আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
118 views
in পবিত্রতা (Purity) by (23 points)
আসসালামু  আলাইকুম
কিছু বিষয়ের ফিকহী প্রশ্নোত্তর জানতে চাচ্ছিলাম।

অবস্থা : ক) বাসায় কিছু তোষক আছে যেগুলোতে বিভিন্ন সময়ে ছোটবোনরা প্রস্রাব করেছে ছোটবেলায়। দেখা গেছে একি তোষকে বেশ অনেকবার বিভিন্ন সাইডে প্রস্রাব করেছে। তখন নাপাক জিনিস পাক করার পদ্ধতি জানা না থাকায় অজ্ঞতাবসত এই তোষকগুলো শুধু শুকিয়ে ফেলা হতো। এখন এগুলোতে আর প্রস্রাব পড়েনা অর্থাৎ বাসায় ছোট বাচ্চা নেই। একি তোষকে বিভিন্ন স্থানে হয়তো প্রস্রাব পড়েছে কিন্তু এখন তো সেটা শনাক্ত করা সম্ভব না। যেহেতু এটা দৃশ‍্যমান কিছু না।

১) এই তোষকগুলোতে পাতলা পাক চাদর বিছানো হয়। এর উপরে যদি শুকনো অবস্থায় শোয়া-বসা হয় তাহলে কি পরিহিত কাপড় চোপড় নাপাক হয়ে যাবে?

২)আর অনেক সময় দেখা গেছে যে ভেজা হাতপা নিয়ে ঐ নাপাক তোষকে বিছানো পাতলা পাক চাদরে বসা হয় তখন কি পরিহিত কাপড় বা বিছানো চাদর নাপাক হয়ে যায়?

৩) এই তোষকগুলোর পাক-নাপাকির হুকুম কি? এগুলো কি পাক করা যাবে? যেহেতু পুরো তোষকেই বিভিন্ন সময়ে নাপাকি পড়েছে। এবং এগুলো যথেষ্ট ভারি হওয়ায় নিংড়ে ধোওয়া তো সম্ভব নয়। তাহলে কিভাবে এগুলো পাক করব?

৪)এই ধরণের একি রকম নাপাকিযুক্ত একটা তোষক কিছুদিন আগে ভেঙে পুনরায় নতুন কাপড় দিয়ে বানানো হয়। অর্থাৎ ঝুট আগেরগুলোই থাকলেও বাইরের কাপড়টা পাল্টানো হয়।
এই তোষকটির পাক নাপাকি এবং এতে শোয়া বসার হুকুম কি হবে?

৫) এয়ার ফ্রেশনার স্প্রে তে যদি এলকোহল থাকে। তাহলে সেটা স্প্রে করার পর যে রুমে খুশবু ছড়াচ্ছে এটা নাকে যাওয়াতে কি কোনো শরয়ী নিষেধাজ্ঞা আছে?

৬)জনৈক কবিরাজ দেওয়ালে বালি ছিটিয়েছিল। বালিগুলো বাহিরে থেকে সংগ্রহ করা ছিল যেটা নাপাক হওয়ার সমূহ আশঙ্কা রয়েছে কারণ ঐ বালির স্তূপগুলোতে কুকুর থাকে। যদিও এটা শিওর জানা নেই বালিগুলো কোথা থেকে নিয়ে এসেছে। এই বালি ছিটানোর দ্বারা দেওয়াল ও মেঝে কি নাপাক বলে গণ‍্য হবে? নাপাক হলে তা পাক করার পদ্ধতি কি?

