আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
78 views
in ব্যবসা ও চাকুরী (Business & Job) by (8 points)
আসসালামু আলাইকুম,
আমাদের একটা বিজনেস আছে, ৩ জনের শেয়ার বিজনেস। হালাল পণ্য বিক্রি করি (ন্যাচারাল ফুড, ইসলামিক বই ইত্যাদি)। আমাদের দোকানে আমরা বিনিয়োগ নিই। এক্ষেত্রে আমরা গ্রসপ্রফিটের উপর লভ্যাংশ ভাগ করি৷ নিট প্রফিটের উপর নয়। উদাহরণস্বরূপ ১ হাজার টাকার পণ্য বিক্রি করে ১০০ টাকা লাভ হলে আমরা বিনিয়োগকারীকে ৬০ টাকা দিই আর আমরা ৪০ টাকা নিই। বিনিয়োগকারীর লস বা খরচ শুধু প্রোডাক্ট কেনায় বা প্রোডাক্ট নষ্ট হওয়ায়। বাকি দোকান ভাড়া, সেলস্ এক্সিকিউটিভ এর স্যালারি, বিদ্যুৎ বিল সবই আমাদের থেকে যায়৷ বিনিয়োগকারীর প্রফিটের অংশ থেকে না। এক্ষেত্রে কোন মাসে লাভ কম হলে আমাদের লস হয় কিন্তু বিনিয়োগকারীর লস হয় না। যেমন, ১০ হাজার টাকা লাভ হলে বিনিয়োগকারী পায় ৬ হাজার আর আমরা পাই ৪ হাজার টাকা। এখন আমাদের খরচই (দোকান ভাড়া, সেলস্ এক্সিকিউটিভ এর স্যালারি, বিদ্যুৎ বিল ইত্যাদি) হয় ৪ হাজার টাকার উপরে। ধরি খরচ ১২ হাজার টাকা। আমাদের লাভ হয়েছে ৪ হাজার টাকা। তাহলে এক্ষেত্রে আমাদের লস হয়েছে ৮ হাজার। এখানে উল্লেখ্য যে আমাদের লস হলেও ব্রান্ড ভ্যালু বাড়তেছে। বেশি পার্সেন্ট বিনিয়োগকারীকে দেওয়ার উদ্দেশ্য হলো যাতে বিনিয়োগকারীরা টাকা বেশি পায়।কারন আমাদের ব্যবসায় প্রফিট খুব বেশি হয় না৷ যার ফলে বিনিয়োগকারীদের কম পার্সেন্ট হারে প্রফিট কম পাবে এবং তারা আগ্রহ হারাতে পারে এতে করে মেয়াদ শেষে ইনভেস্ট উঠিয়ে নিতে পারে৷ আমরা বিজনেসের স্বার্থে পার্সেন্ট বাড়িয়ে দিচ্ছি৷
বিনিয়োগকারী লসও নিবেন সেটা হলো কোন পণ্য ড্যামেজ বা নষ্ট হয়ে গেলে সে লস৷ সেক্ষেত্রেও ৬০% লস নিবেন। এছাড়া পুরো ব্যবসায় লস হলে ৬০% পরিমাণ টাকা লস হবে বিনিয়োগকারীর৷ বাকি টাকা আমরা বিনিয়োগকারীকে ফেরত দিবো নিজেদের থেকে।  উদাহরণস্বরূপ একজন বিনিয়োগকারী ১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করল এখন পুরো ব্যবসা লস হয়েছে এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীর ৬০% লস অর্থাৎ ৬০ হাজার টাকা লস হবে বাকি ৪০ হাজার টাকা আমরা যারা ব্যবসার মালিক তারা দিবো৷ আমরা বিভিন্ন মেয়াদে বিনিয়োগ নিই, যেমন দুই বছর/একবছরের জন্য ৷ এরপর বিনিয়োগের টাকা বিনিয়োগকারী নিতে চাইলে তাকে ফেরত দিয়ে দিই বা নতুন করে চুক্তি করি৷ প্রফিট মাস শেষে দিয়ে দিই৷
প্রশ্নঃ
১) এভাবে বিনিয়োগ নেওয়া শরীয়ত সম্মত কিনা? যেখানে আমাদের লস হলেও বিনিয়োগকারীর লস হচ্ছে না। তবে আমাদের ব্রান্ড ভ্যালু বাড়তেছে।
২) ৬০% প্রফিট বিনিয়োগকারীকে দেওয়া কি শরীয়াহ সম্মত? এক্ষেত্রে ইসলামি শরীয়ার কোন নীতিমালা আছে কিনা যে কত পার্সেন্ট অনুযায়ী প্রফিট ভাগ করা উচিত। আমরা একজন বিনিয়োগকারীকে ৭০% হারে প্রফিট দিই৷ বিনিয়োগকারীরা শুধু টাকা দেয় কোন শ্রম দেয় না৷
৩) আমাদের বিজনেসে বিনিয়োগের জন্য কি করলে ভালো হবে আপনার মতামত দিবেন প্লিজ।

