আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
39 views
in ঈমান ও বিশ্বাস (Faith and Belief) by (66 points)
১. কোরআনের দলিল:

سورة البينة (সূরা আল-বাইয়্যিনাহ), আয়াত ৭:

> إِنَّ ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ وَعَمِلُوا۟ ٱلصَّـٰلِحَـٰتِ أُو۟لَـٰٓئِكَ هُمْ خَيْرُ ٱلْبَرِيَّةِ

অর্থ: যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে, তারাই হচ্ছে সৃষ্টির মধ্যে শ্রেষ্ঠ।
(সূরা আল-বাইয়্যিনাহ, আয়াত ৭)


তাফসির: “খাইরুল বরিয়্যাহ” বলতে অনেক মুফাসসির ব্যাখ্যা করেছেন—এরা ফেরেশতাদের থেকেও উত্তম, কারণ ফেরেশতারা গোনাহ করতে পারে না, কিন্তু মানুষ গোনাহের ঝুঁকির মধ্যে থেকেও আল্লাহর ইবাদত করে। সেই পরিশ্রম ও নিয়ত তাদের মর্যাদাকে উঁচু করে।

 ২. হাদিসের দলিল:

✅ হাদিস:

আবু দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন:

> "علم العالم أفضل من عبادة العابد، وفضل العالم على العابد كفضل القمر ليلة البدر على سائر الكواكب"

অর্থ: একজন আলেম (জ্ঞানী ব্যক্তি)-এর মর্যাদা একজন শুধু মাত্র এবাদতকারী ব্যক্তির চেয়ে বেশি। আর আলেমের মর্যাদা অন্যান্য মুসলমানদের তুলনায় এমন, যেমন পূর্ণিমার চাঁদের আলো অন্যান্য নক্ষত্রের উপর।

 [সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস: ২২৪]

 এই হাদিসের ব্যাখ্যায় অনেক আলেম বলেন—মানুষ জ্ঞান, নেক আমল ও ত্যাগের মাধ্যমে এমন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে যা ফেরেশতার চেয়েও বড় মর্যাদা।

 ৩. যুক্তিগত ব্যাখ্যা (আক্বলী দালিল):

ফেরেশতারা গোনাহ করতে পারে না কারণ তারা স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিহীন, সবসময় আল্লাহর ইবাদতে থাকে। কিন্তু মানুষ হচ্ছে নফস, শয়তান ও দুনিয়ার প্রলোভনের মধ্যে থেকেও যদি আল্লাহর দিকে ফিরে আসে, ইবাদত করে, ত্যাগ স্বীকার করে, তাহলে তার আমলের ওজন অনেক বেশি হয়।


আসসালামু আলাইকুম, উপরোক্ত রেফারেন্স দিয়ে একজন বলছে মানুষ চাইলে ফেরেশতা থেকে উত্তম হতে পারে।আবার চাইলে শয়তান থেকে বেশি খারাপ হতে পারে। তার এই দাবিটি কি সঠিক?কারণ আমি জানি ফেরেশতারা নিষ্পাপ। একটু যদি বিস্তারিত ব্যাখা করতেন বিষয়টি।

1 Answer

0 votes
by (636,510 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 
"আল্লাহ তাদের মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেন যারা ঈমান এনেছে এবং যারা জ্ঞান লাভ করেছে তাদেরকে অনেক উচ্চ মর্যাদা দান করেন।"
(সূরা আল-মুজাদালাহ, ৫৮:১১)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ- 
নিশ্চয়ই ফেরেশতারা তাদের পাখা বিছিয়ে দেয়, জ্ঞান অন্বেষণকারীর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে।"
(আবু দাউদ: ৩৬৪১)

হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলেম ও তালিবে ইলমের প্রশংসা করে ইরশাদ করেছেন-

وَإِنّ الْمَلَائِكَةَ لَتَضَعُ أَجْنِحَتَهَا رِضًا لِطَالِبِ الْعِلْمِ، وَإِنّهُ لَيَسْتَغْفِرُ لِلْعَالِمِ مَنْ فِي السّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ، حَتّى الْحِيتَان فِي الْمَاءِ، وَفَضْلُ الْعَالِمِ عَلَى الْعَابِدِ كَفَضْلِ الْقَمَرِ عَلَى سَائِرِ الْكَوَاكِبِ.

নিশ্চয় ফেরেশতাগণ তালিবে ইলমের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিজেদের ডানা বিছিয়ে দেন। আর আলেমের জন্য মাগফিরাত কামনা করতে থাকে আসমান-যমীনের সবকিছু। এমনকি পানির নিচে থাকা মাছ। (অন্য বর্ণনায়, গর্তের পিপিলিকা।) আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর তেমন তারকারাজির মাঝে চন্দ্র যেমন। 
(মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ২১৭১৫; জামে তিরমিযী, হাদীস ২৬৮২, ২৬৮৫)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবীজি (সাঃ) বলেছেন, ‘মুমিন বান্দা আল্লাহর কাছে সাধারণ ফেরেশতার চেয়ে অধিক মর্যাদাবান।’ (বায়হাকি, শুয়াবুল ঈমান : ১/১৭৪)। 

