আইফতোয়াতে ওয়াসওয়াসা সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হবে না। ওয়াসওয়াসায় আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা ও করণীয় সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন

0 votes
2,023 views
in সালাত(Prayer) by (48 points)
আরবি ভাষায় খুতবা দেয়া কি বাধ্যতামূলক? নাকি নিজ ভাষায় দিতে হবে?

বিভিন্ন হাদিস থেকে জানা যায়, রাসূল সা খুতবার মাধ্যমে বিভিন্ন উপদেশ দিতেন , নির্দেশ দিতেন, বিভিন্ন দিকনির্দেশনা দিতেন । আর এগুলো তো এমন ভাষায় হওয়া বাঞ্চনীয় , যে ভাষায় বললে শ্রোতা বুঝতে পারে।


ইমাম আবু হানিফার মতে মাতৃভাষায় খুতবা দেওয়া জায়েজ। তিনি বলেন, "যে কোনো ভাষাতেই জিকিরের উদ্দেশ্য হাসিল হতে পারে"। (আল মাবসূত 1/36)


এই ব্যাপারে  বিস্তারিত জানতে চাই।

1 Answer

0 votes
by (573,870 points)
জবাব
بسم الله الرحمن الرحيم 

,
শরীয়তের বিধান মতে আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় খুতবা প্রদান করা বিদআত ও মাকরূহে তাহরীমি। কারণ তা রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন এবং গোটা মুসলিম উম্মাহর সর্বযুগে সর্বসম্মত আমলের (সাবীলুলমুমিনীন-মুমিনদের পথ) পরিপন্থী। 

উপমহাদেশের বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী (রহ.) তাঁর রচিত মুয়াত্তায়ে মালেকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ মুসাফফায় উল্লেখ করেনঃ
لما لا حظنا خطبة النبى صلى الله عليه وسلم وخلفائه رضى الله عنهم وهلم جرا فنجد فيها وجوذ اشياء، منها الحمد والشهادتان والصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم والامر بالتقوى وتلاوة آية والدعاء للسملمين والمسلمات وكون الخطبة عربية
অর্থ: রাসূলুল্লাহ (সা.), খুলাফায়ে রাশেদীন, তাবেঈন, তাবেতাবেঈন এবং পরবর্তী যুগের ফুকাহায়ে কেরাম ও উলামায়ে দ্বীনের খুতবাসমূহ লক্ষ করলে দেখা যায় যে তাঁদের খুতবায় নিম্মের বিষয়গুলো ছিল। যথা : আল্লাহ তাআলার হামদ , শাহাদাতাইন (অর্থাৎ তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য প্রদান করা) রাসূল (সা.)-এর প্রতি দরূদ, তাকওয়ার আদেশ, পবিত্র কোরআনের আয়াত তেলাওয়াত, মুসলমানদের জন্য দুআ। তাঁরা সকলেই আরবী ভাষায় খুতবা দিতেন। গোটা মুসলিম বিশ্বের বহু অঞ্চলের ভাষা আরবী নয়, তবুও সর্বত্র আরবী ভাষায়ই খুতবা দেওয়া হতো। (মুসাফফা, ১/১৫৪)
,
বলা হয়ে থাকে,ইমাম আবু হানীফা (রহ.) আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়া  বৈধ বলেছেন। অথচ ইমাম আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে খুতবা অনারবী ভাষায় দেওয়া জায়েয  দ্বারা উদ্দেশ্য হল, মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয। কারণ,ফিকহে হানাফীর অধিকাংশ কিতাবেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, আবু হানীফা (রহ.)-এর মতে অনারবী ভাষায় খুতবা জায়েয দ্বারা উদ্দেশ্য হলো মাকরূহে তাহরীমির সাথে জায়েয।(শামী, ২/১৮৩, বাহরুর রায়েক , ১/ ৫৩৫ , তাতারখানিয়া, ২/৭৪, সিআয়া, ২/১৫৫)
,
মুফতী শফী কাসেমী সাহেব দাঃবাঃ বলেছেন 

খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। তাই নামাযে যেমন ক্বেরাত আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় আদায় করা যায় না, খুতবাও আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় দেওয়া যাবে না। 

