আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
85 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (1 point)
edited by
আসসালামু আলাইকুম।
আমি তীব্র মনোকষ্টে আছি। এমন এক পরিস্থিতির মধ্যে যাচ্ছি যে কাউকে বলতেও পারছি না।

ইদে আমার হাজবেন্ড আমার বাবার বাসায় আসেন। তো একদিন বাইরে যাওয়ার তাড়াহুড়াতে ছিলাম, তাকে বলি আমার ছোট বোনের কাছ থেকে ইস্ত্রিটা চেয়ে আনতে। বলে রাখি আমাদের বাসার সবাই পর্দা করে। তো আমার হাজবেন্ড যখন ওর কাছ থেকে ইস্ত্রি আনতে যায় তখনও আমার বোন পর্দা অবস্থাতে ছিল (হিজাব নিকাবসহ)। আমার বোনকে একা পেয়ে সে নাকি ওর বুকে হাত দিয়ে ধরেছে।
এসব জানার পর আমি আর ঠিক নাই। কষ্টে ক্ষোভে শুধু কানছি। এ কাকে বিয়ে করেছি!!! যার কাছে আমার বোন নিরাপদ না!! আমার বোনকে আমি জানের চেয়ে বেশি ভালবাসি, দুনিয়ার সব ফিতনা থেকে তাকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি। আমার সে বোন আজ আমার হাজবেন্ডের কাছ থেকে এসবের স্বীকার হলো! এসব ভাবলেই আমার বুক ফেটে কান্না আসছে। প্রচন্ড ঘৃণা আসছে হাজবেন্ডের প্রতি। এখন আমার কি করা উচিত আমি বুঝছি না। আমার কি সেপারেশনে চলে যাওয়া উচিত? না কি করবো?

অনুগ্রহ করে আমাকে উত্তম পরামর্শ দিন। প্রচন্ড কষ্টে আছি!

1 Answer

0 votes
by (59,040 points)

ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।

بسم الله الرحمن الرحيم

জবাব,

আপন স্ত্রী রেখে শালীর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করা বা তাকে স্পর্শ করা জঘন্যতম গুনাহ। চরম অনৈতিক কাজ। যদি কেউ এমন জঘন্য গুনায় লিপ্ত হয়, তা হলে তার জন্য জরুরি হলো আল্লাহর দরবারে খালেস মনে তওবা করা। যদি তাওবা না করে এমন ভয়াবহ কাজ ও ঘৃণিত কাজে লিপ্তই থাকে, তা হলে তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে।

উল্লেখ্য, এমন গর্হিত কাজ করার পরও আপন স্ত্রীকে তালাক না দেওয়া পর্যন্ত তালাক হবে না। এমনকি স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায় কেউ যদি তার আপন বোনকে বিয়েও করে তথাপি স্ত্রী তালাক হবে না। ( সূরা নিসা ১৭-১৮, সূরা নূর ৩০-৩১, তিরমীযী হাদীস নং ২১৬৫, জামেউল ফতওয়া)

(১) নেককার স্বামী/স্ত্রী পাওয়া এবং সুস্থ সবল সন্তানের পিতা-মাতা হওয়া, বান্দার উপর আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ নেয়ামত।এজন্য প্রত্যেক স্বামী/স্ত্রী এর জন্য মহান রবের শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ।এ বিশেষ নেয়ামতের অকৃতজ্ঞা প্রকাশ করার অর্থই হল নিজের জীবনকে বিপর্যয়ের দিকে ঢেলে দেয়া।

ল্লাহ তা'আলা বলেন,

ﻭَﺇِﺫْ ﺗَﺄَﺫَّﻥَ ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﻟَﺌِﻦ ﺷَﻜَﺮْﺗُﻢْ ﻷَﺯِﻳﺪَﻧَّﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺌِﻦ ﻛَﻔَﺮْﺗُﻢْ ﺇِﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺑِﻲ ﻟَﺸَﺪِﻳﺪٌ

যখন তোমাদের পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (সূরা ইবরাহিম-৭)