অবস্থা : খ ) একজন জীনযাদুগ্রস্থ মেয়ে। ৩বছর যাবৎ ভুগছে। প্রচন্ড লেভেলের ওয়াসওয়াসার রোগী। বাথরুমে গেলে তিনঘন্টা সময় ব‍্যয় করে। এত সময় লাগে বলে দিনে দুবার বাথরুমে যায়।এখন শীতে একবার যাচ্ছে। কারণ বাথরুমে ঢুকলে গোসল ছাড়া বের হতে পারেনা। প্রস্রাব ইনফেকশনের সমস‍্যা। যদিও ঔষধ খেলে সমস‍্যা কমেনা বরং বেড়ে যায়। ইদানিং সারাদিন তার প্রস্রাব চাপ লেগেই থাকে যদিও প্রস্রাব নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারাদিনে মাত্র আধালিটারের কিছু কম/বেশি পানি খায় তবুও। আর লজ্জাস্থানের আশেপাশে ইদানীং ফিল করে অন‍্যরকম সেনসেশন যেমনটা পায়ে ঝিনঝিন করলে লাগে। রোগী আশঙ্কা করছে এটা হয়তোবা যাদুর জন‍্য। তার ওয়াসওয়াসার তীব্র সমস‍্যা। তার মনে হয় সারাদিন ই প্রস্রাব লিক হচ্ছে। এছাড়া প্রচুর সাদাস্রাবের সমস‍্যা থাকায় সে সারামাস ই প‍্যড ব্যবহার করে। তার ওয়াসওয়াসার মূল হচ্ছে পাক-নাপাকি রিলেটেড। কাউকে টাচ করেনা;নিজেকে টাচ করতে দেয়না। একরুমে আবদ্ধ জীবন। বাথরুম ও একাই ইউজ করে। তবুও দু-তিনঘন্টার আগে বের হতে পারেনা। সে আসলে বর্তমানে আউট অফ কন্ট্রোল যখন সে ওয়াসওয়াসা মাফিক কাজ না করে বা কেউ রাগারাগি করে তখন মাথা যন্ত্রণা শুরু হয়ে মাঝে মধ‍্যে জীন পজেশন হয়ে যায়। অনেক চেষ্টা করেও এই ওয়াস ওয়াসা থেকে বের হতে পারছেনা। আর ডক্টরের ট্রিটমেন্ট বা রুকইয়া করাতে নিয়ে গেলেও অসুস্থ হয়ে যায় আরো। ট্রিটমেন্ট নিতে পারেনা। সাইক্রিয়াটিস্ট এর ঔষধ খেয়েও আরো খারাপ অবস্থা হয়ে গিয়েছিল। কোনো ঔষধ তার শরীরে সাপোর্ট করেনা। নামাজ-কুরআন তিলাওয়াত সব থেকে দূরে চলে গেছে। কারণ সবসময় তার প্রস্রাবের চাপ লেখে থাকে প্রায়। আর মনে হতে থাকে যে প্রস্রাব লিক হচ্ছে। এছাড়া সাদাস্রাবের নাপাকিও তো আছেই। এজন‍্য নাপাকির ভয়ে সালাত ই পড়তে পারেনা।

১) এ রোগীর সালাতের হুকুম কেমন হবে? প্রস্রাব লিক হচ্ছে এমন রোগীর সালাতের হুকুম কেমন হবে?

২) যখন গোসল শেষ করে ভাবে সালাত পড়বে। তখনও একি অবস্থা(প্রস্রাব লিক হচ্ছে এমন মনে) হয়। যদি এটাকে ওয়াসওয়াসা বলে ডিনাই করতে চায় তখন মনে হয় যে জেনেশুনে নাপাক অবস্থায় সেজদা দিলে তো কাফির হয়ে যাবে। তার ওয়াস ওয়াসা এতই তীব্র যে নিজের চোখে দেখা জিনিস ও বিশ্বাস করতে পারেনা সহজে। এক জায়গায় দাড়িয়ে ভাবতে থাকে যে সে জিনিসটাতে নাপাকি লেগেছিল কিনা।তার এই লিকেজ যে কতটুকু বাস্তব আর কতটুকু ওয়াসওয়াসা এটা সে নিজেও আইডেন্টিফাই করতে পারেনা। তাহলে সে কি করবে এই ক্ষেত্রে ওয়াসওয়াসা বলে এড়িয়ে যাবে?

৩) প‍্যাডে সাদাস্রাব আর প্রস্রাব লেগে থাকা হালতে সে কি পরিষ্কার না হয়ে (বাহ‍্যিকভাবে পরিষ্কার থেকে) ফোনে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে?নাকি গুনাহ হবে। সে মাঝেমধ‍্যে এমনটা করে।

৪)প্রস্রাব-পায়খানা ইস্তিঞ্জা শেষে হাত পাক করার শরয়ী পদ্ধতি কোনটি? কতবার কিভাবে ধুলে হাত পাক হবে?

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته 
بسم الله الرحمن الرحيم

(০১)
হাদিস শরিফে এসেছে,

عَنْ عَائِشَةَ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ، أَنَّهَا قَالَتْ أُتِيَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِصَبِيٍّ، فَبَالَ عَلَى ثَوْبِهِ، فَدَعَا بِمَاءٍ فَأَتْبَعَهُ إِيَّاهُ

উম্মুল মু’মিনীন আয়শা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল ﷺ-এর কাছে একটি শিশুকে আনা হল। শিশুটি তাঁর কাপড়ে পেশাব করে দিল। তিনি পানি আনালেন এবং এর ওপর ঢেলে দিলেন। (সহীহ বুখারী ২২২)

حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ الْعَلَاءِ ، ثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ شَوْكَرِ بْنِ رَافِعٍ الطُّوسِيُّ ، نَا أَبُو إِسْحَاقَ الضَّرِيرُ إِبْرَاهِيمُ بْنُ زَكَرِيَّا ، نَا ثَابِتُ بْنُ حَمَّادٍ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ زَيْدٍ ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ ، عَنْ عَمَّارِ بْنِ يَاسِرٍ ، قَالَ : أَتَى عَلَيَّ رَسُولُ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - وَأَنَا عَلَى بِئْرٍ أَدْلُو مَاءً فِي رِكْوَةٍ لِي ، فَقَالَ : يَا عَمَّارُ ، مَا تَصْنَعُ ؟ قُلْتُ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، بِأَبِي وَأُمِّي ، أَغْسِلُ ثَوْبِي مِنْ نُخَامَةٍ أَصَابَتْهُ . فَقَالَ " يَا عَمَّارُ ، إِنَّمَا يُغْسَلُ الثَّوْبُ مِنْ خَمْسٍ : مِنَ الْغَائِطِ ، وَالْبَوْلِ ، وَالْقَيْءِ ، وَالدَّمِ ، وَالْمَنِيِّ ، يَا عَمَّارُ ، مَا نُخَامَتُكَ وَدُمُوعُ عَيْنَيْكَ وَالْمَاءُ الَّذِي فِي رِكْوَتِكَ إِلَّا سَوَاءٌ "

আহমাদ ইবনে আলী ইবনুল 'আলা (রহঃ) ... আম্মার ইবনে ইয়াসির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার নিকট এলেন, তখন আমি একটি কূপ থেকে বালতি দিয়ে পানি তুলে আমার একটি পানির পাত্রে ভর্তি করছিলাম। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, হে আম্মার! তুমি কি করছো? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য কোরবান হোক। আমি আমার পরিধেয় বস্ত্রে লেগে যাওয়া শ্লেষ্মা পরিষ্কার করছি। তিনি বলেনঃ হে আম্মার! পাঁচটি জিনিস থেকে কাপড় ধৌত করা প্রয়োজনঃ বিষ্ঠা, পেশাব, বমি, রক্ত ও বীর্য। হে আম্মার! তোমার নাকের শ্লেষ্মা, তোমার উভয় চোখের অশ্রু এবং তোমার এই পানির পাত্রের পানি একই সমান (পাক-নাপাকীর হুকুমের ক্ষেত্রে)।
(সুনানে দারা কুতনি ৪৫০)

★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন,
এক্ষেত্রে পরিহিত কাপড় চোপড় নাপাক হয়ে যাবেনা।

(০২)
এক্ষেত্রে ভেজা হাত পায় নাপাকির চিহ্ন/গন্ধ পাওয়া গেলে হাত পা নাপাক হয়ে যাবে। 

অন্যথায় নাপাক হবেনা।

পরিহিত কাপড় বা বিছানো চাদর ভেজা থাকলে সেখানে নাপাকির চিহ্ন/গন্ধ পাওয়া গেলে তাহা নাপাক হয়ে যাবে। 

অন্যথায় নাপাক হবেনা।

(০৩)
এগুলো তিন বার ধুয়ে পাক করতে হবে 
প্রত্যেকবার ধোয়ার পর এতটুকু সময় অপেক্ষা করতে হবে,যাতে পানির ফোটা পড়া বন্ধ হয়ে যায়।

(০৪)
এটা নাপাক।
এখানে বসা ও কাপড় পাক পবিত্রতার বিষয় উপরে উল্লেখ রয়েছে।

(০৫)
না,এতে কোনো শরয়ী নিষেধাজ্ঞা নেই।

(০৬)
এই বালি ছিটানোর দ্বারা দেওয়াল ও মেঝে নাপাক বলে গন্য হবেনা। 

অবস্থা : খ ) 
(০১)
সে যদি মা'যুর হয়,সেক্ষেত্রে সে একবার ওযু করে সেই ওয়াক্তের মধ্যে যত ইচ্ছা নামাজ আদায় করতে পারবে।

আর যদি মা'যুর হয়,সেক্ষেত্রে নাপাকি পড়া বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে পূর্ণ পবিত্রতার সহিত নামাজ আদায় করবে।

(০২)
এক্ষেত্রে চেক করতে হবে।
নাপাকি অবস্থায় নামাজ পড়া যাবেনা।

(০৩)
এক্ষেত্রে অযু থাকলে মোবাইল এর স্কীন স্পর্শ করে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে।
অন্যথায় মোবাইল এর স্কীন স্পর্শ করা যাবেনা।

(০৪)
পেশাবের পর একবার হাত ভালোভাবে হাত ধুলেই তাহা পাক হয়ে যায়।

পায়খানার পর এতটুকু পানি হাতে ঢাকতে হবে,যাতে নাপাকি হাত থেকে চলে যায়।
এক্ষেত্রে সাবান ব্যবহার করা উত্তম।


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

...