আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
35 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (24 points)
আসসালামু আলাইকুম
আমি প্রায় ২ বছর যাবত একজন ছেলের সাথে গোপনে বিবাহিত অবস্থায় আছি। আমার স্বামী অন্য বিভাগে থাকে এবং আমি অন্য বিভাগে। এ জন্য আমাদের ৩/৪ মাসেও দেখা হয় না। দূরত্বের কারনে আমাদের মাঝে অনেক মনোমালিন্য হয়। উনি আমাকে সময় দেয় না, সে জন্য আমাদের মাঝে অনেক ঝগড়া হয়। ঝগড়ার সময় আমি ১ বার আমার কথার দ্বারা তাকে প্রচন্ড আঘাত করে ফেলি। এর পর তার কাছে বহুবার ক্ষমা চেয়েছি। অনেক কান্না কাটি করেছি। আমি বলেছি, উনি যদি আমার সামনে আসেন, তাহলে আমি তার পা ধরে ক্ষমা চাইবো। কিন্ত উনি বলেছেন উনি আমার সাথে আর থাকতে চান না। আমি তাকে বহুবার বলেছি রাগের মাথায়, আমার কষ্টের জায়গা থেকে ওমন হয়ে গেছে, উনি যাতে আমাকে ক্ষমা করে দেন। কিন্ত উনি কোনো ভাবেই আমার সাথে আর থাকতে চাচ্ছেন না।
আমি মোটামুটি ধার্মিক মেয়ে। আল্লাহ এর প্রতি আমার ভয় প্রচুর। স্বামী স্ত্রীর বিচ্ছেদ কেও আমি কখনো ভালো চোখে দেখি না। আমার স্বামী মনের দিক দিয়ে অনেক ভালো মানুষ। কোনো নারীর সাথে তার কোনো আলাপ নেই। উনি বলেছেন, আমাকে তালাক দিয়ে দিবেন। আমি যাতে অন্যত্র বিয়ে করে ফেলি।
কিন্তু আমি একবার যেহেতু বিয়ে করেছি, আমি তার সাথেই সারাজীবন থাকতে চাচ্ছি।
এখন আমার প্রশ্ন হচ্ছে, বিয়ের ক্ষেত্রে কোন পর্যায়ে গেলে তালাক দেয়া অনিবার্য হয়ে যায়? স্বামী স্ত্রীর মনোমালিন্য হলে, ইসলামের শরীয়তে সেটা কিভাবে ঠিক করার বিধান? স্বামী স্ত্রীর তালাক হয়ে গেলে, আল্লাহ তায়ালা দুজন কেই ক্ষমা করবেন কিনা? আমি যদি তালাক না নিয়ে সারাজীবন তার থেকে দূরে থাকি, তাহলে উনার আমার প্রতি কি কি দায়িত্ব পালন করা উচিত হবে?

প্লিজ উত্তর দিবেন দয়া করে। আমি আমার সংসার ভাঙতে চাই না

1 Answer

0 votes
by (637,050 points)
জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم

কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া কোন মহিলা তার স্বামী থেকে তালাক চাওয়া বা মারাত্মক সমস্যা ছাড়া স্ত্রীকে তালাক দেয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقًا فِيْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ ؛ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ.

‘‘যে কোন মহিলা কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া নিজ স্বামীর নিকট তালাক চাইলো তার উপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে’’। (আবূ দাউদ ২২২৬; তিরমিযী ১১৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২০৫৫)

ইসলামী স্কলারগন বলেছেন, যেসব কারণে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে তা হলোঃ-

★যদি কোনো বাস্তবসম্মত কারণে উভয়ের পক্ষে একসঙ্গে বসবাস করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে।

★যদি স্বামীর মাঝে দৈহিক এমন ত্রুটি থাকে, যার কারণে দাম্পত্যজীবনের স্বাভাবিকতা খুবই দুরূহ হয়ে যায়। যেমন—পাগল হওয়া, যৌন অক্ষম হওয়া, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়া। 
বলা বাহুল্য, স্বামীর মাঝে উক্ত ত্রুটিগুলো থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে ভালোভাবে রাখা সম্ভব নয়।

