ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ-
হিন্দু বৌদ্ধ ধর্মের প্রদানরা হয়তো কোনো আহলে কিতাব থেকে শুনে তাদের কিতাবে সংযোজন করেছে। অথবা তারা হয়তো কখনো সত্য ধর্ম ছিলো, পরবর্তীতে বিকৃত হয়েছে। আসলে এ সম্পর্কে নিশ্চিত রূপে কিছুই বলা যাবেনা। এবং এ সম্পর্কে কুরআন হাদীসে স্পষ্টত কিছু আসেনি। তাছাড়া এ বিষয়ের সাথে ঈমান-আ’মলের কোনো সম্পর্ক নাই। যে জন্য উলামায়ে কেরাম এ সম্পর্কে কোনো তত্ব তালাশ নেননি।
কতজন নবী রাসূলকে দুনিয়াতে প্রেরণ করা হয়েছে? কুরআনে ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ আছে। তবে এছাড়াও অসংখ্য নবী রাসূলকে আল্লাহ দুনিয়াতে প্রেরণ করেছিলেন, সে সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা নিজেই বলেন,
وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّن قَبْلِكَ مِنْهُم مَّن قَصَصْنَا عَلَيْكَ وَمِنْهُم مَّن لَّمْ نَقْصُصْ عَلَيْكَ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَنْ يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ فَإِذَا جَاء أَمْرُ اللَّهِ قُضِيَ بِالْحَقِّ وَخَسِرَ هُنَالِكَ الْمُبْطِلُونَ
আমি আপনার পূর্বে অনেক রসূল প্রেরণ করেছি, তাদের কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করেছি এবং কারও কারও ঘটনা আপনার কাছে বিবৃত করিনি। আল্লাহর অনুমতি ব্যতীত কোন নিদর্শন নিয়ে আসা কোন রসূলের কাজ নয়। যখন আল্লাহর আদেশ আসবে, তখন ন্যায় সঙ্গত ফয়সালা হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে মিথ্যাপন্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ( সূরা আল-মু’মিন-৭৮)
এ সম্পর্কে ইনকেলাব প্রত্রিকার একটি লেখা উল্লেখযোগ্য
মানব জাতির চরম ও পরম আদর্শ, মহান আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী, প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্ব শেষ নবী হিসেবে দুনিয়ায় মিলাদ তথা আগমন করবেন এটা পূর্বের ও পরের সকল ধর্মীয় গ্রন্থ ও জ্ঞান তাপসদের কলমে বর্ণিত আছে। যদিও তাঁর আগমনের পরে সত্য তথ্য জানা সত্ত্বেও অনেকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লামকে মেনে নেয়নি। আমি অসহায়ত্বের স্বীকারোক্তি-পূর্বক সম্মানীত পাঠকদের খেদমতে খুবই বিনয়ের সঙ্গে উপরিউক্ত বিষয় তুলে ধরলাম।
পবিত্র আল কুরআনে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর দোয়া। হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম ও তার সুযোগ্যপুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম দু’জন মিলে পবিত্র কা’বা ঘর নির্মাণের কাজ শেষ করার পর হারাম শরিফ ও সে স্থানের বাসিন্দাদের জন্য দোয়া করেন। দোয়ায় তারা বলেন, “হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের মধ্য থেকেই তাদের জন্য একজন নবী প্রেরণ করুন। যিনি তাদেরকে আপনার আয়াত সমূহ পাঠ করে শুনাবে। তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দিবেন এবং তাদেরকে পবিত্র করবেন। নিশ্চয় আপনি পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়। (সুরা বাকারাঃ ১২৮, ১২৯)
