ওয়া আলাইকুমুস-সালাম
ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
بسم الله الرحمن الرحيم
জবাব,
আপন স্ত্রী
রেখে শালীর সাথে শারিরিক সম্পর্ক করা বা তাকে স্পর্শ করা জঘন্যতম গুনাহ। চরম অনৈতিক কাজ। যদি কেউ এমন
জঘন্য গুনায় লিপ্ত হয়, তা হলে তার জন্য জরুরি হলো আল্লাহর দরবারে খালেস মনে তওবা করা।
যদি তাওবা না করে এমন ভয়াবহ কাজ ও ঘৃণিত কাজে লিপ্তই থাকে,
তা হলে তার জন্য ভয়াবহ শাস্তি রয়েছে।
উল্লেখ্য,
এমন গর্হিত কাজ করার পরও আপন স্ত্রীকে
তালাক না দেওয়া পর্যন্ত তালাক হবে না। এমনকি স্ত্রী বিবাহ বন্ধনে থাকা অবস্থায় কেউ
যদি তার আপন বোনকে বিয়েও করে তথাপি স্ত্রী তালাক হবে না। ( সূরা নিসা ১৭-১৮,
সূরা নূর ৩০-৩১,
তিরমীযী হাদীস নং ২১৬৫,
জামেউল ফতওয়া)
(১) নেককার
স্বামী/স্ত্রী পাওয়া এবং সুস্থ সবল সন্তানের পিতা-মাতা হওয়া,
বান্দার উপর আল্লাহ তা'আলার এক বিশেষ নেয়ামত।এজন্য প্রত্যেক স্বামী/স্ত্রী
এর জন্য মহান রবের শুকরিয়া আদায় করা উচিৎ।এ বিশেষ নেয়ামতের অকৃতজ্ঞা প্রকাশ করার অর্থই
হল নিজের জীবনকে বিপর্যয়ের দিকে ঢেলে দেয়া।
আল্লাহ
তা'আলা বলেন,
ﻭَﺇِﺫْ ﺗَﺄَﺫَّﻥَ
ﺭَﺑُّﻜُﻢْ ﻟَﺌِﻦ ﺷَﻜَﺮْﺗُﻢْ ﻷَﺯِﻳﺪَﻧَّﻜُﻢْ ﻭَﻟَﺌِﻦ ﻛَﻔَﺮْﺗُﻢْ ﺇِﻥَّ ﻋَﺬَﺍﺑِﻲ ﻟَﺸَﺪِﻳﺪٌ
যখন তোমাদের
পালনকর্তা ঘোষণা করলেন যে, যদি কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর, তবে তোমাদেরকে আরও দেব এবং যদি অকৃতজ্ঞ হও তবে নিশ্চয়ই আমার
শাস্তি হবে কঠোর। (সূরা ইবরাহিম-৭)
আমি আপনাকে
বিশেষ কয়েকটি নসিহত করবো-
(ক) আপনার
স্বামীর পরকিয়া সম্পর্কে অন্য কাউকে জানাবেন না। কেননা গোনাহে গোপন রাখা ওয়াজিব। তাই
গোপন রাখার চেষ্টা করুন।
(খ) পূর্ণ আগ্রহের সাথে তাকে
সময় দিন। তাকে কখনো একা ছেড়ে দিবেন না। বরং সর্বদা তার সাথে লেগে থাকুন। তার সকল প্রকার
পছন্দের জিনিষকে নিজের পছন্দ বানিয়ে তার সাথে সর্বদা থাকার চেষ্টা করুন।
(গ) তার হেদায়তের জন্য দু'আ করতে থাকুন।
আমাদের মনে
রাখতে হবে, পরকালে আমাদের সবাইকে নিজ নিজ আ'মলের হিসাব নিকাশ দিতে হবে। কারো পাপের বোঝাকে অন্য
কেহ বহন করবে না।
আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ
ﻭَﻟَﺎ ﺗَﺰِﺭُ
ﻭَﺍﺯِﺭَﺓٌ ﻭِﺯْﺭَ ﺃُﺧْﺮَﻯ ﻭَﺇِﻥ ﺗَﺪْﻉُ ﻣُﺜْﻘَﻠَﺔٌ ﺇِﻟَﻰ ﺣِﻤْﻠِﻬَﺎ ﻟَﺎ ﻳُﺤْﻤَﻞْ ﻣِﻨْﻪُ
ﺷَﻲْﺀٌ ﻭَﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﺫَﺍ ﻗُﺮْﺑَﻰ الخ
কেউ অপরের
