বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
https://ifatwa.info/12178/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছেঃ
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ
করেনঃ
وَقَضَى رَبُّكَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ
إِيَّاهُ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا إِمَّا يَبْلُغَنَّ عِندَكَ الْكِبَرَ
أَحَدُهُمَا أَوْ كِلاَهُمَا فَلاَ تَقُل لَّهُمَآ أُفٍّ وَلاَ تَنْهَرْهُمَا
وَقُل لَّهُمَا قَوْلاً كَرِيمًا
তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন
যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও এবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর।
তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ
কথা।(সূরা বনি ঈসরাইল-২৩)
وَاخْفِضْ لَهُمَا جَنَاحَ الذُّلِّ مِنَ
الرَّحْمَةِ وَقُل رَّبِّ ارْحَمْهُمَا كَمَا رَبَّيَانِي صَغِيرًا
তাদের সামনে ভালবাসার সাথে, নম্রভাবে
মাথা নত করে দাও এবং বলঃ হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম
কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।(সূরা বনি ঈসরাইল-২৪)
আল্লাহ তা'আলা,
রাগের মূুহুর্তে কারো দু'আকে কবুল করেন না,
এমনকি মাতাপিতার দু'আককেও কবুল করেন না।
وَلَوْ يُعَجِّلُ اللّهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ
اسْتِعْجَالَهُم بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ فَنَذَرُ الَّذِينَ
لاَ يَرْجُونَ لِقَاءنَا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ
আর যদি আল্লাহ তা’আলা মানুষকে
যথাশীঘ্র অকল্যাণ পৌঁছে দেন যতশীঘ্র তার কামনা করে, তাহলে তাদের
আশাই শেষ করে দিতে হত। সুতরাং যাদের মনে আমার সাক্ষাতের আশা নেই, আমি তাদেরকে তাদের দুষ্টুমিতে ব্যতিব্যস্ত ছেড়ে দিয়ে রাখি।(সূরা ইউনুস-১১)
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
সন্তানের দায়িত্ব হচ্ছে,মাতাপিতার
সাথে সর্বদা উত্তম বাক্য ব্যবহার করা।তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করার পরও যদি তারা সন্তানের
সাথে উচ্ছবাক্য করে,তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে,তারপরও সন্তানের দায়িত্ব হচ্ছে,ধৈর্য্যর সাথে অপেক্ষা
করা ও সদ্ব্যবহার চালিয়ে যাওয়া।
কিন্তু প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে
কখনো যদি ধৈর্য্যর বাঁধ ভেঙ্গে গিয়ে সন্তান বৈধ কারনে উচ্ছবাক্য ব্যবহার করে নেয়,তাহলে আশা
করা যায়,এক্ষেত্রে সন্তানের কোনো গোনাহ হবে না। সন্তানের করণিয়
হল, মায়ের আচরণ পরিবর্তনের জন্য দুয়া করা।
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে আপনি
মায়ের সাথে কম কথা বলবেন। তার বদ দুয়া থেকে বাঁচতে তার সামনে কম আসার চেষ্টা করবেন।তবে
অবশ্যই সালাম চালিয়ে যাবেন। তবে প্রশ্নের বিবরণ মতে তার অভিশাপে আপনার ক্ষতি হবেনা,ইনশাআল্লাহ।
আপনি পূর্ণ শরীয়ত মেনে বিসিএস
ও অন্য চাকরির পরীক্ষা দিতে পারলে মায়ের চাপের কারনে এর জন্য প্রিপারেশন নিতে পারবেন।মায়ের
আচরণ পরিবর্তনের জন্য দুয়া করা অব্যাহত রাখবেন। পবিত্র হাদিসে বর্ণিত আছে, ‘মা-বাবার
পায়ের নিচে সন্তানের জান্নাত।
’ এর মর্ম হলো, মা-বাবার
সঙ্গে সদাচরণ ও তাদের সন্তুষ্ট করার মাধ্যমেই সন্তানরা জান্নাতের উপযুক্ত হবে। এ ক্ষেত্রে
বিধান হলো, মা-বাবা সৎকর্মশীল হোক বা পাপী ও হত্যাকারী হোক,
এমনকি কাফিরই হোক, তবু তাদের সঙ্গে সদাচরণ করা
সন্তানের ওপর অপরিহার্য। যদিও মা-বাবা স্ব স্ব পাপের শাস্তি আল্লাহ তাআলার নিকট ভোগ
করবে। কিন্তু সন্তানদের পাপী মা-বাবার সঙ্গেও অসদাচরণ করা বৈধ হবে না।
হ্যাঁ, যদি মা-বাবা
শরিয়তবিরোধী কোনো কাজের জন্য সন্তানকে আদেশ দেয়, তাহলে সন্তানরা
তাদের ওই হুকুম অমান্য করে তা থেকে বিরত থাকতে হবে। কেননা আল্লাহর হুকুম অমান্য করে
অন্য কারো হুকুম মান্য করা যাবে না। তবে সে ক্ষেত্রেও তাদের মা-বাবার সঙ্গে অসদাচরণ
করা বৈধ নয়। কোনো মা-বাবা যদি সন্তানের ওপর অত্যাচার করে, তবে
তাদের জন্য দোয়া করতে হবে।
যখন তাদের মন ভালো থাকে তখন
তাদের বোঝানোর চেষ্টা করতে হবে। তবে কোনো অবস্থায়ই খারাপ ব্যবহার করা যাবে না। (আল মুজামুল
কাবির লিততাবারি, হাদিস : ২২০২, জখিরাতুল
উকবা : ২৬/১২৮)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন!