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

ব্যবসার ক্ষেত্রে এক পক্ষের মাল,অপর পক্ষের শ্রম দেওয়াকে মুদারাবা বলা হয়।
এটি জায়েজ আছে। 
,
মুদারাবার ক্ষেত্রে শরীয়তের উসুল হলো যাহা লাভ হবে,তাহা শতকরা হারে উভয়ের মাঝে বন্টন করার চুক্তি করতে হবে।
কোনো নির্দিষ্ট টাকার চুক্তি করা যাবেনা,লোকসান হলে আগে লাভের টাকা থেকে সেটা পূরন করা হবে,অতঃপর মূলধন থেকে পূরন করা হবে।
,
হাদীস শরীফে এসেছেঃ     
بَاب الشَّرِكَةِ وَالْمُضَارَبَةِ
حَدَّثَنَا أَبُو السَّائِبِ، سَلْمُ بْنُ جُنَادَةَ حَدَّثَنَا أَبُو دَاوُدَ الْحَفَرِيُّ، عَنْ سُفْيَانَ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنْ أَبِي عُبَيْدَةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ اشْتَرَكْتُ أَنَا وَسَعْدٌ، وَعَمَّارٌ، يَوْمَ بَدْرٍ فِيمَا نُصِيبُ فَلَمْ أَجِئْ أَنَا وَلاَ عَمَّارٌ بِشَىْءٍ وَجَاءَ سَعْدٌ بِرَجُلَيْنِ .
শারীকাত (অংশিদারী) ও মুদারাবা ব্যবসা
আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, বদর যুদ্ধের দিন সাদ (রাঃ) , আম্মার (রাঃ) ও আমি গানীমাতের মালের ব্যাপারে অংশীদার হই (এই মর্মে যে, আমরা যা পাবো তা তিনজনে ভাগ করে নিবো)। আম্মার ও আমি কিছুই আনতে পারিনি। অবশ্য সাদ (রাঃ) দু’জন যুদ্ধবন্দী নিয়ে আসেন।
নাসায়ী ৪৬৯৭, আবূ দাউদ ৩৩৮৮, বায়হাকী ফিস সুনান ৪/১৯৪, ইরওয়া ১৪৭৪। 

মুদারাবা পদ্ধতিতে ব্যবসায় যদি লোকসান হয়,সেক্ষেত্রে এই ব্যবসা শুরুর পর প্রথমবারেই তাদের লোকসান হয়,সেক্ষেত্রে তো তাদের কোনো লাভই নেই।
তাই সরাসরি মূলধন থেকে ক্ষতিপূরণ হবে।
কিন্তু যদি আগে থেকেই ব্যবসা চলে, এখন লোকসান হয়েছে, সেক্ষেত্রে আগে তো লাভও হয়েছিলো,(যদিও তাহা বন্টনকৃত হোক) সেই আগের লাভের টাকা হতে লোকসানের ক্ষতিপূরণ করতে হবে।
অতঃপর মূলধন হতে। 

