আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
161 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (67 points)
আমরা তিনজন বন্ধু মিলে পার্টনারশিপে একটি ফ্রিল্যান্সিং সফটওয়্যার কোম্পানি চালায়। আমাদের প্রধান যে ক্লায়েন্ট তার মদের একটা ওয়েবসাইট আমি তৈরি করে দিয়েছিলাম। তখন ওই ভাবে হালাল-হারাম বিষয়ে সচেতন ছিলাম না। এখন এই বিষয় নিয়ে আমি চিন্তিত। যেহেতু এই প্রোজেক্টের অধিকাংশ কাজ আমার করা তাই এখনো কোনো আপডেট করা লাগলে আমাকে সেটা করতে হয়। যদিও কাজটা করতে আমি ইচ্ছুক নই কিন্তু একরকম বাধ্য হয়েই করা লাগে। কারণ এই ওয়েবসাইটের মালিক আমাদের মেইন ক্লায়েন্ট তাই আমি তাকে কিছু বলতে পারছিনা আবার আমার পার্টনারদের কেউ কিছু বলতে পারছিনা।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই ক্ষেত্রে আমার করনীয় কি যেহেতু আমি কাজটা ছাড়তে পারছি না? আমার পুরো ইনকাম কি হারাম হচ্ছে নাকি এই কাজের মাধ্যমে যে টাকা ইনকাম করেছি শুধু সেটাই হারাম হবে?

1 Answer

0 votes
by (679,160 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 


প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই, 
https://ifatwa.info/9053/ ফতোয়াতে উল্লেখ রয়েছে যে যেহেতু সুদ হারাম। 
তাই সুদী লেনদেনে সহযোগিতা করাও হারাম।সুতরাং ওয়েবসাইট যদি সুদী সম্পর্কিত হয়,বা ওয়েব সাইটে যদি সুদ বিত্তিক কাজ বেশী থাকে,তাহলে এমন ওয়েবসাইট বানিয়ে দেয়া কখনো জায়েয হবে না।

কিন্তু যদি ওয়েব সাইটটি সুদ বিত্তিক না হয়,বা সুদের কাজ নিতান্তই কম থাকে,তাহলে রুখসত থাকবে।
,
সেই হিসেবে মদের ওয়েবসাইট তৈরীরও বিধান একই।
কারন কুরআনে কারীম ও হাদীস শরীফের  বিভিন্ন জায়গায় মদ হারামের কথা বর্ণিত হয়েছে। 

সুরা মায়েদার ৯০ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡہُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ﴿۹۰﴾

হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। 

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আমার উম্মতের মধ্যে এমন অনেক সম্প্রদায় হবে যারা যিনা-ব্যভিচার, রেশমী কাপড় ব্যবহার, মদ্যপান ও গান বাদ্যকে হালাল করবে। [বুখারীঃ ৫৫৯০] 

অন্য এক হাদীসে আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে মদ পান করবে ও তাওবাহ করবে না, সে আখেরাতে তা থেকে বঞ্চিত হবে। [বুখারীঃ ৫৫৭৫]
,
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ সম্পর্কে কঠোর শাস্তির ভয় প্রদর্শন করেছেন। এরশাদ হয়েছেঃ ‘সর্বপ্রকার অপকর্ম এবং অশ্লীলতার জন্মদাতা হচ্ছে মদ [ইবন মাজাহ ৩৩৭১] 

কারণ, এটি পান করে মানুষ নিকৃষ্টতর পাপে লিপ্ত হয়ে যেতে পারে। অপর এক হাদীসে বলা হয়েছে যে, মদ এবং ঈমান একত্রিত হতে পারে না। [নাসায়ীঃ ৮/৩১৭] 

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদের সাথে সম্পর্ক রাখে এমন দশ শ্রেণীর ব্যক্তির উপর লা'নত করেছেন। (১) যে লোক নির্যাস বের করে, (২) প্রস্তুতকারক, (৩) পানকারী, (৪) যে পান করায়, (৫) আমদানীকারক, (৬) যার জন্য আমদানী করা হয়, (৭) বিক্রেতা, (৮) ক্রেতা, (৯) সরবরাহকারী এবং (১০) এর লভ্যাংশ ভোগকারী। [ইবন মাজাহঃ ৩৩৮০]

আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু তখন এক মজলিশে মদ্যপানে সাকীর কাজ সম্পাদন করছিলেন। আবু তালহা, আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ, উবাই ইবন কা'ব, সোহাইল রাদিয়াল্লাহু আনহুম প্রমূখ নেতৃস্থানীয় সাহাবীগণ সে মজলিশে উপস্থিত ছিলেন। প্রচারকের ঘোষণা কানে পৌছার সঙ্গে সঙ্গে সবাই সমস্বরে বলে উঠলেন - এবার সমস্ত মদ ফেলে দাও। এর পেয়ালা, মটকা, হাড়ি ভেঙ্গে ফেল। [মুসনাদে আহমাদ ৩/১৮১; বুখারী ৪৬২০; মুসলিম: ১৯৮০]

এছাড়া বহু হাদীসেও মদের ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা এসেছে। 
,
★সুতরাং প্রশ্নে উল্লেখিত মদের ওয়েবসাইট তৈরী করা তা থেকে উপার্জন করা সবই হারাম।   
,
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ   

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ [٥:٢] 

সৎকর্ম ও খোদাভীতিতে একে অন্যের সাহায্য কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলা কঠোর শাস্তিদাতা। {সূরা মায়িদা-২}
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
 
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْمُسْلِمُونَ عَلَى شُرُوطِهِمْ

হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেনঃ মুসলমানগণ তার শর্তের উপর থাকবে। {সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৩৫৯৪, সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-২৮৯০, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৪০৩৯}
,
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
আপনার পুরো ইনকাম কি হারাম হবেনা।
শুধু এই ওয়েবসাইট তৈরীর কাজের মাধ্যমে যে টাকা ইনকাম করেছেন, করবেন,শুধু সেটাই হারাম হবে।
,
অন্যান্য হালাল কাজের ওয়েবসাইট তৈরীর ইনকাম হারাম হবেনা। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by (67 points)
আলহামদুলিল্লাহ শাইখ, বিষয়টা বুঝতে পেরেছি। কিন্তু এখন তাৎক্ষণিকভাবে তো আমি এই কাজ থেকে বের হতে পারছি না অন্তত কিছুদিন সময় প্রয়োজন হবে। এই ক্ষেত্রে এখান থেকে আমার যে ইনকাম হচ্ছে সেটা কি আমি সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দেবো আর তওবা করতে থাকবো?

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...