আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
112 views
in বিবিধ মাস’আলা (Miscellaneous Fiqh) by (12 points)
আসসালামু আলাইকুম উস্তায।

উস্তায, ৪ বছর আগে আমার বাবা অনেক টাকা ঋনগ্রস্থ হয়ে গিয়েছিলেন। যার ফলে তারা শহরের নিজেদের বাসা বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন।কিন্তু আমার স্বামী বাধা দেন এবং তিনি আমার মা-বাবা কে ৫ লক্ষের বেশি টাকা দেন, আলহামদুলিল্লাহ এতে তাদের সমস্ত ঋন শোধ হয়ে যায়। আমার বাবার তখন কোন রোজগার ছিলোনা, তাই রোজগার করার জন্য একটা মুদি দোকান নিয়ে দিয়েছেন। এবং সেই ব্যবসা যেন কিছুটা দাড়াতে পারে তাই ৬ মাস ব্যবসা থেকে টাকা খরচ যেন না করতে হয় তাই আমার স্বামী ওই ৬ মাস পরিবারের সমস্ত ভরনপোষণ সামলিয়েছে।

আল্লাহ তায়ালা ক্ষমা করুন, আমার মা-বাবার সাথে তার যে কোন ঝামেলার প্রেক্ষিতে সে প্রচন্ড অহংকারী হয়ে উঠে সেসব দিনগুলোর কথা ভেবে, যখন সে তাদের পাশে দাড়িয়েছিলো। তখন আমি বাবার বাড়িতে থাকতাম। কিন্তু সবসময় ঝগড়া অশান্তি হয় তাই আমি একরকম জোড়পূর্বক তাকে ও আমার বাচ্চাদের নিয়ে আলাদা বাসা ভাড়া করে থাকতে শুরু করি।

দুর্ভাগ্যবশত এরপর থেকে তার ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস শুরু হয় এবং বর্তমানে আমাদের তিন বাচ্চার সংসার চালাতে আর বাসা ভাড়া দিতে সে প্রচন্ড হিমশিম খাচ্ছে।

এই ৪ বছরে নানান ঝগড়া বা কথার সুযোগে আমার স্বামী আমাকে আমার বাবার বাড়িতে দেওয়া সেই টাকা নিয়ে বারবার কথা শুনিয়েছে এবং সে চায় তার নামে যেন আমার বাবার বাসার অর্ধেক লিখে দেওয়া হয়। কিন্তু আমার বাবা-মা এতে রাজি না, আমিও চাই না।

রিসেন্টলি তার এসব আচরনের প্রেক্ষিতে ও আমার বাবার অর্থনৈতিক কিছু সমস্যার কারনে তাদের বাসা আবারও বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। তাদের প্ল্যান হলো আমার স্বামীকে তার পাওনা (১০ লক্ষ) টাকা ফিরত দিবে এবং তাদের সমস্যা মিটাবে। মূল উদ্দেশ্য হলো আমার স্বামীকে টাকা ফেরত দেওয়া। কেননা এই টাকার জন্য সে সবসময় সুযোগ পেলেই আমাকে কথা শোনায়। আমার মা-বাবাকে বেইমান, অকৃতজ্ঞ বলে। তাদের দেখতে ইচ্ছে করেনা,বাসায় যেন না আসে এসব বলে। আমি সন্তান হয়ে এগুলো মানতে পারিনা। আমাদের বিয়ের সময় তার বয়স মাত্র ১৮, সবে ইন্টার পাশ করেছে। ৫ বছর আমি বাবার বাড়িতে থাকি। আমার দুই সন্তানকে সন্তানের মত আগলে আমার মা বড় করেছেন। সেই সময় আমার আর আমার বাচ্চাদের সমস্ত খরচ আমার পরিবার ক্যারি করেছে। আর তাকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দিয়েছে। কোন ধরনের অর্থনৈতিক সাপোর্ট অর্থ্যাৎ তার পড়াশোনা বা তার খাবার দাবারের খরচের সাপোর্ট তাকে আমার পরিবার দেয়নি বিধায় সে এটা নিয়েও কথা শোনায়। বর্তমানে তার খারাপ সময়ে সে আবারও আমার বাবার বাসার অর্ধেকটা নিবে, ১০ লক্ষ টাকা ক্যাশ ফেরত নিবেনা বলে আমাকে কথা শোনাচ্ছে। কিন্তু আমার মা-বাবা তাকে বাসা দিবেনা,বরং বাসা বিক্রি করে তাকে টাকা দিবে আর আমিও এটাই চাই। এজন্য সে আমার প্রতি প্রচন্ড অসন্তুষ্ট। আমি বাবার সম্পত্তিতে অংশীদার, আমার টা যেন আমি নিয়ে আসি ইত্যাদি ফোর্স করে৷ কিন্তু ঝগড়া শেষে স্বাভাবিক সব। কিন্তু যখন সে কথা বলে কলিজা দুমড়ে মুচড়ে যায়, এত কঠিন ভাষায় এত এগ্রেসিভলি কথা বলে। এমন কথা বলে যে চোখের পানি আমি ধরে রাখতে পারিনা।