আপনার মায়ের উক্ত কথা সঠিক নয়। কোন মা/বাবা যদি অন্যায় ভাবে সন্তানের সাথে কোন আচরণ করে বা জুলুম করে তহালে আল্লাত তায়ালার নিকট তারা অপরাধী হিসেবে উপস্থিত হবে। “উফ” না বলার ব্যাখ্যা নিচে দেওয়া হলো, পিতা-মাতার সেবাযত্ন ও আনুগত্য
পিতা-মাতা হওয়ার দিক দিয়ে কোন সময়ও বয়সের গন্ডিতে সীমাবদ্ধ নয়। সর্বাবস্থায় এবং
সব বয়সেই পিতা-মাতার সাথে সদ্ব্যবহার করা ওয়াজিব। কিন্তু বার্ধক্যে উপনীত হয়ে পিতা-মাতা
সন্তানের সেবাযত্নের মুখাপেক্ষী হয়ে পড়ে এবং তাদের জীবন সন্তানদের দয়া ও কৃপার উপর
নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। তখন যদি সন্তানের পক্ষ থেকে সামান্যও বিমুখতা প্ৰকাশ পায়,
তবে তাদের অন্তরে তা ক্ষত হয়ে দেখা
দেয়। অপরদিকে বার্ধক্যের উপসৰ্গসমূহ স্বভাবগতভাবে মানুষকে খিটখিটে করে দেয়। তদুপরি
বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে যখন বুদ্ধি-বিবেচনাও অকেজো হয়ে পড়ে,
তখন পিতা-মাতার বাসনা এবং দাবীদাওয়াও
এমনি ধরনের হয়ে যায়, যা পূর্ণ করা সন্তানের পক্ষে কঠিন হয়। আল্লাহ তা'আলা এসব অবস্থায় পিতা-মাতার মনোতুষ্টি ও সুখ-শান্তি
বিধানের আদেশ দেয়ার সাথে সাথে সন্তানকে তার শৈশবকাল স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে,
আজ পিতা-মাতা তোমার যতটুকু মুখাপেক্ষী,
এক সময় তুমিও তদপেক্ষা বেশী তাদের
মুখাপেক্ষী ছিল।
তখন তাঁরা যেমন নিজেদের আরাম-আয়েশ ও কামনাবাসনা তোমার জন্যে
কোরবান করেছিলেন এবং তোমার অবুঝ কথাবার্তাকে স্নেহমমতার আবরণ দ্বারা ঢেকে নিয়েছিলেন,
তেমনি মুখাপেক্ষিতার এই দুঃসময়ে বিবেক
ও সৌজন্যবোধের তাগিদ এই যে, তাদের পূর্ব ঋণ শোধ করা কর্তব্য। أف বাক্যে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে,
যদ্দারা বিরক্তি প্ৰকাশ পায়। এমনকি,
তাদের কথা শুনে বিরক্তিবোধক দীর্ঘশ্বাস
ছাড়াও এর অন্তর্ভুক্ত। মোটকথা, যে কথায় পিতা-মাতার সামান্য কষ্ট হয়,
তাও নিষিদ্ধ। এরপর বলা হয়েছে,
(وَلَا تَنْهَرْهُمَا) এখানে نهر শব্দের অর্থ ধমক দেয়া। এটা যে কষ্টের কারণ তা বলাই বাহুল্য।