আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
162 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (19 points)

আসসালামু আলাইকুম!

আহকামে জিন্দেগী বইতে একটা জায়গায় লেখা আছে যে সেই বেক্তি বুযুর্গ  নয় যাদেরকে শয়তান জিন অনেক সময় সাধারন  মানুষদের কে বিভ্রান্ত করার জন্য ইলমে গায়েব জানিয়ে দেয় . আর অনেক সময় সে যা বলে সেইটা মিলে যায় । এখানে শয়তান জিন ইলমে গায়েব কিভাবে জানতে পারে কারন আল্লাহ একমাত্র ইলমে গায়েব জানেন ?  বিষয় টা বুজিয়ে দিলে ভাল হয় ।

1 Answer

0 votes
by (676,880 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم


গায়েবের খবর একমাত্র মহান আল্লাহ তায়ালাই জানেন,অন্য কেউ তাহা জানেননা।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ

قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ

অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া আসমান-যমীনে অন্য কেউ অদৃশ্যের জ্ঞান রাখেনা। এবং তারা জানে না কখন তারা উত্থিত হবে। (সূরা নামল, আয়াত-৬৫)

قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِنْدِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ

অর্থ: (হে নবী) আপনি বলুন! আমি তোমাদেরকে বলি না যে, আমার নিকট আল্লাহর ধন-ভান্ডার রয়েছে। এবং আমি গায়েব জানি না, এবং আমি তোমাদের এটাও বলিনা যে, আমি একজন ফেরেশতা। আমার নিকট যা প্রত্যাদেশ হয় আমি কেবল তারই অনুসরন করি। (সুরা আন‘আম, আয়াত- ৫০)

আরো জানুনঃ- 

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
কেউ কেউ ধারনা করে যে শয়তান জিন গায়েব জানে, এটি সঠিক নয়।

যখন হযরত সুলাইমান আঃ মৃত্যুর সময় নিকটবর্তী হয়ে যায়, তখন সে সময় যেহেতু জিনেরা বাইতুল মুকাদ্দাস নির্মাণ করছিল, তাই হযরত সুলাইমান আঃ লাঠিকে দুই হাতে ধরে, তাতে ভর দিয়ে তার সিংহাসনে বসে যান। সেই হালাতেই তার রূহ কবজ হয়। এভাবেই তিনি বছরখানিক সময় বসে ছিলেন। জিনেরা তাকে বসে থাকতে দেখে জীবিত মনে করে কাজে গাফলতী না করে পুরোদমে কাজ করে যায়। অবশেষে সেই লাঠিকে উইপোকা খেয়ে ফেললে তিনি লাঠি ভেঙ্গে মাটিতে পরে যান। 

সেই ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করে কুরআনে ইরশাদ হয়-

فَلَمَّا قَضَيْنَا عَلَيْهِ الْمَوْتَ مَا دَلَّهُمْ عَلَىٰ مَوْتِهِ إِلَّا دَابَّةُ الْأَرْضِ تَأْكُلُ مِنسَأَتَهُ ۖ فَلَمَّا خَرَّ تَبَيَّنَتِ الْجِنُّ أَن لَّوْ كَانُوا يَعْلَمُونَ الْغَيْبَ مَا لَبِثُوا فِي الْعَذَابِ الْمُهِينِ [٣٤:١٤]

যখন আমি সোলায়মানের মৃত্যু ঘটালাম, তখন ঘুণ পোকাই জিনদেরকে তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে অবহিত করল। সোলায়মানের লাঠি খেয়ে যাচ্ছিল। যখন তিনি মাটিতে পড়ে গেলেন, তখন জিনেরা বুঝতে পারল যে, অদৃশ্য বিষয়ের জ্ঞান থাকলে তারা এই লাঞ্ছনাপূর্ণ শাস্তিতে আবদ্ধ থাকতো না। {সূরা সাবা-১৪}

কুরআনে কারীমে এখানে শয়তানের ইলমে গায়েব জানা সম্পর্কে ধারনা খন্ডিত হলো। যদি তারা গায়েবের খবর জানতো, তাহলে এভাবে কষ্ট করতো না সুলাইমান আঃ এর মৃত্যুর পরও।

প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
শয়তান জিন গায়েব জানেনা,গায়েব শুধুমাত্র আল্লাহই জানেন।

তবে জোতিষিদের ন্যায় তারাও চন্দ্র তারকার অবস্থান ইত্যাদি দিক লক্ষ্য করে কিছু ভবিষ্যৎ বানী করে,যাহা কিছু ক্ষেত্রে মিলিয়াও যায়।
সেটিই উক্ত গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। 

★কেউ কেউ দাবি করে যে শয়তান মহাকাশে গিয়ে গায়েবের খবর জেনে আসে।

এর জবাব হলোঃ-
শয়তান মহাকাশে গিয়ে অদৃশ্য খবর সংগ্রহ করতে পারে না। তবে শয়তান এর জন্য চেষ্টা অব্যাহত রাখে। 
,
কিন্তু মহান আল্লাহ সে অনুমতি তাকে দেননি। শয়তান আল্লাহর ক্রোধের শিকার হয় এবং জ্বলন্ত উল্কাপিণ্ডের আঘাতে আকাশ থেকে দূরে নিক্ষিপ্ত হয়। 