আল্লামা আবু বকর ইবনে শাইবা (রহ.) উল্লেখ করেন
عن عمر بن الخطاب أنه قال: إنما جعلت الخطبة مكان الركعتين
অর্থ: হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর খুতবাকে দুই রাক’আত নামাযের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস-৫৩২৪)

অন্যত্র হযরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত আছে
عن عمر بن الخطاب قال: كانت الجمعة اربعا فجعلت ركعتين من أجل الخطبة
অর্থ: হযরত উমর (রা.) বলেন, জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। এরপর খুতবার কারণে দুই রাক’আত করা হয়েছে। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বাহ, হাদীস-৫৩৩১) ইমাম বায়হাকী (রহ.) আস-সুনানুল কুবরা গ্রন্থে ৫৭০৩ নং হাদীসে উল্লেখ করেন
كانت الجمعة اربعا فجعلت الخطبة مكان الركعتين
অর্থ : জুমু’আর নামায চার রাক’আত ছিল। খুতবাকে দুই রাক’আতের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।
পবিত্র কোরআনে খুতবাকে যিকর বলা হয়েছে। 

আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا نُودِيَ لِلصَّلَاةِ مِنْ يَوْمِ الْجُمُعَةِ فَاسْعَوْا إِلَى ذِكْرِ اللَّهِ وَذَرُوا الْبَيْعَ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَكُمْ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ (৯)
অর্থ : হে মুমিনগণ, যখন জুমু’আর দিনে সালাতের জন্য আহ্বান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরীনগণ লিখেছেন, এখানে ‘যিকর’ দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ‘খুতবা’। 

এ ব্যাপারে নিম্নে কয়েকটি তাফসীরের উদ্ধৃতি পেশ করা হলো :
১। তাফসীরে রুহুল মাআনী, খ- ১৩, পৃষ্ঠা ৭০২-এ উল্লেখ আছে
والمراد بذكر الله الخطبة الصلاة
অর্থ: আল্লাহর যিকর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, খুতবা ও নামায।
২। ইমাম রাযী (রহ.) আত-তাফসীরুল কাবীর গ্রন্থে লেখেন (খ- ৯, পৃষ্ঠা ৩০)
 الذكر هو الخطبة عند الأكثر من اهل التفسير
অর্থ : অধিকাংশ মুফাসসিরগণের নিকট যিকর দ্বারা খুতবা উদ্দেশ্য।

৩। আহকামুল কোরআন খ- ৩, পৃষ্ঠা ৫৯৬-এ বর্ণিত আছে
ويدل على ان المراد بالذكر ههنا الخطبة، ان الخطبة هى اللتى تلى النداء، وقد امر بالسعى اليه
অর্থ : যিকর থেকে যে খুতবাই উদ্দেশ্য, তার প্রমাণ আল্লাহ তা’আলা বলেন, আযান হলে যিকিরের দিকে আসো। আর আযানের সাথে সাথে খুতবাই প্রদান করা হয়।
৪। তাফসীরে ইবনে কাসীরে খ- ৯, পৃষ্ঠা ৪৫৬-এ উল্লেখ আছে
فان المراد من ذكر الله الخطبة
অর্থ : আল্লাহর যিকর দ্বারা খুতবাই উদ্দেশ্য। হাদীস শরীফেও খুতবাকে ‘যিকর’ বলা হয়েছে। 

সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হলো :
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَنِ اغْتَسَلَ يَوْمَ الجُمُعَةِ غُسْلَ الجَنَابَةِ ثُمَّ رَاحَ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَدَنَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّانِيَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَقَرَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الثَّالِثَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ كَبْشًا أَقْرَنَ، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الرَّابِعَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ دَجَاجَةً، وَمَنْ رَاحَ فِي السَّاعَةِ الخَامِسَةِ، فَكَأَنَّمَا قَرَّبَ بَيْضَةً، فَإِذَا خَرَجَ الإِمَامُ حَضَرَتِ المَلاَئِكَةُ يَسْتَمِعُونَ الذِّكْرَ

