জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
আল্লাহ্ তাআলা বলেছেন:
کِتٰبٌ اَنۡزَلۡنٰہُ اِلَیۡکَ مُبٰرَکٌ لِّیَدَّبَّرُوۡۤا اٰیٰتِہٖ وَ لِیَتَذَکَّرَ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۲۹﴾
“এক মুবারক কিতাব, আপনার প্রতি নাযিল করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসমূহে তাদাব্বুর করে (গভীরভাবে চিন্তা করে) এবং যাতে বোধশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরা উপদেশ গ্রহণ করে।”[সূরা সোয়াদ, আয়াত: ২৯]
তিনি আরও বলেন:
اَفَلَا یَتَدَبَّرُوۡنَ الۡقُرۡاٰنَ اَمۡ عَلٰی قُلُوۡبٍ اَقۡفَالُہَا ﴿۲۴﴾
তবে কি তারা কুরআন নিয়ে গভীর চিন্তা করে না? নাকি তাদের অন্তরসমূহে তালা রয়েছে?”[সূরা মুহাম্মদ ৪৭:২৪]
কুরআন তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে- যেভাবে পড়লে ব্যক্তির একাগ্রতা বাড়ে সেভাবে তেলাওয়াত করা। যদি মুখস্থ থেকে পড়লে একাগ্রতা বাড়ে তাহলে সেটাই উত্তম। আর যদি মুসহাফ থেকে পড়লে কিংবা মোবাইল থেকে পড়লে একাগ্রতা বাড়ে তাহলে সেটা করা উত্তম।
ইমাম নববী (রহঃ) ‘আল-আযকার’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা- ৯০-৯১) বলেন:
“মুসহাফ থেকে কুরআন পড়া মুখস্থ থেকে পড়ার চেয়ে উত্তম। আমাদের মাযহাবের আলেমগণ এমনটি বলেছেন। সলফে সালেহীনদের থেকেও এটাই প্রসিদ্ধ অভিমত। তবে, এটি সর্বক্ষেত্রে নয়। বরঞ্চ মুখস্থ থেকে তেলাওয়াতকারীর তাদাব্বুর, তাফাক্কুর, মন ও দৃষ্টির উপস্থিতি এভাবে একত্রিত হয় যা মুসহাফ থেকে তেলাওয়াতকারীর হয় না। অতএব, মুখস্থ থেকে তেলাওয়াত করাই উত্তম। আর যদি উভয় প্রকারের পড়া সম-মানের হয় তাহলে মুসহাফ থেকে পড়াই উত্তম। সলফে সালেহীনদের এটাই উদ্দেশ্য।
★মুসহাফ দেখে কুরআন তিলাওয়াত এর গুরুত্বঃ-
চোখ, মুখ এবং মনের একত্র আমল
*মুসহাফ দেখে তিলাওয়াত করলে তিনটি অঙ্গ একত্রে ইবাদতে অংশ নেয়:
চোখ: কুরআনের আয়াতের দিকে তাকানো
জবান: তিলাওয়াত করা
হৃদয়: আয়াতের অর্থ ও ভাব উপলব্ধি করা
এভাবে বহু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মাধ্যমে ইবাদত হওয়ায় এর ফজিলত বেড়ে যায়।
*কুরআন দেখা নিজেই একটি ইবাদত
অনেক হাদিসে এসেছে, কুরআনের দিকে তাকানোই একটি সওয়াবের কাজ:
قال النبي ﷺ: "النظر في المصحف عبادة"
নবী করিম (সা.) বলেছেন:
"মুসহাফের দিকে তাকানো ইবাদত।"
(দারিমি, ইবন আবি শায়বা)
*শুদ্ধ উচ্চারণ ও ভুল থেকে বাঁচার উপায়
মুখস্থ তিলাওয়াতের সময় অনেক সময় ভুল হয়ে যেতে পারে, কিন্তু মুসহাফ দেখে পড়লে ভুল সংশোধনের সুযোগ থাকে। এটি কুরআন সঠিকভাবে পড়ার জন্য একটি নিরাপদ পদ্ধতি।
*শিক্ষা ও হিফজের সহায়ক
যারা কুরআন শিক্ষা নিচ্ছেন বা হিফজ করছেন, তাদের জন্য মুসহাফ দেখে তিলাওয়াত করা অপরিহার্য। এটি আয়াত মনে রাখার পাশাপাশি অনুশীলনে সাহায্য করে।
*সাহাবায়ে কেরামের আমল
অনেক সাহাবি কুরআন তিলাওয়াত করতেন মুসহাফ দেখে। তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীনরাও মুসহাফ দেখে তিলাওয়াতের ওপর গুরুত্ব দিতেন।
শাইখ বিন বায (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল: মুসহাফ থেকে কুরআন পড়া কিংবা মুখস্থ থেকে কুরআন পড়ার মধ্যে সওয়াবের মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে? যখন মুসহাফ থেকে কুরআন পড়া হয় তখন কি দুই চোখ দিয়ে পড়াই যথেষ্ট; নাকি ঠোঁট নাড়তে হবে? নাকি শব্দও বের করতে হবে?
