জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
(০১)
মুরসাল হাদীসের হুকুম / গ্রহণযোগ্যতা:
উলামায়ে কেরামের মধ্যে এ বিষয়ে মতভেদ রয়েছে:
১. প্রত্যাখ্যান (অগ্রহণযোগ্য):
অনেক মুহাদ্দিস (হাদীস বিশারদ), যেমন ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম, মুরসাল হাদীসকে দুর্বল (ضعيف) গণ্য করেছেন। কারণ, মাঝখানের সাহাবি কে ছিলেন, তা জানা যায় না। যদিও সাহাবিরা সকলেই ন্যায়পরায়ণ, তবু পরের কোনো নাম না থাকায় তা “মুনকাতি” (ছিন্নসংযোগযুক্ত) হয়ে যায়।
২. শর্তসাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য:
ইমাম আবু হানিফা, ইমাম মালিক ও ইমাম আহমাদ (কোনো বর্ণনায়) বলেছেন, নির্ভরযোগ্য তাবেঈ যদি মুরসাল হাদীস বর্ণনা করেন, এবং তা অন্য দলিল দিয়ে সমর্থিত হয় (যেমন: কিয়াস, ইজমা, বা অন্য সহীহ হাদীস), তবে সেটি গ্রহণযোগ্য হতে পারে।
৩. পূর্ণ গ্রহণযোগ্য (বিশেষ অবস্থায়):
ইমাম শাফি' বলেছেন, মুরসাল হাদীস তখনই গ্রহণযোগ্য, যদি—
বর্ণনাকারী তাবেঈ বিশ্বস্ত হন,
অন্য কোনো সহীহ বা হাসান হাদীস তা সমর্থন করে।
শর্তসাপেক্ষে ‘মুরসাল’ হাদীছ গ্রহণযোগ্য হতে পারে। যেমন ইমাম শাফেঈ সহ অপরাপর ইমামগণ উল্লেখ করেছেন- ১. রাবী উঁচু স্তরের তাবেঈ হওয়া। ২. রাবী যে রাবীর কাছ থেকে ‘ইরসাল’টি করেছেন তাঁকে ‘ছিক্বাহ’ বা বিশ্বস্ত বলে উল্লেখ করা। ৩. বিশ্বস্ত অন্য কোন রাবী’র বিরোধিতা না থাকা এবং ৪. নিম্নোক্ত চারটি শর্তের যে কোন একটি থাকা- যেমন (ক) অন্য কোন মুসনাদ সূত্রে বর্ণিত হওয়া। (খ) অপর কোন মুরসাল সূত্রে বর্ণিত হওয়া। (গ) ছাহাবীর কওল দ্বারা সমর্থিত হওয়া। অথবা (ঘ) অধিকাংশ বিদ্বানের মতামতের অনুকূলে হওয়া। এ সকল শর্ত পাওয়া গেলেই কেবল মুরসাল হাদীছ দলীল হিসাবে বিবেচিত হতে পারে (আল-মাজমূ‘ শারহুল মুহাযযাব ৬/২০৬, তায়সীরু মুছত্বলাহিল হাদীছ পৃঃ ৬০)।
★গরিব হাদীস তিন রকম হতে পারে:
1. গরিব সহীহ হাদীস: এটি গ্রহণযোগ্য।
যদি বর্ণনাকারীরা সব বিশ্বস্ত (ثقة) হন এবং সনদে কোনো বিচ্যুতি না থাকে।
যেমন: সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম-এ অনেক গরিব হাদীস আছে।
2. গরিব হাসান হাদীস: এটি শর্ত সাপেক্ষে গ্রহণযোগ্য।
রাবিরা ন্যায়পরায়ণ, তবে তাদের স্মৃতিশক্তি দুর্বল।
3. গরিব দুর্বল (ضعيف) হাদীস:
যদি রাবিদের মধ্যে কেউ মিথ্যাবাদী, ভুলকারী বা সন্দেহজনক হন।
এর বিধান জয়ীফ হাদীসের মতোই।
(০২)
এটা হাদীস,এই মনে করে আমল করা যাবে।
(০৩)
সুনানে দারাকুতনী'র ১৭৩৪ নং হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ جَابِرٍ ، عَنْ أَبِي الطُّفَيْلِ ، عَنْ عَلَيَّ ، وَعَمَّارٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُكَبِّرُ يَوْمَ عَرَفَةَ صَلَاةَ الْغَدَاةِ، وَيَقْطَعُهَا صَلَاةَ الْعَصْرِ آخِرَ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ"