 অর্থ : হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি জুমু’আর দিন জানাবাতের গোসল করে সর্বপ্রথম রওনা হলো, সে যেন একটি উট কোরবানী করল। দ্বিতীয় পর্যায়ে যে ব্যক্তি উপস্থিত হলো, সে যেন একটি গরু কোরবানী করলো। তৃতীয় নম্বরে যে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি বকরি কোরবানী করল। চতুর্থ নম্বরে যে ব্যক্তি উপস্থিত হলো, সে যেন একটি মুরগি সদকা করল। পঞ্চম নম্বরে যে উপস্থিত হলো, সে যেন একটি ডিম সদকা করল। এরপর যখন ইমাম (খুতবার) জন্য বের হয়ে আসেন, ফেরেশতারা উপস্থিত হন, তাঁরা মন দিয়ে যিকর (খুতবা) শ্রবণ করেন। (বুখারী শরীফ, ১/১২৭, হাদীস-৮৩২, মুসলিম শরীফ, হাদীস-১৪০৩, তিরমিযী শরীফ, হাদীস-৪৫৯, নাসায়ী শরীফ, হাদীস-১৩৭১, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস-২৯৭)

ফুকাহায়ে কেরামও খুতবাকে যিকর বলেন।

 যেমন শামছুল আইম্মা সারাখছী (রহ.) বলেন
ولنا ان الخطبة ذكر
অর্থ : আমাদের নিকট খুতবা একটি বিশেষ যিকর। (আল-মাবসুত, ২/৪২) যখন এ কথা প্রমাণিত যে, খুতবা একটি বিশেষ যিকর, আর যিকর আরবী ভাষাতেই হতে হয়, তাই খুতবাও আরবীতেই হতে হবে। ‘খুতবা নামাযের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ কারণেই হাদীস শরীফে খুতবার জন্য এমন কিছু শর্ত উল্লেখ করা হয়েছে, যা শুধু নামাযের জন্য প্রযোজ্য।
যেমন :
ক) নামাযের জন্য যেমন ওয়াক্ত নির্ধারিত রয়েছে, খুতবার জন্যও ঠিক ওই ওয়াক্তই নির্ধারিত। ওয়াক্ত হওয়ার পূর্বে বা পরে খুতবা দিলে তা সহীহ হয় না।
খ) জুমু’আর নামাযে যেমন ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত রয়েছে, জুমু’আর খুতবার জন্যও তদ্রƒপ ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নাত রয়েছে।
গ) নামাযের জন্য যেমন পবিত্রতা শর্ত, তদ্রƒপ খুতবার জন্যও পবিত্রতা জরুরি। ওজুবিহীন খুতবা দেওয়া মাকরূহ। ইমাম আবু ইউসুফ (রহ.)-এর মতে নাজায়েয।
ঘ) নামাযের পূর্বে ইকামত দিতে হয়, তদ্রƒপ খুতবার পূর্বে আযান দিতে হয়।
ঙ) নামাযের মধ্যে সালাম-কালাম করা যায় না । খুতবাতে ও সালাম-কালাম করা যায় না। নামাযে কারো হাঁচির উত্তর দেওয়া যায় না, সালামের জবাবও দেওয়া যায় না। তেমনিভাবে খুতবাতেও কারো হাঁচি ও সালামের জবাব দেওয়া যায় না।
