আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
121 views
in পরিবার,বিবাহ,তালাক (Family Life,Marriage & Divorce) by (3 points)
আসসালামু আলাইকুম,
আমি বিবাহিতা।সন্তান নেই। আমার স্বামী বিবাহের ৩ মাস পর সৌদি চলে যায়। এখনো সৌদিতে আছেন ৬ বছর টানা।


যাওয়ার সময় বলেছিল একটানা ৪ বছর থেকেই চলে আসবো, আর বিদেশ করবোনা। আমি মেনেছিলাম।


৪ বছর পর আমাকে বললো জায়গা কিনেছি যদি ঘর না করে আসি তাহলে তো কিছুই লাভ হলো না।তাই আমার থেকে ২ বছর সময় নেয়।আমি মেনেছিলাম।


এই ৬ বছরে একবারের জন্যও আসেনি দেশে।উনার দুইটা জায়গা কেনা হলো, একটি ৩ তলা বিল্ডিং হলো। সেখানে উনার ৩ টি ফ্লাট।একটি আমাদের জন্য আর ২ টি ভাড়া দিতে পারবে।


২মাস আগে আমাকে বললো ২ মাস সময় দিতে কোরবানির আগে এসে দেশে কোরবানির ঈদ করবে।মেনেছিলাম আমি।


এখন উনি পুরাই অন্য কথা বলতেছে। দেশে এসে যদি ১ লাখ না কাজ করে আনতে পারি দেশে এসে কি করব? আমি ইকামাহ ঠিক করে দেশে ৩ মাসের জন্য বেড়াতে আসবো। এভাবে প্রতি বছর আসবো ৩ মাসের জন্য। মানে এখন আর টাইম নিচ্ছে না আনলিমিটেড।


আমি বলেছি,এটা তো বিয়ের উদ্দেশ্য না।আমি ৬ বছর সবর করেছি, এক সাথে থাকবো স্বপ্ন দেখালেন। আমাকে আপনার সাথে রাখেন, আপনি দেশে থাকলে আমাকে দেশেই রাখেন,সৌদিন থাকলে সৌদি আমাকে রাখেন।


উনি বলতেছে এটা সম্ভব না তোমাকে পার্মানেন্ট সৌদি রাখলে মাসে ১ লাখ বছরে ১২ লাখ টাকা খরচ হবে। এদিকে উনি বছরে ৫০ লাখ টাকা কাজ ও করেছে। আমার জন্য ১২ লাখ খরচ করতে নারাজ।


যদি বছরে ৩০ লাখ ও আয় করে আমার পিছনে ১২ লাখ ই যদি যায় তবু ও তো আমি উনার পরিবার আমার কথা ভাবা দরকার উনার।


পৃথিবীর অন্যান্য প্রবাসীর বউ রা ১০ বছর ২০ বছর থাকতেছে এই উদাহরণ আমাকে দেয়।


প্রশ্ন ১ঃ "উনাকে বলেছি," আমাকে সাথে রাখবেন যেখানেই থাকেন," এই আবদারে আমি যদি অটল থাকি উনার কথা না মেনে আমি কি গোনাহগার হব?
প্রশ্ন ২ঃ আমার আবদারে অটল থাকতে গিয়ে অভিমান করেছি,যেই পর্যন্ত আমাকে উনার সাথে না নিবে কথা বলব না এটা কি ঠিক আছে? আমি মাজবুর


বি:দ্র: বিষয়টি পারিবারিক ভাবে সমাধান হবে না। সবাই চায় উনি ইকামাহ ঠিক করে দেশে বেড়াতে আসুক আবার যাক এভাবে চলতে থাকুক (যেমন টা আমাদের সমাজে চলছে)।তাই আমাদের নিজেদেরকেই সমাধান করতে হবে।