মহানবী (সাঃ) বলেন, বিচার দিবসে আল্লাহর কাছে মানুষ অপেক্ষা অন্য কোনো সৃষ্টি অধিক সম্মানের হবে না। জিজ্ঞেস করা হয়, হে আল্লাহর রাসুল! আল্লাহর নিকটবর্তী ফেরেশতাদের ক্ষেত্রেও কি এটা প্রযোজ্য হবে? অর্থাৎ নিকটবর্তী ফেরেশতাদের চেয়েও কি মানুষের মর্যাদা বেশি? মহানবী (সা.) প্রত্যুত্তরে বলেন, ‘নিকটবর্তী ফেরেশতারাও এক শ্রেণির মানুষের চেয়ে অধিক মর্যাদাবান হবে না।’ (বায়হাকি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা ১৭৪)

নবীজি (সাঃ) আরও ইরশাদ করেছেন, ‘একজন সাধারণ ঈমানদার আল্লাহর কাছে কিছু কিছু ফেরেশতা থেকেও অধিক সম্মানী। অর্থাৎ মুমিনমাত্রই বিশেষ বিশেষ ফেরেশতা থেকে আল্লাহর কাছে বেশি সম্মানী।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : ৩/৫৩) 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
যেসব মুমিন: ইলম অর্জন করে,নেক আমল করে,আল্লাহর পথে জিহাদ করে,তাওবা করে ফিরে আসে,সবর ও তাওয়াক্কুল করে
তারা অনেক সময় ফেরেশতাদের থেকেও উচ্চ মর্যাদায় স্থান পায়। কারণ তারা ইচ্ছাশক্তি দিয়ে সৎপথ বেছে নেয়, যা ফেরেশতাদের নেই।

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ রহঃ বলেন,

قال شيخ الإسلام في الفتاوى: وليس تفضيل بعض المخلوقات على بعض باعتبار ما خلقت منه فقط، بل قد يخلق المؤمن من الكافر والكافر من المؤمن.. وآدم خلقه الله من طين فلما سواه ونفخ فيه من روحه وأسجد له الملائكة وفضله عليهم بتعليمه أسماء كل شيء وبأنه خلقه بيده وبغير ذلك فهو وصالحوا ذريته أفضل من الملائكة وإن كان هؤلاء مخلوقين من طين وهؤلاء مخلوقين من نور.

وهذه المسألة اختلف فيها أهل العلم فقال بعضهم بتفضيل الملائكة، وقال بعضهم بتفضيل بني آدم، واستدلوا لذلك بأدلة كثيرة يطول ذكرها، تجدها مفصلة في فتح الباري وفي القرطبي، وقد عقب القرطبي على الخلاف فقال: قال بعض العلماء: لا طريق إلى القطع بأن الأنبياء أفضل من الملائكة أو أن الملائكة أفضل من الأنبياء، لأن طريق ذلك خبر الله تعالى أو خبر رسوله صلى الله عليه وسلم أو الإجماع، وليس ههنا شيء من ذلك،

শাইখ আল-ইসলাম ফতোয়ায় বলেন: কিছু সৃষ্টির উপর অন্যদের শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাদের সৃষ্টির উপর নির্ভর করে না, বরং মুমিন কাফের থেকে এবং কাফের মুমিন থেকে সৃষ্টি হতে পারে। আল্লাহ আদমকে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, তারপর যখন তিনি তাকে সমান করলেন এবং তার মধ্যে তাঁর রূহ ফুঁকে দিলেন এবং ফেরেশতাদের তাকে সিজদা করলেন এবং তাকে সকল জিনিসের নাম শিক্ষা দিয়ে এবং তাকে নিজের হাতে সৃষ্টি করে তাদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিলেন, তখন তিনি এবং তার সৎ সন্তানরা ফেরেশতাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, যদিও পূর্ববর্তীরা মাটি দিয়ে এবং পরবর্তীরা আলো দিয়ে সৃষ্টি হয়েছিল।

এই বিষয়টি নিয়ে পণ্ডিতদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। তাদের কেউ কেউ বলেছিলেন যে ফেরেশতারা শ্রেষ্ঠ, আবার কেউ কেউ বলেছিলেন যে আদমের সন্তানরা শ্রেষ্ঠ। তারা এর সপক্ষে অনেক প্রমাণ পেশ করেছে, যেগুলো উল্লেখ করতে অনেক সময় লাগবে। আপনি ফাতহুল বারী এবং আল-কুরতুবীতে এগুলো বিস্তারিতভাবে পাবেন। আল-কুরতুবী এই মতবিরোধের উপর মন্তব্য করে বলেন: কিছু পণ্ডিত বলেছেন: নিশ্চিত হওয়ার কোন উপায় নেই যে নবীরা ফেরেশতাদের চেয়ে উত্তম অথবা ফেরেশতারা নবীদের চেয়ে উত্তম, কারণ এটি করার উপায় হল সর্বশক্তিমান মহান আল্লাহর কালাম অথবা তাঁর রাসূলের হাদীস, অথবা ইজমা তথা ঐকমত্য, এবং এখানে এর কিছুই নেই।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...