চ) নামায যেমন দাঁড়িয়ে পড়া হয়, খুতবাও তেমনি দাঁড়িয়ে দেওয়া হয়। হাদীস শরীফে আরো উল্লেখ আছে, ইমাম সাহেব যখন খুতবা দেওয়ার জন্য হুজরা থেকে বের হবেন, তখন কোনো নামায ও কথাবার্তা বলা নিষেধ। (আবু দাউদ শরীফ, ১১১২) অন্যত্র বর্ণিত আছে, জুমু’আর দিন ইমামের খুতবা প্রদানকালে যদি কেউ অন্যকে বলে, চুপ করো, তবে সেটাও অন্যায় হবে। (নাসায়ী শরীফ, হাদীস – ১৪০১, আবু দাউদ, হাদীস-১১১২)
,
যেহেতু খুতবা নামাযের মতো, অতএব নামাযে যেমন আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার করা জায়েয নেই, তদ্রƒপ খুতবার মধ্যেও আরবী ছাড়া অন্য কোনো ভাষা ব্যবহার করা জায়েয হবে না। খুতবা ইসলামের একটা প্রতীক। অর্থাৎ আযান, ইকামত, নামায, তাকবীর এগুলো যেমন ইসলামের প্রতীক, তেমনি খুতবাও একটি প্রতীক। আযান-ইকামত যেমন অন্য ভাষায় দেওয়া যায় না, তেমনি খুতবাও অন্য ভাষায় দেওয়া যাবে না। ‘আরবী ভাষা মুসলমানদের ধর্মীয় ভাষা। এ ভাষা শিক্ষা করা ফরজে কেফায়া। কারণ কোরআন-হাদীস বোঝা আমাদের কর্তব্য । কোরআন-হাদীস বোঝার জন্য আরবী জ্ঞান থাকা আবশ্যক। এই আরবী শেখার প্রতি উৎসাহিত করার জন্য আরবীতে খুতবা দেওয়া হয়। একজন আরবী না জানা ব্যক্তির সামনে যখন প্রতি সপ্তাহে আরবীতে খুতবা দেওয়া হবে, তখন তার সামনে নিজের অক্ষমতা বারবার স্পষ্ট হয়ে ধরা দেবে। যা তাকে আরবী শিখতে উৎসাহিত করবে।
আরবী ভাষায় খুতবা জরুরি হওয়ার অন্যতম একটি কারণ হলো, পুরো মুসলিম উম্মাহর মাঝে তাওহীদ ও ঐক্যের প্রতীক হলো খুতবা। মুসলমান পৃথিবীর যে প্রান্তেই যাক, প্রতি জুমু’আয় আরবী ভাষার খুতবা তাদের মাঝে সেতু বন্ধনের কাজ করবে। সব জায়গায় যদি নিজ নিজ মাতৃভাষায় খুতবা হতে থাকে, তাহলে কোনো এলাকায় আগন্তুক ব্যক্তি অন্যান্য বিষয়ের মত ইবাদতেও নিজেকে একজন অপরিচিত ভাবতে থাকবে। ‘খুতবা আরবীতে হওয়ার আরেকটি হিকমত হলো, ভাষার প্রভাব সর্বত্র বিরাজমান। শাইখুল ইসলাম আল্লামা হাফেয ইবনে তাইমিয়া (রহ.) তাঁর কিতাব ‘ইকতেযা-উস-সিরাতিল মুসতাকীম’ ১/৪২৪-এ উল্লেখ করেন
واعلم ان اعتياد اللغة يؤثر فى العقل والخلق، والدين تأثير قويا بينا
অর্থ: জেনে রাখা উচিত যে, কোনো বিশেষ ভাষায় অভ্যস্ত হওয়া চিন্তাচেতনা, আখলাক-চরিত্র ও দ্বীন-ধর্মের মধ্যে শক্তিশালী ও স্পষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। এ জন্য রাজা-বাদশাহগণ তাঁদের দেশে নিজ নিজ ভাষার প্রচলন করার চেষ্টা করেন। আর সে কারণেই যেসব এলাকা সাহাবীদের হাতে বিজিত হয়েছে, সেগুলো আজ মামালেকে আরাবিয়া তথা আরব দেশ বলে গণ্য হয়ে আসছে। কেননা, সেসব দেশে যখন সব বিষয়ে আরবী