আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
127 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (63 points)
edited by
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
১। https://www.youtube.com/shorts/TEOmPMYboCM এই ভিডিওতে একজন কুরআন শিক্ষিকা কুরআন তিলাওয়াতরত অবস্থায় মারা যান অর্থাৎ তার সুন্দর মৃত্যু ঘটেছে। তিনি হিজাব পরিহিতা ছিলেন, নিকাব নয়। যদিও তিনি বৃদ্ধা বলেই দেখা যাচ্ছে ভিডিওতে, তার উপর পর্দার বিধান শিথিল হওয়ারই কথা। এখন তিনি যদিও নিকাব পরছেন না এরপরও সুন্দর মৃত্যু পেয়েছেন। আল্লাহর অপছন্দনীয় কোন কাজ করলে তো হুসনুল খতিমাহ হওয়ার কথা নয়। তাহলে কি আমরাও নিকাব ব্যতীত শুধু হিজাব পরতে পারব? শেষ পর্যন্ত তো সুন্দর মৃত্যুই আমাদের লক্ষ্য। এমনও তো হতে পারে যে আমরা নিকাব করলাম না কিন্তু একটা সুন্দর মৃত্যু হল আমাদের।
২। এক ব্যক্তি খুব শান্তশিষ্ট, খুব ঠাণ্ডা মাথায় সব কাজ সমাধা করেন কিন্তু সালাতের সময় এমন গতিতে পড়েন যেন দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে। আরেক ব্যক্তি একটু অস্থির স্বভাবের, কিঞ্চিৎ মাথা গরম কিন্তু সালাত খুব ধীরে সুস্থে শেষ করেন। এই ২ ব্যক্তির মধ্যে আল্লাহর কাছে কে অধিক প্রিয়?
৩। পশ্চিমা দেশে গাড়ি বাড়ি কিনতে গেলে ডাউন পেমেন্টে কেনা যায়। যেমন প্রথমে অল্প কিছু টাকা বা কোন টাকা না দিয়ে কিনে ফেলা এরপর আস্তে আস্তে বাকিটা শোধ করা। এভাবে পেমেন্ট করার শরয়ী হুকুম কি? আর কেউ যদি ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি কেনেন এরপর আস্তে আস্তে শোধ করতে থাকেন(সময়টা ২০-৩০ বছরও হতে পারে) কিন্তু এই শোধ করা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের গ্রামের গরিব বাচ্চাদের মেধাবৃত্তি দিতে থাকেন তবে ইসলাম একে কোন দৃষ্টিতে দেখে?

1 Answer

0 votes
by (678,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


(০১)
চেহারার পর্দা করাও আবশ্যক।   
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
    
وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا ۖ وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَىٰ جُيُوبِهِنَّ ۖ وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الْإِرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَىٰ عَوْرَاتِ النِّسَاءِ ۖ وَلَا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ ۚ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَ الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ [٢٤:٣١] 

ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। {সূরা নূর-৩০-৩১}

يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلَا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلًا مَعْرُوفًا (32) وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلَا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الْأُولَى

হে নবীর স্ত্রীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও [ইহুদী খৃষ্টান)। তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় পাও তবে আকর্ষণধর্মী ভঙ্গিতে কথা বলনা, যাতে যাদের মাঝে যৌনলিপ্সা আছে তারা তোমাদের প্রতি আকৃষ্ট হয়। বরং তোমরা স্বাভাবিক কথা বল। এবং তোমরা অবস্থান কর স্বীয় বসবাসের গৃহে, জাহেলী যুগের মেয়েদের মত নিজেদের প্রকাশ করো না। {সূরা আহযাব-৩২}

وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعًا فَاسْأَلُوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنَّ

অর্থ : আর তোমরা তাঁর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর স্ত্রীগণের কাছে কিছু চাইলে পর্দার আড়াল থেকে চাইবে। এটা তোমাদের অন্তরের জন্য এবং তাঁদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। {সূরা আহযাব-৫৩}

হাদীস শরীফে এসেছেঃ  
আবদুল্লাহ ইবন উমর রাযি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
 وَلاَ تَنْتَقِبِ المَرْأَةُ المُحْرِمَةُ، وَلاَ تَلْبَسِ القُفَّازَيْنِ
‘আর ইহরাম গ্রহণকারী নারী যেন নিকাব ও হাতমোজা পরিধান না করে।’ (বুখারী : ১৮৩৮)
,
এই হাদীস থেকে বোঝা যায়, নবী  ﷺ যুগে মেয়েরা তাদের হাত ও চেহারা ঢাকতেন।

