ওয়া আলাইকুম আসসালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।
জবাবঃ
ভূমিকাঃ সাহু সেজদার উত্তম পদ্ধতি সম্পর্কে ফুকাহায়ে কেরামদের অনেক মতবিরোধ রয়েছে।তন্মধ্যে সর্বোত্তম পদ্ধতি সম্পর্কে ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে অত্যান্ত সারগর্ভ আলোচনা করা হয়েছে।
নিম্নে তা উল্লেখ করা হল......
وَالصَّوَابُ أَنْ يُسَلِّمَ تَسْلِيمَةً وَاحِدَةً وَعَلَيْهِ الْجُمْهُورُ وَإِلَيْهِ أَشَارَ فِي الْأَصْلِ، كَذَا فِي الْكَافِي وَيُسَلِّمُ عَنْ يَمِينِهِ، كَذَا فِي الزَّاهِدِيِّ وَكَيْفِيَّتُهُ أَنْ يُكَبِّرَ بَعْدَ سَلَامِهِ الْأَوَّلِ وَيَخِرَّ سَاجِدًا وَيُسَبِّحَ فِي سُجُودِهِ ثُمَّ يَفْعَلَ ثَانِيًا كَذَلِكَ ثُمَّ يَتَشَهَّدَ ثَانِيًا ثُمَّ يُسَلِّمَ، كَذَا فِي الْمُحِيطِ.
وَيَأْتِي بِالصَّلَاةِ عَلَى النَّبِيِّ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ -
অর্থাৎ-সেজদায়ে সাহুর সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে, শেষ বৈঠকে তাশাহুদ পড়ার পর এক সালাম ডানদিকে ফিরাবে, অতঃপর আল্লাহু আকবর বলে সেজদায় চলে যাবে, এবং সেথায় (নামাযের সেজদার তাসবীহের মত)তাসবীহ পাঠ করবে,এবং এভাবে দ্বিতীয় সেজদাও আদায় করবে,অতঃপর তাশাহুদ ও দরুদ শরীফ পড়ে সালাম ফিরাবে,।
দরুদ শরীফও দু'আয়ে মাছুরা কখন পড়বে?
সেজদায়ে সাহু দেয়ার পূর্বে দরুদ শরীফ ও অন্যান্য দু'আয়ে মাছুরা পড়বে নাকি সেজদায়ে সাহু দেয়ার পরে পড়বে? এ ব্যাপারে উত্তম কি?
এ সম্পর্কে ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়াতে বর্ণিত আছে.....
وَالدُّعَاءِ فِي قَعْدَةِ السَّهْوِ هُوَ الصَّحِيحُ وَقِيلَ: يَأْتِي بِهِمَا فِي الْقَعْدَةِ الْأُولَى، كَذَا فِي التَّبْيِينِ. وَالْأَحْوَطُ أَنْ يُصَلِّي-
দরুদ ও দু'আ সমূহ সেজদায়ে সাহু দেয়ার পরে পড়াই উত্তম এবং এটাই বিশুদ্ধ অভিমত। তবে কেউ কেউ সেজদায়ে সাহুর পূর্বে নামাযের বৈঠকেও পড়ার অভিমত ব্যক্ত করে থাকেন(এবং কেউ কেউ উভয় বৈঠকে)।
তবে সর্বোচ্ছ সতর্কতাজনক পদক্ষেপ হল, সময়-সুযোগ থাকলে পূর্ণ নামাযকে আবার প্রথম থেকে দোহরিয়ে পড়া।(ফাতাওয়া হিন্দিয়া-১/১২৫)(দারুল ফিকর (বাইরুত) মাকতাবা থেকে ৬ খন্ডে ১৩১০হিজরীতে প্রকাশিত)আরও বর্ণিত রয়েছে,
আল মুহিত বুরহানী১/৪৯৯
وظاهر كلامهم أنه إذا لم يسجد فإنه يأثم بترك الواجب ولترك سجود السهو ثم اعلم أن الوجوب مقيد بما إذا كان الوقت صالحا حتى أن من عليه السهو في صلاة الصبح إذا لم يسجد حتى طلعت الشمس بعد السلام الأول سقط عنه السجود........... وكل ما يمنع البناء إذا وجد بعد السلام يسقط السهو.