ভাষার অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তখন সবাইকে বাধ্য হয়েই আরবী ভাষা শিখতে হয়েছে। সাহাবীদের পরে যেসব এলাকা বিজিত হয়েছে, সেগুলো আরব দেশ বলে গণ্য হয়নি। সাহাবীগণ তাঁদের শত বছরের ইতিহাসে কোনো দিন আরবী ছাড়া অন্য ভাষ ায় খ ুত বা দেনি ন। সাহাবীদের যুগে বহু অনারব দেশ বিজয় হয়ে মুসলমানদের কর্তৃত্বে এসেছিল, যেগুলোর অনেক স্থানেই ভিন্ন ভাষা প্রচলিত ছিল। তখন দ্বীনের তাবলীগ ও মাসলা-মাসায়েলের তালীম দেওয়ার উদ্দেশ্যে স্থানীয় ভাষায় জুমু’আর খুতবা প্রদানের প্রয়োজন ছিল বেশি।
কেননা, খুতবা ছাড়া মাসলা-মাসায়েল শিক্ষা-দীক্ষার জন্য কোনো কিতাবাদী রচিত হয়েছিল না। তখন বেশ কিছু সাহাবী ও তাবেয়ী অনারবী বিভিন্ন ভাষায় অত্যন্ত দক্ষও ছিলেন। তবুও তাঁরা আরবী ভাষাতেই খুতবা প্রদান করতেন। এমনকি হযরত সালমান ফারসী (রা.) তাঁর মাতৃভাষা ফারসী হওয়া সত্ত্বেও পারস্যের এক যুদ্ধে সেনাপতি থাকাকালে সেখানকার ফারসী ভাষাভাষী লোকদের সাথে আরবীতে কথা বলেছেন। দোভাষী তার অনুবাদ করেছে। একপর্যায়ে দোভাষীর অনুবাদ যথার্থ না হওয়ার আশংকায় হযরত সালমান ফারসী (রা.) নিজেই কোরআন শরীফের একটি বাক্যের ফারসী অনুবাদ করেন । ( তিরমিযী শরীফ , হাদীস-১৫৪৮)
,
এ হাদীস দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে, সাহাবীগণ শুধুমাত্র জুমু’আর খুতবাই নয়, বরং যে সকল স্থানে বিপক্ষের নিকট মুসলমানদের মর্যাদা প্রকাশের বিষয় জড়িত ছিল, সেখানে আরবী ভাষাই ব্যবহার করতেন। সারকথা, রাসূলুল্লাহ (সা.), সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাবেতাবেঈনের যামানা হতে আজ পর্যন্ত উম্মতের ধারাবাহিক আমল হলো আরবী ভাষায় খুতবা প্রদান করা। তাঁরা কখনো আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেননি। সুতরাং আরবী ছাড়া অন্য ভাষায় খুতবা দেওয়া বা আরবীতে খুতবা পাঠ করে নামাযের পূর্বে অন্য ভাষায় তার অনুবাদ করা বিদ’আত ও মাকরুহে তাহরিমি।   
,
যেমন নিম্নোক্ত কিতাবগুলোতে উল্লেখ আছে
ولا شك فى ان الخطبة بغير العربية خلاف السنة المتوارثة من النبى والصحابة، فيكون مكروها تحريما
অর্থ: অনারবী ভাষায় খুতবা দেওয়া রাসূলুল্লাহ (সা.) এবং সাহাবায়ে কেরামের ধারাবাহিক সুন্নাত আমলের পরিপন্থী। অতএব, তা মাকরূহে তাহরীমি হবে। (উমদাতুর রিআয়া, ১/২০০, ফাতাওয়া মাহমুদিয়া, ১২/৩৫৮, আহসানুল ফাতাওয়া, ৪/১৫০, জাওয়াহিরুল ফিক্বহ, ১/৩৫২)

