আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَلاَ تَقْرَبُوا الزِّنَى إِنَّهُ كَانَ فَاحِشَةً وَسَاءَ سَبِيلاً-
‘তোমরা যেনার নিকটবর্তীও হয়ো না, এটা অশ্লীল ও নিকৃষ্ট পথ’ (বনী ইসরাঈল ৩২)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
وَالَّذِينَ لاَ يَدْعُونَ مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ وَلاَ يَقْتُلُونَ النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللهُ إِلاَّ بِالْحَقِّ وَلاَ يَزْنُونَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ يَلْقَ أَثَامًا، يُضَاعَفْ لَهُ الْعَذَابُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَيَخْلُدْ فِيهِ مُهَانًا-
‘তারা আল্লাহর সঙ্গে অন্য কোন মা‘বূদকে ডাকে না শরী‘আত সম্মত কারণ ব্যতীত কাউকে হত্যা করে না এবং যেনা করে না। আর যে ব্যক্তি এই সকল কাজ করে সে শাস্তি ভোগ করবে। ক্বিয়ামতের দিন তার শাস্তি দ্বিগুণ করা হবে এবং এ শাস্তি লাঞ্ছিত অবস্থায় সে অনন্তকাল ভোগ করতে থাকবে’ (ফুরক্বান ৬৮)।
আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন,
الزَّانِيَةُ وَالزَّانِي فَاجْلِدُوا كُلَّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا مِائَةَ جَلْدَةٍ وَلاَ تَأْخُذْكُمْ بِهِمَا رَأْفَةٌ فِي دِينِ اللهِ إِنْ كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ-
‘যেনাকার নারী পুরুষ প্রত্যেককে একশ’ বেত্রাঘাত কর, আল্লাহর বিধান পালনে তাদের উভয়ের প্রতি তোমাদের মনে অনুগ্রহ আসা উচিত নয়। যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ক্বিয়ামত দিবসের প্রতি বিশ্বাসী হও’ (নূর ২)।
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عُبَادَةَ الصَّامِتِ أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خُذُوْا عَنِّي خُذُوْا عَنِّي قَدْ جَعَلَ الله لَهُنَّ سَبِيْلاً البِكْرُ بِالْبِكْرِ جَلْدُ مِائَةٍ وَتَغْرِيْبُ عَامٍ وَالثَّيِّبُ بِالثَّيِّبِ جَلْدُ مِائَةٍ وَالرَّجْمُ.
উবাদাহ ইবনু ছামেত (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘তোমরা আমার নিকট হতে আল্লাহর বিধান গ্রহণ কর, কথাটি রাসূল (ছাঃ) দু’বার বললেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, অবিবাহিত নারী-পুরুষকে একশ’ বেত্রাঘাত এবং এক বছরের জন্য নির্বাসন করতে হবে। আর বিবাহিত নারী-পুরুষকে রজম করতে হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৫৮; বঙ্গানুবাদ ৭ম খন্ড, হা/৩৪০২)।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ثَلاَثَةٌ لاَ يُكَلِّمُهُمْ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ يُزَكِّيهِمْ قَالَ أَبُو مُعَاوِيَةَ وَلاَ يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ شَيْخٌ زَانٍ وَمَلِكٌ كَذَّابٌ وَعَائِلٌ مُسْتَكْبِرٌ
আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তিন শ্রেণীর লোকের সঙ্গে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কথা বলবেন না। তাদের তিনি পবিত্রও করবেন না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, তাদের দিকে তাকাবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। তারা হচ্ছে- (১) বৃদ্ধ যেনাকার (২) মিথ্যাবাদী শাসক এবং (৩) অহঙ্কারী দরিদ্র ব্যক্তি’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৯; বঙ্গানুবাদ ৯ম খন্ড, হা/৪৮৮২)।
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم : لاَ يَحِلُّ دَمُ امْرِئٍ مُسْلِمٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ إِلاَّ بِإِحْدَى ثَلاَثٍ رَجُلٌ زَنَى بَعْدَ إِحْصَانٍ فَإِنَّهُ يُرْجَمُ وَرَجُلٌ خَرَجَ مُحَارِبًا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ فَإِنَّهُ يُقْتَلُ أَوْ يُصْلَبُ أَوْ يُنْفَى مِنَ الأَرْضِ أَوْ يَقْتُلُ نَفْسًا فَيُقْتَلُ بِهَا.
আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এমন মুসলমানের রক্ত হালাল নয়, যে সাক্ষ্য দেয় আল্লাহ ছাড়া কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) আল্লাহর রাসূল। তবে তিন শ্রেণীর মানুষকে হত্যা করতে হয়। (১) এমন মানুষ যে বিবাহ করার পর যেনা করল। তাকে রজম করতে হবে। (২) এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে অবস্থান করল, তাকে হত্যা করা হবে, না হয় শূলী দেওয়া হবে, না হয় যমীন হতে নির্বাসন করা হবে। (৩) এমন ব্যক্তি যে কাউকে হত্যা করল, তাকে হত্যা করা হবে (আবুদাঊদ হা/৪৩৫৩)।
عنهما عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيه وَسَلَّمَ، قَالَ : تُفْتَحُ أَبْوَابُ السَّمَاءِ نِصْفَ اللَّيْلِ، فَيُنَادِي مُنَادٍ: هَلْ مِنْ دَاعٍ فَيُسْتَجَابُ لَهُ، هَلْ مِنْ سَائِلٍ فَيُعْطَى، هَلْ مِنْ مَكْرُوبٍ فَيُفَرَّجُ عَنْهُ، فَلاَ يَبْقَى مُسْلِمٌ يَدْعُو بِدَعْوَةٍ إِلاَّ اسْتَجَابَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ، لَهُ إِلاَّ زَانِيَةً تَبْغِي بِفَرْجِهَا، أَوْ عَشَّارًا.
ওছমান ইবনে আবিল আছ (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, অর্ধরাতে আকাশের দরজা খোলা হয়। তখন আল্লাহ আহবান করে বলেন, কোন প্রার্থনাকারী আছে কি তার প্রার্থনা কবুল করা হবে? কোন সাহায্যকারী আছে কি তাকে সাহায্য করা হবে? কোন সংকটে নিমর্জিত ব্যক্তি আছে কি তার সংকট দুর করা হবে? এ সময় কোন মুসলমান দো‘আ করলে তার দো‘আ কবুল করা হয়। তবে অশ্লীল কাজে লিপ্ত যে নারী তার প্রার্থনা কবুল হয়না। অন্য বর্ণনায় রয়েছে নিশ্চয় আল্লাহ তার মাখলুকের পাশে থাকেন। যে ক্ষমা চায় তাকে ক্ষমা করেন তবে যে নারী অশ্লিল কাজে লিপ্ত তাকে ক্ষমা করেন না (আহমাদ, তারগীব হা/৩৪২০)।
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ زَيْدٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُوْلُ إِنَّ أَخْوَفُ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الزِّنَا وَالشَّهْوَةُ الْخَفِيَّةُ.
আব্দুল্লাহ ইবনে যায়েদ (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি। নিশ্চয় আমি তোমাদের উপর যে ব্যাপারে বেশী ভয় করি তা হচ্ছে যেনা ও গোপন প্রবৃত্তি (তারগীব হা/৩৪১৯)।
عَنْ أبِيْ أُمَامَةَ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ يَقُوْلُ: بَيْنَا أَنَا نَائِمُ إِذْ أَتَانِيْ رَجُلاَنِ فَأَخَذَا بِضَبْعِيْ فَأَتَيَا بِيْ ... فَإِذَا أَنَا بِقَوْمٍ أَشَدُّ شَيْءٍ اِنْتِفَاخًا وَأَنْتَنَهُ رِيْحًا كَأَنَّ رِيْحَهُمُ الْمَرَحِيْضُ قُلْتُ مَنْ هَؤُلاَءِ قَالَ هَؤُلاَءِ الزَّانُوْنَ وَالزَّوَانِيْ-
আবু ওমামা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, আমি একদা ঘুমিয়ে ছিলাম আমার পাশে দু’জন লোক আসল, তারা আমার বাহু ধরে নিয়ে যেতে লাগল। হঠাৎ দেখি আমি কিছু লোকের পাশে যারা খুব ফুলে আছে তাদের গন্ধ এতবেশী যেন মনে হচ্ছে তারা টয়লেট। আমি বললাম এরা কারা? নবী করীম (ছাঃ) বললেন, এরা ব্যভিচার ব্যাভিচারিনী (তারগীব হা/৩৪২৪)।
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ كُتِبَ عَلَى ابْنِ آدَمَ نَصِيبُهُ مِنَ الزِّنَى مُدْرِكٌ ذَلِكَ لاَ مَحَالَةَ فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ وَالأُذُنَانِ زِنَاهُمَا الاِسْتِمَاعُ وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلاَمُ وَالْيَدُ زِنَاهَا الْبَطْشُ وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى وَيُصَدِّقُ ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ.
আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, নবী কারীম (ছাঃ) বলেছেন, ‘আদম সন্তানের উপর যেনার একটি অংশ লিখা হয়েছে। সে তা পাবেই। মানুষের দু’চোখের যেনা দেখা। দু’কানের যেনা শুনা। জিহবা যেনা কথা বলা। হাতের যেনা স্পর্শ করা। পায়ের যেনা যেনার পথে চলা। অন্তরের যেনা হচ্ছে আকাঙ্ক্ষা করা। লজ্জাস্থান তার সত্য মিথ্যা প্রমাণ করে’ (মুসলিম হা/২৬৫৭; মিশকাত হা/৮৬ ‘ঈমান’ অধ্যায়)।
অপর এক হাদীসে আছেঃ-
বুরায়দা (রাঃ) বলেন, একদা মায়েয ইবনে মালেক (রাঃ) নবী (ছাঃ)-এর নিকট এসে বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন, আক্ষেপ তোমার প্রতি, চলে যাও, আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও এবং তওবা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি চলে গেলেন এবং সামান্য একটু দূরে যাইয়াই পুনরায় ফিরিয়া আসলেন এবং আবারও বললেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আমাকে পবিত্র করুন। নবী (ছাঃ) এইবারও তাঁকে পূর্বের ন্যায় বললেন। এইভাবে তিনি যখন চতুর্থবার এসে বললেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, আচ্ছা! আমি তোমাকে কোন্ জিনিস হতেপবিত্র করব? তিনি বললেন, যিনা হতে। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (ছাহাবাদেরকে) জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কি পাগল? লোকেরা বলল, না তো? তিনি পাগল নন। তিনি আবার বললেন, লোকটি কি মদ পান করেছে? তৎক্ষণাৎ এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে তাঁর মুখ শুঁকে দেখেন; কিন্তু মদের কোন গন্ধ তাঁর মুখ হতে পাওয়া গেল না। অতঃপর তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি সত্যই যিনা করেছ? তিনি বললেন,জি হাঁ। এর পর তিনি রজমের নির্দেশ দিলেন, তখন তাঁকে রজম করা হল। এই ঘটনার দুই তিন দিন পর রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) (সাহাবাদের সম্মুখে) এসে বললেন, তোমরা মায়েয ইবনে মালেকের জন্য ইস্তেগফার কর (ক্ষমা প্রার্থনা কর)। কেননা সে এমন তওবাই করেছে, যদি তা সমস্ত উম্মতের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়া হয়, তবে উহা সকলের জন্য যথেষ্ট হবে।
অতঃপর আয্দ বংশের গামেদী গোত্রীয় একটি মহিলা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে পবিত্র করুন। তিনি বললেন,তোমার প্রতি আক্ষেপ! চলে যাও, আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার কর এবং তওবা কর। তখন মহিলাটি বলল, আপনি মায়েয ইবনে মালেককে যেভাবে ফিরিয়ে দিয়েছেন আমাকেও কি সেভাবে ফিরিয়েদিতে চান? দেখুন, আমার এই গর্ভ যিনার! তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি (সত্যই গর্ভবতী)? মহিলাটি বলল, জি হাঁ।
অতঃপর তিনি বললেন, যাও, তোমার পেটের বাচ্চা প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। বর্ণনাকারী বলেন, তখন আনসারী এক লোক মহিলাটির সন্তান প্রসব হওয়ার সময় পর্যন্ত তাকে নিজের তত্ত্বাবধানে নিয়ে গেলেন। সন্তান প্রসব হওয়ার পর ঐ লোকটি নবী (ছাঃ)-এর খেদমতে এসে বলল, হুযুর! গামেদী মহিলাটির গর্ভ খালাস হয়ে গিয়েছে। এইবার তিনি বললেন, এই শিশু বাচ্চাটিকে রেখে আমরা মহিলাটিকে রজম করতে পারব না। এমতাবস্থায় যে, তাকে দুধ পান করাবার মত কেউই নেই। এমন সময় আর একজন আনসারী দাঁড়িয়ে বলল, হে আল্লাহর নবী! আমিই তার দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করব। বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর তাকে রজম করলেন ।
