও আমার ২৬ দিনে হেরফের হতো। আমার পালির রাতে সন্ধ্যা থেকে আমার ঘরে থাকার কথা থাকলেও এমনটা হতো না৷ কখনও সন্ধ্যায় আমার কাছে আসতো, কখনও রাতে। আবার দেখা যেতো সকালে আমার সাথে না সময় কাটিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে সময় কাটাতো। আর দুপুরে প্রতিদিনই খাওয়ার পর দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে অনেকক্ষণ সময় কাটাতো, যা সাধারণ মুলাকাতের পর্যায়ে পরে না।

৩. প্রশ্ন, নিজের ইচ্ছেমতো পালির হেরফের করা, ১৫ দিনের পালির ধারাবাহিকতা নষ্ট কি আমার হক নষ্ট করেছে? হানাফী ফতোয়ামতে পালি সাধারণত একদিন পর পর, যা হেরফের করা যাবে না। পরিস্থিতিতে আমাদের ১৫ দিন করে ধার্য করা হলেও আমার কঠিন সময়গুলোতে আমার স্বামীকে পাশে পাইনি। আমার পালির ধারাবাহিকতা সে নষ্ট করেছে বারবার। দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছ থেকে আসার পরও তার কাছে চলে যেতে চাইতো।
আমি অনেক কান্না করতাম, তবু সে আমার কাছে আসতো না। আবার আমার পালি সম্পূর্ণ না করে যখন চলে যেতে চাইতো, তখনও কান্না করতাম, কিন্তু মন নরম হতো না।

***রিসেন্টলি আমি বাবার বাসায় এসেছি। আসার আগে বলেছিলাম আমাকে পালি দিলে বাবার বাসায় যাব। পালি মাইর গেলে যাবো না। আমি আসার পরও আমার স্বামী বলে, "কখন বললাম তোমাকে পালি দিবো না?"

ফতোয়ামতে আমি পালি পাই না, দাবীও করি না। কিন্তু আমার বাবার বাসায় আসা শর্তসাপেক্ষে ছিলো।

(।). বাবার বাসায় গিয়েছিলাম এই পার্পাসে যেন দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে সে স্পেস পায়। কেননা প্রথম স্ত্রীকে ব্লেইম করা হচ্ছিল তার জন্য সংসারে অশান্তি, প্লাস দ্বিতীয় স্ত্রীর আপত্তি ছিলো এক বাসাতে থাকা। তাই সে স্পেস দিয়ে যায়। এছাড়া কিছুদিন আগে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে তালাক হয়, (দ্বিতীয় স্ত্রী কাউকে কিছু না বলে পালিয়ে যাওয়ায় তালাক দেয়)  অন্যায়ভাবে প্রথম স্ত্রীর কৌশল, চালাকীকে দায়ী করে দ্বিতীয় স্ত্রী। ওয়াল্লহি, তার সম্পর্কে আমার কোনো কৌশল চালাকি ছিলো না। এসব নিতে না পেরে পালি ফেরত পাওয়ার শর্তসাপেক্ষে তাদেরকে স্পেস দিয়ে চলে যাই, যা বারবার আমার স্বামীকেও তিন চারদিন ধরে বলছিলাম যে আপনাদের স্পেস দিয়ে যাচ্ছি। এবং রওনা হওয়ার আগেও পালি নিয়ে কথা হয়েছিলো।

 (এছাড়া দুজন স্ত্রীকেই তিনি বাবার বাসায় পাঠানোর কথা বলেন। তার কষ্ট হবে ভেবে আমি বলি যে প্রথমে আমি ঘুরে আসি, তারপর তার দ্বিতীয় স্ত্রী। কিন্তু আমি আসার পর তার দ্বিতীয় স্ত্রীর আর বাবার বাসায় প্রয়োজন হয়তো নেই, কারণ সমস্যা আমাকে নিয়ে ছিলো। এবং আমার স্বামীও চান না তাকে বাবার বাসায় পাঠাতে)

(।।) যাওয়ার আগে আমি শর্ত দিয়ে যাই আমার পালি ফেরত দিতে হবে। ফেরত না দিলে বাবার বাসায় যাবো না। কেননা পূর্বেও ১৫ দিনের জায়গায় আমার সাথে কখনও ১০ দিন, কখনও ১ দিন, কখনও ৩০+ দিনের বদলে ২০ দিন পালি করে চলে যাওয়া হয়েছে। তখন কোনো ফতোয়া নেওয়া হয়নি। যার কারণে আমি ভেবেছি পালি এভাবে ১ দিনের বদলে ১৫ দিনের করা যাবে। অর্থাৎ পূর্ব থেকেই আমাকে পালির হেরফের দ্বারা ইউজড টু করা হয়েছে।