হাদীস শরীফে বর্ণিত আছে
عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهَا، قَالَتْ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ، فَهُوَ رَدٌّ
অর্থ: হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মে নেই এমন বিষয় ধমর্ ীয় বিষয় বলে আবিষ্কার করে, তা পরিত্যাজ্য। (বুখারী শরীফ, হাদীস-২৪৯৯, মুসলিম শরীফ, হাদীস-৩২৪২, ইবনে মাযাহ শরীফ, হাদীস-১৪, আবু দাউদ শরীফ, হাদীস-৩৯৯০)
,
হযরত ইরবায বিন সারিয়া (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন
مَنْ يَعِشْ مِنْكُمْ بَعْدِي فَسَيَرَى اخْتِلَافًا كَثِيرًا، فَعَلَيْكُمْ بِسُنَّتِي وَسُنَّةِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِينَ الْمَهْدِيِّينَ، تَمَسَّكُوا بِهَا، وَعَضُّوا عَلَيْهَا بِالنَّوَاجِذِ، وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الْأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ مُحْدَثَةٍ (২) بِدْعَةٌ، وَكُلَّ بِدْعَةٍ ضَلَالَةٌ “

অর্থ : তোমাদের মাঝে আমার পর যারা জীবিত থাকবে, তারা অনেক মতভেদ দেখবে। তখন তোমাদের ওপর আমার এবং আমা র হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত আঁকড়ে ধরা জরুরি। সেটিকে মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে রাখবে। আর সাবধান থাকবে, নব উদ্ভাবিত ধর্মীয় বিষয় থেকে। কেননা, ধর্ম বিষয়ে প্রতিটি নতুন বিষয়ই বিদ’আত। আর প্রতিটি বিদ’আতই গোমরাহী। (মুসনাদে আহমাদ, হাদীস-১৬৫২১)
,
★সুতরাং  আরবি ভাষাতেই খুতবা দিতে হবে।
অন্য কোনো ভাষায় খুতবা দেওয়া বিদআত ও মাকরুহে তাহরিমি। 
,
তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মত হলো মাতৃভাষাতে খুতবা দিতে হবে।
তাদের মতটিও ছহীহ আছে। 
তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। 
কোনো সমস্যা নেই।                


(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

------------------------
মুফতী ওলি উল্লাহ
ইফতা বিভাগ
Islamic Online Madrasah(IOM)

by
 ইমাম আবু হানিফা রহ এর মতে খুতবা শ্রোতার মাতৃভাষায় হতে হবে যাতে বুঝতে পারে।
by
দীর্ঘ আলোচনার পর বললেন,
সুতরাং আরবি ভাষাতেই খুতবা দিতে হবে।
অন্য কোনো ভাষায় খুতবা দেওয়া বিদআত ও মাকরুহে তাহরিমি। 
,
তবে কিছু ইসলামী স্কলারদের মত হলো মাতৃভাষাতে খুতবা দিতে হবে।
তাদের মতটিও ছহীহ আছে। 
তাদের মতানুসারী গন সেই মত অনুযায়ী আমল করতে পারবেন। 
কোনো সমস্যা নেই।                

(আল্লাহ-ই ভালো জানেন)

ফাতাওয়া দিলেন বিদয়াত ও মাকরুহ তাহরীমী, আবার বললেন কিছু ইসলামী স্কলারদের মত হলো মাতৃভাষাতে খুতবা দিতে হবে।
তাদের মতটিও ছহীহ আছে।
সাধারণ মুসলমান আপনার ফাতাওয়ায় পথহারা, কোন দিকে যাবে তারা।
সঠিক ফাতওয়া দিন, দুমুখি ফতোয়া নয়। একটি সিদ্ধান্ত দেন উহা বিদয়াত ও মাকরুহ তাহরীমী।

আই ফতোয়া  ওয়েবসাইট বাংলাদেশের অন্যতম একটি নির্ভরযোগ্য ফতোয়া বিষয়ক সাইট। যেটি IOM এর ইফতা বিভাগ দ্বারা পরিচালিত।  যেকোন প্রশ্ন করার আগে আপনার প্রশ্নটি সার্চ বক্সে লিখে সার্চ করে দেখুন। উত্তর না পেলে প্রশ্ন করতে পারেন। আপনি প্রতিমাসে সর্বোচ্চ ৪ টি প্রশ্ন করতে পারবেন। এই প্রশ্ন ও উত্তরগুলো আমাদের ফেসবুকেও শেয়ার করা হবে। তাই প্রশ্ন করার সময় সুন্দর ও সাবলীল ভাষা ব্যবহার করুন।

বি.দ্র: প্রশ্ন করা ও ইলম অর্জনের সবচেয়ে ভালো মাধ্যম হলো সরাসরি মুফতি সাহেবের কাছে গিয়ে প্রশ্ন করা যেখানে প্রশ্নকারীর প্রশ্ন বিস্তারিত জানার ও বোঝার সুযোগ থাকে। যাদের এই ধরণের সুযোগ কম তাদের জন্য এই সাইট। প্রশ্নকারীর প্রশ্নের অস্পষ্টতার কারনে ও কিছু বিষয়ে কোরআন ও হাদীসের একাধিক বর্ণনার কারনে অনেক সময় কিছু উত্তরে ভিন্নতা আসতে পারে। তাই কোনো বড় সিদ্ধান্ত এই সাইটের উপর ভিত্তি করে না নিয়ে বরং সরাসরি স্থানীয় মুফতি সাহেবদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে।

Related questions

0 votes
1 answer 230 views
...