আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
207 views
in হালাল ও হারাম (Halal & Haram) by (9 points)
আসসালামু আলাইকুম, আমার হাজবেন্ডের একটা বিষয় নিয়ে আমি চিন্তিত হওয়ায় প্রশ্ন করছি। আমার হাজবেন্ড মাশা আল্লাহ প্রচুর ভালো একজন মানুষ, স্বামী হিসেবে তাকে ১০০% এর উপর কিছু থাকলে সেটাই দিবো আলহামদুলিল্লাহ। তিনি আল্লাহর ফরজ ইবাদাতে, আত্মীয়, প্রতিবেশির উপর যত্নশীল, এমনকি মানুষের প্রতিও প্রচুর দয়া। এমনকি যদি এখন জিহাদে অংশ নেয়ার প্রয়োজন হয় উনি চলে যাবে ইনশাআল্লাহ। আবার অন্যের হক পুরনের জন্য নিজের হক ছেড়ে দিতেও পিছিয়ে যেতে আপত্তি করবেন না ইনশাআল্লাহ।
এখন সমস্যা হলো তার এতো ভালো মানসিকতার জন্য বর্তমান লেবাসধারী মুসলমানদের দেখলে তার রাগ উঠে। খারাপ লাগা, রাগ আসা স্বাভাবিক কিন্তু তিনি অন্যভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় যা দেখে আমার মনে হয় তার গুনাহ হচ্ছে। যেমন: মুসলমান হয়ে কেনো নামাজ পড়ে না, সিগারেট খায়, মানুষকে ঠকায়, বর্তমানে আমলহীন আলেমের কুকীর্তি, ফিলিস্তিনের দু:সময়ে আরবের বড় বড় মুসলিম নেতাদের উদাসীনতা, সর্বোপরি পৃথিবীতে বেশিরভাগ মুসলমানদের দায়িত্বহীন উদাসীন জীবনে তিনি বিরক্ত। আর এতোই বিরক্ত  যে ফিলিস্তিনের খারাপ অবস্থা দেখে মুসলমানদের অবজ্ঞা করে কথা বলে। মুসলমানদের অবজ্ঞা করে বলবে আপনারা মুসলমানরা এমন করেন, আপনারা আস্ত উট খান, খাবার নষ্ট করেন আর ফিলিস্তিনরা কষ্টে আছে।  বাহিরে বের হয়ে কাউকে সিগারেট খাওয়া দেখলে বলবে আপনার মুসলিম ভাই এমন করে। দাড়িওয়ালা কাউকে সিগারেট খাওয়া দেখলে কটুক্তির সুরে বলবে মুখে দাড়ি গায়ে সাদা পাঞ্জাবি এমন করে!
আমি আমার হাজবেন্ডকে বুঝাই যে দুনিয়ায় লেবাসধারী মুসলমানদের সংখ্যা বেশি, আবার মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেও এদের দ্বীনের বুঝ নাই। এদের নিয়ে ভেবে রেগে খারাপ কিছু মুখে আনিয়েন না। তখন হাজবেন্ড বলেন তাহলে এদেরকে মুসলিম থেকে আলাদা করতে হবে,এদের কেনো মুসলিম বলেন। আমি বলি আল্লাহ তা'য়ালা উনাদের মুসলিম হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন আমরা মুসলিম থেকে বাদ দেয়ার কে, আপনি উনাদের মুসলমানদের মধ্যে আলাদা একদম নিম্নস্তরে ফেলে দেন, আল্লাহ তা'য়ালা ও উনাদের সেভাবে দেখেন কিন্তু আমার হাজবেন্ড বুঝতে চায় না, একই কাজ করেন।

বরং আমার হাজবেন্ড বলে আল্লাহ বলছেন সরাসরি প্রতিবাদ করার সুযোগ না থাকলে ঘৃণা করতে তাই উনি এমন করেন। আমি আমার হাজবেন্ড কে বলি ঘৃণা হিসেবে তাদের কাজ কে ঘৃণা করেন, কিন্তু পুরো মুসলমানদের অবজ্ঞা করে এভাবে ঘৃণা প্রকাশ করা তো যাবে না। হাজবেন্ড বলেন ওই খারাপ মুসলমানদের উদ্দেশ্যেই উনি এমন করেন, করবেন। কিন্তু কথা বলার সময় মুসলিম বলেই রাগ প্রকাশ করে অবজ্ঞা জনিত কথা বলেন।আমি আমার হাজবেন্ড কে বলি আল্লাহ তা'য়ালা এভাবে অবজ্ঞা করে, গালি দিয়ে কথা পছন্দ করেন না। আপনি এভাবে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করলে আল্লাহ তা'য়ালার কাছে তো জবাবদিহি করতে হবে। তিনি বলেন তিনি আল্লাহ তা'য়ালা কে বলবেন এসব মানুষদের জন্যই এমন করেন।