আমি আপনাকে বিশেষ কয়েকটি নসিহত করবো-

(ক) আপনার স্বামীর পরকিয়া সম্পর্কে অন্য কাউকে জানাবেন না। কেননা গোনাহে গোপন রাখা ওয়াজিব। তাই গোপন রাখার চেষ্টা করুন।

(খ) পূর্ণ আগ্রহের সাথে তাকে সময় দিন। তাকে কখনো একা ছেড়ে দিবেন না। বরং সর্বদা তার সাথে লেগে থাকুন। তার সকল প্রকার পছন্দের জিনিষকে নিজের পছন্দ বানিয়ে তার সাথে সর্বদা থাকার চেষ্টা করুন।

(গ) তার হেদায়তের জন্য দু'আ করতে থাকুন।

আমাদের মনে রাখতে হবে, পরকালে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ আ'মলের হিসাব নিকাশ দিতে হবে। কারো পাপের বোঝাকে অন্য কেহ বহন করবে না।

আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ

ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺭُ ﻭَﺍﺯِﺭَﺓٌ ﻭِﺯْﺭَ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻭَﺇِﻥ ﺗَﺪْﻉُ ﻣُﺜْﻘَﻠَﺔٌ ﺇِﻟَﻰ ﺣِﻤْﻠِﻬَﺎ ﻟَﺎ ﻳُﺤْﻤَﻞْ ﻣِﻨْﻪُ ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﺍ ﻗُﺮْﺑَﻰ الخ

কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। (সূরা ফাতির-১৮)

সুতরাং বর্তমান পরিস্থিতে স্বামীকে বুঝিয়ে এই গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন। ধর্য্য সহকারে পরিস্থিতির মোকাবেলা করার চেষ্টা করুন। আল্লাহ অবশ্যই এর জন্য আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করবেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন-  https://www.ifatwa.info/70043/   

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী ভাই/বোন!

আপনার স্বামীর জন্য একজন উপদেশদাতার প্রয়োজন। সুতরাং যদি সম্ভব হয়, আপনার পরিচিত কারো মাধ্যমে আপনার স্বামীকে একজন আমলধারী আলেমের শরণাপন্ন করান; যিনি আপনার স্বামীকে হেকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে কিছু নসিহত করবেন। হতে পারে, এর মাধ্যমে তিনি নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম হবেন। সর্বোপরি তাহাজ্জুদের নামায পড়ে স্বামীর হেদায়তের দু'আ করুন। আপনার স্বামী নিশ্চয় একটা শয়তান কর্তৃক ফেতনার ভেতরে পড়ে গিয়েছে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ বলেছেন,

مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ

পুরুষের জন্য স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। (বুখারি ৪৮০৮)

আর আপনি যেহেতু তার সবচেয়ে কাছের কল্যাণকামী, সেহেতু এই ফেতনা থেকে উত্তরণের জন্য তার জন্য আল্লাহর কাছে অধিকহারে দোয়া করুন। কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও করতে পারেন; ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনার স্বামীকে আপনার চোখের শীতলতা বানিয়ে দিবেন।

প্রিয় বোন, যদি আপনি উক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারেন এবং পাশাপাশি আল্লাহর কাছেও দোয়াও অব্যাহত রাখেন তাহলে আমরা আশা করছি যে, তখন আল্লাহর রহমত আসবে। ফলে আপনার স্বামীর মনুষ্যত্ব জেগে উঠবে, তার চরিত্র সংশোধন হবে এবং তিনি আপনার প্রতি সদয় হবেন। সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। বেশি হারে ইস্তেগফার পড়ুন।

পরিশেষে বলবো, এতকিছুর পরও যদি তার মধ্যে কোন পরিবর্তন না আসে তাহলে আপনি স্বামীর নিকট থেকে তালাক গ্রহণ বা খুলা তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ করতে পারেন। (স্ত্রীর পক্ষ থেকে কাযী সাহেব বা উনার স্থলাভিষিক্ত কারো নিকট তালাক চাওয়ার ভিত্তিতে অর্থের বিনিময়ে যে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়, তাকে খুলা বলে।)


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

--------------------------------
মুফতী মুজিবুর রহমান
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)
by (1 point)

জাযাকাল্লাহু খাইরান ফিদ্দুনিয়া ওয়াল আখিরাহ

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...