تبيين الحقائق شرح كنز الدقائق وحاشية الشلبي: 
"قال - رحمه الله - (وما هلك من مال المضاربة فمن الربح)؛ لأنه تابع ورأس المال أصل لتصور وجوده بدون الربح لا العكس فوجب صرف الهالك إلى التبع لاستحالة بقائه بدون الأصل كما يصرف الهالك العفو في الزكاة قال - رحمه الله - (فإن زاد الهالك على الربح لم يضمن المضارب)؛ لأنه أمين فلا يكون ضمينا للتنافي بينهما في شيء واحد".
(کتاب المضاربۃ،باب المضارب یضارب،ج:5،ص:67،ط:المطبعة الكبرى الأميرية - بولاق، القاهرة) 
সারমর্মঃ-
মুদারাবার সম্পদ হয়ে যাহা লোকসান হবে বা ক্ষতিগ্রস্ত হবে,তাহা লভ্যাংশ থেকে পূরন হবে।
কেননা সেটা অনুগত,আর মূলধন হলো আসল।
যদি লাভ থেকে ক্ষতি বেশি হয়,সেক্ষেত্রে বাকি টুকু মূলধন থেকে পূরন করা হবে।

এক্ষেত্রে যে ব্যবসায় শ্রম দিচ্ছে,সে যদি শুধু শ্রমই দিয়ে থাকে,ইনভেস্ট না করে থাকে,তাহলে তার তো মূলধন নেই,তাই সে উক্ত লোকসানে ভাগীদার হবেনা। 

বিস্তারিত জানুনঃ- 

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
(০১)
প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতিতে ব্যবসায় মুদারাবার নিয়ম কানুন মানা হচ্ছেনা।
বিধায় এই পদ্ধতিতে শেয়ার ব্যবসা জায়েজ নয়।

(০২)
৬০% প্রফিট বিনিয়োগকারীকে দেওয়া শরীয়াহ সম্মত।
"তবে লোকসান হলে আগে লভ্যাংশ থেকে পূরন হবে।
লাভ থেকে ক্ষতি বেশি হয়,সেক্ষেত্রে বাকি টুকু মূলধন থেকে পূরন করা হবে"

এই মূলনীতি না মানায় প্রশ্নে উল্লেখিত পদ্ধতি সহীহ নয়।

★মুদারাবার ক্ষেত্রে যেই পরিমাণ লাভ নেয়ার চুক্তি করা হবে, লোকসানের ক্ষেত্রেও একই পরিমাণ নির্দিষ্ট হবেনা।
বরং এখানে যে যেই পরিমান টাকা ইনভেস্ট করেছে,সেই হারেই লোকসানে ভাগীদার হতে হবে।

উদাহরণঃ-
দুইজন ব্যাক্তি উভয়েই ৫০% টাকা দিয়ে শরিকানা ব্যবসা করছে।
এখানে উভয়ে টাকা দিলেও ব্যবসার দেখভাল একজন করে অপরজন করেনা,অর্থাৎ একজন শ্রম দেয়,অপরজন শ্রম দেয়না।
তাই তাদের মাঝে লভ্যাংশ এভাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে যে যে ব্যবসায় টাকা লাগানোর পাশাপাশি উক্ত ব্যবসায় দেখাশোনার কাজও করছে,তার লভ্যাংশ হলো ৬০%। 
আর যে ব্যাক্তি শুধু ৫০% টাকা দিয়েছে,উক্ত ব্যাবসায় কাজ করছেনা,তার লাভ ৪০%।

এখন উক্ত ব্যবসায় লোকসানের ক্ষেত্রে উভয়েই যেই টাকা ইনভেস্ট করেছিলো সেদিক লক্ষ্য করে লোকসানে ভাগীদার হতে হবে।

অর্থাৎ উল্লেখিত ছুরতে যেহেতু উভয়েই ৫০% টাকা দিয়ে শরিক হয়েছিলো,তাই এখন লোকসানে উভয়ে ৫০% হারেই শরীক হবে। 

(০৩)
লোকসান হলে বিনিয়োগ কারীদেরও লোকসানে শরীক হতে হবে।
এক্ষেত্রে লোকসান হলে আগে লভ্যাংশ থেকে লোকসান পূরন করা হবে।
যদি লাভ থেকে ক্ষতি বেশি হয়,সেক্ষেত্রে বাকি টুকু মূলধন থেকে পূরন করা হবে।

এমতাবস্থায় আপনারা যদি শুধুমাত্র শ্রম দেন,কোনো টাকা বিনিয়োগ না করেন,সেক্ষেত্রে আপনাদের পকেট থেকে এক টাকাও লোকসান পূরন বাবদ দিতে হবেনা।

★এই নিয়ম মেনে শেয়ার ব্যবসা করার পরামর্শ রইলো। 


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...