উস্তাদ আমার হাজবেন্ড যদি ভুল পথে থাকেন তাহলে তার কি করা উচিত, কিভাবে লেবাসধারী মুসলমানদের দেখলে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে সঠিক অভিব্যক্তি প্রকাশ করবে বুঝিয়ে বলুন, আমি আপনার উত্তর হাজবেন্ড কে দেখাবো ইনশাআল্লাহ।
(বি.দ্র. আমার হাজবেন্ড লেবাসধারী মুসলমানদের দেখে ভিতরে অনেক কষ্ট অনুভব করেই এরকম করেন, তার মনে খারাপ কিছু নেই। কিন্তু এভাবে তার ঈমানের কোনো প্রব্লেম হচ্ছে কিনা চিন্তিত আমি)

1 Answer

0 votes
by (565,890 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

হাদীস শরীফে এসেছেঃ-

حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، حَدَّثَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَجَاءٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، ح وَعَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ أَخْرَجَ مَرْوَانُ الْمِنْبَرَ فِي يَوْمِ عِيدٍ فَبَدَأَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَقَامَ رَجُلٌ فَقَالَ يَا مَرْوَانُ خَالَفْتَ السُّنَّةَ أَخْرَجْتَ الْمِنْبَرَ فِي يَوْمِ عِيدٍ وَلَمْ يَكُنْ يُخْرَجُ فِيهِ وَبَدَأْتَ بِالْخُطْبَةِ قَبْلَ الصَّلَاةِ . فَقَالَ أَبُو سَعِيدٍ الْخُدْرِيُّ مَنْ هَذَا قَالُوا فُلَانُ بْنُ فُلَانٍ . فَقَالَ أَمَّا هَذَا فَقَدْ قَضَى مَا عَلَيْهِ سَمِعْتُ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ " مَنْ رَأَى مُنْكَرًا فَاسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ "
.
আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা ‘ঈদের দিন মারওয়ান ঈদের মাঠে মিম্বার স্থাপন করে সলাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করায় জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলেন, হে মারওয়ান! তুমি সুন্নাত বিরোধী কাজ করলে। তুমি ‘ঈদের দিন বাইরে মিম্বার এনেছো এবং সলাতের পূর্বেই খুত্ববাহ শুরু করেছো। অথচ ইতিপূর্বে (নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও খুলাফায়ি রাশিদীনের যুগে) কখনো এমনটি করা হয়নি। আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, লোকটি কে? লোকজন বললো, অমুকের পুত্র অমুক। তিনি বললেন, সে তার দায়িত্ব পুরোপুরি পালন করেছে। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোন গর্হিত (শারী‘আত বিরোধী) কাজ সংঘটিত হতে দেখলে তাকে হাত দিয়ে প্রতিরোধ করবে। এরূপ করতে অক্ষম হলে তা কথার দ্বারা প্রতিহত করবে। যদি এতেও অক্ষম হয় তাহলে সে তা অন্তরে ঘৃণা করবে (বা তা দূর করার উপায় অন্বেষনে চিন্তা-ভাবনা করবে)। তবে এটি হচ্ছে দুর্বলতম ঈমানের পরিচায়ক।
(মুসলিম , ইবনু মাজাহ  হাঃ ১২৭৫,  হাঃ ৪০১৩), আহমাদ (৩/১০)
,
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلَاءِ، وَهَنَّادُ بْنُ السَّرِيِّ، قَالَا: حَدَّثَنَا أَبُو مُعَاوِيَةَ، عَنِ الْأَعْمَشِ، عَنْ إِسْمَاعِيلَ بْنِ رَجَاءٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ، وَعَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ رَأَى مُنْكَرًا فَاسْتَطَاعَ أَنْ يُغَيِّرَهُ بِيَدِهِ فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ - وَقَطَعَ هَنَّادٌ بَقِيَّةَ الْحَدِيثِ، وَفَّاهُ ابْنُ الْعَلَاءِ: - فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ بِلِسَانِهِ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الْإِيمَانِ