অর্থ: হযরত জাবির, আবুত তুফাইল, হযরত আলী এবং হযরত আম্মার রাযিয়াল্লাহু আনহুম থেকে বর্ণিত, নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার দিন তথা নয় জিলহজ্ব ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন তথা ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত ফরজ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতেন। (সুনানে দারাকুতনী: ১৭৩৪)
অনুরূপভাবে সুনানে বাইহাকীতে ৬২৭৮ নং বর্ণনায় একই হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ جَابِرٍ قَالَ : " كَانَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يُكَبِّرُ يَوْمَ عَرَفَةَ صَلَاةَ الْغَدَاةِ إِلَى صَلَاةِ الْعَصْرِ آخِرَ أَيَّامِ التَّشْرِيقِ
হযরত জাবির রাযিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরাফার দিন তথা নয় জিলহজ্ব ফজর থেকে আইয়ামে তাশরীকের শেষ দিন তথা ১৩ জিলহজ্ব আসর পর্যন্ত ফরজ নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতেন। (সুনানে বাইহাকী: ৬২৭৮)
শরীয়তের বিধান হলো, ফরজ নামাজের পর পরই তাকবীর বলবে, নামাজের সালামের পর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার পরিপন্থী কোন কাজ করার পূর্বে তাকবীর বলা ওয়াজিব।
তাই যদি কেউ তাকবীর না বলে মসজিদ থেকে বের হয়ে যায় অথবা ইচ্ছাকৃত বা ভুলবশত কথা বলে ফেলে, অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে ওযু ভেঙ্গে ফেলে, তাহলে তার দায়িত্ব থেকে তাকবীর রহিত হয়ে যাবে পুনরায় পড়লেও ওয়াজিব আদায় হবে না, কিন্তু যদি সালামের পর ভুলবশত ওযু ভেঙ্গে যায় তাহলে ওই অবস্থায় তাকবীর বলবে পবিত্রতা অর্জনের জন্য মসজিদ থেকে বের হতে হবে না। (ফাতওয়ায়ে শামীঃ ৩য় খন্ড ৭৩ পৃষ্ঠা, আল-বাহরুর রায়েকঃ ২য়খন্ড ২৮৮ পৃষ্ঠা)
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সালামের পর নামাজ শুদ্ধ হওয়ার পরিপন্থী কোন কাজ না করে থাকলে মসজিদ থেকে বের না হয়ে থাকলে তাকবির বলা যাবে।
অন্যথায় নয়। এমতাবস্থায় তাকবির বললে ওয়াজিব আদায় হবেনা।
(০৪)
এমতাবস্থায় সালাত হবে।
তবে শুয়ে থাকা ব্যাক্তিত চেহারা নামাজির দিকে থাকলে নামাজ মাকরুহ হবে।
(০৫)
কাহারো সন্তুষ্টি ব্যাতিরেকে এভাবে তার জিনি ব্যবহার করা যাবেনা।
এটা জুলুমের পর্যায়ের।
(০৬)
না,এতে কুরবানী সহীহ হবেনা।
এক্ষেত্রে গরু বা মহিষ ইত্যাদি পশু দিয়ে কুরবানী দিলে সকলের ভাগের টাকা সমান সমান দিতে হবে
উদাহরণস্বরূপ, গরুর মূল্য ৭০ হাজার টাকা হলে সেখানে ৭ ভাগ হলে সকলে ১০ হাজার টাকাই দিতে হবে।
কম বেশির সুযোগ নেই।
(০৭)
এক্ষেত্রে হারাম কাজে সহযোগিতা হবেনা।