জবাবঃ-
بسم الله الرحمن الرحيم
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
وَسَيَعْلَمُ الَّذِينَ ظَلَمُوا أَيَّ مُنقَلَبٍ يَنقَلِبُونَ
জালেমরা শীঘ্রই জানতে পারবে তাদের গন্তব্যস্থল কিরূপ? (সূরা শুআরাঃ ২২৭)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জালিমরা কখনো সফলকাম হয় না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৫৭)
আল্লাহ তায়ালা আরো বলেছেনঃ
وَلاَ تَحْسَبَنَّ اللّهَ غَافِلاً عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ إِنَّمَا يُؤَخِّرُهُمْ لِيَوْمٍ تَشْخَصُ فِيهِ الأَبْصَارُ مُهْطِعِينَ مُقْنِعِي رُءُوسِهِمْ لاَ يَرْتَدُّ إِلَيْهِمْ طَرْفُهُمْ وَأَفْئِدَتُهُمْ هَوَاء
জালেমরা যা করে, সে সম্পর্কে আল্লাহ্কে কখনও বেখবর মনে করো না। তাদেরকে তো ঐ দিন পর্যন্ত অবকাশ দিয়ে রেখেছেন, যেদিন চক্ষুসমূহ অবনত হবে। তারা মস্তক উপরে তুলে ভীত-বিহ্বল চিত্তে দৌড়াতে থাকবে। তাদের দিকে তাদের দৃষ্টি ফিরে আসবে না এবং তাদের অন্তর উড়ে যাবে। (সূরা ইবরাহীমঃ ৪২-৪৩)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেনঃ
وَكَذَلِكَ أَخْذُ رَبِّكَ إِذَا أَخَذَ الْقُرَى وَهِيَ ظَالِمَةٌ إِنَّ أَخْذَهُ أَلِيمٌ شَدِيدٌ
আর তোমার পরওয়াদেগার যখন কোন জুলুমপূর্ণ জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয় তার পাকড়াও খুবই মারাত্মক, বড়ই কঠোর। (সূরা হুদঃ ১০২)
★জুলুমের পরিণাম খুবই ভয়াবহ। জুলুম এমন একটি অন্যায় কাজ, যার শাস্তি আল্লাহ তাআলা ইহকালেও দিয়ে থাকেন।
জালিমের বিচার শুধু কিয়ামতের দিবসেই হবে না, বরং দুনিয়া থেকেই আল্লাহ তাআলা তাদের জুলুমের প্রতিদান দেওয়া শুরু করেন।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দুটি পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলা আখিরাতের পাশাপাশি দুনিয়ায়ও দিয়ে থাকেন। তা হলো, জুলুম ও আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার শাস্তি।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৫১১)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা মানুষকে অন্যায়ভাবে কষ্ট দেয়, আল্লাহ তাআলা তাদের শাস্তি প্রদান করবেন।’ (মুসলিম, হাদিস : ২৬১৩)।
রাসূল (সাঃ) আরও বলেনঃ
أتقوا الظلم فإن الظلم ظلمات يوم القيامة
তোমরা জুলুম থেকে বিরত থাকো। কেননা কিয়ামতের দিন জুলুমের পরণিাম হবে খুবই অন্ধকার। (মুসলিম)
,
রাসুল (সা.) আরো বলেন,
اتقوا دعوة المظلوم وإن كان كافراً؛ فإنه ليس دونها حجاب
‘তোমরা মজলুমের দোয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকো। কেননা মহান আল্লাহ ও তার দোয়ার মাঝে কোনো পর্দা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস : ১৪৯৬)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