উল্লেখিত আয়াত থেকে বুঝা যায়, এ দোয়াতে হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর সঙ্গে তার প্রিয়পুত্র হযরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাওয়াতুওয়া-সাল্লামও শরিক ছিলেন। আর যে নবীর জন্য তারা দোয়া করেছিলেন তিনি উভয়ের বংশোদ্ভূত ছিলেন এবং মক্কায় প্রেরিত হয়েছেন। আবুল আলিয়া ও কাতাদাহ রহমাতুল্লাহ বলেন, হযরত ইব্রাহিম আলাইহিস সালাওয়াতুওয়া-সাল্লামকে জানানো হয়েছিল, তোমাদের দোয়া কবুল করা হয়েছে তবে আখেরি জামানায় তিনি আসবেন। (ইবনে কাসীর)
হযরত ঈসা আলাইহিস সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর সুসংবাদ
হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম যে সুসংবাদ দিয়েছিলেন তা ইঞ্জিল কিতাবেও রয়েছে। মহান আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কুরআনে বলেছেন। “স্মরণ কর, যখন মরিয়ম এর পুত্র ঈসা (আলাইসিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম) বললো, হে বনী ইসরাঈল! আমি তোমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল রূপে আগমন করেছি। আমার পূর্বে যে তাওরাত আবতীর্ণ হয়েছিলো আমি তা সত্য বলে বিশ্বাস করি এবং আমার পর ‘আহম্মদ’ নামে একজন রাসূল আগমন করবেন আমি তার সুসংবাদ দিচ্ছি। (সুরা ছফঃ ৬)
হাজার হাজার বছর ধরে অসংখ্য নবী-রাসূলের মুখে এ কথাই উচ্চারিত হয়ে আচ্ছিল, সর্বশেষ একজন নবী আসবেন যিনি হবেন বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম।
তাওরাতে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
বর্তমানে তাওরাতের যে সকল কপি পাওয়া যায় তার মধ্যে ‘আশয়ীয়া নবীর’ কিতাবে সামান্য শাব্দিক পরিবর্তনসহ আজও সেই ভবিষ্যদ্বাণী পাওয় যায়। তা হলো-
১। তিনি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।
২। তিনি আল্লাহর মনোনীত ব্যক্তি।
৩। তার প্রতি আল্লাহর সন্তুষ্ট।
৪। তিনি চিৎকার করবেন না । উচ্চস্বরে কথা বলবেন না এবং বাজারে কোলাহল করবেন না।
৫। তিনি গরীব, কাঙ্গাল ও দুর্বলদের উপর অত্যাচার করবেন না, তিনি সদাশয় এবং চরিত্রবান হবেন।
৬। তিনি চিরস্থায়ী ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন। ন্যায় প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত তার মৃত্যু হবে না।
৭। তার সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেন, আমিই আপনার সহায় হয়ে আপনাকে রক্ষা করবো।
৮। তিনি পূর্ণ তৌহিদ প্রচার করবেন এবং পৌত্তলিক ও মুশরিকদেরকে পরাজিত করে পৌত্তলিকতা ধ্বংস করবেন। তিনি বীরবেশে আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন।
৯। মরুভূমিতে লোকালয়ে এবং কীদারের আবাদকৃত গ্রাম সমূহে নিজের গুরুগম্ভীর আহ্বান উচ্চ করবেন।
বাইবেলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