আমার কি করা উচিত প্লিজ জানাবেন

জাযকাল্লাহু খয়রন ফিদ্দুনইয়া ওয়াল আখিরহ

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

https://ifatwa.info/12098/ ফতোয়াতে উল্লেখ করা হয়েছেঃ
  
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর হকঃ
স্বামী-স্ত্রী পরস্পর পরস্পরের উপর অনেক হক রয়েছে।তন্মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হক হল,সহবাসের হক।
স্ত্রীর উপর স্বামীর সহবাস হক কতটুকু? 
উত্তরঃ স্বামী স্ত্রীকে সহবাসের জন্য তলব করলে স্ত্রীর জন্য তৎক্ষনাৎ স্বামীর ডাকে সাড়া দেয়া ওয়াজিব।শরয়ী উযর ব্যতীত জবাব না দেয়ার কোনো অপশন নেই।
হযরত আবু হুরায়রা রাযি থেকে বর্ণিত
عن أبي هريرة رضي الله عنه، قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا دعا الرجل امرأته إلى فراشه فأبت فبات غضبان عليها لعنتها الملائكة حتى تصبح»
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন,
কোন লোক যদি নিজ স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসতে ডাকে আর সে অস্বীকার করে এবং সে ব্যক্তি স্ত্রীর উপর দুঃখ নিয়ে রাত্রি যাপন করে, তাহলে ফেরেশ্তাগণ এমন স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত লা‘নত দিতে থাকে। 
(সহীহ বুখারী-৩২৩৭)

এখন সহসাই প্রশ্ন জাগে, 
তাহলে স্বামীর নিকট স্ত্রীর সহবাস হক্ব কতটুকু?

এ সম্পর্কে উলামাদের কাছ থেকে বিরোধপূর্ণ বক্তব্য পাওয়া যায়।
(ক) 
ইবনে তাইমিয়্যাহ রাহ বলেন,
ﻭﻳﺠﺐ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﺰﻭﺝ ﻭﻁﺀ ﺍﻣﺮﺃﺗﻪ ﺑﻘﺪﺭ ﻛﻔﺎﻳﺘﻬﺎ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻨﻬﻚ ﺑﺪﻧﻪ ﺃﻭ ﻳﺸﻐﻠﻪ ﻋﻦ ﻣﻌﻴﺸﺘﻪ ، .. ﻓﺈﻥ ﺗﻨﺎﺯﻋﺎ ﻓﻴﻨﺒﻐﻲ ﺃﻥ ﻳﻔﺮﺿﻪ ﺍﻟﺤﺎﻛﻢ ﻛﺎﻟﻨﻔﻘﺔ ﻭﻛﻮﻃﺌﻪ ﺇﺫﺍ ﺯﺍﺩ " 
স্ত্রীর সন্তুষ্টি পর্যন্ত স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব(অর্থাৎ স্ত্রীর চাওয়া মাত্র স্বামীকে সহবাস করতে হবে)।যতক্ষণ না স্বামীর শরীর দুর্বল হচ্ছে বা স্বামীকে তার জীবিকানির্বাহ পরিচালনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে। সহবাসের পরিমাণ নিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরস্পরের মধ্যে ঝগড়া সৃষ্টি হলে এক্ষেত্রে উচিৎ খোরপোষ ইত্যাদির মত সহবাসের পরিমাণকে বিচারক ঠিক করে দেবেন।(দৈনিক না সাপ্তাহিক? এইভাবে ঠিক করে দিবেন)
ফাতাওয়ায়ে ইবনে তাইমিয়্যাহ-২৪৬

(খ)
জুমহুর উলামায়ে কেরাম বলেন,প্রতি চার মাসে একবার স্বামীর উপর স্ত্রীকে সহবাস করা ওয়াজিব।(যখন স্ত্রী তা চাইবে)
সে সম্পর্কে ইবনে আবেদীন শামী রাহ, লিখেন..
স্বামী-স্ত্রীর হক সমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সহবাস, সুতরাং স্ত্রীর সাথে স্বামী কতদিন পর্যন্ত সহবাস না করে থাকতে পারবে সে বিষয়ে অালোকপাত করে বলেনঃ
وَيَجِبُ أَنْ لَا يَبْلُغَ بِهِ مُدَّةَ الْإِيلَاءِ إلَّا بِرِضَاهَا وَطِيبِ نَفْسِهَا بِهِ. اهـ
স্ত্রীর সন্তুষ্টি ব্যতীত স্বামী মুদ্দতে ই'লা তথা চার মাস এর বেশী সময় সহবাস ব্যতীত থাকতে পারবে না।অন্যকথায় চার মাসের ভিতরে স্ত্রীর সাথে একবার সহবাস করা স্বামীর উপর ওয়াজিব।তবে স্ত্রী সহবাস ব্যতীত সন্তুষ্ট থাকলে ভিন্ন কথা অর্থাৎ যতদিন ইচ্ছা সহবাস ব্যতীত স্বামী থাকতে পারবে।