আবূ সাঈদ আল-খুদরী (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছিঃ কেউ কোনো অন্যায় হতে দেখলে সে তা হাতের সাহায্যে দমন করতে সক্ষম হলে তা দ্বারা যেন প্রতিরোধ করে। ‘‘হান্নাদ’’ এ হাদীসের বাকী অংশ উল্লেখ করেনি। তবে ইবনুল আলা তা পূর্ণ করেছেন। তা হলোঃ যদি হাতের দ্বারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম না হয়, তবে জিহ্বা দ্বারা আর যদি জিহ্বা দ্বারা প্রতিরোধ করতে সক্ষম না হলে তবে অন্তর দ্বারা, তবে এটা দুর্বল ঈমানের স্তর।
(আবু দাউদ ৪৩৪০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি বোন,
আপনার স্বামী সঠিক পথেই আছেন বলে মনে হচ্ছে আলহামদুলিল্লাহ। 
তার ঈমানের কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
অন্যায়ের প্রতিবাদ তো ঠিক আছে কিন্তু উস্তাদ তিনি এমনিতে রাস্তায় কারো সাথে দেখা হলে সালাম দেন অথচ লেবাসধারী মুসলমানদের জন্য বলেন এখন  থেকে আর সবাইকে সালাম দিবেন না, বেচে বেচে সালাম দিবেন। এমনকি নামাজ পড়েও মানুষ খারাপ কাজ করে তাই তাদের সাথে জামায়াতে নামাজ পড়তে তার ইচ্ছা হয় না। এমনকি সারাক্ষণ লেবাসধারী মুসলমানদের কথা ভেবে ভেবে তার নিজের আমল ইবাদাতের ক্ষতি করছে।

উস্তাদ প্রতিবাদ তো করতে হবে কিন্তু অন্যের জন্য নিজের ইবাদাত আমলের উপর প্রভাব পড়তে দিবে কেনো? আল্লাহ তা'য়ালা তো বলেছেন প্রত্যেক কে তার নিজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে।
by
উস্তাদ এসব লেবাসধারী মুসলমানদের উপর তো শুধু রাগ হয়ে থাকলে বা ঘৃণা প্রকাশ করলেই দায়িত্ব শেষ হবে না। দাওয়াত দিতে হবে আমাদের। উনাকে যদি বলি শুধু রাগ না হয়ে দাওয়াত দেন যত জনকে পারেন, তিনি বলেন এরা ঠিক হবে না।উস্তাদ এমনকি তিনি এ দেশ ছেড়েও চলে যেতে চান যেনো তাদের দেখতে না হয়। প্রয়োজনে অমুসলিম দেশে থাকবে,  তার মতে এসব লেবাসধারী দের থেকে অনেক শান্তি প্রিয় দেশ আছে সেখানকার অমুসলিমরাও ভালো। তার অমুসলিমরা অন্যায় করতে পারে কিন্তু মুসলিমরা কেন করবে
by
উস্তাদ আরেকটা প্রশ্নের উত্তর দিন প্লিজ, আপনি বলেছেন উনি ঠিক আছেন তাহলে আমি কি ভুল অবস্থায় আছি? প্রশ্নে বলেছিলাম এখন বেশিরভাগ আলেমগন লেবাসধারী হওয়ায় আলেমদের নিয়ে অবজ্ঞা করে কথা বলে, এরকম করা যাবে ? আবার যারা অন্যায় করে তাদের মুসলমান ভাবতে চায় না এরকম ভাবা যাবে? আল্লাহ তা'য়ালা তো মুসলিম পরিবারে জন্ম নিলেই মুসলিম হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন তা নিয়ে কি এরকম ভাবা যাবে রাগ হয়ে? 

আমি আমার হাজবেন্ডের এই ব্যাপার গুলো ভালো ভাবে জানতে চাই কারণ আমার সন্তানদের বড় দ্বীনের দায়ী, আলেম বানাতে চাই ইনশাআল্লাহ । কিন্তু আমার হাজবেন্ডের এ ব্যাপারগুলো আমার সন্তানরা ধারণ করে যদি তারাও মুসলমানদের উপর রেগে দাওয়াত এর কাজ থেকে সরে থাকে এটা নিয়ে ভয় পাই। 

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...