বাইবেলে উল্লেখ আছে, “তোমাদেরকে বলার আমার আরো অনেক কথা আছে কিন্তু তোমরা এখন সে সকল সহ্য করতে পারবো না। পরন্ত সে সত্যের আত্মা যখন আসবেন তখন তিনি তোমাদেরকে সত্যের সন্ধান দিবেন। কারণ তিনি নিজ থেকে কিছু বলবেন না, যা যা শুনবেন তাই বলবেন এবং ভবিষ্যতের ঘটনাও জানাবেন।” (যাহনঃ অধ্যায় ১৪)
“বাইবেলে বর্ণিত বাক্যগুলোতে হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া সাল্লাম বার বার প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর আগমনের সংবাদ দিয়েছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে তিনি ‘ফারাক্লিত’ (PARACLETE) বলে অভিহিত করেছেন। এ শব্দটি ইবরানি অথবা সুরইয়ানি ভাষার। এর আরবি অনুবাদ মুহাম্মদ এবং আহম্মদ অর্থাৎ প্রশংসিত, পরম প্রশংসাকারী অথবা পরম প্রশংসিত। প্রাচীন ইউনানি (গ্রিক) ভাষায় এর অনুবাদ করা হয়েছে, ‘পাইরিকিলইউটাস’। এর অর্থ অত্যন্ত প্রশংসাকারী বা প্রশংসিত। (আহমদ)
কিন্তু পরবর্তী খ্রিস্টানরা যখন দেখতে পেল, এর দ্বারা ইসলামের সত্যতা প্রমাণিত হচ্ছে, তখন তারা শব্দটি পরিবর্তন করে, ‘পাইরকিলিটাস’ অর্থাৎ শান্তিদাতা করে নেয়। খ্রিস্টান পাদ্রী এবং মুসলমান আলেম সমাজের মধ্যে শতাব্দীর পর শতাব্দী যাবৎ এ শব্দটি নিয়ে চলে আসছে তর্কযুদ্ধ। আলেমরা প্রাচীন খ্রিস্টানদের লিখিত প্রমাণ দ্বারা অনেকবার প্রমাণ করে দিয়েছেন, এ শব্দটি ‘পাইরিকিলইউটাস’ অর্থাৎ মুহাম্মদ ও আহম্মদ। মহাত্মা যোহনের লিখিত বাইবেলে বর্ণিত বাক্যসমূহে প্রতীক্ষিত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া-সাল্লাম যে গুণাবলী বর্ণিত আছে তা নিচে বর্ণনা করা হলো-
১। হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর প্রকৃত শিক্ষা মানুষ ভুলে যাবে এবং প্রতীক্ষিত প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এসে স্মরণ করে দিবেন।
২। তিনি হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর অসম্পূর্ণ বিষয়গুলো পূর্ণ করবেন এবং সমস্ত সত্যের সন্ধান দিবেন।
৩। তিনি পৃথিবীতে হযরত ঈসা আলাইহিস-সালাওয়াতুওয়া-সাল্লাম এর মহত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত করবেন, তার পক্ষে সাক্ষ্য দিবেন এবং তার প্রতি ঈমান না আনার জন্যে পৃথিবীর মানুষকে অপরাধী সাব্যস্ত করবেন।
৪। তিনি নিজের তরফ থেকে কিছুই বলবেন না। আল্লাহর পক্ষ থেকে যা নির্দেশ পাবেন তাই বলবেন।
হিন্দু শাস্ত্রে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
‘বেদ-পুরাণ’ এবং ‘উপনিষদ’ হিন্দুদের বিশিষ্ট ধর্মগ্রন্থ। এসব প্রাচীন ধর্মশাস্ত্রে আল্লাহ, রাসূল, মুহাম্মদ ইত্যাদি শব্দগুলো রয়েছে। যা এখানে উল্লেখ করা হলো- একটু লক্ষ্য করুন।
‘অর্থবেদীয় উপনিষদ’-এ আছে-
অস্য ইল্ললে মিত্রাবরুণো রাজা
তস্মাৎ তানি দিব্যানি পুনস্তং দুধ্যু
হবয়ামি মিলং কবর ইল্লালাং
অল্লোরাসুলমহমদকং
বরস্য অল্লো অল্লামা ইল্লল্লোতি ইল্লাল্লাল ॥ ৯ ॥
‘ভবিষ্যৎ পুরাণ’ এ আছে-
এতনিলন্নন্তরে ম্লেচ্ছ আচার্যেন সমন্বিতঃ
মহামদ ইতি খ্যাতঃ মিষ্যাশাকাসমন্বিত ঃ ॥ ৫ ॥
নৃপশ্চেব মহাদেবং মরুস্থলবিনাসিনম্
গঙ্গাজলৈশ্চ সং¯্রাপ্য পঞ্চগব্যসমন্বিতৈঃ
চন্দনাদিভিরভ্যার্চ তুষ্টাব মনসা হরম্ ॥ ৬ ॥