বোঝা বহন করবে না। কেউ যদি তার গুরুতর ভার বহন করতে অন্যকে আহবান করে কেউ তা বহন করবে
না-যদি সে নিকটবর্তী আত্নীয়ও হয়। (সূরা ফাতির-১৮)
সুতরাং বর্তমান
পরিস্থিতে স্বামীকে বুঝিয়ে এই গোনাহের কাজ থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করুন। ধর্য্য সহকারে
পরিস্থিতির মোকাবেলা করার চেষ্টা করুন। আল্লাহ অবশ্যই এর জন্য আপনাকে উত্তম বিনিময়
দান করবেন। এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে ক্লিক করুন- https://www.ifatwa.info/70043/
সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনী
ভাই/বোন!
আপনার স্বামীর
জন্য একজন উপদেশদাতার প্রয়োজন। সুতরাং যদি সম্ভব হয়, আপনার পরিচিত কারো মাধ্যমে আপনার স্বামীকে একজন আমলধারী
আলেমের শরণাপন্ন করান; যিনি আপনার স্বামীকে হেকমত ও প্রজ্ঞার সঙ্গে কিছু নসিহত করবেন। হতে পারে,
এর মাধ্যমে তিনি নিজের ভুল বুঝতে সক্ষম
হবেন। সর্বোপরি তাহাজ্জুদের নামায পড়ে স্বামীর হেদায়তের দু'আ করুন। আপনার স্বামী নিশ্চয় একটা শয়তান কর্তৃক ফেতনার ভেতরে পড়ে গিয়েছে। হাদিস
শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন,
مَا
تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنْ النِّسَاءِ
পুরুষের জন্য
স্ত্রীজাতি অপেক্ষা অধিক ক্ষতিকর কোন ফিতনা আমি রেখে গেলাম না। (বুখারি ৪৮০৮)
আর আপনি যেহেতু
তার সবচেয়ে কাছের কল্যাণকামী, সেহেতু এই ফেতনা থেকে উত্তরণের জন্য তার জন্য আল্লাহর কাছে অধিকহারে
দোয়া করুন। কোরআনে বর্ণিত এ দোয়াটিও করতে পারেন; ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনার স্বামীকে আপনার চোখের শীতলতা
বানিয়ে দিবেন।
প্রিয় বোন,
যদি আপনি উক্ত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে
পারেন এবং পাশাপাশি আল্লাহর কাছেও দোয়াও অব্যাহত রাখেন তাহলে আমরা আশা করছি যে,
তখন আল্লাহর রহমত আসবে। ফলে আপনার
স্বামীর মনুষ্যত্ব জেগে উঠবে, তার চরিত্র
সংশোধন হবে এবং তিনি আপনার প্রতি সদয় হবেন। সুতরাং আল্লাহর উপর ভরসা
রাখুন। বেশি হারে ইস্তেগফার পড়ুন।
পরিশেষে বলবো, এতকিছুর
পরও যদি তার মধ্যে কোন পরিবর্তন না আসে তাহলে আপনি স্বামীর নিকট থেকে তালাক গ্রহণ বা
খুলা তালাকের মাধ্যমে বিচ্ছেদ করতে পারেন। (স্ত্রীর পক্ষ থেকে কাযী সাহেব
বা উনার স্থলাভিষিক্ত কারো নিকট তালাক চাওয়ার ভিত্তিতে অর্থের বিনিময়ে যে বিবাহ বিচ্ছেদ করা হয়, তাকে খুলা বলে।)