বিস্তারিত জানুন-https://www.ifatwa.info/990

পাপ থেকে হেফাযত এবং পূর্ণ নিরাপত্তার মধ্যে থাকার শর্তে স্বামী-স্ত্রী উভয়ে পারস্পরিক সম্মতিতে দীর্ঘ সময় দূরে থাকায় শরী‘আতে কোন বাধা নেই। তবে পাপের সাথে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকলে অল্প দিনের জন্য হলেও দূরে থাকা বৈধ নয়। 

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
যেকোনো ক্ষেত্রেই চার মাসের বেশি বিদেশ অবস্থান স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষ।
এমনকি দেশেও যদি কেহ স্ত্রী হতে চার মাসের বেশি দূরে থাকে,সেক্ষেত্রেও এটি স্ত্রীর অনুমতি সাপেক্ষ।

স্বামী-স্ত্রী সর্বদা কাছাকাছি থাকবে, এটাই শরিয়তে কাম্য।
তবে যদি কোনো প্রয়োজনে (যেমন, জেহাদে যাওয়া কিংবা জীবিকা অর্জনের জন্য প্রবাসে যাওয়া) স্বামী দূরে কোথাও যায় তাহলে চার মাসের মধ্যে একবার হলেও স্ত্রীর কাছে ফিরে আসতে হবে।

কারণ নারীরা সাধারণত তাদের স্বামী থেকে চার মাস দূরে থাকতে পারে।
,
হাদিস শরিফে এসেছে,যায়দ বিন আলমাস (রহ.) বলেন,
‘এক রাতে হযরত উমর (রা.) জনগণের খোঁজ-খবর নেয়ার জন্য প্রহরী বেশে বের হয়ে গেলেন। এক বাড়ির পাশ দিয়ে অতিক্রম করার সময় তিনি ঘর থেকে নারী কণ্ঠে কবিতা আবৃত্তি শুনতে পেলেন। ঘরের ভিতর এক মহিলা কবিতা আবৃত্তি করছিল। যার অর্থ হলো,রজনী দীর্ঘ হয়েছে এবং তার এক পার্শ কৃষ্ণবর্ণ ধারণ করেছে। এদিকে দীর্ঘদিন যাবত আমার প্রেমাস্পদ আমার কাছে নেই যে,তার সাথে আমি আমোদ-প্রমোদ করব। আল্লাহর শপথ! যদি এক আল্লাহর ভয় না থাকত তাহলে এ খাটের চার পাশ নড়ে উঠত।
যখন ভোর হলো হযরত উমর (রা.) রাতের কবিতা আবৃত্তিকারিণী মহিলাকে ডেকে আনার নির্দেশ দিলেন। মহিলা খলিফার দরবারে এসে উপস্থিত হলে হযরত উমর (রা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,তুমি কি গত রাতে এ-জাতীয় কবিতা আবৃত্তি করেছিলে? মহিলা বলল,হ্যাঁ।
উমর (রা.) বললেন কেন? উত্তরে মহিলা বলল,দীর্ঘদিন যাবত আমার স্বামী জিহাদের ময়দানে রয়েছে। অথচ এমুহূর্তে তার নৈকট্য পাওয়া আমার একান্ত কাম্য ছিল,তার বিরহেই আমি এমনটি করেছি৷ হযরত উমর (রা.) এ কথা শুনে তখনই ঐ মহিলার স্বামীর নিকট ফিরে আসার নির্দেশনা দিয়ে শাহী ফরমান প্রেরণ করলেন। এরপর তিনি তার কন্যা হযরত হাফসা (রা.) এর নিকট গিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করলেন,হে আমার মেয়ে! নারীরা তাদের স্বামী থেকে কতদিন পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে? (প্রজাদের স্বার্থ রক্ষার ইচ্ছা যদি না হত তবে আমি তোমার নিকট এরুপ প্রশ্ন করতাম না) তখন হাফসা (রা.) বললেন,মেয়েরা তাদের স্বামী থেকে চার মাস পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করে থাকতে পারে। এরপর থেকে হযরত উমর (রা.) চার মাস পরপর মুজাহিদ বাহিনীকে ফেরত নিয়ে আসতেন এবং নতুন বাহিনী পাঠিয়ে দিতেন।’ [মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস: ১২৫৯৪]

সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
(০১)
প্রশ্নের বিবরন মতে এই আবদারে আপনি যদি অটল থাকেন, উনার কথা না মেনে,সেক্ষেত্রে আপনি গোনাহগার হবেননা।

(০২)
অভিমান করা যাবে।
তবে তিন দিনের বেশি কথা বন্ধ রাখা জায়েজ নেই। কমপক্ষে সালাম হলেও দিতে হবে।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...