★স্বামী স্ত্রীর আবশ্যকীয় জরুরত তথা ভরণ-পোষণ দিতে অক্ষম হলে। কেননা, এটা স্ত্রীর মৌলিক অধিকার। 

★শরিয়ত নির্দেশিত কারণ ছাড়া স্বামী স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া বা জুলুম করা।

এটা শারীরিকভাবেও হতে এবং মানসিকভাবে হতে পারে। যেমন—স্ত্রীকে মারধর করা, গালাগাল করা, স্ত্রীকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে বাধা প্রদান করা, বেপর্দা কিংবা হারাম কাজে স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাধ্য করা। 

★স্বামীর মধ্যে দ্বিনদারির প্রতি অবহেলা চরম পর্যায়ের হলে। যেমন—নামাজ না পড়া, মদ পান করা, পরকীয়া কিংবা চারিত্রিক অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হওয়া। 

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মনোমালিন্য বা কলহ হলে ইসলামিক শরীয়তে তা মীমাংসার জন্য কিছু নির্দিষ্ট দিকনির্দেশনা ও পদ্ধতি রয়েছে। ইসলামে বিবাহ একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্ধন, এবং এই সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা ও ভালোভাবে পরিচালনার জন্য কুরআন ও হাদীসে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

★পারস্পরিক সংলাপ ও বোঝাপড়া

প্রথমেই, স্বামী ও স্ত্রী উভয়ের উচিত একে অপরের সঙ্গে শান্তিপূর্ণভাবে কথা বলা, একে অপরের কষ্ট বা অভিযোগ মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং বোঝার চেষ্টা করা।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 
(অনুবাদ) 
"...তোমরা যদি তাদের (নারীদের) সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো, তবে তারা তোমাদের জন্য কল্যাণকর হতে পারে, যদিও তোমরা তাদের অপছন্দ করো..."
(সূরা আন-নিসা: ১৯)


★নসীহত ও উপদেশ দেওয়া

যদি স্ত্রী বা স্বামীর কোনো আচরণে সমস্যা দেখা দেয়, তবে প্রথমে তাকে সুন্দরভাবে উপদেশ দেওয়া এবং বুঝিয়ে বলা উচিত।

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 
(অনুবাদ) 
"তোমরা যাদের অবাধ্যতা আশঙ্কা করো, প্রথমে তাদের উপদেশ দাও..."
(সূরা আন-নিসা: ৩৪)

★আলাদা থাকা।

যদি উপদেশে কাজ না হয়, তখন স্বামী কিছু সময়ের জন্য স্ত্রী থেকে পৃথক থাকতে পারে—কিন্তু সেটা মারাত্মক বিচ্ছেদের উদ্দেশ্যে নয়, বরং তাকে নিজের ভুল বোঝানোর একটি পদ্ধতি হিসাবে।

★মধ্যস্থতা।

যদি সমস্যার সমাধান না হয়, তাহলে উভয় পক্ষের পরিবারের একজন বিশ্বস্ত সদস্যকে নিয়ে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করতে বলা হয়েছে।

★তালাককে সর্বশেষ বিকল্প হিসেবে রাখা।

ইসলামে তালাকের অনুমতি রয়েছে, তবে সেটি অত্যন্ত অপছন্দনীয় (মাকরুহ)। তাই যদি সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে তালাক একান্ত প্রয়োজনীয় হলে তা নিয়ম অনুসারে করা যেতে পারে।

স্ত্রী অবাধ্য হলে করনীয় জানুনঃ- 

স্বামী স্ত্রীর তালাক হয়ে গেলে, এক্ষেত্রে শরীয়তে গ্রহণযোগ্য এমন ওযর ছাড়া তালাক দিলে তালাক দাতার গুনাহ হবে।
অন্যজনের গুনাহ হবেনা।

এক্ষেত্রে একে অপরকে ক্ষমা করে দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে খালেস দিলে তওবা করলে আল্লাহ তায়ালা দুজন কেই ক্ষমা করবেন।

আপনি যদি তালাক না নিয়ে সারাজীবন তার থেকে দূরে থাকি, তাহলে এটি কোনোভাবেই জায়েজ হবেনা।সুতরাং এমতাবস্থায় উনার আপনার প্রতি দায়িত্ব পালনের তো প্রশ্নই উঠেনা। 

আরো জানুনঃ- 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...