ফুকাহায়ে কেরামদের ইবারতের সারাংশ হল, যদি কেউ সাহু সিজদা দিতে ভুলে যায়, তাহলে ওয়াজিব সাহু সিজদা তরক করার কারণে সে গোনাহগার হবে। সাহু সিজদার অত্যাবশ্যকীয়তা তখনই থাকবে যখন ওয়াক্ত সাহু সিজদার উপযোগী থাকবে। এমনকি যদি কারো উপর ফজরের নামাযের সাহু সিজদা থাকে, এবং সে সাহু সিজদা না দেয়, এমতাবস্থায় সূর্যোদয় হয়, তাহলে তখন সাহু সিজদার ওজুব রহিত হয়ে যাবে। ঠিক তেমনিভাবে প্রত্যেক ঐ সমস্ত জিনিষ যা নামাযের প্রতিবন্ধক, যেমন কথা বলা,মসজিদ থেকে বের হয়ে যাওয়া,ওয়াক্ত চলে যাওয়া, ইত্যাদি দ্বারা সাহু সিজদা ওজুব রহিত হয়ে যাবে। (বাহরুর রায়েক-২/৯৯)
এবার মূল আলোচনায় আসা যাক-
- (১)
নামাযে অনিচ্ছাকৃত কয়েকবার ভূল হলে(ওয়াজিব ছুটে গেলে) কয়েকটা সেজদায়ে সাহু আসবে না বরং অনেকবার ভূলের জন্য শুধুমাত্র একটি সেজদায়ে সাহু-ই যথেষ্ট হবে।
সুতরাং আপনার বর্ণনাকৃত সূরতে নামায বিশুদ্ধ হয়ে যাবে।
হযরত আয়েশা রাযি থেকে বর্ণিত,
عائشة رضي الله عنها قالت: قال رسول الله يَةُ: « سجدتا السهو تجزئان من كل زيادة ونقص
রাসূলুল্লাহ সাঃ বলেন, দু'টি সাহুর সেজদা নামাযে সকল রকম 'কমবেশ' এর জন্য যথেষ্ট হবে।(সুনানে কুবরা- বায়হাক্বী-৩৯৬৭)
- (২) মুস্তাহাব পদ্ধতি হল, প্রথমে তাশাহুদ পড়া পর ডান দিকে এক সালাম ফিরিয়ে দু'টি সেজদা দেয়ার পর আবার বৈঠক করে তাশাহুদ ও দুরুদ শরীফ পড়ে দুই সালাম ফিরিয়ে নামাযকে সম্পন্ন করা।
কেউ যদি সেজদায়ে সাহু দেয়ার পর আর বৈঠক না করে,বরং সাথে সাথে উঠে চলে যায়,তাহলে এক্ষেত্রে তার নামায ফাসেদ হবে না। যদিও সেটা মুস্তাহাবের খেলাফ হয়েছে।
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়ায় বর্ণিত রয়েছে,
القعدة بعد سجدتي السهو ليست بركن وإنما أمر بها بعد سجدتي السهو ليقع ختم الصلاة بها حتى لو تركها فقام وذهب لا تفسد صلاته، كذا قاله الحلواني، كذا في السراج الوهاج.
সেজদায়ে সাহুর পর বৈঠক করা(তাতে তাশাহুদ এবং দুরুদ শরীফ পড়া) কোনো রুকুন নয়।তবে এর নির্দেশ দেয়া হয়েছে যাতেকরে নামাযের শেষ অধিবেশনটা তাশাহুদ এবং দুরুদ শরীফের দ্বারা সম্পন্ন হয়।সুতরাং কেউ যদি সেজদায়ে সাহু পরবর্তী বৈঠক-কে তরক করে ফেলে,এবং সাথে সাথে সে দাড়িয়ে যায়,এবং নামাযকে ত্যাগ করে চলে যায়,তাহলে এমতাবস্থায় তার নামায ফাসিদ হবে না।হুলওয়ানী রাহ এমনটাই বলেছেন।(আস-সিরাজুল ওয়াহহাজ)
ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া-১/১২৬
হানাফি মাযহাবে এক সালাম ফিরিয়ে দু'টি সেজদায়ে সাহু দেয়ার বিধান মূলত পরস্পর বিরোধী হাদীসকে একত্রিত করার স্বার্থেই দেয়া হয়েছে।কেননা কোনো কোনো হাদীসে সালামের পূর্বে এবং কোনো হাদীসে সালামের পর সেজদায়ে সাহুর কথা উল্লেখাত রয়েছে।এই উভয় প্রকার হাদীসের মধ্যে সামঞ্জস্যতা সৃষ্টি করতেই এমন বিধান দেয়া হয়েছে।(কিতাবুন-নাওয়াযিল-৩/৬০৫)
যদি সন্দেহের ভিত্তিতে সাহু সিজদা (যা ওয়াজিব হয়নি) দুই সালাম ফিরিয়ে দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে নামায হয়ে যাবে।আর যদি এক সালাম ফিরিয়ে দেয়া হয়, তাহলে উক্ত নামাযকে দোহড়াতে হবে (কিতাবুন-নাওয়যিল-৩/৬৩৯)"
সিজদায়ে সাহু ভুলে গেলে করণীয়
"وإعادتها بتركه عمداً" أي ما دام الوقت باقياً وكذا في السهو إن لم يسجد له وإن لم يعدها حتى خرج الوقت تسقط مع النقصان وكراهة التحريم ويكون فاسقاً آثماً، وكذا الحكم في كل صلاة أديت مع كراهة التحريم، والمختار أن المعادة لترك واجب نفل جابر، والفرض سقط بالأولى؛ لأن الفرض لايتكرر كما في الدر وغيره، ويندب إعادتها لترك السنة"
(حاشية الطحطاوي على مراقي الفلاح شرح نور الإيضاح (ص: 247)
সিজদায়ে সাহু ভুলে গিয়ে সালাম ফিরিয়ে নিলে, যদি নামায ভঙ্গকারী কোনো জিনিষ নিজের দ্বারা সংগঠিত না হয়, তাহলে সাথে সাথেই দু'টি সিজদ দিয়ে তাশাহুদ এবং দুরুদ শরীফ পড়ে সালাম ফিরিয়ে নিলেই হবে। মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর সাহু সিজদার কথা মনে পড়লে,তখন ওয়াক্তের ভিতরে ঐ নামাযকে দোহড়িয়ে নিতে হবে। ওয়াক্ত চলে গেলে আর দোহড়ানোর সুযোগ থাকবে না। বরং ঐ ব্যক্তিকে তখন ইস্তেগফার করতে হবে। ঠিক তেমনি প্রত্যেক ঐ নামায যা মাকরুহে তাহরিমীর সাথে আদায় হবে, সেই নামাযকেও ওয়াক্তের ভিতর দোহড়িয়ে পড়ে নিতে হবে।উপরোক্ত পদ্ধতিসমূহে নামাযকে দোহড়ানো তথা আবার পড়া মুস্তাহাব।কেননা প্রথমবারের নামায দ্বারা তো ফরয আদায় হয়েই গেছে।