আয়েশা রাযি. হজ অবস্থায় মহিলা সাহাবীদের পর্দার যে বিবরণ দিয়েছেন তা থেকে অনুমান করা যায় পর্দা রক্ষায় তাঁরা কতটা আন্তরিক ছিলেন। তাঁরা স্বাভাবিক অবস্থায় তো বটেই ইহরাম অবস্থায় যখন মুখ ঢাকতে নিষেধ করা হয়েছে সেখানেও পরপুরুষের সামনে থেকে নিজেদের চেহারা আড়াল করেছেন। আয়েশা রাযি. বলেন,

كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهﷺ مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.

‘আমরা ইহরাম অবস্থায় সাল্লাল্লাহু ﷺ-এর সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গীনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।’ (আবূ দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮)

আসমা বিনত আবী বাকর রাযি. বলেন, আমরা পুরুষদের থেকে আমাদের চেহারা আবৃত রাখতাম। (মুস্তাদরাক হাকেম : ১৬৬৪)

ফাতিমা বিনতুল মুনযির রহ. বলেন, ‘আমরা আসমা বিনতে আবু বকর রাযি.-এর সঙ্গে ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে আমাদের চেহারা ঢেকে রাখতাম।’ (ইমাম মালেক, মুয়াত্তা: ১/৩২৮; হাকিম, মুসতাদরাক : ১/৪৫৪)

মুফতী মুহাম্মদ শাফী রহ. লিখেছেন, ‘ইমাম চতুষ্টয়ের মধ্য থেকে ইমাম মালিক, ইমাম শাফি’ঈ ও ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল রহ. তিনজনই মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার মোটেই অনুমতি দেন নি- তা ফিতনার আশংকা থাকুক বা না থাকুক। ইমাম আবূ হানীফা রহ. ফিতনার আশংকা যদি না থাকে- এই শর্তে খোলা রাখার কথা বলেন। কিন্তু স্বাভাবিকভাবে এই শর্ত পূরণ হবার নয়, তাই হানাফী ফকীহগণ গায়র মাহরাম পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল ও হাতের কবজি খোলা রাখার অনুমতি দেন নি।’ (মা‘আরিফুল কুরআন : ৭/২১৪)

আরো জানুনঃ

★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন, 
কাহারো কোনো ব্যাক্তিগত আমল শরীয়তের দলিল নয়।
শরীয়তের দলিল হলো কুরআন হাদীস। 
আর উপরে উল্লেখিত দলিল দ্বারা প্রমানিত হয় যে চেহারার পর্দা করাও আবশ্যক।   

সুতরাং নিকাব ব্যতীত শুধু হিজাব পরার অনুমতি নেই।

(০২)
শুধু নামাজের দিক লক্ষ্য করেই কে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়,তাহা নির্ধারন করা যায়না।

তার সমস্ত ইবাদত,মুয়ামালাত,মুয়াশারাত,আখলাক ইত্যাদি যাবতীয় সাইট বিবেচনা করেই বলা যাবে যে সে আল্লাহর কাছে বেশি প্রিয়।

(০৩)
 এভাবে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে শরীয়তের খেলাফ কোনো শর্ত না থাকলে তাহা জায়েজ।

ব্যাংক লোন নিয়ে বাড়ি ক্রয় কোনোভাবেই জায়েজ নেই।
এক্ষেত্রে এই লোন শোধ করা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই দেশের গ্রামের গরিব বাচ্চাদের মেধাবৃত্তি দেয়া জায়েজ আছে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (63 points)
আমার প্রশ্ন আসলে অন্য কিছু ছিল। সেটা হল বিভিন্ন দলিল থেকে প্রতীয়মান হয় যে নিকাব করা বাধ্যতামূলক, অর্থাৎ নিকাব না করলে আল্লাহর ক্রোধভাজন হবে। আর যার উপর আল্লাহর ক্রোধ হয়, আল্লাহ খুশি হন না যাকে নিয়ে তার তো সুন্দর মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। সেই হিসেবে তো এই উস্তাজার উপরও আল্লাহর ক্রোধ থাকার কথা(আস্তাগফিরুল্লাহ যদি আমি না জেনে মন্তব্য করে থাকি)। তাহলে তার সুন্দর মৃত্যু হল কীভাবে? 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...