ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/17432/
নং ফাতওয়ায় উল্লেখ রয়েছে যে,
সূরা তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া জায়েয আছে। কেননা, সূরা তারাবীতে
মূল লক্ষ্য থাকে নামায পড়ানো। আর নামাযের ইমামতি করে বিনিময় গ্রহণ করা বৈধ। তাই সূরা
তারাবীহ পড়িয়ে টাকা নেয়া যাবে।
,
পক্ষান্তরে খতম তারাবিতে যেহেতু কোরআন খতমই মূল লক্ষ্য থাকে, তাই খতম তারাবীহ
পড়িয়ে টাকা নেয়া ও দেয়া জায়েয নেই। কেননা, তা কোরআন খতমেরই বিনিময় বলে গণ্য হবে। বিশেষ করে বর্তমানে আমাদের
সমাজে রমযানের শেষে যে পদ্ধতিতে হাফেজগণের জন্য চাঁদা উঠানো হয় এবং হাফেজ সাহেবদের
তা প্রদান করা হয়, তা সম্পূর্ণ নাজায়েয ও হারাম। কেননা, উক্ত পদ্ধতিতে
শরিয়তে নিষিদ্ধ একাধিক কারণ বিদ্যমান। (ফতোয়ায়ে শামী ৬/৫৭, আল-বাহরুর রায়েক
৮/২৩, মাজমাউল আনহুর ৩/৫৩৩)
,
আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
وَلَا
تَشْتَرُوا بِآيَاتِي ثَمَنًا قَلِيلًا وَإِيَّايَ فَاتَّقُونِ
আর আমার আয়াতের অল্প মূল্য দিও না। এবং আমার (আযাব) থেকে বাঁচ।
(সুরা বাকারা ৪১)
,
সুলাইমান ইবন বুরাইদা তাঁর পিতা থেকে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন,
مَنْ
قَرَأَ الْقُرْآنَ يَتَأَكَّلُ بِهِ النَّاسَ جَاءَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
وَوَجْهُهُ عَظْمٌ ، لَيْسَ عَلَيْهِ لَحْمٌ
যে ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করে বিনিময়ে মানুষ থেকে ভক্ষণ করল, সে কিয়ামতের
দিন এমন অবস্থায় উঠবে যে, তার চেহারায় হাড্ডি থাকবে, কোনো প্রকার গোশত থাকবে
না। (বাইহাকি, শু’আবুল ঈমান ৪/১৯৬)
,
ইমরান ইবনে হুসাইন রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ
ﷺ-কে বলতে শুনেছি,
مَنْ
قَرَأَ القُرْآنَ فَلْيَسْأَلِ اللَّهَ بِهِ، فَإِنَّهُ سَيَجِيءُ أَقْوَامٌ
يَقْرَءُونَ القُرْآنَ يَسْأَلُونَ بِهِ النَّاسَ
তোমরা কোরআন পড়ো এবং আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রার্থনা করো। তোমাদের
পরে এমন জাতি আসবে, যারা কোরআন পড়ে মানুষের কাছে প্রার্থনা করবে। (মুসনাদে আহমদ
১৯৯১৭ তিরমিযি ২৯১৭)
,
আবদুর রহমান ইবনে শিবল
রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ-কে বলতে শুনেছি,
اقْرَءُوا
الْقُرْآنَ وَلَا تَغْلُوا فِيهِ وَلَا تَجْفُوا عَنْهُ وَلَا تَأْكُلُوا بِهِ
وَلَا تَسْتَأْثِرُوا بِهِ
তোমরা কোরআন পড়ো। তবে তাতে বাড়াবাড়ি করো না। এর প্রতি বিরূপ
হয়ো না। কোরআনের বিনিময় ভক্ষণ করো না এবং এর দ্বারা সম্পদ কামনা করো না। (মুসনাদে আহমদ
১৫৫২৯ মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা ৫/২৪০)
,
আবদুল্লাহ ইবনে মা’কাল রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি এক রমজানে
লোকদের নিয়ে তারাবি পড়ালেন। এরপর ঈদের দিন উবাইদুল্লাহ ইবনে জিয়াদ রাযি. তাঁর কাছে
একজোড়া কাপড় এবং ৫০০ দিরহাম পাঠালেন। তখন তিনি কাপড় জোড়া এবং দিরহামগুলো এই বলে ফেরত
দিলেন,
إِنَّا لَا نَأْخُذُ عَلَى الْقُرْآن
أَجْرًا
আমরা কোরআনের বিনিময় গ্রহণ করি না। (মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা
৭৮২১)
,
খতমে তারাবীহ এর জন্য একটি হিলা
যেহেতু খতমে তারাবীহ পড়ে হাফেজকে টাকা না দিলে পরের বছর আর হাফেজ
পাওয়া যাবে না, অপর দিকে হাফেজকে টাকা দেয়াও জায়েজ নেই তাই এক্ষেত্রে আল্লামা
আব্দুর রহীম লাজপুরী রহ. একটি পন্থা বাতলে দিয়েছেন তা হলো- রমজানে হাফেজকে
নিয়োগ দেয়ার সময় এক মাসের জন্য সহকারী ইমাম হিসেবে নিয়োগ দিবে এবং হাফেজকে প্রতিদিন
মসজিদে তারাবীহ ছাড়াও এক দুই ওয়াক্তের ইমামতির দায়িত্ব দিবে এবং ইমামতির উপর ভিত্তি
করে তাকে হাদিয়া দেয়া হবে। যেহেতু ইমামতি করিয়ে টাকা দেয়া জায়েজ। মুফতী কেফায়াতুল্লাহ (রঃ) ও মুফতী মাহমুদ হাসান গাঙ্গুহী (রঃ)ও
এ কৌশলটিকে জায়েজ বলেছেন। (ফতোয়ায়ে রহীমিয়া-৬/২৩৫/২৪৬)
,
আরো জানুনঃ
https://ifatwa.info/16978/
,
★★তবে হানাফি মাযহাব ব্যতিত অন্যান্য কিছু মাযহাব অনুপাতে তারাবীহ নামাজে হাফেজ সাহেবদেরকে
হাদিয়া দেওয়া জায়েজ আছে।
সুতরাং তাদের মতানুসারীগন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। কোনো সমস্যা নেই।
,
★ সু-প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই!
,
১. প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে ইমামতির উপর ভিত্তি করে ইমাম
সাহেবকে হাদিয়া দেয়া যাবে। কারণ, ইমামতি করিয়ে টাকা দেয়া জায়েজ।
২. যদি উক্ত দুআ অর্থপূর্ণ ও কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী না হয়ে থাকে
তাহলে জরুরী মনে না করে উক্ত দুআ পড়া যাবে।