ক্ষমা করবেন উস্তায, আমার প্রশ্নটা বড় হয়ে যাওয়ায়। পুরোপুরি না বললে হয়তো পরিস্থিতি বুঝানো যাবেনা উস্তাদ। আমার স্বামী আলহামদুলিল্লাহ আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসে। কিন্তু তার মাথা গরম হয়ে গেলে সে শুধুমাত্র গায়ের জ্বালা মিটানোর জন্য যা মুখে আসে বলতে থাকে, আবার মাফ চায়। আবার একই কথা ঘটনা রিপিট করে।

উস্তায, আমি এসব তিনটা বছর ধরে সহ্য করতে করতে সত্যিই ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছি। সংসার ছেড়ে দিতে ইচ্ছে করে। দম বন্দ হয়ে আসে। আবার তার ভালোবাসা পেয়ে ভুলে যাই।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে, তার এত অসন্তুষ্টি, বিরক্তির পরেও যে আমি আমার বাবার বাসার অর্ধেক তাকে লিখে দেওয়ার ব্যাপারে সম্মতি দিচ্ছিনা এটা কি আমার গুনাহ হবে?

উস্তায, এরকম পরিস্থিতিতে আমি কি করতে পারি যদি দয়া করে বলতেন! আমি কি আমার স্বামীর হক নষ্ট করছি? আমি কি আমার মা-বাবাকে গিয়ে তার নামে অর্ধেক বাসা লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিবো? কিন্তু তারা তো দিতে চায়না। সমাধান না হোক, এমন কিছু নসীহাহ করুন যেন আমি একটু শান্তি পাই। আমার এসব নিয়ে আমার স্বামীর সাথে প্রায়ই তুমুল ঝগড়া হয়, আর সহ্য করতে পারছিনা আমি

1 Answer

0 votes
by (561,180 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم 

মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ 

یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا لَا تَاۡکُلُوۡۤا اَمۡوَالَکُمۡ بَیۡنَکُمۡ بِالۡبَاطِلِ اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ تِجَارَۃً عَنۡ تَرَاضٍ مِّنۡکُمۡ ۟ وَ لَا تَقۡتُلُوۡۤا اَنۡفُسَکُمۡ ؕ اِنَّ اللّٰہَ کَانَ بِکُمۡ رَحِیۡمًا ﴿۲۹﴾ 
হে মুমিনগণ! তোমরা একে অপরের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না; কিন্তু তোমরা পরস্পর রাযী হয়ে ব্যবসা করা বৈধ এবং নিজেদেরকে হত্যা করো না; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু।
(সুরা নিসা ২৯)

হাদীস শরীফে এসেছেঃ 
عَنْ أَبِىْ حُرَّةَ الرَّقَّاشِىِّ عَنْ عَمِّه قَالَ : قَالَ رَسُوْلُ اللّٰهِ ﷺ : «أَلَا لَا تَظْلِمُوا أَلَا لَا يَحِلُّ مَالُ امْرِئٍ إِلَّا بِطِيبِ نَفْسٍ مِنْهُ». رَوَاهُ الْبَيْهَقِىُّ فِىْ شُعَبِ الْإِيْمَانِ وَالدَّارَقُطْنِىِّ فِى الْمُجْتَبٰى

আবূ হুররাহ্ আর্ রক্কাশী (রহঃ) তাঁর চাচা হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ সাবধান! কারো ওপর জুলুম করবে না। সাবধান! কারো মাল তার মনোতুষ্টি ছাড়া কারো জন্য হালাল নয়।
আহমাদ ২০৬৯৫, শু‘আবুল ঈমান ৫১০৫, ইরওয়া ১৪৫৯, সহীহ আল জামি‘ ৭৬৬২।

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনার স্বামী আপনার মা বাবার জন্য যতটাকা খরচ করেছে শুধুমাত্র ততটুকু টাকাই পাবে।
এর চেয়ে বেশি দাবী করা জুলুম।

এক্ষেত্রে তিনি আপনার বাবা মাকে ঋন পরিশোধ এর জন্য ৫ লক্ষ+ টাকা দিয়েছিলেন,মুদি দোকান নিয়ে দিয়েছিলেন,৬ মাস পরিবারের সমস্ত ভরনপোষণ সামলিয়েছেন।

এ বাবদ যত খরচ হয়েছে,সেটা আপনার স্বামী পাবে। এর চেয়ে বেশি দাবী করা জুলুম।

★সুতরাং আপনি আপনার মা-বাবাকে গিয়ে তার নামে অর্ধেক বাসা লিখে দেওয়ার প্রস্তাব দিবেননা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...