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, 

وَ حَفِظۡنٰہَا مِنۡ کُلِّ شَیۡطٰنٍ رَّجِیۡمٍ ﴿ۙ۱۷﴾ 
,
‘আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক বিতাড়িত শয়তান থেকে আকাশকে নিরাপদ করে দিয়েছি।’ (সুরা : হিজর, আয়াত : ১৭)

ইবনে আব্বাস (রা.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, একসময় আকাশে শয়তানের প্রবেশাধিকার ছিল। শয়তানরা আকাশে গিয়ে ফেরেশতাদের কথোপকথন থেকে গায়েব বা অদৃশ্যের কিছু খবরাখবর শুনত। পরে সেগুলো পাদ্রি বা জ্যোতির্বিদদের কাছে বলত। ঈসা (আ.)-এর জন্মের পর প্রথম তিন আসমানে তাদের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করা হয়। আর মুহাম্মদ (সা.)-এর জন্মের পর সব আসমানে শয়তানদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এর পর থেকে যখনই কোনো শয়তান ঊর্ধ্বাকাশে উঠতে চেষ্টা করে, জ্বলন্ত আগুন বা উল্কা তাকে ধাওয়া করে। (তাফসিরে রাজি : ৯/১৬৯, কাশশাফ : ২/১৮৮)

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ- 

اِلَّا مَنِ اسۡتَرَقَ السَّمۡعَ فَاَتۡبَعَہٗ شِہَابٌ مُّبِیۡنٌ ﴿۱۸﴾ 

কিন্তু কেউ চুরি করে শুনতে চাইলে  প্রদীপ্ত শিখা তার পশ্চাদ্ধাবন করে।
(সুরা হিজর ১৮)


হাদীস শরীফে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “মাঝে মাঝে ফিরিশতারা আকাশের নীচে মেঘমালার স্তর পর্যন্ত অবতরণ করত এবং আসমানের সংবাদাদী নিয়ে পরস্পর আলোচনা করত। শয়তানরা শূন্যে আত্মগোপন করে এসব সংবাদ শুনত এবং গণকদের কাছে তা গোপনে পৌছিয়ে দিত। গণকরা এগুলোর সাথে শত মিথ্যা নিজেদের পক্ষ থেকে জুড়ে দিয়ে তা বলে বেড়ায়।” [বুখারীঃ ৩২১০, ২২২৮] পরে উল্কাপাতের মাধ্যমে তা বন্ধ করে দেয়া হয়। 

অন্য এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ যখন আসমানে কোন বিষয়ের ফয়সালা করেন তখন ফেরেশতাগণ তার নির্দেশের আনুগত্য স্বরূপ তাদের ডানাগুলোকে মারতে থাকে তাতে পাথরের উপর জিঞ্জির পড়ার মত শব্দ অনুভূত হয়। তারপর যখন তাদের অন্তর থেকে ভয়ভীতি দূর হয় তখন তারা বলতে থাকেঃ তোমাদের প্রভু কি বলেছেন? তারাই আবার বলেঃ হক্ক বলেছেন, তিনি বড়, মহান। কান লাগিয়ে কথাচোরগণ এ কথোপকথন শুনতে পায়।

আর এসব কান লাগিয়ে শ্রবণকারীগণ একটির উপর একটি থাকে।

 বর্ণনাকারী সুফিয়ান তার হাত দিয়ে ইঙ্গিত করে দেখিয়ে দিলেন। তিনি তার ডান হাতের আঙ্গুলগুলোকে ফাঁক করলেন এবং একটির উপর আর একটি স্থাপন করলেন। তারপর কখনো কখনো উজ্জল আলোর শিখা সে কান লাগিয়ে শ্রবণকারীকে তার সাথীর কাছে কথা পৌছানোর পূর্বেই আঘাতে করে জালিয়ে দেয়। আবার কখনো কখনো আলোর শিখা তার কাছে পৌঁছার আগেই সে তার নীচের সাথীকে তা পৌঁছিয়ে দেয়। এভাবে পৌছাতে পৌছাতে যমীন পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। তারপর যাদুকর বা গণকের মুখে রেখে দেয়। তখন সে যাদুকর তথা গণক সে সংবাদের সাথে শতটি মিথ্যা মিশ্রিত করে বর্ণনা করে। আর এভাবেই তার কোন কোন কথা সত্যে পরিণত হয়। তারপর লোকেরা বলতে থাকেঃ সে কি আমাদেরকে বলেনি যে, অমুক অমুক দিন এই সেই হবে, তারপর আমরা কি সঠিক পাইনি? আসলে সেটা ছিল ঐ বাক্য যা আসমান থেকে শোনা গিয়েছিল। [বুখারীঃ ৪৭০১]


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 190 views
...