নমস্তে গিরিজানাথ মরুস্থলনিবাসিনে
ত্রিপুরাসুরনাশায় বহুমায়া প্রবর্তিনে ॥ ৭ ॥
ভোজরাজ উবাচ-
ম্লেচ্ছৈগুপ্তায় শুদ্ধায় সাচ্চিদান্দরুপিণে।
ত্বংমাং হি কিঙ্করং বিদ্ধি শরনার্থ মুপাগতম ॥ ৮ ॥
অর্থাৎ ঃ ঠিক সে সময়ে ‘মুহাম্মদ’ নামে এক ব্যক্তি যার বাস ‘মরুস্থলে’ (আরবদেশে)
আপন দলবলসহ আবির্ভূত হবেন। হে আরবে প্রভূ! হে জগদগুরু! তোমার প্রতি আমার স্ততিবাদ। তুমি জগতের সমুদয় কলুষ দূর করার অনেক উপায় জান, তোমাকে নমস্কার। হে পবিত্র পুরুষ! আমি তোমার দাস। আমাকে তোমার চরণতলে স্থান দাও।
বৌদ্ধ শাস্ত্রে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
বৌদ্ধদের প্রামাণ্য গ্রন্থ ‘দিঘা-নিকায়া’য় বর্ণিত হয়েছে, ‘মানুষ যখন গৌতম বুদ্ধের ধর্ম ভুলে যাবে, তখন আর একজন বুদ্ধ আসবেন, তার নাম ‘মৈত্রেয়’ (সংস্কৃত শব্দ মৈত্রেয়) অর্থাৎ শান্তি ও করুণার বুদ্ধ।
নিচে সিংহল থেকে পাওয়া (ভৎড়স ঈবুষড়হবংব ংড়ঁৎপবং) থেকে একটি প্রমাণ সমুদয় পাঠকদের খেদমতে উল্লেখ করা হলো। যাতে উপরিউক্ত কথার প্রমাণ আলোচনা হবে। যার বাংলা অর্থ হলোঃ
Ananda said to the Blessed one, Who shall teach us when the art gone?
And the Blessed one replied:
I am not first Buddha who came on the earth, nor shall I be the last. In one time another Buddha will arise in the world, a holy one, a supremely enlightened one, endowed with wisdom in conduct.... He will proclaim a religious life, wholly perfect and pure such as! now proclaim....
Ananda said, How shall we know him?
The Blessed one said. He will be known as maitreya-The Gospe of Buddha by Carus. 117-18
অর্থাৎঃ আনন্দ বুদ্ধকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার মৃত্যুর পর কে আমাদেরকে উপদেশ দান করবে?
বুদ্ধ বললেন, আমিই একমাত্র বুদ্ধ বা শেষ বুদ্ধ নয়। যথাসময়ে আর একজন বুদ্ধ আসবেন, আমার চেয়েও তিনি পবিত্র ও অধিকতর আলোকপ্রাপ্ত। তিনি একটি পূর্ণাঙ্গ ধর্মমত প্রচার করবেন। আনন্দ জিজ্ঞেস করলেন, তাঁকে আমরা চিনবো কি করে? বুদ্ধ বললেন, তাঁর নাম হবে ‘মৈত্রেয়’। এই মৈত্রেয় বা ‘শান্তি ও করুণার বুদ্ধ’ যে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। পবিত্র কুরআনেও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর বিশেষণ অবিকল এভাবেই আছে। যেমন, তিনি রাহমাতুল্লিল আলামিন’ অর্থাৎ সমগ্র বিশ্বের জন্য করুণা ও রহমাত স্বরূপ।
পার্শী ধর্মশাস্ত্রে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
পার্শী জাতির ধর্মগ্রন্থের নাম ‘জিন্দাবেস্তা’ ও ‘দসাতির’। জিন্দাবেস্তায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর মিলাদের তথা আগমনের সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে। এমনকি আহম্মদ নামটিও উল্লেখ আছে। পাঠকদের খেদমতে তা তুলে ধরা হলো-
Nold te Ahmad dragoyeitim fram-raomi
Spetame Zarathusra yam dahman vangnim afritim.
Yunad hake hahi humananghad havakanghad
hushayaihand hudaenad.
