ওয়া আলাইকুমুস-সালাম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু।
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
জবাব,
শরীয়তের পরিভাষায় পরকিয়া বলা হয় বিবাহ পরবর্তী কাহারো সাথে কোনো ধরনের প্রেম ভালোবাসাকে। ইসলামে এটা সম্পূর্ণরুপে হারাম করা হয়েছে। পরকীয়া মানবতা বিরোধী
একটি অপরাধ। বিকৃত মানসিকতা। ইসলাম একটি মানবিক ধর্ম। সর্বশ্রেষ্ঠ জীবন বিধান। কোনো
মানবিক গর্হিত কাজকে ইসলাম অনুমোদন দেয়নি। বিবাহিত
কোন নারী বা পুরুষ স্বীয় স্বামী বা স্ত্রী ছাড়া অন্য কোন ব্যক্তির সঙ্গে কোনও ধরণের
সর্ম্পক কিংবা বিবাহবহির্ভূত প্রেম,
যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হওয়ার মত
গর্হিত কর্মকে কীভাবে ইসলাম সমর্থন করতে পারে?
এ বিকৃত কর্মের অসারতা বিবেকও ধিক্কার দেয়। নিজ স্বামী বা স্ত্রী অন্য কারো সঙ্গে
অবৈধ সম্পর্ক স্থাপন করবে, সুস্থ বিবেকবান কোনো মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না।
এ কর্মের কারণে সমাজ যেমন শৃঙ্খলতা হারায়,
তেমনি পারিবারিক বন্ধনেও ধরে
ফাটল। পর্যুদুস্ত হয়ে পড়ে সামাজিক সকল রীতিনীতি।
এ কাজের বিষফল মানবাজাতি কয়েক যুগ ধরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে লক্ষ্য করে আসছে।
ইসলাম হলো নীতি ও আদর্শের ধর্ম। ইসলামে পরকীয়া ও অবৈধ সম্পর্ক থেকে নারী-পুরুষকে কঠোরভাবে
সতর্ক করা হয়েছে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا
فُرُوجَهُمْ ۚ ذَٰلِكَ أَزْكَىٰ لَهُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ
[٢٤:٣٠]
মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর
হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত
আছেন। (সুরা
নূর ৩০)
হাদীস শরীফে এসেছেঃ হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত।
فَالْعَيْنَانِ زِنَاهُمَا النَّظَرُ، وَالْأُذُنَانِ زِنَاهُمَا
الِاسْتِمَاعُ، وَاللِّسَانُ زِنَاهُ الْكَلَامُ، وَالْيَدُزِنَاهَا الْبَطْشُ،
وَالرِّجْلُ زِنَاهَا الْخُطَا، وَالْقَلْبُ يَهْوَى وَيَتَمَنَّى، وَيُصَدِّقُ
ذَلِكَ الْفَرْجُ وَيُكَذِّبُهُ
রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, চোখের জিনা হল [হারাম] দৃষ্টিপাত। কর্ণদ্বয়ের জিনা
হল, [গায়রে মাহরামের যৌন উদ্দীপক] কথাবার্তা মনযোগ দিয়ে শোনা। জিহবার
জিনা হল, [গায়রে মাহরামের সাথে সুড়সুড়িমূলক] কথোপকথন। হাতের জিনা হল, [গায়রে
মাহরামকে] ধরা বা স্পর্শকরণ। পায়ের জিনা হল,
[খারাপ
উদ্দেশ্যে] চলা। অন্তর চায় এবং কামনা করে আর লজ্জাস্থান তাকে বাস্তবে রূপ দেয় [যদি
জিনা করে] এবং মিথ্যা পরিণত করে [যদি অন্তরের চাওয়া অনুপাতে জিনা না করে]। {সহীহ
মুসলিম, হাদীস নং-২৬৫৭,
মুসনাদে আহমাদ, হাদীস
নং-৮৯৩২}রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন, তোমরা নারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় কর। কেননা,
তোমরা তাদেরকে গ্রহণ করেছো আল্লাহর
জামানত এবং আল্লাহর নির্দেশে তাদের যৌনাঙ্গকে করেছো হালাল। তাদের প্রতি তোমাদের অধিকার
হল, তোমরা যাকে অপছন্দ কর তারা যেন তোমাদের বিছানায় আসতে না দেয়,
[অর্থাৎ তোমাদের সন্তুষ্টি
ছাড়া কাউকে যেন তোমাদের গৃহে আসতে না দেয়। চাই সে পুরুষ হোক বা নারী]। যদি তারা এটা
করে [অর্থাৎ অপছন্দের ব্যক্তিকে আসতে দেয়] তবে তাদের মৃদু প্রহার কর। আর তোমাদের উপর
তাদের অধিকার, তোমরা ন্যায়সঙ্গতভাবে তাদের অন্ন ও বস্ত্রের ব্যবস্থা করবে। {সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-১২১৮ নং হাদীসের অংশ বিশেষ}
পরকীয়ার শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ। বিস্তারিত জানতে ভিজিট করুন:
https://ifatwa.info/2018/
★প্রিয়
প্রশ্নকারী দ্বীনি ভাই/ বোন!
ইসলামে তালাককে
নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। একান্ত প্রয়োজনে বাধ্য না হলে ইসলাম তালাক দেওয়া পছন্দ করেনা।
কারণ, ইসলামের মূল থিউরী
হল স্বামী স্ত্রীর মাঝে বিচ্ছেদ না হোক। তারা মিলেমিশে থাকুক। সমস্যা হলে উভয়ে বসে
তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত। তাতে সমস্যার সমাধান না হলে পারিবারিক মুরুব্বীদের পরামর্শের
আলোকে সমাধান করা উচিত। তারপরও যদি সমাধান না আসে। তাহলে নিরূপায় অবস্থায় ইসলাম এক
তালাক দেবার অধিকার দিয়েছে স্বামীকে।
সুতরাং
আপনার ভাইয়ের স্ত্রী যদি তওবা করতে সম্মত
না হয়, তাহলে পারিবারিকভাবে বিষয়টির সুরাহা করতে চেষ্টা করুন। তার স্ত্রী কী চায়?
সেকি স্বামীর সাথে থাকতে চায়?
সেকি এ অপকর্ম ছেড়ে দিবে কি না?
এসব বিষয়ে পারিবারিকভাবে মিটমাট করতে
চেষ্টা করুন। যদি এতেও সক্ষম না হোন তাহলে আপনার ভাই তাকে এক তালাক প্রদান করে আলাদা করে দিন। তিন তালাক কিছুতেই
প্রদান করবেন না। যেহেতু এক তালাক দ্বারাই বিচ্ছেদের প্রয়োজনীয়তা পূর্ণ হয়ে যায়,
তাই একাধিক তালাক দেয়া অর্থহীন কর্ম
ছাড়া আর কিছু নয়। যেন ভবিষ্যতে স্ত্রী অনুতপ্ত
হয়ে স্বামীর নিকট ফিরতে চাইলে আবার একত্রে বসবাসের সুযোগ বাকি থাকে।
তালাকের পর আপনার ভাইয়ের
বায়োডাটা মেট্রোমনি ওয়েবসাইটে দিতে পারেন।
এবং পারিবারিক অবস্থা বিস্তারিত মেয়ে পক্ষকে অবগত করতে পারেন। ছেলের দেখাশুনার দায়-দায়িত্ব
বাবার উপর। এসম্পর্কে আরো জানুন: https://ifatwa.info/67661/
https://ifatwa.info/81124/