ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাব,
https://ifatwa.info/87920/ নং
ফাতওয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে যে,
হিল্লা বিয়ে সম্পূর্ণ হারাম। যারা হিল্লে বিয়ে করে, এবং
যার জন্য করে উভয়ের উপর আল্লাহর অভিশাপ। হাদীসে ইরশাদ হয়েছে-
ابْنِ عُمَرَ أَنَّهُ قَالَ : لَعَنِ اللَّهُ الْمُحِلَّ
وَالْمُحَلَّلَ لَهُ وَالْمُحَلَّلَةَ. (مصنف ابن ابى شيبة، كتاب النكاح، في الرجل
يُطَلِّقُ امْرَأَتَهُ فَيَتَزَوَّجُهَا رَجُلٌ لِيُحِلَّهَا لَهُ، رقم
الحديث-17364)
হযরত ইবনে ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
হালালকারী, যার
জন্য হালাল করা হল এবং যাকে করা হল,
সবার উপর আল্লাহর অভিশাপ। {ইবনে
আবী শাইবা, হাদীস নং-১৭৩৬৪}
তবে এমতাবস্থায় ওই নারী অন্যত্র বিবাহ করে সেই স্বামীর সঙ্গে সহবাসের পর স্বামী
কর্তৃক তালাকপ্রাপ্ত হলে প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হবে। তবে এ পদ্ধতি গ্রহণ করা অত্যন্ত
ঘৃণিত।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ-
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ
زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا
إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا
لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে
সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে,তার
জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়,তাহলে
তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায়
রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা;যারা
উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। [সূরা বাকারা-২৩০]
হাদীস শরীফে এসেছেঃ
عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَجُلاً طَلَّقَ امْرَأَتَه“ ثَلاَثًا
فَتَزَوَّجَتْ فَطَلَّقَ فَسُئِلَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أَتَحِلُّ
لِلأَوَّلِ قَالَ لاَ حَتّٰى يَذُوقَ عُسَيْلَتَهَا كَمَا ذَاقَ الأَوَّلُ.
আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বরণিত,
রাফায়ার স্ত্রী বলল, হে আল্লাহর
রাসুল, আমার স্বামী রাফায়া আমাকে এক সাথে তিন তালাক দিয়েছে? এরপর
আমি আব্দুর রাহমানের সাথে বিবাহ করেছি। এখন রাফায়ার কাছে যেতে পারবো কিনা? নবীজী
বললেন, আবদুর রহমান তোমার সাথে সহবাস করলে এরপর রাফায়ার নিকট যেতে পারবে।
(সহীহ বুখারী ৫২৬১)
হিল্লে করার দ্বারা প্রথম স্বামীর জন্য উক্ত স্ত্রীলোকটি হালাল হয় কি না? একটি
বিষয় হারাম হওয়া মানে উক্ত হারাম কাজের মাধ্যমে সংঘটিত কাজটি সঠিক হয়নি বিষয়টি এমন
নয়। যেমন জিনা করা হারাম, তাই বলে কি জিনা করলে জিনা হয়নি? কাউকে
হত্যা করা হারাম, তাই বলে কি হত্যা করলে সেটিকে হত্যা বলা হবে না?
তেমনি এভাবে হিল্লে করা হারাম,
কিন্তু এভাবে হিল্লে করলেও উক্ত
স্ত্রীলোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়। যা হাদীসটির
শব্দ থেকেই পরিস্কার। হাদীসে লক্ষ্য করুন,
শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে “হালালকারী”।
যা পরিস্কার বলছে এর দ্বারা স্ত্রী লোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়। যদি হালালই
না হয়, তাহলে হিল্লেকারী লোকটি হালালকারী হয় কিভাবে? আর স্ত্রীলোকটিকে
হাদীসে বলা হচ্ছে হালালকৃত। যদি মহিলাটি উক্ত হিল্লের মাধ্যমে প্রথম স্বামীর জন্য হালালই
না হয়, তাহলে সে হালালকৃত হয় কিভাবে?