-Zend-Avesta, part 1, Translated by Muller, p. ২৬০
অর্থাৎঃ “আমি ঘোষণা করছি, হে স্পিতাম জরথুষ্ট্রু, পবিত্র আহম্মদ (ন্যায়বানাদিগের আশীর্বাদী) নিশ্চয় আসবেন, যার কাছ থেকে তোমরা সৎ চিন্তা, সৎ বাক্য, সৎ কাজ এবং বিশুদ্ধ ধর্ম লাভ করবে।
‘দসাতির’ গ্রন্থে অনরূপ আর একটি ভবিষ্যদ্বাণী আছে। তার সারমর্ম হলো- “যখন পার্শীরা নিজেদের ধর্ম ভুলে যেয়ে নৈতিক অধঃপতনের চরম সীমায় উপনীত হবে, তখন আরবদেশে একজন মহাপুরুষ জন্মগ্রহণ করবেন। যার শিষ্যরা পারস্যদেশ এবং দুর্ধর্ষ পারসিক জাতিকে পরাজিত করবে। নিজেদের মন্দিরে অগ্নিপূজা করবে না। তারা ইব্রাহিমের কাবা ঘরের দিকে মুখ করে প্রার্থনা করবে। সেই কাবা ঘরও প্রতিমামুক্ত হবে। সেই মহা পুরুষের শিষ্যরা বিশ্ববাসীর পক্ষ্যে আশীর্বাদস্বরূপ হবে।”
জর্জ বার্নার্ড শ এর কলমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
স্যার জর্জ বার্নার্ড শ, দ্য জেনুইন ইসলাম, ভলিুম-১, নং ৮, সন ১৯৩৬। তিনি বলেন, “মুহাম্মদের ধর্মের প্রতি আমি সব সময় সুউচ্চ ধারণা পোষণ করি কারণ, এর চমৎকার প্রাণবন্ততা। আমার কাছে মনে হয় এটাই একমাত্র ধর্ম যেটা সদা পরিবর্তনশীল জীবন যাত্রার সঙ্গে অঙ্গীভূত হওয়ার ক্ষমতা রাখে যা প্রত্যেক যুগেই মানুষের হৃদয়ে আবেদন রাখতে সক্ষম। আমি তার (মুহাম্মদ সম্বন্ধে পড়াশোনা করেছি। চমৎকার একজন মানুষ এবং আমার মতে খ্রিস্টবিরোধী হওয়া সত্ত্বেও তাকে অবশ্যই মানবতার ত্রাণকর্তা বলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি তার মতো ব্যক্তির কাছে যদি আধুনিক বিশ্বের একনায়কতন্ত্র অর্পণ করা হতো তবে এর সমস্যাগুলো তিনি এমনভাবে সফলতার সঙ্গে সমাধান করতেন যা বহু প্রতীক্ষিত শান্তি ও সুখ আনয়ন করতো। আমি ভবিষ্যদ্বাণী করছি, মুহাম্মদের ধর্ম বিশ্বাস আগামী দিনের ইউরোপের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে, যা ইতিমধ্যে বর্তমান ইউরোপে গ্রহণযোগ্যতা পেতে আরম্ভ করছে। যদি কোন ধর্মকে ইংল্যান্ড তথা সমগ্র ইউরোপকে শাসন করার সুযোগ দেয়া হয় তাহলে যে ধর্মটি পরবর্তী ১০০ বছর ধরে পারবে তা হলো ইসলাম।
মাইকেল এইচ. হার্ট এর কলমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
গোটা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তিদের সারিতে ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া- সাল্লাম এর নাম সর্বপ্রথমে আনায় হয়তো কোন কোন পাঠক আশ্চর্য ও বিস্মিত বোধ করতে পারেন, আবার কেউ প্রশ্ন তুলতে পারেন। আর তাদেরকে লক্ষ্য করেই আমি বলছি, মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম হলেন বিশ্বের একমাত্র ব্যক্তি যিনি ধর্ম ও রাষ্ট্র উভয় ক্ষেত্রেই সমান সর্বাধিক সফল ছিলেন। অনেকটা শূন্য হাত দিয়ে শুরু করে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম বিশ্বের শ্রেষ্ঠ একটি ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিলেন। হয়ে গিলেছিলেন একজন প্রভাবশীল রাজনৈতিক নেতা। ইন্তেকালের ১৩শ বছর পরেও যার প্রভাব আজও অগ্রসরমান ও পরিব্যাপক।