حَدَّثَنَا آدَمُ بْنُ أَبِي إِيَاسٍ حَدَّثَنَا ابْنُ أَبِي ذِئْبٍ حَدَّثَنَا سَعِيدٌ الْمَقْبُرِيُّ عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم مَنْ كَانَتْ لَهُ مَظْلَمَةٌ لأَخِيهِ مِنْ عِرْضِهِ أَوْ شَيْءٍ فَلْيَتَحَلَّلْهُ مِنْهُ الْيَوْمَ قَبْلَ أَنْ لاَ يَكُونَ دِينَارٌ وَلاَ دِرْهَمٌ إِنْ كَانَ لَهُ عَمَلٌ صَالِحٌ أُخِذَ مِنْهُ بِقَدْرِ مَظْلَمَتِهِ وَإِنْ لَمْ تَكُنْ لَهُ حَسَنَاتٌ أُخِذَ مِنْ سَيِّئَاتِ صَاحِبِهِ فَحُمِلَ عَلَيْهِ
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি তার ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি বা অন্য কোন বিষয়ে যুলুমের জন্য দায়ী থাকে, সে যেন আজই তার কাছ হতে মাফ করিয়ে নেয়, সে দিন আসার পূর্বে যে দিন তার কোন দ্বীনার বা দিরহাম থাকবে না। সে দিন তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার যুলুমের পরিমাণ তা তার নিকট হতে নেয়া হবে আর তার কোন সৎকর্ম না থাকলে তার প্রতিপক্ষের পাপ হতে নিয়ে তা তার উপর চাপিয়ে দেয়া হবে।
(বুখারী শরীফ ২৪৪৯.৬৫৩৪) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ২২৭০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ২২৮৭)
وَعَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ وَلَا تَحَسَّسُوا وَلَا تَجَسَّسُوا وَلَا تَنَاجَشُوا وَلَا تَحَاسَدُوا وَلَا تَبَاغَضُوا وَلَا تَدَابَرُوا وَكُونُوا عِبَادَ اللهِ إِخْوَانًا. وَفِىْ رِوَايَةٍ:وَلَا تَنَافَسُوْا. مُتَّفَقٌ عَلَيْه
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা কোন বস্তু বা ব্যক্তি সম্পর্কে কুচিন্তা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা কুচিন্তা সবচেয়ে মিথ্যা। কারো খারাপ বা দোষের খবর জানার চেষ্টা করো না, গোয়েন্দাগিরি করো না, আর একজনের দরের উপর দিয়ে মাল দর করো না। পরস্পরের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ ও শত্রুতা রেখ না, আর পরোক্ষ নিন্দাবাদে একে অপরের পিছনে লেগো না; বরং তোমরা সকলেই আল্লাহর বান্দা, ভাই ভাই হয়ে থাকবে। অপর এক রিওয়ায়াতে আছে, পরস্পরে লোভ-লালসা করো না।
(সহীহ : বুখারী ৬০৬৬, মুসলিম ২৮-(২৫৬৩), আবূ দাঊদ ৪৯১৭, তিরমিযী ১৯৮৮, সহীহ আত্ তারগীব ২৮৮৫, সহীহ আল আদাবুল মুফরাদ ৩১৭, মুওয়াত্ত্বা মালিক ৩৩৬৭, আহমাদ ৮১১৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৮৭, শু‘আবুল ঈমান ৬৭০৩, আল মু‘জামুল কাবীর লিত্ব ত্ববারানী ১৩৩৮, আল মু‘জামুল আওসাত্ব ৮৪৬১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১১৭৯০, আস্ সুনানুস্ সুগরা ৪৭০০।)
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
এক্ষেত্রে তাদের মস্তিষ্ক যদি এমন হয় যে মস্তিষ্কের উপর নিজের কোন কন্ট্রোল নেই, একদম কঠিন অসুস্থ ব্যক্তি, সেক্ষেত্রে যেহেতু অনিচ্ছায় তারা এ ধরনের কাজ করতেছেন, আল্লাহ তায়ালা তাদের ক্ষমা করে দিবেন।
আর যদি নিজের মস্তিষ্কের উপর তাদের কন্ট্রোল থাকে,তারা যদি কঠিন রুগী না হয়, তাহলে তাদের এই কার্যক্রম জুলুমের অন্তর্ভুক্ত হবে।
যাদের উপর এভাবে জুলুম করা হলো, যাদেরকে কষ্ট দেওয়া হলো,তারা ক্ষমা না করে দিলে এরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা পাবে না।