আমার স্বামী তার স্বার্থে পালি হেরফের করেছে আগে, ধারাবাহিকতা নষ্ট করেছে। আমি বুঝেছিলাম এবার উনি ১৫ দিন ওনার দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে সময় কাটাক, আমার জন্য তাদের মধ্যে ঝামেলা হচ্ছিল। তাই আমি তাদের স্পেস দিয়ে বাবার বাসায় আসতে চাই। এবং বলি ১৫ দিন আপনারা কাটান, এরপর আমার পালি ফেরত দিয়েন। এমন শর্তে আমি বাসায় আসছিলাম, কিন্তু আমার স্বামী আমাকে পালি দিতে নারাজ।
আবার ফতোয়া অনুযায়ী যেহেতু বাবার বাসায় থাকলে পালি দাবী করতে পারবো না, তাই দাবী করিওনি। কিন্তু এখানে আমার সাথে প্রতারণা হইছে বলে মনে হচ্ছে।

আমি তো তাদের স্পেস দিতে মিটমাট করে বাসায় আসছি। এও বলেছিলাম যে পালি মাইর গেলে বাবার বাসায় যাবো না।  শর্তের দিকটা একপাশে রেখে আমার স্বামী বলছে পালি পাবো না। বাদ দিলাম, আমি দাবীও করিনি। তার দ্বিতীয় স্ত্রীর বেলায় পূর্বে আমার স্যাক্রিফাইস থাকলেও আমার বেলায় আমার স্বামী এবং দ্বিতীয় স্ত্রী এরূপ করতে সম্পূর্ণ নারাজ।

৪.  এইযে ভালোর জন্য বাবার বাসায় শর্তসাপেক্ষে এসে কি আমি প্রতারণার শীকার হয়েছি?

*** আমার বাবার বাসায় ১৫ দিন থাকার কথা ছিল। এই ১৫ দিন নাও পেলে ১৫ দিন পর বাসায় ফিরে তার সাথে সংসার করার কথা ছিলো। কিন্তু সে আমাকে বাসায় নিয়ে যেতে কাল বিলম্ব করছে। এই কাল বিলম্ব তো আমি করছি না। সে করাচ্ছে, এখন এই দেরী হওয়া পালিগুলোও তিনি আমাকে দিবেন না। দিবেন না বুঝলাম, দ্রুত নিয়ে যাবে তাও নিচ্ছে না।

১ তারিখের নভেম্বরে আমি বাবার বাসায় আসি। ১৫ দিন থেকে ১৬ তম দিনে বাসায় যাওয়ার কথা ছিলো। ১২ তারিখে তার সাথে ঝামেলা হওয়ায় দুদিন ঠিক মতো কানেক্টেড ছিলাম না আমরা। ১৪ তারিখে আমি তাকে কল করে বলি আমি বাসায় যাবো ১৬ তারিখ আব্বুর সাথে। ১৪ তারিখ শুক্রবার আমার রুকইয়াহ করার কথা ছিলো। এরপর ওইদিন আমি দাদীর বাসায় যাই জমিজমা বিষয়ে। এসবই হয় আমার ১৫ দিনের মধ্যে।

আমি তাকে বলি ঢাকা গিয়ে রুকইয়াহ করবো। কিন্তু তিনি বলেন এখন আসতে হবে না, রুকইয়াহ করো, সুস্থ হও। এটা ১৪ তারিখ দুপুর দুইটার ফোন কলের কথোপকথন।
(আমার ১৬ তারিখে বাবার সাথে ঢাকা যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি নিষেধ করেন, আমি প্রশ্ন করি তাহলে আপনার সাথে যাবো সামনে শুক্রবার? তিনি বলেন, দেখি)

পরবর্তী শুক্রবার যাওয়ার কথা থাকলেও টাকার ম্যানেজ হয়নি। শুক্রবার আমি যেতে পারিনি। গতকাল ২৮শে নভেম্বর, শুক্রবার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আমাকে আবারও নিতে আসেননি। আগে পালি নিয়ে হেরফের করেছেন ইত্যাদি বিষয় উঠলে আমি জানাই, পূর্বে আমার সাথে অন্যায় হয়েছে। পরবর্তীতে আমার পালি থেকে এক সেকেন্ডও কাউকে দেওয়া যাবে না। বাচ্চা নিয়ে সময় কাটাতে হলে আমার রুমে বসে সময় কাটাতে হবে, ইত্যাদি হকের দাবী আমার পক্ষ থেকে ঝামেলা ছিলো বলে দাবী করে তিনি এই শুক্রবারও আমাকে নিতে আসেননি।