মি. ইরভিং তা বিখ্যাত গ্রন্থ Muhammad এর ২০ পৃষ্ঠায় ঐতিহাসিক আবুল ফিদার সূত্রে লেখেন
“একজন মানুষ পরিপূর্ণ সৎ ও পুণ্যবান হতে যতগুলো গুণে তাকে গুণান্বিত হতে হয় মহান প্রভু তার মধ্যে সব কয়টি গুণের সমাবেশ ঘটিয়েছেন। তিনি এতটাই বিশুদ্ধ ও নির্মল প্রকৃতির অধিকারী ছিলেন, স্বাভাবিকভাবে তিনি সকলের কাছে ‘আল-আমিন’ নামে পরিচিত ছিলেন। প্রচ- আত্মবিশ্বাস যা বিচারের ক্ষেত্রে তার মাঝে স্থিতি লাভ করেছিলো আর তার ন¤্রতা তাকে বারবারই তর্ক-বিতর্ক সালিশির ক্ষেত্রে বিচারক ও মীমাংসাকারীর আসনে সমাসীন করেছিল।
মি. বসওয়ার্থ স্মিথ (Mr. Bosworth Smith) এর কলমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
মি. বসওয়ার্থ স্মিথ তার বিখ্যাত বই Muhammad and Muhammadanism ৯৩ পৃষ্ঠায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সরলতা আর মানবতার বিবরণ নি¤েœাক্ত ভাষায় প্রদান করেন। “মরুভূমিতে মেষ চরাতে ব্যস্ত এক রাখাল। সিরিয়ার বাজারে ব্যবসা বাণিজ্যে লিপ্ত এক ব্যবসায়ী। হেরা গুহায় একাকী ধ্যনমগ্ন এক যুবক। সম্প্রদায়ের সংস্থার সাধনে লিপ্ত এক বিচারক। একজন স্বীকৃত বিজয়ী বীর। স্বদেশ-তাড়িত হয়ে মদিনার আশ্রিত এক লোক। পারস্যের খসরু পারভেজ আর রোমের হারক্লিয়াসের সমশক্তিধর এক স¤্রাটের মাঝে এও অভিন্ন ধরনের প্রকৃতির বিচরণ দেখতে পাই। মনে আমার সন্দেহ জাগে, পৃথিবীতে আর কেউ কি এমন আছে, যার আভ্যন্তরীণ অবস্থা এত বারংবার পটপরিবর্তন করছে অথচ সর্বক্ষেত্রেই অভিন্ন সত্তার অস্তিত্ব লক্ষণীয় ও পরিদৃষ্ট রয়েছে।”
মি. ল্যামার্টিন এর কলমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
বিখ্যাত ফরাসী কবি ও রাজনীতিবীদ মি. ল্যামার্টিন তার Toise de la turquie গ্রন্থের ২য় খ-ের ২৭৬ পৃষ্ঠায় বলেন, “যদি সৎ উদ্দেশ্য, স্বল্প পাথৈয় অথচ চোখ ধাঁধানো সাফল্য ইত্যাদি মানবচরিত্রের শ্রেষ্ঠত্বের তিনটি মাফকাঠি হয়ে থাকে, তবে কে এমন আছে যে আধুনিক ইতিহাসের কোনো ব্যক্তিকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর সাথে তুলনা করবে?
দার্শনিক, খতিব, নবী, আইনবিদ, মুজাহিদ,আদর্শের বিজেতা, জাতীয় আইনের পুনরুদ্ধারকারী, মূর্তিহীন এক ধর্মমতের প্রবর্তক ২০টি পার্থিব ও একটি অপার্থিব জগতের মহা স¤্রাট ছিলেন নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম। মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব যে সকল বৈশিষ্ট্য দ্বারা পরিমিত হয় সে দিক বিবেচনা করলে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগাই স্বাভাবিক, তার চেয়ে কি পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠতর কোনো মানুষ আছে?”