একইভাবে প্রথম স্বামীর জন্য হাদীসে শব্দ ব্যবহৃত হল, “যার
জন্য হালাল করা হয়”। যা পরিস্কার প্রমাণ করে এটি হারাম পদ্ধতি হলেও এর দ্বারা স্ত্রীটি
প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়। যদি হালালই না হতো, তাহলে
হাদীসে যার জন্য হালাল করা হয় বলার কি অর্থ থাকে।
সুতরাং হাদীস দ্বারাই পরিস্কার বুঝা যায় যে, কাজটি
হারাম হলেও এর দ্বারা উক্ত স্ত্রী লোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়। যদিও কাজটি
অভিশাপযোগ্য এবং নিন্দনীয় ও বর্জনীয় কাজ।
পবিত্র কালামুল্লায়ে উক্ত বিষয়টি পরিস্কার এসেছে। দেখুন-
فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ
زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ [٢:٢٣٠]
তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে
সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার
জন্য হালাল নয়। {সূরা বাকারা-২৩০}
সুতরাং বুঝা গেল হিল্লা করা হারাম কাজ। এটি যারা করে তাদের উপর আল্লাহর অভিশাপ
নিপতিত হয়। তবে এর দ্বারা স্ত্রী লোকটি প্রথম স্বামীর জন্য হালাল হয়ে যায়।
‘উরওয়াহ্ ইবনু যুবাযর (রহঃ) থেকে বর্ণিতঃ নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সহধর্মিণী ‘আয়িশা
(রাঃ) তাঁকে সংবাদ দিয়েছেন যে, রিফা’আহ্ আল কুয়াযী (রাঃ) তার
স্ত্রীকে পুরাপুরি (তিন) তালাক্ব দিয়ে দেয়। অতঃপর সেই স্ত্রীলোকটি ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে
বিবাহ করে। এরপর সে নবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর কাছে এসে (নিজের ব্যাপারে)
বলল, হে আল্লাহ্র রসূল! সে ছিল রিফা’আর অধীনে। সে তাকে
পুরোপুরি তিন দিন ত্বলাক্ব দেয়। অতঃপর সে ‘আবদুর রহমান ইবনু যুবায়র (রাঃ)-কে বিবাহ
করে। আল্লাহ্র কসম, তার সাথে যা রয়েছে তা তো কাপড়ের ঝালরের মতো। এ বলে, মহিলা
তার উড়নার আঁচল ধরে দেখাল। (অর্থাৎ দ্বিতীয় স্বামী রতিক্রিয়ায় অক্ষম) রসূলুল্লাহ সা. হেসে দিলেন এবং বললেন, তুমি
সম্ভবত রিফা’আর নিকট ফিরে যেতে চাও?
যতক্ষণ না সে (দ্বিতীয় স্বামী)
তোমার স্বাদ গ্রহন করে এবং তুমি তার স্বাদ আস্বাদন করে ততক্ষণ তো এটা সম্ভব না। (অর্থাৎ
দ্বিতীয় স্বামীর সাথে স্বাভাবিক রতিক্রিয়া হওয়ার আগে তালাক হলেও ওই মহিলা আগের স্বামীর
সাথে বিবাহ বসতে পারবেনা) (সহিহ মুসলিম,
হাদিস নং ৩৪১৯, ই.ফা.
৩৩৯২)
★প্রিয় প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/বোন!
হিল্লা বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। তালাকদাতা স্বামীর নিকট পুনরায় স্ত্রীকে ফিরিয়ে
নেয়ার জন্য যৌন মিলনের পর তালাক দেয়ার শর্তে কোন ব্যক্তির নিকট সাময়িক বিবাহ দেয়াকে
হিলা বিবাহ বলা হয়। সময় নির্ধারিত থাকুক বা না থাকুক। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ বিবাহকারী ও প্রদানকারী উভয়কে অভিসম্পাত করেছেন। সুতরাং প্রশ্নেল্লিখিত
ছুরতে যদি
স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সহবাস হয়ে থাকে, তাহলে প্রথম স্বামীর সাথে বিয়ে
বৈধ হয়ে যাবে।
যদিও সহবাসের সময় স্বল্প।
বি:দ্র:
যদি চুক্তি ভিত্তিক উক্ত বিয়ে হয় তাহলে মাকরুহে তাহরিমী হলেও ইদ্দত পালন শেষে প্রথম স্বামীর
সাথে বিয়ে বৈধ হয়ে যাবে। তবে এটি অত্যন্ত নিকৃষ্ট একটি যা বিস্তারিত উপরে আলোচনা করা হয়েছে।