৫. ওস্তাদ, বারবার এভাবে যে আমার বাসায় যাওয়ার ডেইট পাল্টাচ্ছে আমার স্বামী, এটা কি ঠিক হচ্ছে? আমার ১৫ দিনের জায়গায় একমাসের বেশি সময় স্বামীর সংসার থেকে দূরে রাখছে, এটা কি ঠিক হচ্ছে?  এদিকে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে না, ওদিকে দ্বিতীয় স্ত্রীর সাথে সংসার করে যাচ্ছে। এটা কি আমার হক নষ্ট করছে? এমন না যে আমি যেতে চাইছি না।
(আমার জীনজাদুর সমস্যা আছে, প্রায়ই ওয়াসওয়াসা আসে বাসায় যেতে ভালো লাগে না। এটা ফ্রাঙ্কলি তার সাথে শেয়ার করলে সে বলতো শয়তানের ওয়াসওয়াসা। আমিও তাকে বলতাম ওয়াসওয়াসা। বলি নাই সিরিয়াসলি যে বাসায় যাবো না। আমার যাওয়ার কথা গত তিনটা শুক্রবারেই ফিক্সড ছিলো আমার পক্ষ থেকে। আমি জিজ্ঞেসও করতাম কখন রওনা দিবে, কবে আসবে। তারপরও আমার স্বামী দাবি করছে আমার নাকি আসার ইচ্ছে হয়নি! আল্লাহর শপথ এটা ভুল দাবি)

তাকে কোনো ফতোয়া দিয়ে আমি বুঝাতে পারি না৷
ওস্তাদ, স্ত্রী একজন থাকলে মাসের পর মাস না দেখা হলেও এক রকম। স্ত্রী দুজন হলে কথা আরেকরকম। যেখানে আরেক স্ত্রীর প্রতি হকের দিক থেকে ঝুঁকে যাওয়া মারাত্মক গুনাহ, সেখানে আমার কষ্ট পাওয়া স্বাভাবিক। আমি ক্লান্ত, আমি কিভাবে মুভ অন করবো একটু পরামর্শ দিন প্লিজ।

1 Answer

0 votes
by (704,310 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://www.ifatwa.info/6683 নং ফাতওয়ায় বর্ণিত রয়েছে ,
শরীয়তের বিধান মতে একাধিক স্ত্রীর মাঝে যদি ইনছাফ করতে পারে,তাহলে প্রয়োজনের স্বার্থে একাধিক বিবাহ করতে পারবে।

আল্লাহ তায়ালা বলেন
فانكحوا ما طاب لكم من النساء مثنى وثلاث ورباع 
তোমরা বিবাহ করবে নারীদের মধ্যে যাকে তোমার ভালো লাগে—দুই, তিন অথবা চার। আর যদি আশঙ্কা করো যে সুবিচার করতে পারবে না, তাহলে একজনকে (বিয়ে করো)।(সুরা : নিসা, আয়াত-৩)

দ্বিতীয় বিয়ে করার ইসলামী শর্ত বেশ কঠিন অনেক কড়া। আগের স্ত্রীর সব ধরনের হক আদায়ের পর নতুন বিয়ের পরেও সমান তালে সব অধিকার পালন করার আত্মবিশ্বাস থাকলেই কেবল যৌক্তিক কারণে দ্বিতীয় বিয়ে করা যায়।
قال اللہ تعالی:فإن خفتم ألا تعدلوا فواحدة الآیة (سورہ نسا، آیت:۳)
 আল্লাহতায়ালা বলেন, একাধিক বিয়ের সুবিধা যাদের আছে, তারা যদি সম অধিকার বজায় রাখার ক্ষেত্রে ভীত হও, তাহলে এক বিয়ে পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাক। 
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ ﷺ قَالَ : «إِذَا كَانَتْ عِنْدَ الرَّجُلِ امْرَأَتَانِ فَلَمْ يَعْدِلْ بَيْنَهُمَا جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَشِقُّه سَاقِطٌ». رَوَاهُ التِّرْمِذِىُّ وَأَبُوْ دَاودَ وَالنَّسَائِىُّ وَابْنُ مَاجَهْ وَالدَّارِمِىُّ
আবূ হুরায়রাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যদি কোনো পুরুষের দু’জন সহধর্মিণী থাকে আর সে তাদের মধ্যে যদি ন্যায়বিচার না করে, তবে সে কিয়ামতের দিন একপাশ ভঙ্গ (অঙ্গহীন) অবস্থায় উঠবে। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন-https://www.ifatwa.info/6683

একাধিক স্ত্রীর মাঝে দুই বিষয়ে সমতা রক্ষা করা অতীব প্রয়োজন। স্ত্রীদের সঙ্গে রাতযাপন ও ভরণ-পোষণ। 

