জবাবঃ-
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
নামাযে কিবলামুখী হওয়া নামায সহীহ হবার জন্য শর্ত। কিবলামুখী না হলে নামায শুদ্ধই হবে না। যারা সরাসরি কিবলা দেখতে পায় না, তাদের জন্য যেহেতু সরাসরি বাইতুল্লামুখী হওয়া সম্ভব নয়। তাই তাদের জন্য আবশ্যক হল জিহাতে কিবলা তথা কিবলামুখী হওয়া। আর যারা সরাসরি বাইতুল্লাহ দেখে তাদের জন্য সরাসরি বাইতুল্লাহমুখী হওয়া আবশ্যক।
উলামায়ে কেরাম কিবলামুখী হবার একটি মূলনীতি বের করেছেন, তা হল বাইতুল্লাহ থেকে উভয় পাশ হিসেবে ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেলে নামায হবে না। ডান পাশে ৪৫ ডিগ্রি ও বাম পাশে ৪৫ ডিগ্রি পর্যন্ত ঘুরে যাবার আগ পর্যন্ত নামায শুদ্ধ হবে। তবে এর চেয়ে বেশি ঘুরে গেলে নামায হবে না। {জাওয়াহিরুল ফিক্বহ-১/২৪২-২৪৪ আহসানুল ফাতওয়া }
নামাযে কিবলামুখী হওয়া আবশ্যকীয় বিষয়। এটি ছাড়া নামাযই শুদ্ধ হয় না। তাই নামায পড়ার সময় ভাল করে কিবলা দিক ঠিক করে নেয়া জরুরী।
ইমাম ও মুক্তাদী সবার জন্যই কিবলামুখী হওয়া জরুরী। যার কিবলা ঠিক হবে না, তারই নামায শুদ্ধ হবে না। ইমামের ঠিক থাকা অবস্থায় যদি মুক্তাদীর কিবলা ঠিক না থাকে, তাহলে মুক্তাদীর নামায শুদ্ধ হবে না। তাই সবারই কিবলা ঠিক করে নামায শুরু করতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ ۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا ۚ فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ ۚ وَحَيْثُ مَا كُنتُمْ فَوَلُّوا وُجُوهَكُمْ شَطْرَهُ ۗ وَإِنَّ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ لَيَعْلَمُونَ أَنَّهُ الْحَقُّ مِن رَّبِّهِمْ ۗ وَمَا اللَّهُ بِغَافِلٍ عَمَّا يَعْمَلُونَ [٢:١٤٤]
নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বার বার আকাশের দিকে তাকাতে দেখি। অতএব, অবশ্যই আমি আপনাকে সে কেবলার দিকেই ঘুরিয়ে দেব যাকে আপনি পছন্দ করেন। এখন আপনি মসজিদুল-হারামের দিকে মুখ করুন এবং তোমরা যেখানেই থাক, সেদিকে মুখ কর। যারা আহলে-কিতাব, তারা অবশ্যই জানে যে, এটাই ঠিক পালনকর্তার পক্ষ থেকে। আল্লাহ বেখবর নন, সে সমস্ত কর্ম সম্পর্কে যা তারা করে। {বাকারা-১৪৪}
ফাতাওয়ায়ে শামীতে আছেঃ
وَسَيَأْتِي فِي الْمَتْنِ فِي مُفْسِدَاتِ الصَّلَاةِ أَنَّهَا تَفْسُدُ بِتَحْوِيلِ صَدْرِهِ عَنْ الْقِبْلَةِ بِغَيْرِ عُذْرٍ، فَعُلِمَ أَنَّ الِانْحِرَافَ الْيَسِيرَ لَا يَضُرُّ، وَهُوَ الَّذِي يَبْقَى مَعَهُ الْوَجْهُ أَوْ شَيْءٌ مِنْ جَوَانِبِهِ مُسَامِتًا لِعَيْنِ الْكَعْبَةِ أَوْ لِهَوَائِهَا، بِأَنْ يَخْرُجَ الْخَطُّ مِنْ الْوَجْهِ أَوْ مِنْ بَعْضِ جَوَانِبِهِ وَيَمُرَّ عَلَى الْكَعْبَةِ أَوْ هَوَائِهَا مُسْتَقِيمًا، (رد المحتار، كتاب الصلاة، باب شروط الصلاة، مَطْلَبٌ فِي سَتْرِ الْعَوْرَةِ-1/430
যার সারমর্ম হলো কিবলা দিক থেকে সামান্য ঘুরে নামাজ পড়া ক্ষতিকর নয়।
,
★নামাযে কেবলামুখী হওয়া (তথা বাইতুল্লাহমুখী বা কাবামুখী হওয়া) নামাযের অন্যতম প্রধান ফরয।
যারা বাইতুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় এমন স্থানে নামায পড়েন তাদেরকে হুবহু বাইতুল্লাহ বা হুবহু কাবা শরীফ বরাবর মুখ করে নামায আদায় করতে হয়। এটাকে বলা যায় ‘আইনে কেবলা’ (একেবারে সোজা কেবলা)। তাদের জন্য সোজা কেবলামুখী-কাবামুখী হওয়া জরুরি। আর যেখান থেকে বাইতুল্লাহ দেখতে পাওয়া যায় না এমন কোনো স্থানে কেউ নামায পড়লে (চাই বিশ্বের যেখানেই হোক না কেন) তার মুখ হুবহু বাইতুল্লাহ বরাবর না হলেও চলে, তবে বাইতুল্লাহর বা কেবলার দিকের মধ্যে থাকতে হবে। একে বলা হয় ‘জেহাতে কেবলা’।
জেহাতে কেবলা অর্থ কেবলার দিক বা বাইতুল্লাহর দিক। এই ‘কেবলার দিক’ বা ‘বাইতুল্লাহর দিক’ বলতে বোঝায় বাইতুল্লাহ যে বরাবর অবস্থিত তার থেকে ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী এই সর্বমোট ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকে। নামাযীকে অবশ্যই এই ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে অভিমুখী থাকতে হবে। এর বাইরে অভিমুখী হয়ে গেলে নামায হবে না।
কেননা পৃথিবীর বৃত্ত হচ্ছে ৩৬০ ডিগ্রী, আর মৌলিক দিক হচ্ছে ৪টি। অতএব একটা দিক বলতে বোঝায় (৩৬০÷৪=) ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকে। সুতরাং কেবলার দিক বলতেও ৯০ ডিগ্রী অঞ্চলকেই বোঝাবে। তাই কাবা শরীফ বা বাইতুল্লাহ শরীফ যে বরাবর অবস্থিত (৩৯০ ৩৯' পূর্ব দ্রাঘিমা ও ২১০২৫' উত্তর অক্ষাংশ) তার থেকে ডান দিকে ৪৫ ডিগ্রী এবং বাম দিকে ৪৫ ডিগ্রী এই সর্বমোট ৯০ ডিগ্রীর মধ্যে রুখ (অভিমুখিতা) থাকলেও নামায হয়ে যাবে।
বিস্তারিত জানুনঃ-
★সু-প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই,
সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিজ্ঞ উলামায়ে কেরামদের তাহকীক মতে মোবাইল কম্পাস নির্ভরযোগ্য হলে প্রশ্নে উল্লেখিত ছুরতে সেই কম্পাস চালু করে কিবলা নির্নয় করে নামাজ আদায় করতে পারবেন।
তবে এক্ষেত্রে রাস্তার পার্শ্বের মসজিদ গুলোর মেহরাবের দিক লক্ষ্য করার পরামর্শ থাকবে।