The Dayily Express এর পাতায় প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
লন্ডনের বিখ্যাত The Dayily Express পত্রিকায় ১০ নভেম্বর ১৯২৫ সালে সম্পাদকীয় লেখা হয় ঠিক এভাবেই, “যদি কোন মহান মানুষের উৎসাহ আর উদ্দীপনার স্বাদ পাওয়া যায় আসমানি উদ্বোধন বিশ্বাসী মানুষের অন্তরে শ্রদ্ধা আর সম্মান নিবেদনের প্রতি উৎসাহী বাক্য উচ্চারণের মাঝে তবে সেক্ষেত্রে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম কে অবশ্যই সর্ব শ্রেষ্ঠ বলতে হবে। কারণ এটা শুধু মুহাম্মদি চরিত্রের এক অনন্য ভূষণ যা জগতের অন্য কোনো নবী, রাসূল, সংস্কারক কিংবা দার্শনিকের মাঝে পাওয়া যায় না। নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর প্রতি তার অনুসারীদের যতটা ভক্তি আর অপরিসীম ভালোবাসা ছিলো তা জগতের মানবীয় ইতিহাসে বিরল। তাছাড়া তারা কিন্তু রাস্তার ফকির কিংবা নি¤œশ্রেণীর ছিলেন না। তারা ছিলেন সমাজে প্রতিষ্ঠিত একেকজন বিত্তশালী ও সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি, তার নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজন, যারা তার বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ জীবনের উভয় দিক সম্পর্কে সম্যক অবহিত। মক্কি জীবনের প্রথম বারোটি বছর মুসলমানগণ মূর্তিপূজারীদের হাতে বিভীষণ জুলুম আর নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তবুও তাদের সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলছিল। গোষ্ঠীর সম্পর্কে ফাটল ধরেছিল। অনেক বহির্দেশে নির্বাসিত হচ্ছিলো। তবুও তাদের অব্যাহত যাত্রা থেমেছিল না। যদিও ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীদের অনেককে দেয়া হত নিষ্ঠুর শাস্তি, করা হত ভয়াবহ অত্যাচার তবুও সেখানে মুসলমানদের সংখ্যাই বেড়েই চলছিল। মুরতাদদের সংখ্যা ছিল অতি সামান্য। এই অবিচলতা আর ক্রমবর্ধমান উন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্বের অনন্য এক সম্পদের মালিক মুহাম্মদের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম ব্যক্তিত্বের কি কোন গুরুত্ব ছিল না?
Dr. Tarachand M.A.P.H.D (Oxon)-এর কলমে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম
ইলাহাবাদ ইউনির্ভাসিটির প্রফেসর Dr. Tarachand M.A.P.H.D (Oxon) Mr. Davenport Gi Apology for Muhammad এর সংশোধিত সংস্করণ Muhammad Amins -এর ভূমিকার পঞ্চম পৃষ্ঠায় বলেন, “অমুসলিমদের উচিত ইসলামের নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম এর জীবনাদর্শকে ভালোভাবে জানা। যিনি ছিলেন গরিবের বন্ধু; অত্যাচারীর আর নিপীড়িতদের কাছের মানুষ। এতিম আর অসহায়দের সহায়।”
সর্বোপরি বলতে হয়, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া-সাল্লাম হলেন মহান আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এবং ইতিহাসের অনন্য ব্যতিক্রমী পুরুষ। যার সমগ্র জীবন ইতিহাস পূর্ণাঙ্গ ও প্রমাণ্য দলিল হিসেবে লিপিবদ্ধ রয়েছে। তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলীই নয়, জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তার দৈনন্দিত জীবন দ্বারার প্রতিটি খুটিনাটি বিষয় ইতিহাসের পৃষ্ঠায় সংরক্ষিত। তার সামান্য কিছু এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।