অন্য এক রেওয়াতে আছে, নবী (ছাঃ) মহিলাটিকে বললেন, তুমি চলে যাও এবং সন্তান প্রসব হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা কর। অতঃপর সন্তান প্রসবের পর যখন আসিল, তখন বললেন,আবারও চলে যাও এবং তাকে দুধ পান করাও এবং দুধ ছাড়ান পর্যন্ত অপেক্ষা কর। পরে যখন বাচ্চাটির দুধ খাওয়া বন্ধ হয়, তখন মহিলাটি বাচ্চার হাতে এক খন্ড রুটির টুকরা দিয়ে তাকে সঙ্গে করে রাসূল (ছাঃ)-এর খেদমতে উপস্থিত হল। এইবার মহিলাটি বলল, হে আল্লাহর নবী! এই দেখুন (বাচ্চাটির) দুধ ছাড়ান হয়েছে, এম কি সে নিজের হাতের খানাও খেতে পারে। তখন রাসূল (ছাঃ) বাচ্চাটিকে একজন মুসলমানের হাতে তুলে দিলেন। পরে মহিলাটির জন্য গর্ত খোঁড়ার নির্দেশ দিলেন। অতএব তার জন্য হব পর্যন্ত গর্ত খনন করা হল। তৎপর লোকদেরকে নির্দেশ করলেন, তারা মহিলাটিকে রজম করল। খালেদ ইবনে ওলীদ (রাঃ) সম্মুখে অগ্রসর হয়ে তার মাথায় একখন্ড পাথর নিক্ষেপ করতেই রক্ত ছিটে এসে তাঁর মুখমন্ডলের উপর পড়ল। তাই তিনি মহিলাটিকে ভৎর্সনা ও তিরস্কার করে গাল-মন্দ করলেন, (এটা শুনে) নবী করীম (ছাঃ) বললেন, হে খালেদ, থাম! সেই সত্তার কসম, যার হাতে আমার প্রাণ! অবশ্য মহিলাটি এমন (খালেছ) তওবা করেছে, যদি কোন বড় যালেমও এই ধরনের তওবা করে, তারও মাগফেরাত হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি তার জানাযা পড়ার আদেশ করলেন, অতঃপর তার জানাযা পড়লেন এবং তাকে দাফনও করা হল (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৫৬২)।
ধর্ষককে শরীয়তের নীতিমালা অনুসারে শাস্তি দিতে হবে। অন্য কোন শাস্তি এ ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হলে তাতে ধর্ষণ কমবে না সেটা তো নীতি যেদিন পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে সে নীতিমালা আলোকে যদি প্রকাশ্যে শাস্তি দেওয়া যায় তাহলে ইনশাআল্লাহ ধর্ষণ দূর হয়ে যাবে।
ধর্ষণের ক্ষেত্রে এক পক্ষ থেকে ব্যভিচার সংঘটিত হয়। আর অন্য পক্ষ হয় মজলুম বা নির্যাতিত। তাই মজলুমের কোনো শাস্তি নেই। শুধু জালিম বা ধর্ষকের শাস্তি হবে। ধর্ষণের ক্ষেত্রে তিনটি বিষয় সংঘটিত হয়। এক. ব্যভিচার। দুই. বল প্রয়োগ। তিন. সম্ভ্রম লুণ্ঠন।
ব্যভিচারের জন্য কোরআনে বর্ণিত ব্যভিচারের শাস্তি পাবে। ইসলামে ব্যভিচারের শাস্তি ব্যক্তিভেদে একটু ভিন্ন। ব্যভিচারী যদি বিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর যদি অবিবাহিত হয়, তাহলে তাকে প্রকাশ্যে ১০০ বেত্রাঘাত করা হবে। হানাফি, শাফেয়ি ও হাম্বলি মাজহাব মতে, ধর্ষণের জন্য ব্যভিচারের শাস্তি প্রযোজ্য হবে।
তবে ইমাম মালেক (রহ.)-এর মতে, ধর্ষণের অপরাধে ব্যভিচারের শাস্তির পাশাপাশি ‘মুহারাবা’র শাস্তি প্রয়োগ করা হবে। ‘মুহারাবা’ হলো অস্ত্র দেখিয়ে বা অস্ত্র ছাড়াই ভীতি প্রদর্শন করে ডাকাতি করা কিংবা লুণ্ঠন করা। এককথায় ‘মুহারাবা’ হলো পৃথিবীতে অনাচার সৃষ্টি, লুণ্ঠন, নিরাপত্তা বিঘ্নিতকরণ, ত্রাসের রাজ্য কায়েম করা ইত্যাদি। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ‘মুহারাবা’র শাস্তি এভাবে নির্ধারণ করেছেন, ‘যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এবং দুনিয়ায় ধ্বংসাত্মক কাজ করে বেড়ায়, তাদের শাস্তি হচ্ছে : তাদের হত্যা করা হবে অথবা শূলে চড়ানো হবে বা তাদের হাত-পা বিপরীত দিক থেকে কেটে দেওয়া হবে কিংবা দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। এটি তাদের পার্থিব লাঞ্ছনা, আর পরকালে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি।’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৩৩)
এ আয়াতের আলোকে মালেকি মাজহাবে ধর্ষণের শাস্তিতে ‘মুহারাবা’র শাস্তি যুক্ত করার মত দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, সমাজে ধর্ষণ মহামারির আকার ধারণ করলে, সমাজ থেকে ধর্ষণ সমূলে নির্মূল করার লক্ষ্যে এ শাস্তি প্রয়োগ করা জরুরি। (আল মুগনি : ৮/৯৮)
আর যদি ধর্ষণের সঙ্গে হত্যাজনিত অপরাধ যুক্ত হয়, তাহলে ঘাতকের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।