জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
তালাকের বিষয় খুবই মারাত্মক, তাই স্বামী থেকে তালাক চাওয়া ইত্যাদি থেকে বিরত থাকতে হবে।
হাদীস শরীফে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " ثَلاَثٌ جِدُّهُنَّ جِدٌّ وَهَزْلُهُنَّ جِدٌّ النِّكَاحُ وَالطَّلاَقُ وَالرَّجْعَةُ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ .
আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তিনটি বিষয় এমন যেগুলির যথার্থ তো যথার্থই এমনকি সেগুলোর কৌতুকের ব্যবহারও যথার্থ: বিবাহ, তালাক, রাজআত। - ইবনু মাজাহ ২০৩৯, তিরমিজী হাদিস নম্বরঃ ১১৮৫
ইমাম আবূ ঈসা (রহঃ) বলেন, এই হাদীসটি হাসান-গারীব।
★শরীয়তের বিধান হল "তালাক দিয়ে দিবো","ছেড়ে দিয়ে দিবো", এ কথা গুলি বলার দ্বারা তালাক পতিত হবে না।
কারণ, ভবিষ্যতের দিকে তালাকের সম্বন্ধ করলে তালাক পতিত হয় না।
এগুলো ওয়াদা মূলক কথা মাত্র,এতে তালাক পতিত হয়না।
(রদ্দুল মুহতার ৪/২৭৪; হেদায়াহ ১/২৮০।)
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ
انا اطلق نفسی لم یقع لا نھا وعد (الدر المختار علی ہامش رد المحتار باب التفویض ج ۔ ۲ ص ۶۵۷ط۔س۔ج۳ص۳۱۹) ظفیر۔
সারমর্মঃ
আমি নিজ নফসকে তালাক দিবো,বললে তালাক পতিত হবেনা।
কেননা এটি ওয়াদা।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে উক্ত বাক্যগুলি যদি বিবাহের পরেও বলে থাকে,তবুও তালাক পতিত হবেনা।
আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া কোন মহিলা তার স্বামী থেকে তালাক চাওয়া হারাম ও কবীরা গুনাহ্।
তাই আপনি আর কোনো সময়েই স্বামী থেকে তালাক চাইবেননা।
সাওবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
أَيُّمَا امْرَأَةٍ سَأَلَتْ زَوْجَهَا طَلَاقًا فِيْ غَيْرِ مَا بَأْسٍ ؛ فَحَرَامٌ عَلَيْهَا رَائِحَةُ الْـجَنَّةِ.
‘‘যে কোন মহিলা কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া নিজ স্বামীর নিকট তালাক চাইলো তার উপর জান্নাতের সুগন্ধি হারাম হয়ে যাবে’’। (আবূ দাউদ ২২২৬; তিরমিযী ১১৮৭; ইব্নু মাজাহ্ ২০৫৫)
সাওবান (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:
الْـمُخْتَلِعَاتُ ؛ هُنَّ الـمُنَافِقَاتُ.
‘‘(কোন মারাত্মক সমস্যা ছাড়া) কোন কিছুর বিনিময়ে তালাক গ্রহণকারিণী মহিলারা মুনাফিক’’। (তিরমিযী ১১৮৬)
তবে কোন মারাত্মক সমস্যা দেখা দিলে কোন কিছুর বিনিময়ে স্বামীর কাছ থেকে তালাক গ্রহণ করা যেতে পারে।
‘আয়িশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা হাবীবা বিন্তে সাহ্লকে তার স্বামী সাবিত বিন্ ক্বাইস বিন্ শাম্মাস মেরে তার একটি হাড় ভেঙ্গে ফেলে। ভোর বেলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে জানানো হলে তিনি সাবিতকে ডেকে পাঠালেন। অতঃপর বললেন: তুমি তার (তার স্ত্রী) কাছ থেকে কিছু সম্পদ নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। সাবিত বললেন: এমনকি চলে হে আল্লাহ্’র রাসূল! তিনি বললেন: হ্যাঁ, চলে। তখন সাবিত বললেন: আমি তাকে দু’টি খেজুরের বাগান দিয়েছি। এখনো তা তারই দখলে। তখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: বাগান দু’টি নিয়ে তাকে ছেড়ে দাও। অতঃপর সাবিত তাই করলেন। (আবূ দাউদ ২২২৮)
ইসলামী স্কলারগন বলেছেন, যেসব কারণে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে তা হলোঃ-
★যদি কোনো বাস্তবসম্মত কারণে উভয়ের পক্ষে একসঙ্গে বসবাস করাটা অসম্ভব হয়ে পড়ে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর কাছ থেকে তালাক চাওয়ার অনুমতি আছে।
★যদি স্বামীর মাঝে দৈহিক এমন ত্রুটি থাকে, যার কারণে দাম্পত্যজীবনের স্বাভাবিকতা খুবই দুরূহ হয়ে যায়। যেমন—পাগল হওয়া, যৌন অক্ষম হওয়া, কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হওয়া।
বলা বাহুল্য, স্বামীর মাঝে উক্ত ত্রুটিগুলো থাকা অবস্থায় স্ত্রীকে ভালোভাবে রাখা সম্ভব নয়।
★স্বামী স্ত্রীর আবশ্যকীয় জরুরত তথা ভরণ-পোষণ দিতে অক্ষম হলে। কেননা, এটা স্ত্রীর মৌলিক অধিকার।
★স্বামীর দীর্ঘ সফরের কারণে স্ত্রী যদি নিজের চারিত্রিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় কিংবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে অক্ষম হয়। আর এর সর্বনিম্ন সময়সীমা চার মাস।
★শরিয়ত নির্দেশিত কারণ ছাড়া স্বামী স্ত্রীকে কষ্ট দেওয়া বা জুলুম করা।
এটা শারীরিকভাবেও হতে এবং মানসিকভাবে হতে পারে। যেমন—স্ত্রীকে মারধর করা, গালাগাল করা, স্ত্রীকে তার পিতা-মাতার সঙ্গে দেখা সাক্ষাতে বাধা প্রদান করা, বেপর্দা কিংবা হারাম কাজে স্ত্রীকে জোরপূর্বক বাধ্য করা।
★স্বামীর মধ্যে দ্বিনদারির প্রতি অবহেলা চরম পর্যায়ের হলে। যেমন—নামাজ না পড়া, মদ পান করা, পরকীয়া কিংবা চারিত্রিক অন্যায়-অপকর্মে লিপ্ত হওয়া।
বুঝা গেল, স্বামীর মধ্যে দ্বীনদারি থাকা আবশ্যক, যেমন স্ত্রীর মধ্যে দ্বীনদারি থাকা অপরিহার্য।
★রুচির ভিন্নতা কিংবা অন্য যেকোনো কারণে বনিবনা না হলে, সংসারে অশান্তি অমিল হলে এবং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা কষ্টকর হলে। এ ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে যে স্বামী কিংবা স্ত্রী কিংবা উভয়ই দ্বিনদার; তবু সংসারে অশান্তি অমিল লেগেই থাকে।