জবাবে তিনি বলেন: আমি এমন কোন দলিল জানি না যাতে মুসহাফ থেকে কুরআন পড়া বা মুখস্থ থেকে কুরআন পড়ার মধ্যে পার্থক্য করা হয়েছে। তবে, শরিয়তের বিধান হচ্ছে- তাদাব্বুর ও মনোযোগ দিয়ে পড়া। সেটা মুসহাফ থেকে হোক কিংবা মুখস্থ থেকে হোক। পাঠকারী যদি নিজে শুনে তখন এটাকে পড়া বলা হবে। শুধু চোখ দিয়ে দেখা যথেষ্ট নয়। অনুরূপভাবে উচ্চারণ না করে মনে মনে পড়াও যথেষ্ট নয়। সুন্নত হচ্ছে- তেলাওয়াতকারী উচ্চারণ করবে এবং তাদাব্বুর করবে। সুতরাং মুখস্থ থেকে পড়া যদি অন্তরের একাগ্রতা ও গভীর চিন্তা-ভাবনা করার অধিক উপযুক্ত হয় তাহলে সেটাই উত্তম। আর যদি মুসহাফ থেকে পড়া অন্তরের একাগ্রতা ও গভীর চিন্তা-ভাবনার অধিক উপযুক্ত হয় তাহলে সেটাই উত্তম। আল্লাহ্ই তাওফিকদাতা।[মাজমুউ ফাতাওয়াস শাইখ বিন বায (২৪/৩৫২)]
(কিছু অংশ সংগৃহীত।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কুরআনের নেকী তেলাওয়াতে হয়। কোনো মাধ্যমে নয়। তবে যে মাধ্যমে তেলাওয়াত করলে মনোযোগ বেশি থাকে সে মাধ্যমেই কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত। এর জন্য সবচেয়ে ভালো মুসহাফ দেখে তেলাওয়াত করা। এই জন্যই উলামায়ে কেরামগন মুসহাফ দেখে তিলাওয়াত করাকে অধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
তবে কেহ কেহ বলেছেন যে ডিজিটাল ডিভাইস থেকে কুরআন তেলাওয়াত করলে এতে নেকীর কোনো কমবেশি হবে না।
তবে মোবাইলে থেকে পড়তে গিয়ে কল, রিংটোন, নোটিফিকেশন ইত্যাদি আসার কারণে যদি মনোযোগ ব্যাহত হয়, তবে অবশ্যই নেকী কম হবে।
এক্ষেত্রে মুসহাফ দেখে তিলাওয়াত করার ছওয়াবই বেশি হবে।
★সুতরাং মোবাইলে কুরআনের অ্যাপস থেকে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত করা কিংবা খতম দেওয়া যাবে।
এমনি কুরআন থেকে না পড়ে প্রতিদিন মোবাইল থেকে কুরআন তিলাওয়াত করলে যদি পরিপূর্ন মনোযোগ থাকে,সেক্ষেত্রে সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।
তবে মোবাইল থেকে পড়তে গিয়ে কল, রিংটোন, নোটিফিকেশন ইত্যাদি আসার কারণে যদি মনোযোগ ব্যাহত হয়, তবে অবশ্যই নেকী কম হবে।
এক্ষেত্রে মুসহাফ দেখে তিলাওয়াত করার ছওয়াবই বেশি হবে।