এ দুই অধিকার সব স্ত্রীর ক্ষেত্রে সমানভাবে স্বামীকে পালন করে যেতে হবে। কোন স্ত্রী সুন্দর বা অসুন্দর, আর কোনটি কুমারী বা বিধবা তা পার্থক্য করা যাবে না। 

কিন্তু কোনো স্ত্রীর প্রতি মনের ভালোবাসা বেশি হওয়া, আবার অন্য স্ত্রীর প্রতি কম হওয়া তা সমতার অন্তর্ভুক্ত নয়। কেননা, এটি মনের বিষয়, আর মনের ওপর কারও কোনো অধিকার নেই। একাধিক স্ত্রীর ক্ষেত্রে শুধু রাতযাপন ও খরচাপাতি এ দুই বিষয়ে সমতা ধর্তব্য। এটাই হলো একাধিক স্ত্রীর মধ্যে সমতা রক্ষার ইসলামি শরিয়তের বিধান। 

হাদিসে আছে, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, নবী করিম (সা.) স্ত্রীদের মধ্যে পালাবণ্টন করতেন এবং ন্যায়বিচার করতেন। আর বলতেন, হে আল্লাহ! আমি আমার শক্তি-সামর্থ্যানুযায়ী পালাবণ্টন করলাম। সুতরাং যাতে শুধু তোমার ক্ষমতা রয়েছে, তাতে আমার শক্তি নেই। কাজেই তাতে তুমি আমাকে ভর্ৎসনা করো না। (তিরমিজি : ১১৭০, আবু দাউদ : ২১৩৬)।

কোনো ব্যাক্তির যদি একাধিক বিবাহ বাস্তবেই খুবই প্রয়োজন হয়, বর্তমান স্ত্রী দ্বারা যদি তার শারিরীক চাহিদা ও অন্যান্য আবশ্যকীয় হক আদায় না হয়,আর সেই একাধিক স্ত্রীর চাহিদা পূরন করতেও সক্ষম হয়,তাদের ভরনপোষণ এর ব্যপারেও পূর্ণ সক্ষম হয়,আর একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে শরীয়তের শর্তাবলী পূর্ণ ভাবে মানার উপরেও সক্ষম হয়,তার জন্য একাধিক বিবাহের ক্ষেত্রে ইসলাম অনুৎসাহিত নয়।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী বোন,
(০১)
এক্ষেত্রে আপনার স্বামী আপনার হক নষ্ট করেছে।

উল্লেখিত অবস্থাতেও পালি নির্ধারণ করে তার জন্য দুই স্ত্রীর মাঝে সমানভাবে থাকা উচিত ছিল।

সে যদি গায়রে মুকাল্লিদ হয়, তাহলে গাইরে মুকাল্লিদদের মাসআলা সে অনুসরন করতে পারবে।

এমতাবস্থায় তাদের মাসয়ালা তাদের ফতোয়া বিভাগ থেকে জেনে নেওয়ার পরামর্শ রইলো।

(০২)
এতে আপনার হক নষ্ট হয়।

(০৩)
হ্যাঁ, এতে আপনার হক নষ্ট হয়েছে।

(০৪)
হ্যাঁ আপনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন।

(০৫)
আপনার স্বামীর কাজটি মোটেও ঠিক হচ্ছে না। তিনি বরাবরই আপনার হক নষ্ট করছেন।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (30 points)
আমার স্বামীর বক্তব্য: 

"কোনো প্রয়োজনে সময় বাড়িয়ে কমিয়ে পালি দেয়া আমার এখতিয়ার। কারো প্রয়োজনে ১ দিনের জায়গায় ৩ দিন থাকলে সেটার জন্য জবাবদিহি করা,অনুমতি নেয়া জরুরি না। তবে পরে সেই ৩ দিন শোধ করে দিতে হবে এটা জরুরি।" 

কিন্তু ওস্তাদ, একই সাথে দুজন স্ত্রী খারাপ পরিস্থিতিতে থাকলে একজনের পালি বিলম্ব করে আরেকজনকে মায়া দেখালে কি আরেক স্ত্রীর সাথে ইনসাফ করা হবে? পালির সমতা তো এইজন্যই। প্রথম স্ত্রীর প্রয়োজনের সময় স্বামী পাশে না থেকে আরেক স্ত্রীর পাশে থাকে, এরপর যখন দ্বিতীয় স্ত্রীর প্রয়োজন পূরণ হয়ে যায়, তখন প্রথম স্ত্রীর কাছে আসে। তাও আবার পুরো পালি শোধ না করে আবার চলে যায়, এটা বারবার। 

তাহলে তা কি ইনসাফের মধ্যে পরে?

পালি কমিয়ে বাড়িয়ে করলে তাতে স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে না? 
by (704,310 points)
এটি কোনক্রমেই ইনসাফ এর মধ্যে পড়ে না।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...